Jongoler Prohori 33 in Bengali Thriller by Srabanti Ghosh books and stories PDF | জঙ্গলের প্রহরী - 33

Featured Books
Categories
Share

জঙ্গলের প্রহরী - 33

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ৩৩

♥♠♥♠♥♠♥

তালুকদার স্যারের ব্যবস্থাপনায় একটা ফার্স্ট ক্লাস কম্পার্টমেন্ট জুড়ে আনা হচ্ছে রায়চৌধুরী বাড়ির সঙ্কর্ষণ রায়চৌধুরী এবং তার দুই ছেলে, শৌর্য্য আর বৈদুর্য্যকে। তালুকদার স্যার আর জেঠুমণি তো আসছেনই, সঙ্গে আসছে এমন তিনজন এ জগতে একমাত্র যাদের সিদ্ধার্থ সাংঘাতিক ভয় পায়, ওর জেঠিমণি, বৌদি আর বোন। ওরা এসে চোটগুলো দেখলেই কপালে দুঃখ আছে ওর। অবশ্য দাদাভাইও আসছে। 

- "চলো হে, তালুকদার স্যারের সঙ্গে বাকিদেরও ওয়েলকাম করে আসি আমরা। আচ্ছা মিঃ রায়ের বাড়ি থেকে যারা আসছেন, সবার জন্য রুম বুক করা হয়েছে তো হোটেলে?" এডিজি স্যার হাঁকডাক শুরু করেন। 

- "সব রেডি স্যার।" আশ্বস্ত করে ওসি দিবাকর নাথ। 

স্টেশনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে ওরা। একস্ট্রা কম্পার্টমেন্টটা একদম শেষে। স্টেশনের লোকজন ফিরে ফিরে দেখছে জনাকুড়ির এই বিবিধ পদমর্যাদার পুলিশ বাহিনীকে। স্টেশনের চা ওলা, ফল বিক্রেতা, কেক প্যাস্ট্রির দোকানদার ভাবছে, কেসটার ব্যাপারে নাকি? আবার কোন অফিসার আসছে কলকাতা বা দিল্লি থেকে? 

ট্রেন থামতে তালুকদার স্যার প্রথম নামলেন, "সবাই সব জেনে যাওয়ার পর আমার সঙ্গে তোমার দেখা হল এবার। দিস ইজ নট ফেয়ার।" একহাতে প্রিয় শিষ্যকে আগলে নিয়ে অন্য হাতে পিঠে ছোট ছোট চাপড় দিয়ে আদর করেন। 

ঋষি বলে, "এখনও অনেক সিক্রেট আছে স্যার। আপনি সামান্যই মিস করেছেন।" 

- "সামান্য? কি বলছ ঋষি? আমি যে শুনলাম তোমার গানে সমস্ত নর্থ বেঙ্গল ভাসমান? আমি কি ভুল জানি?" তালুকদার স্যারের প্রাণখোলা হাসিতে স্টেশনের সবাই ফিরে ফিরে তাকায় আবার। 

ততক্ষণে ষাটোর্ধ্ব এক প্রৌঢ়কে হাত ধরে নামিয়ে এনেছে এক তরুণ। দুজনেরই চেহারায় সিদ্ধার্থর ছাপ, জেঠুমণি আর জ্যাঠতুতো দাদা। 

সিদ্ধার্থ ওদের দিকে ঘুরলেই দাদা জড়িয়ে ধরে ভাইকে, "কি সব কান্ড করিস না তুই। বাড়িতে এদের সামলানো যায় না।"

- "সব কাঁদছ? উফ, এত ভীতু না তোমরা !" সিদ্ধার্থ লাজুক হাসে। 

বৌদির সঙ্গে নেমেছে জেঠিমণি। সিদ্ধার্থ ম্যানেজ করতে যেতেই জেঠিমণি কাছে এসে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দেয়। এত লোকজনের সামনে বকুনিটা তোলা থাকল বোঝে সিদ্ধার্থ। বৌদির চোখেও একই কথা। তার মধ্যে সোনাদা বলে চিক্কুর ছেড়ে এসে দুই দাদাকে জড়িয়ে ধরেছে সোমা। 

- "ছাড় ছাড় বিচ্ছু, ছাড় বলছি। আমার হাতের ব্যথাটা ডবল করে দিল।" উপস্থিত সবাইকে ভুলে চেঁচিয়ে ওঠে সিদ্ধার্থ। 

