Unknown Light - 7 in Bengali Love Stories by MOU DUTTA books and stories PDF | অচেনা আলো - 7

Featured Books
Categories
Share

অচেনা আলো - 7

১. নীরব সকাল

কলেজের ঘটনার পর তিনদিন কেটে গেছে।
ইশানির বাড়িতে এখন প্রতিদিন ঝড়।
মা কথা বলছে না, বাবা গম্ভীর মুখে সংবাদপত্র পড়ে যান, আর সে চুপ করে বসে থাকে ঘরের এক কোণে।

ফোনটা টেবিলের ওপর নিস্তব্ধ, যেন সেটাও রাগ করেছে।
মিশা প্রতিদিন মেসেজ পাঠাচ্ছে—

> “তুমি ভালো আছো?”
“আমি জানি, কষ্ট হচ্ছে।”
“আমাদের লড়াইটা এখনই থেমে যেতে পারে না।”



কিন্তু ইশানি কোনো উত্তর দিচ্ছে না।
ওর চোখের নিচে কালচে দাগ পড়েছে, যেন ঘুমও এখন তার ওপর অভিমান করেছে।


---

২. মিশার ভিতরের অগ্নি

মিশা আর আগের মতো নেই।
তার চোখে সেই আগুন আরও গভীর হয়েছে।
কলেজে এখন সে একা বসে থাকে—কারও সঙ্গে কথা বলে না।

ওর বান্ধবী রিতু একদিন বলল,
— “মিশা, একটু ভেবে দেখিস। সবকিছু হারিয়ে ফেলছিস।”
মিশা হেসে বলল,
— “ভালোবাসা হারিয়ে ফেলার চেয়ে বড় কিছু হারানো সম্ভব?”

রিতু চুপ করে গেল।
কারণ মিশার চোখে যে দৃঢ়তা, সেটার সামনে যুক্তি মরে যায়।


---

৩. ইশানির বাড়ির যুদ্ধক্ষেত্র

সন্ধ্যায় মা আবার শুরু করলেন,
— “তুই কি জানিস, পাড়ার লোকজন কী বলছে?”
ইশানি কিছু বলল না।
— “তোর বাবাকে লোকজন অফিসে খোঁচা দিচ্ছে!”

ইশানি ধীরে বলল,
— “তোমরা সবাই লোকের মুখের ভয় পাও, কিন্তু আমি নিজের মনের ভয় পাচ্ছি মা।”

মা স্তব্ধ।
কিন্তু পরের মুহূর্তেই চিৎকার, কান্না, দোষারোপ—
“তুই মেয়ের নাম কালিমালিপ্ত করছিস!”

ইশানি দরজা বন্ধ করে বসে পড়ল।
বাইরে বৃষ্টি পড়ছে, জানালার কাঁচে টুপটাপ শব্দ।
তার মনে হচ্ছিল, এই পৃথিবীটা সত্যিই এত ছোট কেন—
যেখানে ভালোবাসার জায়গা পর্যন্ত নেই।


---

৪. দেখা না হওয়া বিকেল

চুপিচুপি একদিন ইশানি বেরোল, মিশাকে দেখা করার জন্য।
নদীর ঘাটে, যেখানে সব শুরু হয়েছিল।

মিশা ওখানেই ছিল—বৃষ্টিভেজা চুল, চোখে সেই পুরনো স্নেহ।
দু’জনের চোখাচোখি হলো, কিন্তু কথার দরকার পড়ল না।

দীর্ঘ নীরবতার পর ইশানি বলল,
— “সবাই বলছে, আমি তোমাকে ভুলে যাই।”
মিশা মৃদু হেসে বলল,
— “তুমি কি পারবে?”

ইশানি চোখ নামিয়ে ফেলল।
— “না... কিন্তু পারতে হবে হয়তো।”
মিশা এগিয়ে এসে বলল,
— “ভালোবাসা থেকে পালালে বাঁচা যায় না ইশানি। আমি জানি, তুমি এখনও আমাকেই ভাবো।”

এক ফোঁটা বৃষ্টি গড়িয়ে পড়ল ওর গালে।
দুজনের হাত এক মুহূর্তে জড়িয়ে গেল—যেন আকাশেরও সাহস হারিয়ে গেল তাদের আলাদা করতে।


---

৫. সমাজের বিচারসভা

দু’দিন পর কলেজে একটি মিটিং ডাকল কর্তৃপক্ষ।
বলা হলো, মিশা ও ইশানিকে “কাউন্সেলিং” করা হবে।
তাদের সামনে শিক্ষক, ছাত্র, এমনকি অভিভাবকরাও বসে।

প্রিন্সিপাল বললেন—
— “এই বয়সে এসব অনুভূতি সাময়িক। তোমরা যদি এখনই বুঝে যাও, ভবিষ্যতে সব ঠিক হবে।”

মিশা শান্তভাবে দাঁড়াল।
— “স্যার, আমরা বুঝে গেছি—এই অনুভূতি সাময়িক নয়।”

সবাই ফিসফিস শুরু করল।
ইশানি কাঁপা গলায় বলল,
— “আমরা কাউকে কষ্ট দিতে চাই না। কিন্তু আমরা নিজেরা যেভাবে আছি, সেটা লুকিয়ে রাখতে পারব না।”

একজন অভিভাবক উঠেই বললেন,
— “এরা সমাজের কলঙ্ক!”

মিশা এবার চুপ থাকল না।
তার চোখে জল, কিন্তু কণ্ঠে দৃঢ়তা—
— “সমাজ যদি ভালোবাসাকে কলঙ্ক বলে, তাহলে সেই সমাজেরই পরিবর্তন দরকার।”

ঘরটা নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
ইশানি হঠাৎ বুঝল—ভালোবাসার মূল্য হয়তো এটাই: সবাইকে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সত্য বলা।


---

৬. বিচ্ছেদের ছায়া

পরের দিন ইশানির বাবা তাকে অন্য শহরে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
— “তোর পড়াশোনা ওখানেই শেষ করবি। ওই মেয়েটার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ থাকবে না।”

ইশানি কাঁদল, অনুরোধ করল—
— “বাবা, তুমি বুঝবে না, ও শুধু আমার প্রেমিকা নয়, আমার নিজের এক অংশ।”

কিন্তু বাবা চলে গেলেন, দরজাটা জোরে বন্ধ করে।

রাতের ট্রেনের টিকিট হাতে পেয়ে ইশানি পুরো রাত জেগে কাটাল।
মোবাইল হাতে নিয়ে মিশাকে লিখল—

> “কাল আমি চলে যাচ্ছি।
তুমি যদি কখনও আমাকে ভুলে যাও, আমি রাগ করব না।
কিন্তু আমি তোমাকে ভুলব না, কারণ তুমি আমার সাহস।”



মিশা উত্তর দিল না, শুধু একটি voice note পাঠাল—

> “আমি তোমাকে হারাব না, ইশানি। এই ঝড় একদিন থেমে যাবে।”




---

৭. বিদায়ের স্টেশন

পরদিন সকালে স্টেশনে ভিড়, বৃষ্টি, ধোঁয়া, হুইসেলের আওয়াজ।
ইশানি প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে।
চোখে অশ্রু, হাতে একটি পুরনো বই—যেটা মিশা একদিন দিয়েছিল।

হঠাৎ পেছন থেকে কণ্ঠ—
— “তুমি কোথাও যাচ্ছ না।”

ইশানি ফিরে তাকাল।
মিশা দৌড়ে এসেছে, ভিজে চুলে, নিশ্বাস ফুরিয়ে গেছে।
লোকজন তাকিয়ে আছে, কিন্তু ওদের কিছু যায় আসে না।

মিশা বলল—
— “তুমি পালিয়ে যাচ্ছ? তাহলে ভালোবাসার মানে কী?”
ইশানি কাঁপা গলায়—
— “আমার বাবা…”
— “আমি তোমার বাবার সঙ্গে কথা বলব। আমি এই সম্পর্কের দায় নিচ্ছি।”

ইশানি স্তব্ধ।
ভিড়ের মাঝে কেউ ফিসফিস করল, কেউ হেসে উঠল, কেউ ছবি তুলল।
কিন্তু দু’জনের চোখে তখন শুধু একটাই প্রতিফলন—ভালোবাসার মূল্য দিতে প্রস্তুত তারা দুজনেই।


---

৮. সমাজের সামনে ঘোষণা

সেই বিকেলেই মিশা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা পোস্ট দিল—

> “আমরা দুজন একে অপরকে ভালোবাসি।
এটা অপরাধ নয়।
আমাদের ভালোবাসা লুকিয়ে নয়, মাথা উঁচু করে বাঁচবে।”



পোস্টটা ভাইরাল হলো।
কেউ সমর্থন করল, কেউ অপমান।
কিন্তু এর মধ্যেই একদল মানুষ ওদের পাশে দাঁড়াল—
একজন প্রাক্তন শিক্ষিকা লিখলেন,

> “তোমরা সাহস দেখিয়েছ, যেটা আমরা কেউ পারিনি।”



সেই রাতেই ইশানির বাবা চুপ করে তার ঘরে এলেন।
বসে শুধু বললেন,
— “ভালোবাসা যদি এত বড় শক্তি দেয়, তাহলে হয়তো আমি ভুল বুঝেছিলাম।”

ইশানি চুপচাপ চোখে জল নিয়ে বলল,
— “আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি বাবা।”
বাবা মৃদু হাসলেন,
— “আমি জানি। শুধু সমাজটা বুঝতে দেরি লাগবে।”


---

৯. নতুন সকাল

এক মাস পরে কলেজের cultural fest-এ তারা দুজন একসঙ্গে গান গাইল—
গানের নাম ছিল “Ei prithibir bondhon chhariye”
সবাই দাঁড়িয়ে করতালি দিল।

তাদের চোখে তখন ভয় নেই, লজ্জা নেই, শুধু শান্তি।
মিশা মঞ্চ থেকে নামার পর বলল—
— “এই ভালোবাসার মূল্য আমরা দিয়েছি, কিন্তু এর বিনিময়ে আমরা নিজেদের খুঁজে পেয়েছি।”

ইশানি হাসল,
— “আমরা হয়তো সমাজ বদলাতে পারব না, কিন্তু অন্তত কারও মনে প্রশ্ন তুলেছি।”

দু’জন একে অপরের হাত ধরল—
এইবার আর ফিসফিস নয়, আর লুকিয়ে থাকা নয়—
এইবার তারা হাঁটছে অচেনা আলোর পথে,
যেখানে ভালোবাসা কোনো অপরাধ নয়,
একটা অধিকার।