Unknown Light - 8 in Bengali Love Stories by MOU DUTTA books and stories PDF | অচেনা আলো - 8

Featured Books
Categories
Share

অচেনা আলো - 8

১. ঝড়ের পরে নীরবতা


কলেজের উৎসবের পর যেন পৃথিবীটা কিছুটা শান্ত হয়ে গেছে।

মিশা আর ইশানির মুখ দেখে কেউ এখন হাসে না, কেউ ঠাট্টা করে না—

বরং সবাই একটু তাকিয়ে থাকে, যেন দু’জনের সাহসের ভেতর কিছু খুঁজে বেড়ায়।


কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঝড় থেমে যায়নি।

ইশানির মা এখনও চোখ ফিরিয়ে নেন,

আর মিশার নিজের পরিবারও নীরব অবস্থান নিয়েছে—

“এইসব বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলি না”।


এই “না বলা” কথাগুলোর ভেতরেই জমে আছে প্রচণ্ড ক্লান্তি, ভয়, আর একফোঁটা আশার আলো।



---


২. একসঙ্গে থাকা শেখা


মিশা আর ইশানি এখন প্রায় প্রতিদিন দেখা করে।

কখনও লাইব্রেরির পেছনের চুপচাপ করিডোরে, কখনও নদীর ঘাটে,

আবার কখনও শহরের ভিড়ে হঠাৎ এক কাপ কফির টেবিলে।


কিন্তু আগের মতো তারা শুধু স্বপ্ন দেখে না।

এখন তারা বাস্তব নিয়ে কথা বলে—

“চাকরি পাবি কোথায়?”

“বাড়ি থেকে বেরিয়ে থাকলে কীভাবে সামলাবি?”

“আমাদের ভবিষ্যৎটা আসলে কেমন হতে পারে?”


মিশা বলল,

— “ভালোবাসা শুধু আবেগ নয়, এটা বাঁচার দায়িত্বও।”

ইশানি মাথা নেড়ে বলল,

— “তাই তো, এখন থেকে আমাদের একে অপরের আশ্রয় হতে হবে।”


তাদের ভালোবাসা এখন আর শুধু অনুভূতির গল্প নয়,

এটা এক ধরণের partnership,

যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্ত তাদের একসাথে বাঁচার ইচ্ছেকে আরও দৃঢ় করছে।



---


৩. প্রথম আঘাত : মিশার বাড়ি


একদিন বিকেলে মিশা বাড়ি ফিরেই দেখল ড্রইংরুমে এক অপরিচিত দম্পতি বসে আছে।

মা মুখে হাসি এনে বললেন—

“ওরা তোমার জন্য ছেলে দেখতে এসেছে।”


মিশা থমকে গেল।

মা যেন এক মুহূর্তও ভাবেননি,

যে মেয়েটা এখন সবার সামনে নিজের সত্যিটা ঘোষণা করেছে,

সে আর লুকিয়ে বাঁচবে না।


— “মা, তুমি জানো আমি এই বিয়েটা করব না।”

— “বোকা হোস না মিশা! এইসব ছেলেমানুষি দিয়ে জীবন চলে না।”


মিশা তখন খুব শান্তভাবে বলল—

— “আমি ছেলেমানুষি করছি না মা, আমি মানুষ হয়ে বাঁচছি।”


মায়ের চোখে তখন রাগ আর কান্না একসাথে।

— “তুই একদিন বুঝবি, সমাজকে ফাঁকি দেওয়া যায় না।”


মিশা মৃদু হেসে বলল—

— “সমাজ যদি আমাদের মানতে না পারে, তাহলে হয়তো সমাজকেই শেখাতে হবে।”


সেই রাতে মিশা ঘরে ফিরে কান্না চেপে রাখল।

সে জানত, এই পথে একা চলতে হবে না,

কারণ তার পাশে ইশানি আছে।



---


৪. ইশানির পরিকল্পনা


পরের সপ্তাহে ইশানি এক খবর দিল—

— “আমাদের শহরে একটা NGO আছে, যেখানে LGBTQ যুবকদের জন্য কাজ করে।

ওরা কাউন্সেলিং করে, কাজ শেখায়, নিরাপদ জায়গায় থাকতে দেয়।”


মিশা অবাক,

— “তুমি এসব জানলে কীভাবে?”

— “আমি খুঁজে দেখছিলাম। হয়তো এখান থেকেই শুরুটা করা যাবে।”


দু’জনেই ঠিক করল, ওরা ওখানে গিয়ে কাজ করবে,

নিজেদের মতো করে পৃথিবীটা গড়ে তুলবে।


ইশানি বলল,

— “যদি অন্যরা না বুঝে, তাহলে আমাদেরই নতুন জায়গা তৈরি করতে হবে,

যেখানে ভালোবাসাকে লুকাতে হবে না।”



---


৫. নতুন আশ্রয়


দু’জনেই সেই NGO-তে যোগ দিল।

নাম—“অরুণোদয়”, মানে ‘নতুন সূর্যোদয়’।

সেখানকার মানুষজন খুব স্বাভাবিকভাবে তাদের গ্রহণ করল।


প্রথম দিন, একজন বয়স্ক মহিলা—রুবিনা আন্টি—হাসতে হাসতে বললেন,

— “এখানে কারও চোখে বিচার নেই, কেবল গল্প আছে।”


মিশা আর ইশানি একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসল।

ওরা অবশেষে এমন এক জায়গায় এসেছে যেখানে ভালোবাসার মানে শুধু লড়াই নয়,

নিজেকে খুঁজে পাওয়া।



---


৬. পৃথিবীর চোখে তারা


তবুও বাইরের পৃথিবী বদলায়নি।

কলেজে, সোশ্যাল মিডিয়ায়, পাড়ায়—কেউ কেউ এখনও ওদের নিয়ে মিম বানায়, ঠাট্টা করে।

কিন্তু এখন ওরা আর তাতে ভাঙে না।


একদিন মিশা বলল,

— “জানো, আমি বুঝেছি ভালোবাসার পরও জীবন আছে।”

ইশানি জিজ্ঞেস করল,

— “মানে?”

— “মানে, আমরা এখন শুধু প্রেমিকা নই। আমরা একে অপরের প্রেরণা।”


ইশানি চুপ করে বলল,

— “ভালোবাসা যখন ভয় থেকে সাহসে রূপ নেয়, তখনই সেটা সত্যি।”



---


৭. ছোট জয়


একদিন কলেজে একটি debate competition হলো—

বিষয়: “Love has no gender.”


মিশা অংশ নিল।

সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,


> “আমরা ভালোবাসি কারণ আমরা মানুষ।

ভালোবাসার কোনো ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ নেই।

যদি ভালোবাসার জন্য কাউকে লুকিয়ে থাকতে হয়,

তাহলে সমাজের মানেই প্রশ্নবিদ্ধ।”




পুরো অডিটোরিয়াম নিস্তব্ধ হয়ে গেল।

শেষে করতালিতে ফেটে পড়ল সবাই।


সেই মুহূর্তে মিশা বুঝল—

ভালোবাসার পরেও সম্মান অর্জন করা যায়,

যদি কেউ সাহস নিয়ে নিজের জায়গাটা দাবি করে।



---


৮. ফিরে আসা


কয়েক মাস পর ইশানির মা একদিন NGO-র অফিসে এলেন।

চোখে ক্লান্তি, কণ্ঠে নরমতা।


— “আমি জানতাম না, তুমি এখানে এত সুন্দরভাবে কাজ করছো।”

ইশানি একটু অবাক হয়ে বলল,

— “তুমি রাগ করোনি মা?”

— “রাগ? না রে, শুধু ভয় পেতাম—তুই কষ্ট পাবি।

কিন্তু আজ দেখছি তুই খুশি।”


মা ধীরে ধীরে ইশানির হাত ধরলেন।

— “ভালোবাসা যদি এমন শক্তি দেয়, তাহলে হয়তো আমি ভুল করেছিলাম।”


ইশানির চোখ ভিজে গেল।

মিশা পাশে দাঁড়িয়ে চুপ করে এই মুহূর্তটা মনে গেঁথে নিল—

যেন বছরজুড়ে চলা ঝড়ের পর প্রথম শান্ত হাওয়া।



---


৯. ভালোবাসার পর


এখন তারা দুজন শহরের এক ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে থাকে।

দু’জনেই কাজ করে, একসঙ্গে রান্না করে, গল্প লেখে, অন্যদের সাহায্য করে।


রাতে ছাদে বসে তারা চাঁদ দেখে,

মিশা বলে,

— “দেখো, এই আলোটা আগেও দেখতাম,

কিন্তু আজ মনে হয় চাঁদও জানে, আমরা ভয় পাই না।”


ইশানি হেসে উত্তর দেয়,

— “কারণ আমরা ‘অচেনা আলো’-র নিচে বাঁচতে শিখেছি।”


তাদের গল্প এখনও শেষ হয়নি,

কিন্তু এই পর্বের শেষে তারা শিখে ফেলে

ছে—

ভালোবাসার পরও জীবন আছে, আর সেই জীবনটাই সবচেয়ে সুন্দর।



---




> ভালোবাসা কখনও শেষ হয় না,

সেটা রূপ বদলায়—

কখনও কান্না হয়, কখনও সাহস,

আর কখনও হয়ে যায় আলো—

অচেনা আলো।