The significance of the festival in Bengali Moral Stories by DR RAJESH CHOUDHURI books and stories PDF | উৎসবের সার্থকতা

Featured Books
Categories
Share

উৎসবের সার্থকতা

 বিভিন্ন জায়গায় খুব বড় বড় মেলা হয়। এই মেলাগুলো প্রত্যেকটাই একেকটা অনুষ্ঠান মাত্র । দুর্গাপূজা, কালীপূজা, গনেশপূজা এইগুলোও একেকটা অনুষ্ঠান। আমাদের বাড়ীঘরে বিয়ে, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী  ইত্যাদি বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। আজকাল আমাদের রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে promo Fest নামে বিরাট বিরাট গানের জলসা হচ্ছে।  প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানেই মানুষ খুব আনন্দ উল্লাস করছে।  অনেক মেলাতেই ভীষণ ভীড় হয়, রকমারি  খাওয়াদাওয়া হয়, নাচগান হয়,  আধুনিক ব্যান্ডের  গানে তুমুল উল্লাস হয়।

তেমনি ঠাকুরের উৎসবগুলোও একেকটা অনুষ্ঠানই। অন্যান্য অনুষ্ঠানের মতই এই অনুষ্ঠানে মানুষের ভীড় হয়, বহু মানুষের মিলন হয়, সাজগোজ-আড্ডা-সেল্ফি-গ্রুপ ফটো-ফেইসবুক পোস্ট-রিলস,  খাওয়াদাওয়া, গানবাজনা,  আনন্দ উল্লাস হয়। প্রকৃতপক্ষে অন্যান্য আনন্দ অনুষ্ঠান, মেলা  ও ঠাকুরের উৎসবের মধ্যে  কোন বাহ্যিক  পার্থক্য নেই।

কিন্তু,- কিছু একটা পার্থক্য তো আছেই। শুধু যদি আনন্দ উল্লাস, গানবাজনা, নাচানাচি, খাওয়াদাওয়া, প্রিয়জনদের সাথে হৈ-হুল্লোড়,   সেল্ফি  পোস্ট করা, ফেইসবুকে ভিডিও পোস্ট করাই উদ্দেশ্য হয়,- তবে ঠাকুরের উৎসবের চেয়েও আরো অনেক ভাল ভাল অনুষ্ঠান বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে৷ promo Fest গুলোতে এর চেয়ে অনেক ভাল গানবাজনা হচ্ছে। সেগুলোতে গিয়ে আনন্দ করলেই হয়। শুধু আনন্দ আর উল্লাসের জন্য ঠাকুরের উৎসব আয়োজন নিরর্থক। 

তাই,-কোন উৎসবে কত বেশী ভীড় হল, কেমন জমজমাট কীর্তন হল, কেমন তুমুল নৃত্য হল, কত বড় প্যান্ডেল ও লাইটিং হল, কত টাকা খরচ হল, কোন্ কোন্  নেতামন্ত্রী এসে প্রসাদের কড়াইয়ে হাতা দিয়ে নাড়া দিল, কোন কোন মন্ত্রীর সাথে দাঁড়িয়ে বিগলিত স্মিত হাস্যে  আমার ফটো স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হল,-  এগুলো আলোচ্য বিষয় হলেও উৎসবের মূখ্য উদ্দেশ্য হল,- সেখানে উপস্থিত প্রত্যেকটি মানুষ কতটুকু ঠাকুরকে পেল। আমি সেই উৎসবে গিয়ে কতটুকু ঠাকুরমুখী হলাম।

সেই উৎসবে গিয়ে কারো আলোচনা শুনে, ঠাকুরের দয়ার ঘটনা জেনে আমি নতুনভাবে ঠাকুরকে আজকে জানলাম, ঠাকুরের ভাবে ভাবিত হয়ে রইলাম সারাদিন,- তবেই আমার উৎসবে যাওয়া সার্থক। কারো ভক্তিগীতি শুনে, কীর্তন শুনে, আড্ডায় উপস্থিত কারো যাজনে আমি আরেকটু ঠাকুরমুখী হলাম, ঠাকুরের পথে চলার একটা প্রেরনা পেলাম, আরো নাম ধ্যান যজন যাজন করার উৎসাহ পেলাম, আরো ডিপি ওয়ার্ক করার জন্য উদ্ধুদ্ধ হলাম- তবেই এই উৎসবে যোগদান সফল হল আমার জন্য। আশেপাশের সকল অদীক্ষিত মানুষজন এই উৎসবে এসে ঠাকুরের আদর্শের সাথে নতুনভাবে পরিচিত হল, ঠাকুরই যে বাঁচার একমাত্র পথ তা অন্তত কিছু মানুষের মাথায় ঢুকল, আমাদের আপ্যায়ন-সেবা-শৃংখলা-ব্যাবহার দেখে ঠাকুরের প্রতি আকৃষ্ট হল,- তবেই উৎসবের আয়োজন সার্থক।

যারা এই উৎসবে এসে আজকে ঠাকুরের দীক্ষা পেল,- তারাই এই আয়োজনে সবচেয়ে বেশী লাভবান হল। তাদেরই উৎসবে আসা সবচেয়ে বেশী সার্থক। যারা এই উৎসবে এসে স্বস্ত্যয়নী ব্রত গ্রহন করার প্রেরনা পেল,- তাদের এই  উৎসবে যোগদান সার্থক। কোন আলোচনায়, গানে, কীর্তনে যারা আরো বেশী আচার্য্যদেবকে ভালবাসার প্রেরনা পেল,- তাদের জীবন সার্থক হল। উৎসবে এসে কারো আলোচনা শুনে ঠাকুর সম্পর্কে আমার একটা দীর্ঘদিনের প্রশ্নের উত্তর পেলাম, আমার মনের সন্দেহ দূর হল, আচার্য্য পরম্পরার মানে অনুধাবন করতে পারলাম, কিভাবে ঠাকুরের হয়ে উঠতে হয়, কিভাবে পরিবারে শান্তি পাওয়া যায়, কিভাবে দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়া যায় তার একটা নতুন কথা জানলাম,- সেই বিষয়ে একটা নতুন কথা জানলাম তবেই উৎসবে আসা আমার সার্থক।

তাই উৎসবে এসে আমি কয়টা ভিডিও পোস্ট করলাম, কয়টা সেল্ফি তুললাম, কয়জনের সাথে দেখা হল, কত নাচানাচি করলাম,- সেটা মূখ্য নয়৷ যারা উৎসবের আয়োজন করল এবং যারা উৎসবে অংশগ্রহণ করল,- তারা উভয়েই এই উৎসবের মাধ্যমে কতটুকু ঠাকুরকে পেল,- সেটাই উৎসবের সার্থকতা৷

ঠাকুরের উৎসব মানে শুধু একটা বিরাট আনন্দ অনুষ্ঠান নয়, শুধু গানবাজনা ও খাওয়াদাওয়া নয়,- প্রত্যেকের জীবন আরেকটু ঠাকুরমুখী করার আয়োজন।