⚜️ ।। লৌকিক দেবী সাবিত্রী ।। ⚜️
ঝাড়গ্রামের সাবিত্রী মন্দির ঘিরে নানা লোককথা।
আজ থেকে চারশো বছর আগে ঘন জঙ্গল ছিল এই সব এলাকা। সাবিত্রী মন্দিরের দুর্গাপুজোও প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন।
রাজস্থান থেকে শিকারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে রাজা মান সিং হঠাৎই এই অঞ্চলে এসে পড়েন। এবং ঘন জঙ্গলে হঠাৎই তিনি অপূর্ব সুন্দরী এক রমণীকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। তাঁর রূপে মুগ্ধ রাজা সাতপাঁচ না ভেবেই তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। রাজার কথা শুনে ওই রমণী শর্ত দেন, রাজা সামনে পথ দেখিয়ে তাঁকে নিয়ে যাবেন, আর পিছনে-পিছনে তিনি যাবেন, কোনও অবস্থাতেই রাজা যেন পিছনে ঘুরে না তাকান। তা হলেই বিপদ ঘটবে। শর্ত মেনেই রাজা ওই রমণীকে পিছনে নিয়ে তাঁর রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। বেশ কিছু পথ চলার পরে রাজার মনে হল-- ওই রমণী কি তাঁকে ছলনা করছেন? পিছনে তো কোনো আওয়াজ নেই! ভাবতে ভাবতে হঠাৎই পিছন ফিরে তাকিয়ে ফেলেন রাজা। সঙ্গে সঙ্গেই ঘটে এক অদ্ভুত ঘটনা। তিনি দেখেন, ওই রমণী ধীরে ধীরে প্রবেশ করছেন মাটির নীচে! দেখে রাজা ছুটে আসেন এবং রমণীর মাথার চুল ধরে তাঁকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হন। তবে তাঁর হাতের মুঠোয় রয়ে যায় রমণীর একগোছা চুল। রাজা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে যান। এবং বোঝেন ইনি সামান্যা নারী নন, কোনও দৈবীক বিষয় এর মধ্যে আছে।
সেই রাতেই রাজা স্বপ্নাদেশ পান-- মা সাবিত্রী ওই স্থানেই মন্দির গড়ে তাঁর পুজোর নির্দেশ দেন। মন্দির গড়ে পুজো শুরু হয়। আর প্রথম থেকেই মা সাবিত্রীর চুল পুজো হয়ে আসছে এখানে। মায়ের শুধু মুখের অংশটুকুই দেখা যায় এখানে।
সাবিত্রী মন্দিরে সাবিত্রী দেবীর নিত্যপুজো হয়। প্রতিদিন বহু মানুষ ওই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন এবং ভক্তিভরে মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন।
এখানকার পুজোয় বলি দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। দুর্গাপুজোর সন্ধিপূজাতেও বলি দেওয়া হয়। দশমীর দিন পাটাবিধা হয়। একটা কলাগাছকে রেখে তার মধ্যে তির ছুঁড়ে মারা হয়। অর্থাৎ, অশুভ শক্তি বিনাশ করে পুজোর সমাপ্তি।
মা সাবিত্রীরই আরেক রূপ যেহেতু দেবী দুর্গা তাই দুর্গাপুজোর দিনগুলি এখানে ধুমধাম করে পুজো হয়। তবে এখানে দুর্গামূর্তি পুজোর প্রচলন নেই। পটেই পুজো হয়। অনেকেই এই পুজোকে তাই পটেশ্বরীর পুজো বলেন।
পুজোর প্রায় ১৫ দিন আগে জিতাষ্টমীর দিন থেকে এখানে শুরু হয় দুর্গা পুজো। নিয়ম মেনে নিষ্ঠা সহকারে পুজো করা হয়। প্রতিদিন যজ্ঞ, হোম ও চণ্ডীপাঠ হয়। শুধু ঝাড়গ্রাম নয় অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার পার্শ্ববর্তী ঝাড়খন্ড ও ওড়িশা থেকে বহু মানুষ এই পুজা দেখতে আসেন।
লেখা ও ছবি - সৈকত মুখার্জী।