Easy ways to achieve a fulfilling life in Bengali Motivational Stories by DR RAJESH CHOUDHURI books and stories PDF | সার্থক জীবন লাভের সহজ উপায়

Featured Books
Categories
Share

সার্থক জীবন লাভের সহজ উপায়

Lao Tzw নামে একজন চাইনিজ দার্শনিক বহু পূর্বে একটি কথা বলেছিলেন,-" তোমার ভাবনাচিন্তার প্রতি লক্ষ রেখো,- কারন তোমার চিন্তাই তোমার বাক্যে পরিনত হয়।

তোমার বাক্যের শব্দচয়নের প্রতি লক্ষ রেখো,- কারন তোমার শব্দই  তোমার কর্মে পরিনত হয়।

তোমার কর্মের প্রতি লক্ষ রেখো,- কারন তোমার কর্মই তোমার অভ্যাসে পরিনত হয়।

তোমার অভ্যাসের প্রতি লক্ষ রেখো,- কারন তোমার অভ্যাসই তোমার চরিত্রে পরিনত হয়।

তোমার চরিত্রের প্রতি লক্ষ রেখো,- কারন তোমার চরিত্রই তোমার ভাগ্য নির্ধারণ করে। "

মুদ্দা কথা হল,- আমার ভাগ্য নির্ভর করে আমার চিন্তা, আমার কল্পনা, আমার মানসিক স্থিতির উপর।

Law of attraction বলে একটা থিওরি আজকাল বহুল প্রচারিত। এই থিওরি অনুযায়ী, - মানুষ কায়মনোবাক্যে একাগ্রচিত্তে যা কামনা করে, - বিশ্বব্রাম্মান্ডের সমস্ত শক্তি তার সেই কামনা পরিপূরনে নিয়োজিত হয়। একজন গভীরভাবে যা বিশ্বাস করে তাই তার জীবনে বাস্তবায়িত হয়।

শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা,-" গভীর বিশ্বাসে সবই হতে পারে।"- Law of attraction তা পুরোপুরি সমর্থন করে।

মনোবিজ্ঞান বলে,- অবচেতন মন বাস্তব আর কল্পনার মধ্যে পার্থক্য বুঝেনা৷ আইনস্টাইনের কথায়,-" Imagination is more powerfull than knowledge. "  একজন মানুষের মন ও চিন্তা তার সমস্ত জীবনের বাস্তবতাকে নিয়ন্ত্রন করে।

আবার একজনের মন ও চিন্তা নিয়ন্ত্রন করে তার সঙ্গ, তার পরিবার, তার শিক্ষা, তার ভালবাসার লক্ষ।

Napolean Hil নামে বিশ্ববন্দিত দার্শনিক -লেখক বলেন,-" Whatever your mind can conceive and believe, it can achieve. "

১৯৫৪ সালে  আমেরিকার একজন বিখ্যাত শারীরবৃত্তীয়  গবেষক ও বিজ্ঞানী তার বইয়ে উল্লেখ করেছিলেন,- চার মিনিটের কম সময়ে একজন মানুষের পক্ষে এক মাইল দূরত্ব অতিক্রম করা সম্ভব নয়। যদি এমনটা কেউ করার চেষ্টা করে তবে তার পেশী ও স্নাযু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারন একজন মানুষের পেশী ও স্নায়ুর ক্ষমতা সীমিত।

কিন্তু আশ্চর্য!! এই বই প্রকাশের কিছুদিন পরই রজার পেনিস্টার নামক একজন এথলেট ৩ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডে এক মাইল দূরত্ব দৌড়ে অতিক্রম করে। এটা কিভাবে সম্ভব হল? বিজ্ঞানীরা হতবাক!!

রজার পেনিস্টারকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান,- তিনি রোজ কল্পনা করতেন যে তিনি চার মিনিটের কম সময়ে এক মাইল দূরত্ব অতিক্রম করেছেন। কয়েক হাজার বার তিনি কল্পনায় এই দৌড় করেছেন। তিনি যখন রোজ প্রেক্টিস করতেন তখন প্রতিটি স্টেপ দেওয়ার সময় ভাবতেন তিনি আজকেই চারমিনিটের কম সময়ে এই দূরত্ব পার করবেন। ক্রমাগত এই কল্পনা করতে করতে ও রোজ অভ্যাসের সময় এই কল্পনাকেই বাস্তবে সত্য ভেবে নিতে নিতে তার মস্তিস্কের স্নায়ুতন্ত্রে পরিবর্তন হয়ে গেছিল।  এই স্নায়ুপরিবর্তনকে বিজ্ঞানীরা neuroplasticity বলেন।

পরবর্তী সময় রজার পেনিস্টারকে অনুসরণ করে আরো অনেকেই এই মাইল ফলক অতিক্রম করেছেন। যেটা একসময় বিজ্ঞানের কাছে অসম্ভব বলে পরিগণিত হত,- সেটাই একসময় অনেকের জীবনেই সম্ভব হয়েছে। শুধু শারীরিক কসরত দিয়ে এই অসম্ভব সম্ভব নয়,- মানসিক শক্তিরও বিশাল ভূমিকা রয়েছে৷

এই মানসিক শক্তির দ্বারাই এডমন্ড হিলারি মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন, শচীন তেন্ডুলকর একশ সেঞ্চুরি করেছেন, ইলন মাস্ক তার সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন৷এ সবই সম্ভব হয়েছে neuroplasticity র দ্বারা।