- "তুই হাতে এরকম ফুটো করেছিস?" রক্ত জমাট জায়গাটা দেখে সোমার আরও চীৎকার। থতমত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সঙ্কর্ষণবাবু আর তার ছেলেরা। 

- "হ্যাঁ, আমি ফুটো করেছি রে। তুই যেমন আস্ত আস্ত নাক কান সব ফুটো করেছিস গয়না পরতে, আমারও ওরকম মাথার গোলমাল হয়েছিল, তাই হাতে ফুটো করেছি? খুশ? এবার চল মা। হোটেলে চল, ফ্রেশ হ। এখনও অনেক কাজ বাকি আমাদের। সেখানে সবাইকে থাকতে হবে। সবার দেওয়া ইনফরমেশনই লাগবে পুরো গল্পটা বুঝতে।"

- "আমি ট্রেনে কিছুটা শেয়ার করেছি, বুঝলি সো... সিদ্ধার্থ। ওরা এখন বেসটা একটু বুঝতে পেরেছেন। কি রে, ঠিক করেছি তো?" জেঠুমণি মিটিমিটি হাসেন। 

- "একদমই ঠিক। চলো জেঠুমণি, আপনারাও আসুন স্যার। সবাই ওভারনাইট জার্নি করে এসেছেন। হোটেলে চলুন। ফ্রেশ হয়ে একবার অফিসে এসে স্টেটমেন্ট দেবেন।" সিদ্ধার্থ সবাইকে ডেকে নেয়। 

আসুন আসুন করে পুলিশের সবাই আগন্তুকদের পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে। স্টেশনের যত লোকজন, একজোট হয়ে দেখছে এই বিচিত্র মিছিল। 

সোমা অবশ্য ওর সোনাদার হাত ছাড়েনি, ডানহাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে ফিসফিস করে, "রাজীব চ্যাটার্জী স্যার কোথায়?"

সিদ্ধার্থ প্রথমে কটমট করে তাকায়, তারপর বোনের কাচুমাচু মুখটা দেখে নিঃশব্দ হাসিতে মুখ ভরিয়ে বলে, "ওর গার্লফ্রেন্ড এখানে আছে। দুজনে কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কে জানে?''

- "আচ্ছা, জেঠুমণিকে যেটা বলেছিস, সেটা সত্যি কথা? আমার তো ভাবতেই কেমন লাগছে।"

- "আমি জেঠুমণিকে মিথ্যে বলব?"

- "আরে না, মিথ্যে নয় জানি। তুই কি না জেনে শুনেই আমাদের এখানে আনিয়েছিস নাকি? ওহ, কি দারুণ একটা খবর, কত মজা করতাম। সেখানে তোর এই অবস্থা। আর তুই নিশ্চয়ই ডাক্তারের কথা শুনছিস না?"

- "সব শুনছি। এই তো সব মিটে যাবে। আমার রিপোর্ট চলে গেছে দিল্লিতে। চার্জশিট ফ্রেম হয়ে গেলেই আমি কলকাতা চলে যাব। পরে দু একবার আসতে হতে পারে কেসের সময়।"

- "সেসব পরে যা হয় হবে। এখন যতদিন সুস্থ না হচ্ছিস আমাদের সব কথা শুনে চলবি।"

- "ঠিক আছে মেরি মা। এখন চল অনেক কথা বলার আছে আমার।"

খাওয়া দাওয়া সেরে বাড়ির লোকেদের বিশ্রাম নিতে বলে সিদ্ধার্থদের সবাই যায় কমিশনারের অফিসে। সকলের গোপন জবানবন্দী রেকর্ডিং এর পর দুপুর প্রায় শেষে পরপর অনেকগুলো গাড়ি রওনা দেয় পাহাড়ের উপর, পৌঁছয় রায়চৌধুরীদের বাড়িতে। শাক্যর কাছে খবর পেয়ে ওর বাড়ি থেকে সবাই এসে গেছে, আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। এখন এখানে ওখানে জায়গা খুঁজে বসে পড়ে সকলে। 

কলকাতা থেকে আসা সবাই, সংকর্ষণবাবুও ঘুরে ঘুরে বাড়ি জমি দেখেন। তবে এরপরই সন্ধ্যা ঘনাবে বলে সবাই উদগ্রীব সম্পূর্ণ কাহিনী শুনতে। 

[ ❤ এবার জানা যাবে সমস্ত রহস্য। শুধু সামান্য সময়ের অপেক্ষা। 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে