Jongoler Prohori - 7 in Bengali Thriller by Srabanti Ghosh books and stories PDF | জঙ্গলের প্রহরী - 7

Featured Books
Categories
Share

জঙ্গলের প্রহরী - 7

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ৭

❤♣❤♣❤♣❤

- "না স্যার, ঐ লোকটা এখানে আগে কখনো আসেনি। এর আগে কেউ কখনো ওকে দেখেনি। এলে কেউ না কেউ তো দেখত, কেউ তো মনে রাখত।"

- "ধরো যদি এক দুদিনের জন্য এসে থাকে, এক দেড় কিংবা দুবছর আগে?" সিদ্ধার্থ নিজেকেই বলে, ওর চিন্তা এখন নানান খাতে বইছে।"

- "তাহলেও স্টেশনের লোক দেখত না? স্টেশন মাস্টার তো অন্ততঃ দেখত।" সঞ্জয় নিজেও ভাবছে। 

- "এই স্টেশনমাস্টার কত পুরনো?" সিদ্ধার্থ হিসেব করছে। 

- "ঠিক বলেছেন স্যার, স্টেশনমাস্টার বেশি পুরনো না স্যার, কয়েক মাস হল এসেছেন।" সঞ্জয় উত্তেজিত হয়ে ওঠে। 

- "সঞ্জয়, এসব কথা.... " সিদ্ধার্থকে থামিয়ে দেয় সঞ্জয়, "কেউ জানবে না স্যার।" গাড়িও থামিয়ে দেয়, থানা এসে গেছে। 

থানায় এসে তাপস হালদারের খোঁজ করে সিদ্ধার্থ, সে রাউন্ডে গেছে। ওসি দিবাকর নাথ খুবই বিরক্ত, যা সব হচ্ছে, চিতা যদি সত্যিই থাকে, এই পাহাড় জঙ্গলে সে তো লুকিয়ে থাকতে পারবে। একবার মানুষকে আক্রমণ করেছে মানে আবার করবে। টুকটাক হুঁ হ্যাঁ করে সিদ্ধার্থ উঠে পড়ল। বাজারে গেলে তাও যদি কিছু খবর পাওয়া যায়। 

বাজারে এসে তিনজনেই আবার গাড়ি থেকে নামে, ছোট বাজার। আদিবাসী, বাঙালি, ভূটানি মিলিয়ে দশ বারোজন বিক্রেতা। টুকটাক সবজি, ফল, মুরগি বিক্রি হচ্ছে শেষ বেলায় ভাঙা হাটে। ওজনের ব্যবস্থা খুব একটা নেই। চোখের আন্দাজেই বেশিরভাগ জিনিসের দাম ঠিক করা হয়। 

সিদ্ধার্থ গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে চারিদিক দেখছিল, ঋষি আর সঞ্জয় গেছে ওদের নিজেদের বাজারটাও করতে, লোকের সঙ্গে কথাবার্তায় খবর বের করতে। দেখে উলটোদিকে শাক্যর গাড়ি, হেলান দিয়ে ড্রাইভার দাঁড়িয়ে। এদিক ওদিক তাকিয়ে শাক্যকে সবে খুঁজছে, চোখে পড়ে, বাজার পার হয়ে ফাঁকায় একদিকে দাঁড়িয়ে আছে শুক্লা। একটু যেন অস্থির ভাব, বারবার ঘড়ি দেখছে। সিদ্ধার্থও নিজের ঘড়ি দেখে, দেড়টা বাজে। 

চোখ সরু করে শুক্লাকে দেখছে সিদ্ধার্থ। এখানে কার অপেক্ষায়? অবশ্য স্থানীয় মেয়ে, ওর চেনাজানা লোকে নিশ্চয়ই এলাকা ভর্তি। তবে পরিস্থিতিটাও গোলমেলে, এই পরিস্থিতিতে শাক্যর স্ট্যান্ডও গোলমেলে। শুক্লাই বা একটা বই নিয়ে এত ঠ্যাঁটামি করল কেন? ওদের কথা শোনার এত আগ্রহই বা কেন? মানুষের স্বাভাবিক কৌতূহল? রহস্যের প্রতি অমোঘ টান? নাকি সব এত সহজ নয়? সিদ্ধার্থ পকেট হাতড়ায় সিগারেটের প্যাকেটের খোঁজে। 