ব্রুশ লি নিজেকে একটা চিঠি লিখেছিলেন এবং সেই চিঠিটি তিনি সবসময় নিজের কাছে রাখতেন,- রোজ তা পাঠ করতেন। কি লেখা ছিল সেই চিঠিতে?  তিনি লিখেছিলেন,-" আমার একমাত্র লক্ষ হল,- আমি, ব্রুস লি' USA র সবচেয়ে দামী সুপারস্টার হব, - এবং তার পরিবর্তে আমি সবচেয়ে ভাল অভিনয় করে মানুষকে সর্বোচ্চ আনন্দ দেব। "

রনবীর সিং এক্টর হতে চাইতেন। তার যখন একুশ বৎসর বয়স, - তখন তিনি দেয়ালে DDLG সিনেমার একটা পোস্টার লাগিয়ে সেই পোস্টারে শাহরুখ খানের মুখের জায়গায় নিজের মুখের ছবি বসিয়ে দিয়েছিলেন। রোজ তিনি এই ছবিটি দেখতেন। তিন বৎসর পর তিনি একজন বিখ্যাত চিত্রপরিচালকের ডাক পেয়ে সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন।

অমন বহু ঘটনা রয়েছে। বার বার প্রমানিত,- মানুষ একাগ্রচিত্তে যা কল্পনা করে এবং সেই কল্পনা বাস্তবায়িত করতে অনুরূপ কর্মে নিরন্তর নিয়োজিত থাকে,- তার জীবন অনুরূপ লক্ষে অবশ্যই পৌছায়।

আমাদের লক্ষ স্থির নেই, মানসিক একাগ্রতা নেই, নিষ্ঠা ( নি:শেষে লেগে থাকা) নেই, অনুরূপ কর্মে নিরন্তর নিয়োজিত থাকার ধৈর্য নেই,- তাই আমাদের জীবন এলোমেলো। আগোছালো প্রবৃত্তির ফাঁদে পড়ে মন আজকে এখানে,- কাল সেখানে হাবুডুবু খাচ্ছে। তাই জীবনে এত অশান্তি।শ্রীশ্রীঠাকুর বলেন- মানুষের ইচ্ছাশক্তিই আসল। ইচ্ছাশক্তি দ্বারা জীবন পরিবর্তন করা যায়। তবে আমরা প্রায়শই ' ইচ্ছাশক্তি' আর ' মনের খেয়াল" ব্যাপার দুটো গুলিয়ে ফেলি।

একটা মানুষ জীবনে কোন লক্ষে পৌঁছলে তার জীবনে সমস্ত সুখ, শান্তি, আনন্দ, সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব? অঢেল অর্থ? অঢেল ক্ষমতা? বিত্ত-বৈভব-পান্ডিত্য?

না,- এগুলো কখনোই একজন মানুষকে পূর্ন শান্তি-স্বস্তির অধিকারী করতে পারেনা,- তা বার প্রমানিত।

তাই,- শ্রীশ্রীঠাকুর আমাদের রোজ ধ্যানান্তে স্বত:অনুজ্ঞা পাঠের বিধান দিলেন।.. " আমি অক্রোধী, আমি অমানি, আমি নিরলস............... উদ্দীপ্ত শক্তি সংবৃদ্ধ তোমারই সন্তান....প্রেম পুষ্ট চিরচেতন... আমায় গ্রহন কর, প্রনাম লও"

স্বত:অনুজ্ঞার প্রতিটি বাক্য রোজ আবেগভরে উচ্চারণ করতে করতে, নিজেকে কল্পনায় হলেও তেমনতর রোজ ভাবতে ভাবতে,- আমাদেরও মস্তিস্কে neuroplasticity হয়। শুধু কাগজে ছাপানো শব্দ নয়,- শ্রীশ্রীঠাকুর আমাদের সামনে রেখে গেছেন এই শব্দগুলোর এক  জীবন্ত রূপ,- পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীআচার্য্যদেব। নিত্য তাঁর সঙ্গ করলে আমাদের চিন্তা-ভাবনা সেই অনুযায়ী পরিবর্তন হয়। তাঁর আদেশ পালনে নিয়মিত রত থাকলে সেই কর্মের প্রভাবে আমাদের মস্তিস্কের স্নায়ু সুগঠিত হয়৷ রোজ ইষ্টভৃতি নিবেদন ও নামধ্যান আমাদের মস্তিস্কে অনুরূপ ছাপ ফেলতে থাকে৷ তাতে আমাদের চিন্তা সুকেন্দ্রিক ও সুন্দর হতে থাকে।

সেই চাইনিজ দার্শনিক Lao Tzw এর কথা অনুযায়ী, - চিন্তা সুকেন্দ্রিক হতে হতে আমাদের বাক্য সুন্দর হতে থাকে, বাক্য অনুযায়ী কর্ম সুন্দর হতে থাকে, কর্ম থেকে অভ্যাস সুন্দর হয়ে উঠে, অভ্যাস থেকে হয় সুন্দর চরিত্র,- আর সুন্দর চরিত্র হলে ভাগ্যও সুন্দর হয়।

তাই শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,-

" ঊষানিশায় মন্ত্রসাধন

চলাফেরায় জপ।

যথাসময় ইষ্টনিদেশ

মুর্ত করাই তপ৷ "