১. নতুন অধ্যায়
শহরের প্রান্তে পুরোনো এক দোতলা বাড়ি।
দেয়ালে রঙ এখনও ভেজা, ছাদে শুকোচ্ছে নতুন নামফলক —
“আলোর ঠিকানা”
এটাই এখন মিশা আর ইশানির জীবনের কেন্দ্রবিন্দু।
দু’জনেই দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে, হাতে ফিতা আর হাসি।
পাশে রুবিনা আন্টি, আর কিছু বন্ধুরা—
যারা জানে, আজকের দিনটা শুধু একটা প্রতিষ্ঠান খোলার দিন নয়,
এটা দুই নারীর জয়ের দিন।
ইশানি ফিতা কাটল, আর মিশা ধীরে বলল—
— “এই জায়গাটা শুধু আমাদের নয়, সবার।”
ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে রঙিন দেয়াল,
এক কোণে লেখা—
> “Love. Live. Light.”
এখানেই শুরু নতুন স্বপ্নের গল্প।
---
২. আলোর মানুষ
“আলোর ঠিকানা” তে প্রথমে আসে ছয়জন তরুণ-তরুণী।
কেউ ঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া, কেউ সমাজের ভয়ে মুখ লুকানো,
আবার কেউ শুধু নিজের মতো হয়ে বাঁচতে চায়।
মিশা তাদের জন্য ছোট ছোট ওয়ার্কশপ শুরু করে—
লেখা, ছবি আঁকা, আত্মবিশ্বাস তৈরি, পাবলিক স্পিকিং।
ইশানি শেখায় ডিজিটাল মিডিয়া, ফটোগ্রাফি আর সোশ্যাল স্কিল।
প্রতিদিন সকালে সবাই মিলে একটা বৃত্ত তৈরি করে,
হাতে হাত রেখে বলে—
> “আমরা কেউ একা নই।”
এই ছোট বাক্যটাই যেন আলোর ঠিকানা-র প্রার্থনা।
---
৩. অতীতের ছায়া
কিন্তু জীবনে আলো থাকলে ছায়াও থাকে।
একদিন হঠাৎ মিশার মা ফোন করলেন।
— “শুনেছি তুমি এখন একটা সেন্টার চালাচ্ছো… ভালো।”
কণ্ঠে প্রশংসার চেয়ে বেশি দ্বিধা।
মিশা শান্ত গলায় বলল,
— “মা, আমি চাই তুমি একদিন আসো এখানে।”
— “দেখা যাবে।”
ফোন কেটে গেল, কিন্তু মিশার চোখে মিশ্র অনুভূতি।
ইশানি এসে হাত রাখল কাঁধে,
— “সব একদিন ঠিক হবে। মা’রা শেষ পর্যন্ত সন্তানকেই খোঁজে।”
ওরা দু’জন আবার কাজে মন দিল,
কারণ জানে— নিজের কাজই সবচেয়ে বড় উত্তর।
---
৪. নতুন প্রজেক্ট
“আলোর ঠিকানা”-র প্রথম বড় প্রজেক্ট—
একটি আর্ট এক্সিবিশন, নাম “অদেখা রং”
যেখানে প্রত্যেকে নিজের অনুভূতির গল্প ছবি বা কবিতায় প্রকাশ করবে।
ইভেন্টের দিনে জায়গা ভর্তি ভিড়।
দেয়ালে টাঙানো ছবিগুলোয় জীবনের টানাপোড়েন,
ভালোবাসার রঙ, একাকিত্ব, আত্মবিশ্বাস—সব মিলেমিশে গেছে।
একজন সাংবাদিক এসে জিজ্ঞেস করল,
— “তোমাদের লক্ষ্য কী?”
মিশা বলল,
— “যে পৃথিবীতে আমরা নিজেদের লুকিয়েছিলাম,
সেই পৃথিবীকে আজ রঙ দেখাতে চাই।”
কাগজে পরদিন শিরোনাম উঠল:
> “দু’জন নারীর আলোয় বদলাচ্ছে শহর।”
---
৫. সমাজের প্রতিক্রিয়া
প্রথমে সবাই অবাক, কেউ কেউ ঠাট্টা করল,
কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষ আসতে শুরু করল।
অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে এল কাউন্সেলিং সেশনে।
স্কুল-কলেজগুলো জেন্ডার সেনসিটিভিটি ট্রেনিং নিতে শুরু করল।
রুবিনা আন্টি বললেন,
— “দেখো, তোমরা শুধু নিজেদের জন্য লড়নি, সমাজকেও বদলে দিচ্ছো।”
ইশানি হেসে বলল,
— “আমরা আলো জ্বেলেছি,
কেউ একজন অন্তত সেই আলোয় দেখেছে— এটাই বড়।”
---
৬. এক ফেরা
এক বিকেলে দরজায় কড়া পড়ল।
মিশা দরজা খুলে চমকে গেল—
দাঁড়িয়ে আছে তার মা।
মা ভিতরে ঢুকে চারদিক দেখে বললেন,
— “তুমি যা করছো, সেটা আমি এখন বুঝি।”
মিশার চোখে জল এসে গেল।
— “মা, আমি শুধু নিজের মতো বাঁচতে চেয়েছিলাম।”
— “আর আমি ভয় পেয়েছিলাম, সমাজ কি বলবে…
কিন্তু আজ দেখছি, তুই সমাজকেই বদলাচ্ছিস।”
মা মিশাকে জড়িয়ে ধরলেন।
ইশানি দূর থেকে চুপচাপ তাকিয়ে ছিল,
চোখের কোণে অচেনা সুখের আভা।
---
৭. জীবনের নতুন সংজ্ঞা
রাতের শেষে ছাদে দু’জন বসে ছিল।
নিচে শহরের আলো, উপরে নক্ষত্র।
মিশা বলল,
— “আমরা ভেবেছিলাম ভালোবাসা মানে কাউকে পাওয়া,
এখন বুঝি, ভালোবাসা মানে পৃথিবীকে আলোকিত করা।”
ইশানি হেসে বলল,
— “আমরা ভালোবাসাকে ঘর বানিয়েছি, নাম দিয়েছি আলোর ঠিকানা।”
ওরা জানত, এই যাত্রা শেষ নয়—
এটা কেবল শুরু, নতুন প্রজন্মের সাহসের শুরু।
---
৮. শেষ দৃশ্য
কিছু বছর পর “আলোর ঠিকানা” বড় সংস্থা হয়ে উঠল।
সারা রাজ্যে তাদের কেন্দ্র,
আর মিশা ও ইশানি এখন সামাজিক প্রেরণার মুখ।
এক টিভি ইন্টারভিউতে সাংবাদিক জিজ্ঞেস করল—
— “তোমরা এই পথ বেছে নিলে কেন?”
মিশা উত্তর দিল,
> “কারণ আমরা একসময় অন্ধকারে ছিলাম।
এখন সেই অন্ধকারে থাকা মানুষদের জন্য আলো জ্বালাই।”
ইশানি যোগ করল,
> “যে আলো আমরা একদিন খুঁজতাম,
আজ সেটাই আমাদের ভেতর থেকে জ্বলছে।”
ক্যামেরা ধীরে ধীরে জুম আউট হলো—
দু’জনের হাত একসাথে ধরা,
পেছনে “আলোর ঠিকানা”-র বোর্ড,
আর চারদিকে হালকা রোদের মতো ছড়িয়ে থাকা শান্তি।
---
> ভালোবাসা যদি সত্য হয়,
তবে সেটাই হয় আশ্রয়, আশ্রয়ের নাম—
আলোর ঠিকানা