শুক্লা ততক্ষণে দেখতে পেয়েছে ওকে। হাত তুলে হাসল, "হাই মিঃ রায় ! এত বেলায় বাজারে?" ও প্রত্যুত্তরে পকেট থেকে হাত বের করে হাত তোলার আগেই তড়বড়ে পায়ে এগোতে গিয়ে উঁচুনিচু পাথুরে জমিতে হোঁচট খেয়ে ছিটকে পড়েছে শুক্লা। সিদ্ধার্থ ছুটে যায়, তার আগেই দুজন আদিবাসী মহিলা পুরুষ ওর কাছে চলে এসেছে। সিদ্ধার্থর সঙ্গে পৌঁছয় আরও কয়েকজন। ভালই বিলাপ শুরু হয় বাংলা, আদিবাসী মেশানো বাংলা ভাষায়, দিদিমনি পড়ে গেছে। সিদ্ধার্থ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে এখানকার লোকজনের উপর শুক্লার প্রভাব। 

কানের কাছে শোনে, "দেখেছেন স্যার, সবাই ওদের বাড়ির লোকদের কত ভালবাসে? ভাল না হলে কি এই সরল আদিবাসীরা এতটা করত?" সঞ্জয়ের কথাগুলো ফেলনা নয়। তবে এ নিয়ে আর ভাবার সুযোগ পায় না সিদ্ধার্থ। মহিলারা শুক্লাকে তুলে দাঁড় করিয়েছে, হাত টাত ছরে গেছে বোঝা যাচ্ছে, উঠে দাঁড়িয়ে নিজেও কেমন একটা ভোম্বল মুখ করে টলমল করে আবারও ঘুরে পড়ছিল শুক্লা। দুটি মেয়ে ধরাধরি করে দাঁড় করিয়ে রাখে। 

নিচের দিকে তাকিয়ে রহস্য উদঘাটন হয়, ব্যালেরিনা টাইপ জুতোর একপাটির হিল খুলে গেছে। ফলে দুপায়ে দাঁড়ানোর সাধ্য ওর নেই। 

শুক্লার ড্রাইভার বলে, "দিদি গাড়িতে বসবে চলো।"

সিদ্ধার্থ শুক্লার একটু দূরে ছিটকে পড়া মোবাইলটা কুড়িয়ে নিয়ে এগিয়ে দেয়, "সরি মিস গোস্বামী, আমার জন্যই আপনি পড়ে গেলেন। ভালই চোট লেগেছে দেখা যাচ্ছে। হেলথ সেন্টারে গেলে ভাল হত। ওপেন উন্ডগুলো তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করা দরকার। আর এই নোংরা ধুলোবালিতে কেটেকুটে গেছে, একটা টিটেনাস দিলে ভাল হয়।"

ওকে ধরে থাকা দুই মহিলাকে ধরে আছে শুক্লা, নাহলে পড়েও যাবে হয়তো। তাই ফোন নিতে হাত তো বাড়ায়ই না, বরং ব্যথার ভাব মুছে গিয়ে মুখে চরম আতঙ্ক ফুটে ওঠে, "টি টিটেনাস নি মানে নিতে হবে?"

ওহ, বেশিরভাগ মেয়েদের মতোই ইনজেকশনে ভয় ! অন্যসময় হলে সিদ্ধার্থর মজাই লাগত, এখন সামলে গেল, বেশ চোট লেগেছে বেচারির। 

- "টিটেনাস দিয়ে নেওয়াটাই ভাল। আপনার দাদা মিঃ গোস্বামী এসেছেন? আসুন গাড়িতে আসুন।" একটি হাত বাড়িয়ে শুক্লার গাড়ির দিকটা দেখায়। 

মহিলারা শুক্লাকে ধরে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। শুক্লা দাঁড়িয়ে পড়ে, "দাঁড়াও দিদি, জুতোটা খুলে নিই।" কোনোমতে কাত হয়ে জুতো খুলতে খুলতে ব্যথায় মুখ বিকৃত করে শুক্লা, "দাদা আসেনি। আমিই এসেছিলাম একটু।"

একটু আগেই গাড়ির আওয়াজ পেয়েছিল সিদ্ধার্থ, এখন শুক্লার জুতো খোলা হতে না হতে নিচের দিকের বাঁকের আড়াল পেরিয়ে একটা গাড়ি বেরিয়ে এল হুশ করে, থামল শুক্লার গাড়ির পাশে। সবাই মুখ ফিরিয়ে দেখছিল। প্রায় একসঙ্গে শুধু ড্রাইভারের পাশের দরজা বাদ দিয়ে বাকি তিনটে দরজা খুলে হুড়মুড়িয়ে নামল পাঁচজন, তিনটি মেয়ে, দুটি ছেলে। 

[ ❤ শুক্লার আচমকা চোট লাগার প্রভাব কি তদন্তে পড়বে? ওর হাটে আসার উদ্দেশ্যই বা কি ছিল? কারা এল গাড়ি নিয়ে? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে