Effect of Love in Bengali Spiritual Stories by DR RAJESH CHOUDHURI books and stories PDF | ভালবাসার প্রভাব

Featured Books
Categories
Share

ভালবাসার প্রভাব

 চারপাশে কত শত মানুষ ধূম্রপানে আসক্ত! ধূমপানের ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে তারা সকলেই অবগত।  সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা " SMOKING IS INJURIOUS TO HEALTH " সতর্কবার্তা এবং  সেই প্যাকেটে ছাপানো ভয়ংকর ক্যান্সার রোগের ছবিটিও তারা সকলেই দেখতে পায়। কিন্তু এমন কাউকে কি পাওয়া যাবে - যার মনে এই সতর্কীকরণ লেখা আর ভয়ংকর ক্যান্সার রোগের ছবি দেখে বোধোদয় হয়েছে,- এবং  তার ফলস্বরূপ  উনি এক লহমায় দীর্ঘদিনের সিগারেটের নেশা ছেড়ে দিয়েছেন? যদি পাওয়া যায়ও-- সেই সংখ্যা খুবই নগন্য । অথচ, আমাদের আশেপাশে এমন অনেককেই খুঁজলে পাওয়া যায় যারা তাদের যেকোন একজন ভালবাসার মানুষের ( মা, বাবা, বউ, সন্তান, বন্ধু,প্রেমিক- প্রেমিকা বা গুরু) কথায় প্রভাবিত হয়ে - তাদের মন রাখতে গিয়ে, তাদের ভালবাসার দাবী রাখতে গিয়ে  দীর্ঘদিনের ধূমপানের অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছেন।  যদিও তার অনেক কষ্ট হয়েছে- কিন্তু সেই ভালবাসার মানুষটির মুখ মনে করে আর সিগারেটে হাত দেয়নি। সেই সতর্কীকরণ বার্তা আর ছবি যেখানে ব্যার্থ- সেখানে এই ভালবাসার দাবীই সার্থক। 

আমার এই ধান বানতে শিবের গীত গাওয়ার  পেছনে উদ্দেশ্য হল,- আমাদের দেশে  কত কত মহাপুরুষ, মুনি- ঋষি, অবতার, সদগুরু আবির্ভূত হয়েছেন এবং তাঁরা কত শত বানী, নীতিকথা, উপদেশ দিয়ে গেছেন! সেগুলি পড়তে, শুনতে সকলেরই খুব ভাল লাগে। মনে ক্ষনস্থায়ী একটা প্রভাবও তৈরী হয় বটে। কিন্তু  সেই বানীকারক বা উপদেষ্টার প্রতি যদি আমাদের সক্রিয় ভালবাসা বা টান না থাকে - তবে সেই শুস্ক বানী, নীতি, উপদেশের বিশেষ কোন প্রভাব আমাদের চলন-চরিত্রে পড়ে না। প্রতিদিন যতই গীতা পাঠ করিনা কেন- ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে যদি নিজের মা, বাবা, বউ, সন্তানের চেয়ে ও বেশী ভালবাসতে না পারি,- তবে গীতাপাঠের কোন প্রভাব আমার চলন- চরিত্রের উপর পড়বে না। তাই হয়ত স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, " গীতা পাঠের চেয়ে ফুটবল খেলা ভাল।" কারন, কৃষ্ণপ্রেম ছাড়া গীতাপাঠ সময়ের অপচয় মাত্র। তারচেয়ে বরং ফুটবল খেললে স্বাস্থ ভাল থাকবে। তিনি সেটাই বুঝাতে চেয়েছেন হয়ত।

আমি কখনো গান শিখিনি। গান গাইতে ও খুব একটা ভাল লাগতনা। আমার মা অল্পবিস্তর  গান গাইতে পারেন, মায়ের স্বর্গীয় বাবা ভাল গান করতেন। মা চাইতেন আমি গান শিখি।অনেকদিন আমাকে নিয়ে হারমোনিয়াম এর সামনে বসেছেনও। কিন্তু অল্প কিছুক্ষন বসেই উঠে পড়তাম। মা বকাঝকা করেও কোন লাভ হয়নি। আমি ক্লাস টুয়েলভে পড়ার সময় একদিন দেখি মা একা একা বসে চোখের জল ফেলছে। আমি চিন্তিত হয়ে কারন জিজ্ঞেস করতে মা বললেন," আমার বাবা ছোটবেলায় মারা গেছেন। উনি গান করতেন। তোকে দেখলে আমার বাবার কথা মনে হয়। আমার ইচ্ছা ছিল তুই বাবার মত গান করবি।কিন্তু তুই আমার এই ইচ্ছার কোন দাম দিলিনা।" মা'র সেদিনের কথাগুলো আমার বুকে ছুড়ির মত গিয়ে লেগেছিল। তিনমাসের চেষ্টায় আমি হারমোনিয়াম বাজিয়ে সৎসংগে মোটামোটি কাজ চালানোর মত গান গাওয়া শিখেছিলাম। 

