Listen please in Bengali Motivational Stories by DR RAJESH CHOUDHURI books and stories PDF | একটু দাঁড়ান

Featured Books
Categories
Share

একটু দাঁড়ান

একটু দাঁড়ান!! সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দম বন্ধ করে  টাকা আর ক্ষমতার পেছনে যে ইঁদুর দৌড় দৌড়ে চলেছেন,- এই সাংঘাতিক ব্যাস্ততা কিছুক্ষনের জন্য থামিয়ে নিরিবিলি একটু চোখ বন্ধ করে ভাবুন। কি চান আপনি জীবনে? কি আপনার জীবনের সঠিক উদ্দেশ্য?কি কারনে দিনরাত এই উম্মাদের মত ব্যাস্ততা? ভাবুন!!  ভাবুন!!  ভাবতে থাকুন। উত্তর পেয়েছেন? আমিও ভেবেছি অনেকদিন। কিছু উত্তর  পেয়েছি। দেখুন তো আপনার মনের সাথে মিলে কিনা,-

★ প্রথমেই চাই নীরোগ সুস্থ- সবল-কর্মপটু শরীর। 

★ চাই নিরন্তর আনন্দ, শান্তি, রাতে নিশ্চিন্ত ঘুম।

★ চাই একটা গুছানো ছিমছাম নিজের বাড়ি, - যেখানে আমার পরিবার নিয়ে সুখে-ভালবাসায় বাস করব।

★ চাই স্ত্রীর সাথে  ভালবাসার ও শান্তিপূর্ণ একটা সম্পর্ক।

★চাই সন্তান যেন মানুষ হয়, ভদ্র-শিক্ষিত-শ্রদ্ধাপূর্ন-স্বাবলম্বী-দায়ীত্ববান হয়। সে যেন নেশামুক্ত আনন্দপূর্ণ জীবনের অধিকারী হয়। আমায় যেন ভালবাসে,- সম্মান করে।

 ★ মা বাবা যেন সুস্থ থাকে, তাদের মনে যেন কোন দু:খ-কষ্ট না থাকে। তাদের যেন সুখে রাখতে পারি।

 ★পরিবার-প্রতিবেশী-আত্মীয় স্বজন ও সমাজে সকলের সাথে যেন আমার একটা সৌহার্দপূর্ণ, ভালবাসার ও সম্মানজনক সম্পর্ক বজায় থাকে। 

