## ঈশ্বর কোথায় ?
আকাশে নয়, নক্ষত্রের দূর ঝলকে নয়,
ঈশ্বর লুকিয়ে নেই কোনো মন্দিরের অন্ধকার গর্ভে।
তিনি আছেন আমাদের ভেতরে—
শ্বাসের ওঠা-নামায়,
হৃদয়ের অনন্ত সুরে।
লালন গেয়েছেন—
*“খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়!”*
দেহটাই সেই খাঁচা,
আর সেই অচিন পাখিই ঈশ্বর,
যিনি প্রবাহিত হচ্ছেন স্নায়ুর নদী বেয়ে,
চক্রের পদ্মে জাগিয়ে তুলছেন আলো।
রামপ্রসাদ বলেছিলেন—
*“হৃদি রত্নাকরের অগাধ জলে ডুব দে রে মন, কালী বলে।”*
অর্থাৎ ঈশ্বরের দরজা হৃদয়ের গভীরে,
যেখানে বেদও ঘোষণা করেছে—
*“আত্মানাং বিদ্ধি”*,
নিজেকে জানো,
কারণ নিজেকে জানা মানেই অসীমকে জানা।
মেরুদণ্ডের সুষুম্না নাড়ি যেন অদৃশ্য সেতু,
ইড়া আর পিঙ্গলা তার দুই প্রহরী।
মূলাধার থেকে আজ্ঞা অবধি ছয় পদ্ম ফুটে আছে,
প্রত্যেকটি চক্র এক একটি সোপান,
যা বেয়ে আত্মা এগিয়ে যায় সহস্রার প্রান্তে।
সেখানে নেই সীমা, নেই মৃত্যু,
আছে কেবল আলো, অসীম শান্তি।
যার ভেতরের স্নায়ুব্যবস্থা যতখানি জাগ্রত,
তার ঈশ্বরচেতনা ততখানি দীপ্ত।
এই দীপ্তির কারণেই শঙ্করাচার্য, বিবেকানন্দ
স্বল্পায়ু হয়েও রেখে গেছেন অমরতার ছাপ।
তাঁদের অন্তরের ঈশ্বর
উত্তাল মহাসমুদ্রের মতোই প্রকাশিত হয়েছিল।
তাহলে কি মন্দির, মসজিদ, গির্জা অর্থহীন ?
না, তারা আমাদের স্মরণ করায়—
যে পথ বাইরের দিকে,
তার দিশা আসলে ভেতরের দিকে।
বাইরের ঈশ্বরকে পেতে হলে
প্রথমে জাগাতে হবে ভেতরের ঈশ্বরকে।
রবীন্দ্রনাথ তাই লিখেছিলেন—
*“সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর,
আমার মাঝে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুর।”*
ঈশ্বর সর্বত্র,
কিন্তু সবচেয়ে বেশি তিনি লুকিয়ে আছেন
আমাদের নিজেদের ভেতরেই।
আমরা যতদিন না নিজের অন্তরে তাঁকে চিনব,
ততদিন বাইরে খুঁজে ফিরব ব্যর্থ যাত্রী হয়ে।
কারণ সত্য একটাই—
ঈশ্বর কখনো দূরে নন,
তিনি তো আমাদের ভেতরেই
নিঃশব্দে গাইছেন অনন্ত জীবনের গান।