Unknown Light - 5 in Bengali Love Stories by MOU DUTTA books and stories PDF | অচেনা আলো - 5

Featured Books
Categories
Share

অচেনা আলো - 5

“ঝড়ের আভাস”


---

নীরব অস্থিরতা

দিনগুলো বদলাচ্ছিল।
মিশা আর ইশানি যতই একে অপরের কাছে আসছিল, ততই চারপাশের পৃথিবী তাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতে শুরু করছিল।

ক্লাসে একসাথে বসা, করিডোরে একসাথে হাঁটা—এসব নিয়ে সহপাঠীদের কৌতূহল যেন বাড়ছিল।
কেউ সরাসরি কিছু বলত না, কিন্তু ফিসফিসানি আর খুনসুটি তাদের কানে এসে পৌঁছাত।

ইশানি ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠত, কিন্তু মিশা যেন অদম্য।
সে সবকিছু উপেক্ষা করে হাসত, মজা করত, যেন কিচ্ছু হয়নি।


---

অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন

একদিন ইশানির এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী সরাসরি জিজ্ঞেস করে বসলো—
— “শোন, তুমি আর মিশা কি শুধু বন্ধু? নাকি… অন্য কিছু?”

ইশানি হকচকিয়ে গিয়েছিল।
ঠোঁট শুকিয়ে গিয়েছিল, মাথা নীচু করে শুধু বলেছিল—
— “আমরা তো শুধু… বন্ধু।”

কিন্তু সেই মিথ্যে কথাটা বলতে গিয়েই তার বুক ফেটে যাচ্ছিল।
বন্ধুত্বের আড়ালে প্রেম লুকানো কতটা যন্ত্রণাদায়ক, সেটা সেদিন আরও বেশি বুঝল ইশানি।


---

পরিবারে চাপ

এদিকে বাড়িতেও ঝড়ের আভাস মিলতে শুরু করল।
ইশানির মা খেয়াল করলেন, মেয়েটা সারাক্ষণ ফোনে কারও সাথে চ্যাট করে, কলেজ থেকে ফিরেই কারও কথা ভাবে।

এক সন্ধ্যায় মায়ের কণ্ঠে প্রশ্ন এল—
— “কে রে, এত কথা কাকে লিখিস? ক্লাসের ওই মিশা না?”

ইশানি স্তব্ধ। কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
তার মনে হলো, যেন পৃথিবীর সব আলো নিভে যাচ্ছে।


---

মিশার দৃঢ়তা

সেদিন রাতে নদীর ধারে দেখা হলো মিশা আর ইশানির।
ইশানি কাঁপা গলায় বলল—
— “আমাদের সম্পর্ক কেউ টিকতে দেবে না, মিশা। সবাই আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।”

মিশা তার হাত শক্ত করে ধরে বলল—
— “ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, কেউ তাকে ভাঙতে পারে না। ইশানি, আমি ভয় পাই না। তুমি যদি আমার পাশে থাকো, আমি সবকিছু সহ্য করতে পারব।”

ইশানির চোখ ভিজে উঠল।
কিন্তু তার ভেতরের অস্থিরতা মুছল না।


---

আকাশে কালো মেঘ

কলেজের ফেস্ট এগিয়ে আসছিল।
মিশা আর ইশানি একসাথে পারফর্ম করার সিদ্ধান্ত নিল।
কিন্তু সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই, কয়েকজন সহপাঠী ঠাট্টা শুরু করল।

— “ওরা একসাথে নাচলে দারুণ হবে, প্রেমিক-প্রেমিকার মতো!”
— “আরে প্রেমিক নয়, প্রেমিকা-প্রেমিকা!”

হাসাহাসির ঝড় বইল।
মিশা দৃঢ় মুখে দাঁড়িয়ে রইল, কিন্তু ইশানির বুক ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।

সে বুঝতে পারল, ঝড়ের আভাস সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
তাদের ভালোবাসা আর লুকোনো যাবে না।


---

সন্ধ্যার আকাশে কালো মেঘ জমছিল।
মিশা আর ইশানি দু’জনেই জানত—আগামী দিনগুলো তাদের পরীক্ষা নেবে।
কিন্তু তারা একে অপরকে আঁকড়ে ধরে ফিসফিস করে বলল—
“যত ঝড়ই আসুক, আমরা ভাঙব না।”

“ছায়ার ভিতর আলো”


---

ক্লান্ত হৃদয়

ফেস্টের পরদিন কলেজের করিডোর যেন এক অদৃশ্য অস্থিরতায় ভরে উঠল।
মিশা হাসি মুখে সবকিছু সামলানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু ইশানির মনটা যেন আরও গুটিয়ে যাচ্ছিল।

বাড়িতে মায়ের সন্দেহ, কলেজে সহপাঠীদের খুনসুটি—সব মিলিয়ে সে যেন শ্বাস নিতে পারছিল না।
ডায়েরির পাতায় লিখল—
“ভালোবাসা এত সুন্দর, তবুও কেন এত কষ্টের?”


---

মিশার নির্ভরতা

সেদিন সন্ধ্যায় তারা দু’জন লাইব্রেরির বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল।
চারপাশে হালকা বাতাস, জানালার ফাঁক দিয়ে আসা চাঁদের আলো।

মিশা আস্তে বলল—
— “তুমি কি জানো, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না?”

ইশানি থমকে গেল।
— “এভাবে বলো না। যদি কোনোদিন…”

মিশা তার ঠোঁটের উপর হাত রাখল।
— “না, এমন কোনোদিন আসবে না। কারণ আমি জানি, অন্ধকার যতই গভীর হোক, তোমার চোখেই আমি আলো পাই।”

ইশানি তার চোখে চোখ রেখে দেখল, সত্যিই মিশার ভেতরে এক অদ্ভুত আলো আছে—যেটা তাকে বাঁচিয়ে রাখে।


---

গোপন আশ্রয়

কলেজ শেষে তারা মাঝে মাঝে নদীর ধারের পুরনো ঘাটে যেত।
সেখানে তেমন কেউ আসত না, শুধু জল আর আকাশ তাদের সঙ্গী হতো।

সেদিনও তারা বসেছিল।
মিশা ইশানির হাত ধরে বলল—
— “আমরা চাইলে এখানে আমাদের ছোট্ট পৃথিবী বানাতে পারি। যেখানে কেবল তুমি আর আমি আছি।”

ইশানি হেসে বলল—
— “পৃথিবী কি এত সহজ? বাইরে কত কথা, কত বাঁধা…”

মিশা তার মাথা নিজের কাঁধে রেখে ফিসফিস করল—
— “তাহলে আমরা পৃথিবীকে অমান্য করব। কারণ ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, তার নিয়ম আমরা বানাব।”


---

প্রথম স্পর্শের উষ্ণতা

বাতাস হালকা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল।
ইশানি শিউরে উঠল।
মিশা তার ওড়নাটা ঠিক করে দিল, তারপর ধীরে তার গালে হাত রাখল।

দু’জনের চোখে একসাথে জমল জল, আর অজান্তেই ঠোঁট একে অপরের কাছে এগিয়ে এল।
সেই প্রথম চুম্বন, যেখানে ভয় ছিল, কাঁপুনি ছিল, কিন্তু তার থেকেও বেশি ছিল নিঃশব্দ আলো।


---

ভেতরের শক্তি

চুম্বনের পর ইশানি কাঁদতে কাঁদতে বলল—
— “আমি খুব ভয় পাই, মিশা।”

মিশা তার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল—
— “ভয় পেয়ো না। আমি আছি। অন্ধকার যত বড় হোক, আমরা দু’জন একসাথে আলো খুঁজে নেব।”

সেই মুহূর্তে, ইশানি অনুভব করল—
ছায়ার ভিতরেও আলো জন্ম নিতে পারে, যদি হৃদয় সত্যি ভালোবাসে।


---