এই তো!! একজন সাংসারিক মানুষ এর চেয়ে বেশী কি চায়? আপনি কি এর চেয়ে ভিন্ন কোন চাহিদা মনের ভিতর পোষন করেন? আমি আধ্যাত্মিক বা উচ্চ মার্গের মানুষের মনের চাহিদার কথা বলছিনা। ঘোর সংসারী মানুষ হিসাবে আমার মনে হয় সকলেই এই চায়। এইবার একটু ভাবুন তো,- এই চাহিদাগুলো পূরন করতে ঠিক কত কোটি টাকা প্রয়োজন?  দিনরাত যে শুধু টাকা আর ক্ষমতার জন্য জান লড়িয়ে দিচ্ছি,- ঠিক কত পরিমান টাকা আর ক্ষমতা অর্জন করতে পারলে এই চাহিদার পরিতৃপ্তি সম্ভব? এই যে,- সকাল থেকে ঘুম থেকে উঠেই পাগলের মত শুধু ছুটে চলেছেন,- প্রভুত ক্ষমতা আর অনেক টাকা জমিয়েছেন,- আরো জমাচ্ছেন আর জমাচ্ছেন,- আরো ক্ষমতা জন্য পাগলপারা হয়ে আছেন,-★আপনি টেনশনমুক্ত আনন্দপূর্ণ জীবন অতিবাহিত করছেন তো?★ শরীর স্বাস্থ্য ঠিক আছে তো? ★ সুখী দাম্পত্য জীবনের অধিকারী হয়েছেন তো?★ সন্তান মানুষের মত মানুষ হয়েছে তো? আপনাকে শ্রদ্ধা-ভক্তি করে তো? অন্তর থেকে ভালবাসে তো?★রাতে নিশ্চিন্তে নাক ডেকে ঘুমাতে পারছেন তো? ★মা বাবাকে সময় দিতে পারছেন তো?★ পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, সমাজ আপনাকে সম্মান করে তো? তাদের সাথে মোটামুটি ভালবাসার ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক আছে তো? ★ ছেলে মেয়ে নেশাটেশা করছে না তো?★ আপনি কোন অপরাধ বোধ, ভয়, অনিশ্চয়তা, অশান্তি ইত্যাদিতে ভোগছেন না তো?যদি এতগুলো প্রশ্নের মধ্যে যেকোনো একটি বা দুটি প্রশ্নের উত্তরও যদি বিপরিত হয়ে থাকে,- তবে আপনার সব টাকা, সব সম্পত্তি, সব ক্ষমতা বৃথা। অনেক রিক্সাওয়ালা, ঠেলাওয়ালা, দিনমজুর মানুষের জীবন দেখবেন আপনার চেয়ে ভাল আছে। তাদের জীবন অনেক বেশী সার্থক। ঠিক কয়টা বাড়ি হলে, কত্ত বড় বাড়ি বানাতে পারলে, কত দামী গাড়ি হলে, কত ভরি সোনার গয়না বানাতে পারলে, ব্যাংকে ঠিক কত কোটি টাকা জমাতে পারলে, কত দামী মোবাইল হাতে নিয়ে ঘুরলে, কত বড় ক্ষমতার অধিকারী হলে,- উপরোক্ত চাহিদাগুলো ঠিক ঠিক পূরন করা সম্ভব? একটু হিসাব নিকাশ করে দেখবেন তো। টাকা অবশ্যই প্রয়োজন। টাকা ছাড়া কোন কিছুই সম্ভব নয়। যারা বলে " টাকাই সবকিছু নয়"- তারা ভুল বলে। টাকাই অনেক কিছু। টাকা ছাড়া ধর্মও হয়না। মা বাবার সেবাও হবেনা। গরীব হয়ে বাস করাটা পাপ। গরীব কেন হব আমরা? তাই নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা খাঁটিয়ে যথেষ্ট পরিমান টাকা রোজগার করাটাই একজন সংসারী মানুষের ধর্ম। ঈশ্বর আমাদের শক্তি দিয়েছেন, বুদ্ধি দিয়েছেন, চোখ-কান-নাক-হাত-পা দিয়েছেন। বুদ্ধি খাঁটিয়ে সততার সাথে পরিশ্রম করলে, কথায় কাজে মিল থাকলে, পরিশ্রম করলে, জীবনে নিয়ন্ত্রন থাকলে,- কেউ গরীব থাকেনা৷ কিন্তু শুধু টাকা আর ক্ষমতার পেছনে দিনরাত ছুটতে ছুটতে বোকার মত জীবনের আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবাসিত করা কি উচিত? সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য অঢেল অর্থ সঞ্চয় করতে চাইছেন.? ভাবছেন,- তাতে সে পরবর্তী জীবনে আনন্দে-শান্তিতে কাটাতে সক্ষম হবে?ভুল ভাবছেন। সন্তান যদি মানুষ হয়, যোগ্য হয়,- তবে সে আপনার চেয়ে বেশী রোজগার করবে। আপনার জমানো অর্থ কোন প্রয়োজনই নেই। আর,- যদি সন্তান অযোগ্য, অমানুষ হয়,- তবে আপনার জমানো অঢেল অর্থ তার ধ্বংস ত্বরান্বিত করবে নিশ্চয়। পৃথিবীর যত যত ধনীতম ব্যাক্তিরা আছেন,- তাদের অধিকাংশই সাংসারিক জীবনে সুখী নন। ইলন মাস্ক তিনবার বিয়ে করেছেন,- ডাইভোর্স হয়ে গেছে। উনার মেয়ে আদালতে গিয়ে উনাকে ত্যাজ্য পিতা ঘোষণা করেছে৷ ইলন মাস্ক দীর্ঘদিন ডিপ্রেশনের ঔষধ খেয়েছেন। এত অর্থ, এত ক্ষমতা, এত যশ দিয়েও তিনি স্ত্রী সন্তানকে সুখী করতে পারেন নি। আপনি ভাবছেন,- কয়েক কোটি টাকা আর বিশাল বাডি বানিয়ে স্ত্রী সন্তানকে সুখী বানাবেন? তাই,- যদি জীবনের সার্থকতাই চান,- তবে এই ইঁদুর দৌড়টা কিছুক্ষনের জন্য থামিয়ে গুরুর কাছে গিয়ে বসুন। আচার্য্যের সঙ্গ করুন। তাঁর কথা শুনুন। সংসারে কিভাবে সুখী হওয়া যায়, কিভাবে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে আনন্দে দিন অতিবাহিত করা যায়, কিভাবে সুস্থ থাকা যায়, শান্তির অধিকারী হওয়া যায়,- সারাক্ষন এইসব নিয়েই উনার কাছে চর্চা হয়। আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরের সদদীক্ষা নিয়ে আচার্য্যদেবকে মাথায় নিয়ে চলি,- পরকালে স্বর্গে যাওয়ার জন্য নয়। ঈশ্বর আমার সামনে এসে আবির্ভূত হয়ে হাত তুলে আমায় তিনটা বর দেবেন,- এই আশায় নয়। কিভাবে সুখে সংসার করা যায়, আনন্দে নিশ্চিন্তে ঘুমানো যায়, সন্তানকে মানুষ করা যায়, মা বাবাকে তৃপ্ত করা যায়, বউকে খুশী করা যায়, শরীর মন সুস্থ রাখা যায়,- এইসব উদ্দেশ্য পূরন করার জন্যই শ্রীশ্রীঠাকুর আমাদের মাঝে এসেছেন। আচার্য্যদেবও দিনরাত এইজন্যই চেষ্টা করে চলেছেন। তাঁর দীক্ষা নিয়ে তাঁর কাছে যাওয়ার সময় নেই, আচার্য্যদেবের ইচ্ছা পূরনে আগ্রহ নেই,- সাংঘাতিক ব্যাস্তসমস্ত হয়ে দিনরাত শুধু টাকার পেছনে ছুটলে অবশেষে ব্যার্থতার গ্লানি ঘিরে ধরবে অবশ্যই।