আমি ছোটবেলায় খুব একটা মেধাবী ছিলাম না, অন্যদের মত  খেলাধুলা ছেড়ে পড়াশোনা করতে ও খুব একটা পছন্দ ছিলনা। মা'র অল্প বয়সে আমার দাদু মারা যাওয়ায় বেশীদূর পড়াশুনা করা হয়নি, বাবারও ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ায় সম্ভব হয়নি।আমি যখন থেকে একটু আধটু বুঝতে শিখেছি- দেখেছি পড়াশুনা না করতে পারার জন্য মা'র মনে প্রতিনিয়ত আক্ষেপ। বাবাকেও দেখেছি কম পড়াশুনার জন্য পাড়ার কাকা-জেঠাদের সামনে হীনমন্যতায় ভুগতে। মা স্বপ্ন দেখতেন- আমি খুব পড়াশোনা করে একটা ভাল, প্রতিষ্টিত জায়গায় পৌঁছব। মা'র সেই আক্ষেপ আর স্বপ্ন আমার শিশুমনকে তাগাদা দিত খেলাধুলার আকর্ষন ছেড়ে একটু বেশী বেশী পড়ে ফেলতে।

 আমি ঠাকুরকে কখনো দেখিনি। ঠাকুরের সম্পর্কে কিছু জানতামও না ছোটবেলায়। কিন্ত দেখতাম মা ঠাকুরকে নিয়ে খুব ব্যাস্ত থাকেন, প্রার্থনা করেন সকাল সন্ধ্যা,  সৎসঙ্গে যান নিয়মিত। কোনদিন আমি প্রার্থনা না করলে, বাড়ীতে ঋত্বিক ও অন্যান্য গুরুজনরা আসলে প্রনাম না করলে - মা খুব মন খারাপ করত। মা খুশী হবে এই  আশায় আমি প্রার্থনা করতাম, গুরুজনরা আসলে প্রনাম-টনাম করতাম। এইভাবে বড় হতে হতে ঠাকুরকেও সামান্য ভালবেসে ফেললাম।  

এতকিছু বলার উদ্দেশ্য আমার মাতৃভক্তির পরিচয় দেওয়া নয়। আমাদের জীবনে কারো প্রতি সক্রিয় ভালবাসা কিভাবে প্রভাব ফেলে তার দুই একটা নমুনা দেওয়া মাত্র। এমন প্রতিটি মানুষের জীবন ঘাটলেই দেখা যাবে তার যেকোন উন্নতি, সামান্যতম যোগ্যতার পেছনেই মা, বাবা, শিক্ষক বা অন্য কারো প্রতি ভালবাসার টানই একমাত্র কারন। মানুষ কখনো একা খুশী হতে পারেনা। অন্যকে খুশী করেই নিজে প্রকৃত খুশী হয়। 

এই ভালবাসার পাত্র যত উচ্চ হয়, প্রবৃত্তির প্রভাব মুক্ত হয়, আদর্শপরায়ন হয় -আমার নিজের চলন-বলন- করা- স্বভাব- চরিত্র ও তত উন্নত হয়। এই ভালবাসার পাত্রটি আমার মা, বাবা, বন্ধু, শিক্ষক যেকেউ হতে পারে। আমি হয়ত আমার মা বাবাকেই ভালবাসি শুধু। কিন্তু আমার মা-বাবা যদি প্রবৃত্তিপরায়ন হন, আমার বাবা যদি ঘুষ খেয়ে থাকেন, যদি মদ-বিড়ি খেয়ে থাকেন, মা যদি হিংসাপরায়ন হন, ঝগরাটে হন,  লোভী হন-- তবে উনাদের প্রতি ভালবাসার টানে আমিও উনাদের সমস্ত ভালগুনগুলির পাশাপাশি এইসমস্ত খারাপদিকগুলিও আমার চরিত্রগত করে ফেলব। বা, উনারা যেহেতু নিজেই এই সমস্ত দোষের নিয়ন্ত্রাধীন - তাই উনাদের পক্ষে সম্ভব নয় আমাকে এই দোষগুলি থেকে মুক্ত করা। 

তাই মা-বাবার প্রতি ভালবাসার পরেও আমাদের জীবনে প্রয়োজন একজন জীবন্ত আদর্শের প্রতি সক্রিয় ভালবাসা - যিনি হবেন সমস্ত প্রবৃত্তির বন্ধন থেকে মুক্ত, যিনি আমার বৈশিষ্টমাফিক আমায় বাচা-বাড়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, যিনি আমাকে আমার মা- বাবার চেয়ে ও বেশী ভালবাসার ক্ষমতা রাখেন। আর, সেই ভালবাসার পাত্রটিই হল সদগুরু। এবং তিনি ছবির বা মূর্তির গুরু না হয়ে রক্ত-মাংসের জীবন্ত হলেই ভাল।

 সদগুরুর প্রতি ভালবাসার যাত্রা শুরুর প্রাথমিক পদক্ষেপই হল সদ্ দীক্ষা।  দীক্ষা নিয়ে তাঁর প্রদর্শিত পথে অনুশীলনের মাধ্যমে  চলতে চলতে তাকে অনুভব করা যায়, তাঁর ভালবাসার পরশ পাওয়া যায়, তাঁকে ভালাবাসা যায়, তিনিঁই যে রেতঃ শরীরে সুপ্ত থেকে নিরন্তর জীবন্ত আছেন তা বোধ করা যায়। আর তখনই জীবন্ত আদর্শকে পাওয়া যায়।

 দীক্ষাব্রতের প্রথম ও মূল কথাই হচ্ছে- অনুরাগের সাথে গুরুর নামজপ ও ধ্যান করা। নামজপ ও ধ্যান করার মাধ্যমে গুরুর প্রতি অনুরাগ জন্মে এবং এই অনুরাগের ফলে মানুষ গুরুকেন্দ্রিক হয়ে উঠে এবং গুরুর প্রতি এক ভাবাবেগের সৃষ্টি হয়। গুরুর প্রতি ভালবাসা বা টান যতই তীব্র হয়ে উঠে এবং যখন সেই টান বৃত্তিভেদী টানে উন্নীত হয়- গুরুর স্বার্থ, নির্দেশ বা ইচ্ছাই মূখ্য হয়ে উঠে- তখন খুব সহজেই অজ্ঞাতসারে বৃত্তি- প্রবৃত্তির উপর নিজের নিয়ন্ত্রন চলে আসে। আর, এই বৃত্তি নিয়ন্ত্রন করতে পারাই হচ্ছে সার্থক জীবনের অধিকারী হবার প্রথম ধাপ। 

 গুরুর প্রতি টান বাড়াবার - গুরুকে আপন করে নেবার আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে গুরুসেবা।  প্রত্যহ নিঃশর্ত ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে গুরুকে ভক্তিভরে নৈবদ্য নিবেদনই হচ্ছে গুরুসেবা- সহজতম নামকরন ' ইষ্টভৃতি'।  এই ইষ্টভৃতির মাধ্যমে আমরা শ্রীশ্রী ঠাকুরকে অতি প্রত্যুষে, আমাদের সকল কাজের আগে একমাত্র তাঁরই ভোগের জন্য নিঃশর্তভাবে ভক্তিভরে অর্ঘ্য নিবেদন করে থাকি। এইভাবে তাঁকে দেবার মাধ্যমে তাঁর প্রতি এক সহজ টান গজিয়ে উঠে।  আর এই ইষ্টভৃতির অর্ঘ্য খুব সযত্নে ও সতর্কে রাখার দরুন,  কাটায় কাটায় ত্রিশদিন পূর্ণ হলে পাঠানোর মাধ্যমে,  মানুষের মনের সচেতনতা বেড়ে যায়। 

 ইষ্টভৃতি নিবেদনের মতই আমাদের আরেকটি নিত্য পালনীয় অভ্যাস হল " স্বতঃঅনুজ্ঞা" পাঠ।  ইংরেজীতে বলে  Autosuggestion.  আমরা প্রত্যহ যেভাবে নিজেকে ভাবিত করি- আমরা হয়েও উঠি তেমনি। স্বতঃঅনুজ্ঞাতে যা পাঠ বা আবৃত্তি করতে হয়- তা রোজই করলে এবং পাঠের বিষয়বস্তু ভেবেচিন্তে পাঠ করলে তা ধীরে ধীরে মানব মনের উপর প্রভাব বিস্তার করে  এবং  ঐভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে সুন্দর চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। 

তারপরই আসছে খালিপেটে ডাটাসহ একটি থানকুনি পাতা বা থানকুনি পাতার অভাবে তিন- চারটি তুলসীপাতা ভালমত চিবিয়ে খেয়ে জল খাওয়া।  থানকুনি পাতা বা তুলসীপাতার ভেষজগুণ অনেকেরই জানা। এই অতি মূল্যবান অথচ মূল্যহীনভাবে সহজলভ্য বস্তু- শ্রীশ্রীঠাকুর ব্রতের অংগ হিসাবে ব্যাবহার করতে বলেছেন- যাতে শরীর সুস্থ ও নীরোগ থাকে। 

তারপর আছে - শবাসন বা মৃত্যুঞ্জয় আসনে ধ্যান। শ্রীশ্রী ঠাকুরের বলামতে - দিনরাত্র চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে অন্তত তিন- চার বার শবাসনে পাচ- সাত মিনিট থাকা।  ঐ সময় ইষ্টকে মাথার পশ্চাতভাগে ( occiput) চিন্তা করে ইষ্টনাম জপ করতে হয়।  এর মাধ্যমে মন তো স্থির হয়ই, সাথে সাথে দেহের মনের ক্লান্তির অবসান হয়।  মানসিক উদ্বেগ,  ক্লান্তি ও অবসাদ থেকে যে সমস্ত দৈহিক ও মানসিক রোগের সৃষ্টি হয়- তা থেকে রক্ষা পাওয়ার এক অমোঘ বিধান।

 শ্রীশ্রী ঠাকুর " নিরামিষ " আহারই পছন্দ করেছেন এবং উত্তেজক ও মাদক দ্রব্যাদি পরিহার করে চলাই সমীচিন বলেছেন। স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, " মাছ-মাংস খাসনে আর/ পেয়াজ রসুন মাদক ছাড়।"  নীরোগ ও দীর্ঘায়ু জীবনের জন্য নিরামিষ আহারের উপযোগীতা বর্তমান যুগে আর তর্কের অবসান রাখে না। তাঁকে ভালবেসে,  তাঁকে খুশী করার জন্য কত কত মাদক নেশাভ্যস্থ মানুষ হেলায় নেশা বর্জন করেছে তার লেখাজোকা নেই।

 মানবজীবনকে আরও সুন্দরভাবে স্থিতিশীল ও বর্দ্ধনশীল করবার জন্য আরও যে দুটি বিষয়ের উপর শ্রীশ্রী ঠাকুর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছেন তা হচ্ছে- ' শিক্ষা' ও ' বিবাহ'। বর্তমানে চলিত শিক্ষাপদ্ধতিতে লক্ষ করা যায় যে বাহির হতে কতকগুলো বিষয় যেন জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শ্রীশ্রী ঠাকুর বলেন শিক্ষকের মূল লক্ষ্য হবে ছাত্রের স্বাভাবিক চলাফেরা থেকে তার ঝোঁক বা প্রবনতা খুজে বের করা এবং সেইভাবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা - যাতে সেই ছাত্রের মধ্যস্থ জন্মগত সুপ্ত সম্ভাবনা ফুটিয়ে তুলে জীবনবৃদ্ধির কাজে নিয়োগ করান যায়। তিঁনি মনেপ্রানে বিশ্বাস করতেন- এই দুনিয়ার প্রত্যেকটি মানুষ এক বিশেষ বৈশিষ্ট নিয়ে জন্মগ্রহণ করে- যে বিশিষ্টতা অপর থেকে ভিন্ন।আর এই বৈশিষ্ট্যকে বজায় রেখে তাকে যত উতকর্ষশীল করা যাবে- সে ততই তার বিশেষ ক্ষমতা বা apptitude দিয়ে সমাজকে সেবা দিতে পারবে। 

এই বিশেষ কর্মক্ষমতা বা aptitude নির্ভর করে প্রথমতঃ বংশপরম্পরা ও দ্বিতীয়ত সেই বিশেষ কর্ম্মানুশীলনের উপর। এই aptitude এর ভিত্তিতেই তৈরী হয় মানুষের বর্ন - যে বর্ন হচ্ছে চরিত্রের, কর্মক্ষমতার, বৈশিষ্টের,  ঐতিহ্যের। আর প্রায় একই রকম বর্নের মানুষের গুচ্ছই হচ্ছে শ্রেণী বা class.বিপ্র, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই মূল চার বর্নই হচ্ছে আর্য দর্শনের চতুর্বর্ণ। এই চতুর্বর্ণের মধ্যে কেউ ছোট, কেউ বড় নয়। বরং প্রত্যেকেরই সমাজকে সেবা দেবার বিশিষ্ট ভূমিকা রয়েছে।   শ্রীশ্রী ঠাকুর বিশেষভাবে জোর দিয়ে বলেছেন- আমরা কেউই যেন আর্যদর্শনের বিজ্ঞানসম্মত এই বর্নভিত্তিক সমাজকে অবহেলা না করি, বিরুদ্ধে না যাই বরং ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যয়ালা মানুষের নিজ নিজ বৈশিষ্টকে পরিপোষন দিয়ে,  এক দক্ষ সমাজ গঠনে ব্রতী হই।

এই বিশেষ বৈশিষ্ট বা aptitude কে বংশানুক্রমে স্থিতি ও বর্ধনশীল রাখতেই প্রয়োজন হয়ে পড়ে সুসংগত বিবাহ অর্থাত বিবাহে বর্ণ,বংশ, বিদ্যা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি লক্ষ রাখতে হবে।  এমন স্ত্রী ও পুরুষের মিলন ঘটাতে হবে যেখানে উভয়ে এক অচ্ছেদ্য শ্রদ্ধা ও ভালবাসার টানে আবদ্ধ থেকে পরস্পরকে পরিপূরন করায় সহজভাবে যত্নশীল থাকে। তখনই হবে -" উন্নয়ন আর সুপ্রজনন এই তো বিয়ের মূল"  এই বর্ণ,বংশ, বিদ্যা, স্বাস্থ্য, বয়স প্রতিটি দিকেই যেন পাত্র-পাত্রী সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং তখনই স্ত্রী  ঐ পুরুষকে শ্রদ্ধার সাথে স্বামী হিসাবে বরন করতে পারবে।  এই পরস্পর শ্রদ্ধাশীল ও পরিপূরনশীল দম্পতিতেই নেমে আসবে সুপ্রজনন। বর- কনে নির্বাচনের সময় অতি অবশ্যই বংশানুক্রমে পর্যবাসিত হয় এমন অসুখ- যেমন, বহুমূত্র, উচ্চ রক্তচাপ, কিছু মানসিক রোগ ইত্যাদির উপর নজর রাখতেই হবে। দ্বীতিয়তঃ নিকট আত্মীয় বা সগোত্রের মধ্যে বিবাহ করান একেবারেই উচিত নয়।

এইভাবে নিজের ব্যাক্তিগত উন্নতির সাথে সাথে সমাজের সাথে নিজেকে বাধতে শ্রীশ্রী ঠাকুর যে   ' যাজন' প্রক্রিয়ার বিধান দিয়েছেন তা সত্যিই পরিবেশের মধ্যে মংগল স্থাপনের এক বাস্তব সুকৌশল।  তিনিঁ বিশ্বাস করতেন মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সে একা বাচতে পারেনা, বাড়তে পারেনা- পায় না সে বাচার আনন্দ। তাই পরিবেশের আপদে বিপদে ঝাপিয়ে পড়ে উদ্ধার করা, অভাবে পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য সহযোগিতা ও প্রেরনা দেওয়া, প্রত্যেককে নিজ নিজ বৈশিষ্টের উপর দাড় করিয়ে উন্নতিমূখর চলনে সাহায্য করা,  আদর্শমুখীন চলায় অভ্যস্ত করনে উব্ধুদ্ধ করা, স্বাস্থ্যের উপযুক্ত অনুকূল পরিবেশ রচনায় সচেতন করা, ব্যাক্তিগত সদাচার পালনে প্রেরনা দেওয়া- এইভাবে গোটা পরিবেশকে সুস্থ, সুন্দর ও উদ্ধর্দ্ধনী করে তোলার জন্য -" যাজন" করাকে প্রতিজন দীক্ষিত ব্যাক্তিকে গ্রহন করতে ও পালন করতে বলেছেন।