Unknown Light - 4 in Bengali Love Stories by MOU DUTTA books and stories PDF | অচেনা আলো - 4

Featured Books
Categories
Share

অচেনা আলো - 4

“অদৃশ্য বাঁধন”

কলেজ ক্যাম্পাস যেন হঠাৎ করে অন্যরকম হয়ে উঠেছে।
মিশা আর ইশানি আগেও একসাথে থাকত, হাসত, মজা করত, কিন্তু এখন যেন তাদের চারপাশে এক অদ্ভুত আলো জ্বলজ্বল করে।

কেউ কিছু টের পাচ্ছে না—কিন্তু তাদের চোখের দৃষ্টি, ছোট্ট স্পর্শ, চুপ করে পাশে দাঁড়ানো—এসব এখন আর আগের মতো নেই।


---

বন্ধুত্ব নাকি প্রেম?

ইশানির ভেতর এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব কাজ করছিল।
সে জানত, মিশার প্রতি তার টান শুধু বন্ধুত্ব নয়।
কিন্তু প্রতিদিন বাড়ি ফেরার পর আয়নায় নিজের মুখ দেখে সে নিজেকেই প্রশ্ন করত—
“আমি কি ভুল করছি? মেয়ের প্রতি এভাবে টান পাওয়া কি স্বাভাবিক?”

অন্যদিকে, মিশা অনেকটা স্বচ্ছন্দ।
সে লুকোচুরি পছন্দ করে না।
ক্লাসে প্রজেক্ট করার সময় হোক বা ক্যান্টিনে একসাথে খাওয়ার সময়, তার চোখে স্পষ্ট থাকে—
ইশানি শুধু তার, অন্য কারও নয়।


---

একটি অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত

একদিন লাইব্রেরির শান্ত পরিবেশে দু’জনে বসে পড়াশোনা করছিল।
চারপাশে হালকা ফিসফাস, পাতার শব্দ, আর জানালা দিয়ে আসা রোদ।

মিশা হঠাৎ ইশানির চুলের একপাশ সরিয়ে দিল।
কেউ দেখে ফেলবে ভেবে ইশানি চমকে উঠল, কিন্তু মিশার চোখে এমন দৃঢ়তা ছিল যে আর কিছু বলতে পারল না।

মিশা ধীরে ফিসফিস করে বলল—
— “তুমি যতই দূরে যেতে চাও, আমি ততই তোমার ভেতরে ঢুকে পড়ি।”

ইশানি কিছু বলল না, শুধু বুকের ভেতর ধুকপুক শব্দটা যেন লাইব্রেরির দেয়ালও শুনতে পাচ্ছিল।


---

সমাজের ভয়

কিন্তু তাদের এই অদৃশ্য বাঁধন বেশিদিন লুকোনো সম্ভব ছিল না।
একদিন ক্যান্টিনে বসে থাকা অবস্থায়, কয়েকজন সহপাঠী ফিসফিস করে হাসাহাসি করতে লাগল।
মিশা প্রথমে পাত্তা দিল না, কিন্তু ইশানির মুখ লাল হয়ে উঠল।

বাড়ি ফেরার পথে ইশানি হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেল।
মিশা জিজ্ঞেস করল—
— “কী হলো?”

ইশানি নিচু গলায় বলল—
— “সবাই যদি বুঝে যায়? সবাই যদি হাসে? তখন আমরা কীভাবে সামলাব?”

মিশা তার হাতটা শক্ত করে ধরল।
— “ভালোবাসা লুকিয়ে রাখার জিনিস নয়, ইশানি। যদি কেউ হাসে, হাসুক। আমরা জানি আমরা কাকে চাই।”


---

একটি ছোট্ট প্রতিজ্ঞা

সেদিন সন্ধ্যায় দু’জন নদীর ধারে বসেছিল।
সূর্য ডুবে যাচ্ছিল, আকাশে লালচে রং।
মিশা হঠাৎ ইশানির দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল।

— “আমাকে প্রতিশ্রুতি দাও, যাই হোক না কেন তুমি আমার হাত ছাড়বে না।”

ইশানি অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে অবশেষে মিশার হাত ধরে বলল—
— “আমি শুধু তোমার। কিন্তু ভয় পেলে আমাকে শক্তি দেবে, তাই তো?”

মিশা মিষ্টি হেসে বলল—
— “আমি তোমার ভয় হবো না, আমি হবো তোমার সাহস।”


---

সেদিন থেকে তাদের সম্পর্ক শুধু লুকোনো আবেগে সীমাবদ্ধ থাকল না, বরং অদৃশ্য বাঁধনে তারা আরও জোরে বাঁধা পড়ল।
তারা জানত সামনে ঝড় আসবে, কিন্তু এই মুহূর্তে তারা শুধু একে অপরকে আঁকড়ে ধরল।

নীরব অস্থিরতা

দিনগুলো বদলাচ্ছিল।
মিশা আর ইশানি যতই একে অপরের কাছে আসছিল, ততই চারপাশের পৃথিবী তাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতে শুরু করছিল।

ক্লাসে একসাথে বসা, করিডোরে একসাথে হাঁটা—এসব নিয়ে সহপাঠীদের কৌতূহল যেন বাড়ছিল।
কেউ সরাসরি কিছু বলত না, কিন্তু ফিসফিসানি আর খুনসুটি তাদের কানে এসে পৌঁছাত।

ইশানি ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠত, কিন্তু মিশা যেন অদম্য।
সে সবকিছু উপেক্ষা করে হাসত, মজা করত, যেন কিচ্ছু হয়নি।


---

অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন

একদিন ইশানির এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী সরাসরি জিজ্ঞেস করে বসলো—
— “শোন, তুমি আর মিশা কি শুধু বন্ধু? নাকি… অন্য কিছু?”

ইশানি হকচকিয়ে গিয়েছিল।
ঠোঁট শুকিয়ে গিয়েছিল, মাথা নীচু করে শুধু বলেছিল—
— “আমরা তো শুধু… বন্ধু।”

কিন্তু সেই মিথ্যে কথাটা বলতে গিয়েই তার বুক ফেটে যাচ্ছিল।
বন্ধুত্বের আড়ালে প্রেম লুকানো কতটা যন্ত্রণাদায়ক, সেটা সেদিন আরও বেশি বুঝল ইশানি।


---

পরিবারে চাপ

এদিকে বাড়িতেও ঝড়ের আভাস মিলতে শুরু করল।
ইশানির মা খেয়াল করলেন, মেয়েটা সারাক্ষণ ফোনে কারও সাথে চ্যাট করে, কলেজ থেকে ফিরেই কারও কথা ভাবে।

এক সন্ধ্যায় মায়ের কণ্ঠে প্রশ্ন এল—
— “কে রে, এত কথা কাকে লিখিস? ক্লাসের ওই মিশা না?”

ইশানি স্তব্ধ। কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
তার মনে হলো, যেন পৃথিবীর সব আলো নিভে যাচ্ছে।


---

মিশার দৃঢ়তা

সেদিন রাতে নদীর ধারে দেখা হলো মিশা আর ইশানির।
ইশানি কাঁপা গলায় বলল—
— “আমাদের সম্পর্ক কেউ টিকতে দেবে না, মিশা। সবাই আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।”

মিশা তার হাত শক্ত করে ধরে বলল—
— “ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, কেউ তাকে ভাঙতে পারে না। ইশানি, আমি ভয় পাই না। তুমি যদি আমার পাশে থাকো, আমি সবকিছু সহ্য করতে পারব।”

ইশানির চোখ ভিজে উঠল।
কিন্তু তার ভেতরের অস্থিরতা মুছল না।


---

আকাশে কালো মেঘ

কলেজের ফেস্ট এগিয়ে আসছিল।
মিশা আর ইশানি একসাথে পারফর্ম করার সিদ্ধান্ত নিল।
কিন্তু সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই, কয়েকজন সহপাঠী ঠাট্টা শুরু করল।

— “ওরা একসাথে নাচলে দারুণ হবে, প্রেমিক-প্রেমিকার মতো!”
— “আরে প্রেমিক নয়, প্রেমিকা-প্রেমিকা!”

হাসাহাসির ঝড় বইল।
মিশা দৃঢ় মুখে দাঁড়িয়ে রইল, কিন্তু ইশানির বুক ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।

সে বুঝতে পারল, ঝড়ের আভাস সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
তাদের ভালোবাসা আর লুকোনো যাবে না।


---

সন্ধ্যার আকাশে কালো মেঘ জমছিল।
মিশা আর ইশানি দু’জনেই জানত—আগামী দিনগুলো তাদের পরীক্ষা নেবে।
কিন্তু তারা একে অপরকে আঁকড়ে ধরে ফিসফিস করে বলল—
“যত ঝড়ই আসুক, আমরা ভাঙব না।”
।।।।।

নেক্সট পর্ব খুব তাড়া তাড়ি দেবো পাশে থাকবেন সকলে।।।