Jongoler Prohori - 5 in Bengali Thriller by Srabanti Ghosh books and stories PDF | জঙ্গলের প্রহরী - 5

Featured Books
Categories
Share

জঙ্গলের প্রহরী - 5

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ৫

❤♣❤♣❤♣❤

- "এটা একটা গল্প মিঃ রায়। মিথ বলতে পারেন। এই অঞ্চলে প্রচলিত জনশ্রুতি, লোককথা। জঙ্গলের ভিতরে একটা ঢিপি আছে, আদিবাসীদের দেবী। স্থানীয় বাঙালিরাও মানে এই দেবীকে। তাঁকে সবাই বলে ঠাকুরাণী। জনশ্রুতি হল, অনেকটা বনবিবির মতো সেই ঠাকুরাণীর পোষা চিতাবাঘ ছিল।"

- "এই চিতাই রায়চৌধুরীদের ছেলেকে বাঁচিয়েছিল?" ঋষি তড়বড় করে ওঠে। 

- "সেটাই তো লোককথা।"

- "লোকে কি বলে তো বুঝলাম। আমি আপনার মত জানতে চাইছি মিঃ গোস্বামী। আপনি কি জানেন সেটা বলুন, প্লিজ। উই নিড ইওর ওপিনিয়ন।"

- "দেখুন আমার মত হল, চিতার আক্রমণ সে সময় খুব স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। তখনও আমাদের এখানকার জঙ্গলে চিতা ছিল। এবার সেই ঘটনা নিয়ে একটা গল্প তৈরি হওয়াও স্বাভাবিক, তাই নয় কি?" 

শাক্য কি এড়িয়ে যাচ্ছে? একপলক ভাবে সিদ্ধার্থ। উত্তরের আশা যখন নেই, তবে আর প্রশ্ন করেও লাভ নেই। হাত বাড়িয়ে বলে, "আপনি সব ইনফরমেশন শেয়ার করবেন আশা করি।"

শাক্য সিদ্ধার্থর হাতটা একবার ঝাঁকিয়েই ছেড়ে দেয়, "নিশ্চয়ই, তবে মুশকিল হল, এখন বহুদিন বৃষ্টি হয়নি, মাটি শক্ত। চিতার পায়ের ছাপ আমরা পাচ্ছি না। আর যে একমাত্র জলাশয় আছে, সেটা জঙ্গলের গভীরে। সেখানে আরও ব্যবস্থা না করে আমরা ঢুকতে চাই না। হাতিরা যেন কোনোভাবেই বিরক্ত না হয়। কারণ বাইরে থেকে একটা চিতাও যদি এসে থাকে, তাতেই হাতিরা এখন উত্তেজিত।"

- "দেখুন আপনি কতটা কি করতে পারেন। আমি আসি তাহলে।" সিদ্ধার্থ উঠে পড়ে। 

- "দাঁড়ান দাঁড়ান। মায়ের সঙ্গে দেখা করে যান।"

শাক্যর মা এসেই বলেন, "এটা কেমন হল? দিনের বেলায় এসে দুটো ভাত না খেয়ে কারও বাড়ি থেকে যায়?"

- "না না, আমরা ডিউটিতে আছি।" সিদ্ধার্থ তাড়াতাড়ি থামায়, "মিঃ গোস্বামীর ডে অফ বলে উনি এখানে ডাকলেন। এমনিতেই আপনাদের অনেক অসুবিধা করলাম।"

- "ঠিক আছে ঠিক আছে। আবার আসতে হবে কিন্তু। সেবার আর ছাড়ব না।" শাক্যর মায়ের সামনে সত্যিই লজ্জা করে ওঁর আপ্যায়নে। ঋষি টক করে প্রণাম করে বলে, "আপনি আশীর্বাদ করুন মাসিমা, আমাদের কাজটা যেন তাড়াতাড়ি মিটে যায়। তাহলে এসে জমিয়ে খেয়ে যাব।"

মনে মনে ঋষির উপর দাঁত কিড়মিড় করে সিদ্ধার্থও প্রণাম করে। শাক্যর উপর যথেষ্ট সন্দেহ ওর, সেখানে এত মাখামাখি একটুও পছন্দ নয়। "আচ্ছা আসি তাহলে" বলে পা বাড়ায়। 

- "দাঁড়ান মিঃ রায়। আপনাকে এককপি নতুন বই দেব বলেছিলাম না? এই নিন। এটা আপনাকে গিফট করলাম আমরা। আমারটা আমাকে দিয়ে দিন।" কিছু করার নেই, শুক্লা হাতে একেবারে আনকোরা একটি বই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুক্লার সঙ্গে বই বদলাবদলি করে সিদ্ধার্থ আর ঋষি বেরিয়ে আসে। 

❤♣❤♣❤♣❤

সিদ্ধার্থর কপালে ভাঁজ, এভিয়েটর গ্লাসের আড়ালে চোখ দেখা যায় না বলে বোঝা যাচ্ছে না, কি পরিমাণ চটে আছে। তবে কথায় বলে, সাপের হাঁচি বেদেয় চেনে। ঋষি ঠিকই বুঝেছে। 

- "দাদা, এ গড়বড় আছে। না ও জঙ্গলে লোক ঢুকেছে স্বীকার করছে, না চিতাটাকে দেখেছে বলছে।'' ঋষি চুপ থাকতে পারে না। 

কথা হচ্ছিল ওদের গাড়িতে বসে। এখন একবার লোকাল থানায় যাবে, নাকি রায়চৌধুরীদের বাড়িতে যাবে, ভাবছিল সিদ্ধার্থ। ঋষির কথায় বলে, "কতদিন মিথ্যে বলতে পারে আমিও দেখি।"

গাড়িটা ওকে দেওয়া হয়েছে অফিস থেকে, ড্রাইভার স্থানীয় লোক, সে হঠাৎ বলে, "রেঞ্জারস্যার খুব সৎ লোক। ওনার বাবা, দাদু, কেউ কখনো মিথ্যে বলেনি। চিতা উনি কি করে দেখবেন? চিতা তো ঠাকুরাণীর পোষা চিতার দলের।"

- "সঞ্জয়, তোমরা সবাই বলছ, ঠাকুরাণীর পোষা চিতা, এই ব্যাপারটা কি? আমাদের রিপোর্ট দিতে হবে তো?" ঋষি বেমক্কা ড্রাইভার সঞ্জয়কেই প্রশ্ন করে বসে। সিদ্ধার্থর ভীষণ বিরক্ত লাগছে, এখন একগাদা আষাঢ়ে গল্প শুনতে হবে। ঋষি যে কি করছে আজ ! কষে ধমক দিতে হবে। 

- "স্যার, রিপোর্ট কি দেবেন আপনারা ভাল জানেন। আপনারা কত বড় অফিসার এখানে বাচ্চা বাচ্চা জেনে গেছে। বিশেষ করে রায়সাহেব, উনি তো ম্যাজিক জানেন।" সঞ্জয় গাড়ি চালাতে চালাতেই বলে, "আমরা আপনাদের সব আগের কেসের গল্প শুনেছি, কে বন্ধুকে মেরে নাম বদলে বাউল সেজে লুকিয়ে ছিল, আবার কার উপর সম্পত্তির ঝামেলায় ঘুমের মধ্যে গুলি চলেছিল, কিন্তু তার আগেই হার্ট এ্যাটাক হয়ে সব শেষ হয়ে গেছিল, এসব কঠিন কঠিন কেস সব রায়সাহেব সলভ করেছেন আমরা সবাই জেনে গেছি।"

প্রশংসায় কখনোই গলে যায় না সিদ্ধার্থ। তবে সেই মানুষও আজ অবাক হয় ! সঞ্জয়কে বলেই ফেলে, "তুমি এত কথা জানলে কি করে?"

- "কেন স্যার, ভুল কিছু বলেছি? আপনি তো সত্যিই ঐ শাইলক হোমসের মতোই বড় গোয়েন্দা পুলিশ।" সঞ্জয় ওর বসকে নিয়ে গদগদ। 

বস এদিকে রেগে কাঁই, কারণ বসের ভ্রাতৃতুল্য এতদিনের পুরনো এ্যাসিস্টেন্টটি হাসি চাপতে পারছে না। শাইলক শুনে ঋষির নিঃশব্দ হাসিতে ব্রেক ধরছে না। 

[ ❤ শাক্য গোস্বামী কি লুকোতে চাইছে? শুক্লার কি বিশেষ ভূমিকা আছে এই কাহিনীতে? সঞ্জয়ের কাছে সিদ্ধার্থ কি কি জানতে পারবে? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে