জঙ্গলের প্রহরী
পর্ব - ৩৪
♥♠♥♠♥♠♥
স্থানীয় সাংবাদিকরাও হাজির রায়চৌধুরী বাড়িতে। তারা এতক্ষণে মুখে মুখে খবর পেয়ে গেছে। সবাই সিদ্ধার্থ - ঋষির ছবি চায়, তাদের মুখে সব কথা শুনতে চায়।
কমিশনার এবং এডিজি দুজনকে সঙ্গে নিয়ে ওদের সামনে এসে বলেন, ওরা কেস সলভ করেছে, অপরাধী ধরা পড়েছে, তবে কিছু নিয়মকানুন আছে, অপরাধীকে কোর্টে না তোলা পর্যন্ত সবকিছুই বলা যাবে না। মোটামুটি একটা কাহিনী সিদ্ধার্থ আর ঋষি বলবে। তবুও হুড়োহুড়ি হয়, সবাই ওদের ছবি তুলে তবেই ছাড়ে।
এবার গুছিয়ে বসে তালুকদার স্যার বললেন, "সিদ্ধার্থ, বলো, সবাই শুনি কি চমক আছে।"
পুলিশের কাছে কে কি বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে কাউকে কারও কথা শুনতে দেওয়া হয়নি, তদন্তের স্বার্থে। কেবল পুলিশকর্মীরা সকলে শুনেছেন। তাও নাকি কেসের বাইরেও কিছু কথা আছে সিদ্ধার্থর।
সিদ্ধার্থ উঠে দাঁড়ায়, সোমা কমিশনারের অফিসে যা একটু সোনাদাকে ছেড়েছিল, তারপর থেকে পুরোপুরি হস্তগত করে রেখেছে। এখনও দাদার ডানহাত ধরে উঠে দাঁড়ায়। সিদ্ধার্থ কটমট করে তাকাতেই অবশ্য জিভ কেটে বসে পড়ে। ওদিকে শুক্লার বন্ধুরাও এ ওকে একটু ঠেলাঠেলি করে নেয়। আসল লক্ষ্য অবশ্যই শুক্লা। সিদ্ধার্থও সেটা বোঝে।
পকেটে হাত চালিয়ে নিজের এভিয়েটর গ্লাসটা না পেয়ে ওর আবার শোক উথলে ওঠে জন্মদিনে সোমার কিনে দেওয়া সানগ্লাসের জন্য। তাতেই আরও চটেমটে বলে, "বলব আর কি স্যার, প্রায় একবছর ধরে বিডি এই কারবার চালাচ্ছিলেন সন্দেহ করে দিল্লি। প্রথমেই ধরা যায়নি, কিছুকাল পরে না টের পাওয়া গেছিল। তার মানে আরও একটু বেশি সময়। বছরখানেক আগে একবার কাছাকাছি এলাকায় একটি এক্সপ্লোশন হওয়ার পর লোকাল পুলিশ তদন্ত করে, ফেল করলে ইনটেলিজেন্স কল করা হয়। পাহাড়ি এলাকার ম্যাপ খতিয়ে দেখে, এলাকায় রেইকি করে একেবারে প্রথমে এই জঙ্গল আর আশেপাশের এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছিল। বাকি জায়গায় হয় বছরের বেশির ভাগ সময় ট্যুরিস্টদের ভিড়, নয়তো গাড়ি চলার পথ নেই। জিনিসপত্র পাচারের বিশেষ সুবিধা হওয়ার কথা না।"
- "ঠিক এই রিপোর্ট আমাদের থানারই।" ওসি দিবাকর নাথ মাথা দোলায়।
- "এরপর একজন অফিসার এসেছিলেন আজ থেকে ছ মাস আগে। কিছুদিনের মধ্যেই তার পরিচয় সকলেই জেনে যায়। দিল্লি থেকে মনে করা হয়েছিল, ছোট জায়গা, সামান্য বসতি। একটা লোক অনেক দিন থাকলে তার ব্যাপারে জানাজানি হবেই। তাই তাকে আরেকটু সময় দেওয়া হয়। বাট নো রেজাল্ট।" বলতে বলতে আপশোষে মাথা নাড়ে সিদ্ধার্থ।
- "এরপর আমি একটু বলি। টানা পাচার চলছে। এদিকে বর্ষাকাল এসে গেছে। পাহাড়ি জঙ্গল বর্ষায় ঘুরে বেড়ানোর মতো জায়গা নয়। ফলে ধরেই নেওয়া হয়, পাচার বন্ধ থাকবে। আর যেহেতু কোনো কাজ দেখাতে পারেনি, দিল্লির অফিসারকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এদিকে এখানে ওখানে টুকটাক বিস্ফোরণ, অর্থাৎ পরিস্থিতি একই আছে। বর্ষার শেষে এখানে নতুন করে ইনভেস্টিগেশন শুরুর ডিসিশন হয়। আমার ব্যাচমেট প্রকাশ শর্মা হেড অফিসে মূল দায়িত্বে আছে। সে এবার চেয়ে বসল সিদ্ধার্থ আর ঋষিকে। ওদের চেহারা দিল্লির কেউই জানে না। ট্যুরিস্ট বলে পাঠিয়ে দেখা যাক।" তালুকদার স্যার থামলেন।
- "কিন্তু ওখানেও বিশ্বাহহন্তা আছে স্যার। আর গতকাল মোবাইল ফোনের রেকর্ড থেকে তাকে তো ধরাই হয়েছে। তার মাধ্যমে খবর চলে এসেছিল। তাই আমরা আসার আগেই বিডি দলের মূল কর্তাদের থেকে চেয়ে তৈরি রাখল আশীষকে। এখানে মুখে মুখে রটিয়ে দিল আমাদের পরিচয়। আর আমরা আসার পর বুঝে গেল, আমরা ওর দলে ভিড়ব না, আগের বারের অফিসারের মতো। সুতরাং ও প্ল্যান অনুযায়ী আশীষকে নিয়ে এল।"
- "সমস্তটা খুলে বলো, তোমরা এখানে আসার পর কি চলছিল।" তালুকদার স্যার পারমিশন দেন।
- "আমি যেহেতু ইনটেলিজেন্সের আগের অফিসারের ভুল রিপোর্ট পড়ে এসেছিলাম, আমার ধারণা ছিল, পাচারটা হয় সীমান্ত পেরিয়ে এসে, জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। ফলে প্রথমেই শাক্যর সঙ্গে দেখা করি। এটুকু বুঝেছিলাম, শাক্য কিছু লুকোচ্ছে। সেটার যে আমার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, তখন বুঝিনি। ফলে অন্য অনেকের উপর সন্দেহ থাকলেও শাক্যর উপর একটু বেশিই হয়। মোটামুটি এটাই হল ঘটনার আগে আমরা যা জানতাম, ততটা।"
- "তাহলে ঠিক কখন তুমি সঠিক লোককে সন্দেহ করা শুরু করলে, আর কাকে দরকারে লাগবে বেছে নিলে?" শাক্যর বাবা প্রশ্ন করেন।
- "বাছাই করার পর্ব আরও পরে স্যার। তার আগে আরও কতগুলো ঘটনা আছে।" সিদ্ধার্থ হাসে।
- "শাক্যকে ফাঁসানোর প্ল্যান আর নিজেদের কাজও গুছিয়ে নেওয়া, ওরা এটা করতে এগোচ্ছিল। তবে সবটাই বানচাল হয়ে গেল তোমরা একজোট হতেই।" এডিজির মুখে চওড়া হাসি।
- "হ্যাঁ, বিডি জানত না, এদিকে একটা কান্ড হয়ে বসে আছে। মেঘ ভাঙা বৃষ্টি আর পাহাড়ের বন্যা জলোচ্ছ্বাসে, কি শাক্য, কে বলবে? তুমি না আমি?" মাঝপথে থেমে গিয়ে শাক্যর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে সিদ্ধার্থ।
[ ❤ কোন কথাটি সিদ্ধার্থ আর শাক্য দুজনেই জানে? সেটাই কি ওদের হঠাৎ বন্ধুত্বের সেতু?
❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]
চলবে