অচেনা আলো

(0)
  • 57
  • 0
  • 7.6k

কলেজে নতুন সেমিস্টারের প্রথম দিন। চারপাশে অচেনা মুখ, নতুন বই, নতুন ক্লাসরুম, নতুন ভয় আর কৌতূহল। ইশানি খুব শান্ত মেয়ে। ছোটবেলা থেকে বই পড়া আর কবিতা লেখা তার নেশা। অন্যরা যখন হইহই করে কথা বলে, সে তখন এক কোণে বসে নিজের ডায়েরিতে কিছু না কিছু লিখে ফেলে। সেদিনও তেমনই করছিল। কলেজ লাইব্রেরির শেষ বেঞ্চে বসে বইয়ের পাতায় চোখ রাখলেও তার মন ছিল অন্য কোথাও। সে ভেবেছিল—“এখানে কি কাউকে পাওয়া যাবে, যে আমাকে সত্যিই বুঝবে?” ঠিক তখনই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল মিশা। হালকা গোলাপি রঙের সালোয়ার কামিজ, চুলগুলো খোলা, চোখে যেন এক অদ্ভুত দুষ্টুমি লুকানো। হাঁটতেই চারপাশের সবাই তাকিয়ে রইল, কিন্তু মিশার চোখ গেল সোজা শেষ বেঞ্চে বসে থাকা ইশানির দিকে।

1

অচেনা আলো - 1

পর্ব – ১ : প্রথম দেখাকলেজে নতুন সেমিস্টারের প্রথম দিন। চারপাশে অচেনা মুখ, নতুন বই, নতুন ক্লাসরুম, নতুন ভয় কৌতূহল। ইশানি খুব শান্ত মেয়ে। ছোটবেলা থেকে বই পড়া আর কবিতা লেখা তার নেশা। অন্যরা যখন হইহই করে কথা বলে, সে তখন এক কোণে বসে নিজের ডায়েরিতে কিছু না কিছু লিখে ফেলে।সেদিনও তেমনই করছিল। কলেজ লাইব্রেরির শেষ বেঞ্চে বসে বইয়ের পাতায় চোখ রাখলেও তার মন ছিল অন্য কোথাও। সে ভেবেছিল—“এখানে কি কাউকে পাওয়া যাবে, যে আমাকে সত্যিই বুঝবে?”ঠিক তখনই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল মিশা। হালকা গোলাপি রঙের সালোয়ার কামিজ, চুলগুলো খোলা, চোখে যেন এক অদ্ভুত দুষ্টুমি লুকানো। হাঁটতেই চারপাশের সবাই ...Read More

2

অচেনা আলো - 2

অদৃশ্য টানকলেজের দিনগুলোতে মিশা আর ইশানির বন্ধুত্ব এখন সবার চোখে পড়তে শুরু করেছে। ক্লাসে তারা পাশাপাশি বসে, লাইব্রেরিতে পাশাপাশি ক্যান্টিনে একসাথে খায়। অন্য বন্ধুরা মজা করে বলে ওঠে,— “ওই দেখো, জুটি আসছে।”মিশা হেসে উড়িয়ে দেয়, কিন্তু ইশানির বুক কেমন কেঁপে ওঠে। ও কি সত্যিই জুটি? নাকি শুধু বন্ধুত্ব?---ছোট ছোট মুহূর্তএকদিন দুপুরে ক্যান্টিনে বসে সবাই গল্প করছিল। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। ভিড়ের মধ্যে মিশা ইশানির হাত ধরে বলল,— “চল, বাইরে যাই।”অন্ধকার ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে তারা দু’জন ছাদে গেল। আকাশ ভরে আছে মেঘে। হাওয়া বইছে জোরে। মিশা হেসে বলল,— “এমন আবহাওয়া মানে কফির কাপ চাই। তুমি যদি কবি হও, তবে আমিই ...Read More

3

অচেনা আলো - 3

“আমি তোমাকে চাই”কলেজের রুটিন এখন মিশা আর ইশানিকে এক অদ্ভুত জালে বেঁধে ফেলেছে। প্রতিদিন দেখা, একসাথে খাওয়া, আড্ডা, পড়াশোনা—সব এক অদৃশ্য নিয়মে বাঁধা। কিন্তু সেই নিয়মের ভেতরে জমে উঠছে এমন কিছু, যার নাম তারা কেউ স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতে পারছে না।---মিশার চোখে নতুন কিছুইশানি লক্ষ্য করছিল, মিশা এখন আগের চেয়ে আলাদা।ক্লাসে হঠাৎ হঠাৎ তার দিকে তাকিয়ে থাকা,ছোট্ট ভুল হলে চুপচাপ সেটা ঠিক করে দেওয়া,আর মাঝে মাঝে কথার ফাঁকে এমন কিছু বলে ফেলা, যা সরাসরি প্রেম না হলেও প্রেমের মতো শোনায়।একদিন ক্যান্টিনে বসে হঠাৎ মিশা বলল,— “তুমি জানো, আমি যদি কোনোদিন পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাই, তবে আমার খোঁজে প্রথম কে কাঁদবে ...Read More

4

অচেনা আলো - 4

“অদৃশ্য বাঁধন”কলেজ ক্যাম্পাস যেন হঠাৎ করে অন্যরকম হয়ে উঠেছে।মিশা আর ইশানি আগেও একসাথে থাকত, হাসত, মজা করত, কিন্তু এখন তাদের চারপাশে এক অদ্ভুত আলো জ্বলজ্বল করে।কেউ কিছু টের পাচ্ছে না—কিন্তু তাদের চোখের দৃষ্টি, ছোট্ট স্পর্শ, চুপ করে পাশে দাঁড়ানো—এসব এখন আর আগের মতো নেই।---বন্ধুত্ব নাকি প্রেম?ইশানির ভেতর এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব কাজ করছিল।সে জানত, মিশার প্রতি তার টান শুধু বন্ধুত্ব নয়।কিন্তু প্রতিদিন বাড়ি ফেরার পর আয়নায় নিজের মুখ দেখে সে নিজেকেই প্রশ্ন করত—“আমি কি ভুল করছি? মেয়ের প্রতি এভাবে টান পাওয়া কি স্বাভাবিক?”অন্যদিকে, মিশা অনেকটা স্বচ্ছন্দ।সে লুকোচুরি পছন্দ করে না।ক্লাসে প্রজেক্ট করার সময় হোক বা ক্যান্টিনে একসাথে খাওয়ার সময়, তার ...Read More

5

অচেনা আলো - 5

“ঝড়ের আভাস”---নীরব অস্থিরতাদিনগুলো বদলাচ্ছিল।মিশা আর ইশানি যতই একে অপরের কাছে আসছিল, ততই চারপাশের পৃথিবী তাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতে করছিল।ক্লাসে একসাথে বসা, করিডোরে একসাথে হাঁটা—এসব নিয়ে সহপাঠীদের কৌতূহল যেন বাড়ছিল।কেউ সরাসরি কিছু বলত না, কিন্তু ফিসফিসানি আর খুনসুটি তাদের কানে এসে পৌঁছাত।ইশানি ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠত, কিন্তু মিশা যেন অদম্য।সে সবকিছু উপেক্ষা করে হাসত, মজা করত, যেন কিচ্ছু হয়নি।---অপ্রত্যাশিত প্রশ্নএকদিন ইশানির এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী সরাসরি জিজ্ঞেস করে বসলো—— “শোন, তুমি আর মিশা কি শুধু বন্ধু? নাকি… অন্য কিছু?”ইশানি হকচকিয়ে গিয়েছিল।ঠোঁট শুকিয়ে গিয়েছিল, মাথা নীচু করে শুধু বলেছিল—— “আমরা তো শুধু… বন্ধু।”কিন্তু সেই মিথ্যে কথাটা বলতে গিয়েই তার বুক ফেটে ...Read More

6

অচেনা আলো - 6

অচেনা আলো“অজানা গুঞ্জন”---গুঞ্জনের শুরুকলেজে এখন মিশা আর ইশানির নাম যেন একসাথে উচ্চারণ হয়।প্রথমে তা ছিল হালকা মজা, পরে তা গেল গসিপে, গসিপ থেকে অভিযোগে।ক্যান্টিনে ঢুকলেই কেউ না কেউ ফিসফিস করে—“ওরাই না সেই দুইজন?”“আজকাল নাকি একসাথে বাড়ি ফেরে!”ইশানির বুক কেঁপে উঠত, চোখ নামিয়ে চলত সে।কিন্তু মিশা প্রতিবার মাথা উঁচু করে হাঁটত, যেন এই দুনিয়ার সামনে নিজেকে লুকোনোর কোনো কারণ নেই।---দূরত্বের ছায়াএকদিন ক্লাস শেষে ইশানি বলল—— “আমরা একটু দূরে থাকি, কিছুদিন।”মিশা থমকে গেল, গলাটা শুকিয়ে গেল।— “দূরে? কেন?”— “সবাই কথা বলছে। মা-ও টের পাচ্ছে। আমি চাই না আমার পরিবার ভাবুক আমি কিছু ভুল করছি।”মিশা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তার চোখের কোণে একফোঁটা জল চিকচিক ...Read More

7

অচেনা আলো - 7

১. নীরব সকালকলেজের ঘটনার পর তিনদিন কেটে গেছে।ইশানির বাড়িতে এখন প্রতিদিন ঝড়।মা কথা বলছে না, বাবা গম্ভীর মুখে সংবাদপত্র যান, আর সে চুপ করে বসে থাকে ঘরের এক কোণে।ফোনটা টেবিলের ওপর নিস্তব্ধ, যেন সেটাও রাগ করেছে।মিশা প্রতিদিন মেসেজ পাঠাচ্ছে—> “তুমি ভালো আছো?”“আমি জানি, কষ্ট হচ্ছে।”“আমাদের লড়াইটা এখনই থেমে যেতে পারে না।”কিন্তু ইশানি কোনো উত্তর দিচ্ছে না।ওর চোখের নিচে কালচে দাগ পড়েছে, যেন ঘুমও এখন তার ওপর অভিমান করেছে।---২. মিশার ভিতরের অগ্নিমিশা আর আগের মতো নেই।তার চোখে সেই আগুন আরও গভীর হয়েছে।কলেজে এখন সে একা বসে থাকে—কারও সঙ্গে কথা বলে না।ওর বান্ধবী রিতু একদিন বলল,— “মিশা, একটু ভেবে দেখিস। সবকিছু ...Read More

8

অচেনা আলো - 8

১. ঝড়ের পরে নীরবতাকলেজের উৎসবের পর যেন পৃথিবীটা কিছুটা শান্ত হয়ে গেছে।মিশা আর ইশানির মুখ দেখে কেউ এখন হাসে কেউ ঠাট্টা করে না—বরং সবাই একটু তাকিয়ে থাকে, যেন দু’জনের সাহসের ভেতর কিছু খুঁজে বেড়ায়।কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঝড় থেমে যায়নি।ইশানির মা এখনও চোখ ফিরিয়ে নেন,আর মিশার নিজের পরিবারও নীরব অবস্থান নিয়েছে—“এইসব বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলি না”।এই “না বলা” কথাগুলোর ভেতরেই জমে আছে প্রচণ্ড ক্লান্তি, ভয়, আর একফোঁটা আশার আলো।---২. একসঙ্গে থাকা শেখামিশা আর ইশানি এখন প্রায় প্রতিদিন দেখা করে।কখনও লাইব্রেরির পেছনের চুপচাপ করিডোরে, কখনও নদীর ঘাটে,আবার কখনও শহরের ভিড়ে হঠাৎ এক কাপ কফির টেবিলে।কিন্তু আগের মতো তারা শুধু স্বপ্ন ...Read More

9

অচেনা আলো - 9

১. নতুন সকালশহরের দক্ষিণ দিকের পুরোনো একটি পাড়ায়, তিনতলার এক ছোট্ট ফ্ল্যাটে এখন মিশা আর ইশানির নতুন সকাল শুরু কাপের ধোঁয়ার ভেতর তারা এখনও একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসে, যেন প্রতিদিনের সূর্যোদয়ও একটু নতুন।ইশানি রান্নাঘর থেকে চা এনে রাখে টেবিলে।মিশা কম্পিউটারে বসে NGO-র রিপোর্ট তৈরি করছে।— “তুই অফিসের মতো সিরিয়াস মুখ করে বসে আছিস আবার!”— “কাজটা শেষ না করলে রুবিনা আন্টি আবার খোঁচা দেবে।”দু’জনেই হেসে ওঠে।হাসির ভেতর একটা শান্তি আছে, যা হয়তো ঝড় পেরিয়ে আসা মানুষই বোঝে।ফ্ল্যাটটা ছোট, কিন্তু ভেতরটা উষ্ণ—দেয়ালে টাঙানো দু’জনের ছবিগুলো, কোণের গাছ, আর টেবিলের ওপর খোলা ডায়েরি—সব মিলিয়ে যেন একখণ্ড ঘর নয়, একখণ্ড জীবন।---২. নিজেদের ...Read More