Unknown Light - 11 in Bengali Love Stories by MOU DUTTA books and stories PDF | অচেনা আলো - 11

Featured Books
Categories
Share

অচেনা আলো - 11

১. সময়ের পর

পাঁচ বছর কেটে গেছে “আলোর ঠিকানা” শুরু হওয়ার পর।
আজ সেটা শুধু এক জায়গা নয়—
একটা আন্দোলন, একটা অনুপ্রেরণা।

পত্রপত্রিকায়, সোশ্যাল মিডিয়ায়, সেমিনারে—
সব জায়গায় মিশা আর ইশানির নাম উচ্চারিত হয় সম্মানের সঙ্গে।

কিন্তু তারা নিজেরা এখনো আগের মতোই সাধারণ,
সকালে চায়ের কাপ হাতে ছাদে বসে সূর্য ওঠা দেখে,
আর রাতে ঘরে ফেরার আগে দু’জন হাত ধরে হাঁটে—
ঠিক সেই পুরোনো নদীর ধারে।


---

২. নতুন প্রজন্ম

“আলোর ঠিকানা”-য় এখন প্রায় চল্লিশজন সদস্য কাজ করে।
তাদের মধ্যে কিছু তরুণ-তরুণী আছে,
যারা মিশা ও ইশানির গল্প শুনে সাহস পেয়েছে।

একদিন সেশন শেষে তন্ময় নামের এক ছেলেটা বলল—
— “দিদি, আমি আর লুকাব না। আমি আমার পরিবারকে আজই বলব আমি কে।”
ইশানি হাসল,
— “ভয় লাগবে, কিন্তু মনে রাখো, ভয় মানে তুমি সত্যের কাছাকাছি।”

সেই ছেলেটা পরে তার বাবার হাত ধরে “আলোর ঠিকানা”-য় ফিরে আসে—
বাবা বলেছিল,

> “আমার ছেলে যদি নিজের সত্যে বাঁচে, সেটাই আমার গর্ব।”



সেই দিন সবার চোখে জল এসে গিয়েছিল।


---

৩. স্বীকৃতি

এক সকালে ডাক এলো—
রাজ্য সরকার “আলোর ঠিকানা”-কে সমাজসেবায় বিশেষ পুরস্কার দিতে চায়।

সম্মান অনুষ্ঠানের দিন সবাই একসাথে দাঁড়িয়েছিল স্টেজে।
মঞ্চের আলোয় মিশা ও ইশানির চোখে কৃতজ্ঞতা ঝলমল করছিল।

মিশা মাইকে বলল—

> “এই পুরস্কার আমাদের নয়,
তাদের—যারা একসময় অন্ধকারে থেকেও আলোয় বিশ্বাস রেখেছিল।”



অডিটোরিয়াম করতালিতে ভরে উঠল।
ইশানি নিচে তাকিয়ে দেখল, সামনের সারিতে তার মা বসে হাসছেন।
চোখে সেই শান্তি, যা বহুদিন পর ফেরত এসেছে।


---

৪. জীবনের ছন্দ

পুরস্কারের পরও তারা আগের মতোই কাজ করে।
সকালে মিশা অফিস সামলায়,
ইশানি লেখালিখি আর নতুন প্রজেক্টের পরিকল্পনা করে।

রাতে তারা ছোট করে একটা পডকাস্ট চালু করেছে—
“অচেনা কথারা” 
যেখানে তারা ভালোবাসা, পরিচয়, সমাজ আর সাহস নিয়ে কথা বলে।

শ্রোতাদের মেসেজে ভরে যায় ইনবক্স—
“দিদি, তোমাদের গল্প শুনে আমি নিজেকে মেনে নিতে শিখেছি।”
“তোমাদের জন্য আমি আবার হাসতে পারি।”

প্রতিবার মেসেজ পড়লে তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে শুধু বলে—
— “আমরা ঠিক কাজটাই করেছি।”


---

৫. এক নিঃশব্দ বিকেল

এক বিকেলে ইশানি বই পড়ছিল,
মিশা জানালার ধারে গাছের পাতায় পানি দিচ্ছিল।

হঠাৎ ইশানি বলল,
— “জানো, মাঝে মাঝে ভয় হয়… যদি আমরা একদিন না থাকি, এই জায়গাটা?”
মিশা মৃদু হেসে বলল,
— “তাহলে কেউ না কেউ আলো জ্বেলে দেবে,
আমাদের গল্প তো থামবে না।”

ইশানি বই বন্ধ করে বলল,
— “তুমি সবসময় এমনভাবে বলো, যেন ভয়ও সান্ত্বনা হয়ে যায়।”

মিশা উত্তর দিল,
— “কারণ ভালোবাসা মানে ভয়কে শান্ত করা।”


---

৬. আলোর পর

বছর দশেক পর “আলোর ঠিকানা” এক আন্তর্জাতিক সংগঠন হয়ে উঠল।
দেশের বাইরেও তাদের শাখা খোলা হলো।
মিশা এখন নেতৃত্ব দেয় নতুন ট্রেনিং প্রোগ্রামে,
ইশানি সামাজিক ডকুমেন্টারি বানায়—
যেখানে বাস্তব মানুষদের গল্প উঠে আসে।

একদিন এক ছাত্র তাদের ডকুমেন্টারি দেখে লিখল,

> “আমি জানতাম না ভালোবাসা এত শক্তিশালী হতে পারে।”



তারা তখন বুঝল,
“আলোর পর” মানে কোনো গল্পের শেষ নয়—
এটা আলো ছড়িয়ে যাওয়ার পরও
তার উষ্ণতা বেঁচে থাকার নাম।


---

৭. শেষ মুহূর্তের শান্তি

এক রাতে ইশানি চুপচাপ ছাদে বসে আকাশ দেখছিল।
মিশা এসে পাশে বসল।

— “তুমি চাঁদ দেখছো?”
— “হ্যাঁ, মনে হচ্ছে ঠিক প্রথম দিনের মতো।”
— “তুমি কি জানো, আমরা এখন কতজনের চাঁদ হয়ে গেছি?”

দু’জনের হাসি ভেসে গেল রাতের বাতাসে।
চাঁদের আলো নরম করে পড়ছিল তাদের মুখে—
যেন সেই “অচেনা আলো” আজ পরিচিত হয়ে গেছে।


---



> ভালোবাসার আলো একবার জ্বলে উঠলে
আর নিভে না—
সেটা সময়ের পর, জীবনের পরও
রেখে যায় তার উষ্ণতা—
আলোর পর। 

শেষ পর্ব

১. সময়ের পরিধি

ক্যালেন্ডার বদলেছে অনেকবার।
“আলোর ঠিকানা” এখন বিশ বছরের পুরোনো এক আশ্রয়।
মিশার চুলে সাদা রেখা, ইশানির চোখে পাতলা চশমা—
তবু তাদের হাসি এখনো সেই আগের মতোই উজ্জ্বল।

ভোরবেলায় তারা এখনো ছাদে বসে চা খায়।
মিশা গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে,
— “দেখো, এই মানিপ্ল্যান্টটা আমাদের মতো, ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে।”
ইশানি হেসে বলে,
— “আর আমাদের ভালোবাসা? সেটাও তো এর পাতার মতোই, বয়সে বাড়ে, কিন্তু শুকোয় না।”


---

২. নতুন প্রজন্মের আলো

এখন সংগঠনটা চালায় নতুন দল—
তন্ময়, অদিতি, রাহুল, নীলা— সেই ছেলেমেয়েরা
যারা একসময় “আলোর ঠিকানা”-য় এসে নিজেদের খুঁজে পেয়েছিল।

তারা প্রতি বছর আয়োজন করে “আলোর উৎসব”—
যেখানে সমাজের নানা প্রান্তের মানুষ আসে,
ভালোবাসা আর সাহস নিয়ে কথা বলে।

একদিন ইশানি দেখল, স্টেজে দাঁড়িয়ে অদিতি বলছে—

> “আমরা আজ যা করতে পারছি, সেটা সম্ভব হয়েছে
দুইজন ordinary মানুষের কারণে—
যারা একসময় শুধু ভালোবাসায় বিশ্বাস করেছিল।”



ইশানি ও মিশা পেছন থেকে শুনে চোখে জল ফেলল।
মিশা ফিসফিস করে বলল,
— “দেখো, আমরা চলে যাওয়ার পরও আলো থাকবে।”


---

৩. নিঃশব্দ বিকেল

এক বিকেলে, সূর্যের নরম আলো ঘরে ঢুকছে।
ইশানি ডায়েরি লিখছিল,
আর মিশা জানালার ধারে বসে পুরোনো গিটার বাজাচ্ছিল।

ইশানি বলল,
— “জানো, জীবনে কিছুই তেমন চাওয়ার মতো বাকি নেই।”
মিশা মাথা নাড়ল,
— “আমরা যা চেয়েছিলাম— নিজেদের মতো বাঁচতে, সেটা তো পেয়েছি।”

তারা দু’জন চুপ করে একে অপরের চোখে তাকিয়ে রইল।
সেই চোখে ছিল শান্তি, কোনো অভিমান নয়।


---

৪. বিদায় নয়

কিছুদিন পর ইশানির শরীর একটু দুর্বল হয়ে পড়ল।
ডাক্তার বলল— “বয়সের জন্যই।”
মিশা প্রতিদিন ওষুধ খাওয়ায়, গল্প পড়ে শোনায়,
আর মাঝে মাঝে পুরোনো ভিডিও চালায়—
যেখানে তারা “অচেনা কথারা”-র রেকর্ডিং করছে।

এক রাতে ইশানি বলল,
— “যদি আমি একদিন না থাকি, তুমি আলো জ্বালিয়ে রাখবে?”
মিশা মৃদু হাসল,
— “তুমি থাকো না থাকো, আলো নিভবে না।”

সেই রাতে তারা একসাথে ঘুমিয়ে পড়ল,
আর জানালার বাইরে চাঁদের আলো ঢুকে পড়ল ঘরের ভিতর—
ঠিক প্রথম দিনের মতো।


---

৫. শেষ সকাল

ভোরে মিশা উঠল, জানালার বাইরে পাখির ডাক।
ইশানি তখন নিঃশব্দ,
মুখে এক প্রশান্ত হাসি— যেন ঘুমের ভেতরেই আলোয় মিশে গেছে।

মিশা তার হাত ধরল,
আর ধীরে বলল,
— “তুমি ঠিকই বলেছিলে, ভয় মানে সত্যের কাছে আসা।”

বাইরে সূর্য উঠছিল,
ঘরের ভেতর বাতাসে মিশে যাচ্ছিল রোদ্দুরের নরম স্পর্শ।


---

৬. আলোর উত্তরাধিকার

কয়েক মাস পর “আলোর উৎসব”-এ মঞ্চে দাঁড়িয়ে তন্ময় বলল—

> “আজ আমরা সেই মানুষদের কথা বলছি,
যারা ভালোবাসাকে সমাজের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছিল।
তারা হয়তো এখন নেই,
কিন্তু তাদের আলো আছে— আমাদের হৃদয়ে, আমাদের কাজের মধ্যে।”



স্টেজের পিছনের বড় স্ক্রিনে দেখা গেল—
মিশা ও ইশানির পুরোনো ছবি।
দুজনের মুখে হাসি, হাতে হাত ধরা।


---

৭. শেষ আলো

রাতের আকাশে চাঁদ উঠেছে।
একটা বাতাস বইছে ধীরে ধীরে।

তন্ময় ঘরের সব আলো নিভিয়ে
“আলোর ঠিকানা”-র ছাদে একটা ছোট প্রদীপ জ্বালাল।

সেই প্রদীপের আলোয় দেখা গেল—
দূরে যেন দুটো ছায়া,
একটা গিটার হাতে, অন্যটা বই নিয়ে,
হাসছে নরমভাবে।

হয়তো মিশা আর ইশানি নয়,
হয়তো তাদের ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি—
যারা শিখিয়ে গেছে,

> “ভালোবাসা মানে কখনো হারানো নয়,
বরং আলো হয়ে থাকা।” 




---

শেষ।