কবিতা: বিকেলের আলোয় তুমি
কলমে: সৌরদীপ অধিকারী
তোমার কথা ভাবতেই
আজ বুকের ভেতর
কেমন যেন একটা বিষণ্ণ সুর বাজে,
যেন বহু দূরের বাঁশির করুণ সুর,
এই শহরের ইট-কাঠের মাঝে
হারিয়ে যায় ধীরে ধীরে।
তুমি হেঁটে গেলে পথের ভিড়ে,
ব্যস্ততার স্রোতে, আর আমি
দূর থেকে দেখি – তোমার চুলের
উড়ন্ত ঢেউ, কাঁধের ওপর
সামান্য ঝুঁকে থাকা
তোমার শরীর, যেন
কোনো অচেনা গল্পের নীরব পাতা।
কখনো কি ভেবেছ তুমি,
এই শহরের কোনো এক কোণে,
এক সামান্য মানুষ,
তোমার ওই ক্ষণিকের হাসিতে
খুঁজে পায় তার দিনের আলো,
রাতের তারা?
জানি, হয়তো জানো না,
জানতে চাও না—
এই দূরত্ব আমাদের রোজকার অভ্যেস।
ক্যাফেটেরিয়ার ভিড়ে,
কফির ধোঁয়ার হালকা মেঘে
ঢাকা তোমার মুখ,
যেন কোনো শিল্পীর আঁকা ছবি,
যেখানে আলো আর ছায়া
লুকোচুরি খেলে।
তোমার কথা বলার ভঙ্গি,
চোখের পলক ফেলা—
সব কিছুই আমার কাছে
কবিতার মতো লাগে,
অথচ সেই কবিতা
আমি শুধু মনে মনে পড়ি,
সাহস করে কখনো
উচ্চারণ করতে পারিনি।
আমাদের হয়তো
কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে,
মুহূর্তের জন্য সময়
থমকে দাঁড়িয়েছিল—
কিন্তু সেই নীরবতার ভাষা
তুমি বোঝোনি,
অথবা বুঝেও
না বোঝার ভান করেছ।
এই যে রোজ তোমায় দেখি,
আর না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস
বুকের ভেতর জমা করি—
এটা আধুনিক প্রেম নয়,
হয়তো—তবুও এটাই তো সত্যি,
এটাই তো বাস্তব।
ফেসবুকের পাতায়
তোমার হাসিমাখা ছবিগুলো দেখি,
বন্ধুদের সাথে মন্তব্যের ঝুরি,
আর আমার মনে হয়,
যেন এক অচেনা দ্বীপে
তুমি আনন্দ করছো,
আর আমি দূরে দাঁড়িয়ে থাকা
এক দর্শক মাত্র।
ইচ্ছে করে,
খুব ইচ্ছে করে—
তোমার পাশে গিয়ে দাঁড়াই,
দু'টো কথা বলি,
জানাতে ইচ্ছে করে,
তোমার ওই সামান্য উপস্থিতি
আমার জীবনে কতটা আলো আনে।
কিন্তু ভয় হয়,
যদি তুমি বিরক্ত হও,
যদি এই নীরব দূরত্বটাই ভেঙে যায়।
তাই আজও,
এই ধূসর বিকেলের আবছা আলোয়,
আমি শুধু তোমায় দেখি—
আর নিজের ভেতর
একরাশ না বলা কথা,
একতরফা ভালোলাগা নিয়ে
বেঁচে থাকি।
জানি, হয়তো এই অনুভূতিগুলো
কোনোদিনও তোমার কাছে
পৌঁছাবে না, তবুও, এই প্রেম—
আধুনিক প্রেক্ষাপটে,
হয়তো এমনই হয়—
একজনের মনে
গোপনে বাসা বাঁধে,
আর অন্যজন থাকে সম্পূর্ণ!
© সম্পূর্ণ লেখা স্বত্বাধিকার কেবল কবি সৌরদীপ অধিকারীর কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। যেকোন ধরনের বিনা অনুমতিতে ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ!