No one is an atheist. in Bengali Spiritual Stories by DR RAJESH CHOUDHURI books and stories PDF | নাস্তিক বলে কোন মানুষ হয় না

Featured Books
Categories
Share

নাস্তিক বলে কোন মানুষ হয় না

 " আমি নাস্তিক, - ঈশ্বর টিশ্বর মানিনা। "

 এই বাক্যটা বলে আজকাল অনেক আধুনিক উচ্চ শিক্ষিত মানুষজন নিজেদের বুদ্ধিমত্তা ও বিজ্ঞানমনস্কতার পরিচয় জাহির করতে চায়। অনেকে অবশ্য " নাস্তিক " শব্দটা উচ্চারনের চেয়ে " এথিস্ট" উচ্চারন করা পছন্দ করে। তাতে আরো স্মার্ট শুনায়। বেশ কুল কুল ভাব!! আমি বাস্তববাদী, আমি কুল বিজ্ঞানমনস্ক, - এই ধারনাটা সকলের কাছে তুলে ধরাই উদ্দেশ্য।

 না না,- ঈশ্বর মানার কোন প্রয়োজন নেই। ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করার একদমই প্রয়োজন নেই। ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করেও অনেক ভাল জীবন কাটানো যায়। বাঘ, ভাল্লুক, কুকুর, বেড়াল,,শেয়াল, গাছপালা এইসব জীবগুলো কি কখনো ঈশ্বরের পূজা করে, তারা কি ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করেছে? তাই বলে কি তাদের জীবন ভাল কাটছে না? ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করছে না বলে কি ঈশ্বর তাদের অভিশাপ দিচ্ছে? 

ঈশ্বরকে না মানলেও ঈশ্বরের কিছু যায় আসে না,- মানলেও ঈশ্বর ঈশ্বরই থাকেন। শুধু শুধু ঈশ্বরকে নিয়ে কচকচানির কোন প্রয়োজন নেই। যাকে দেখিনি, যার কোন বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমান নেই,- তাকে কল্পনা করে তার পূজা করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।

  কিন্তু ভাই,- নিজের অস্তিত্বকে স্বীকার কর তো? সারাক্ষন যে "আমি আমি" করছ, "আমার আমার"  করছ,- সেই ' আমি' টা কে, কোথায় থাকে সে ? ' আমি' কে দেখেছ? বিজ্ঞান প্রমান করেছে তোমার ' আমি' টাকে? 

" আমি" কে দেখেছ কখনো? না না,- আয়নার সামনে দাড়িয়ে যেটা দেখছ সে তো তোমার শরীর। শরীরটা তুমি নও নিশ্চই। তবে " আমার শরীর" বলতে না!! অর্থাৎ এই শরীরের মালিক " আমি" নামে অন্য কেউ।

 ভাবছ,- ' মন' টাই ' আমি'? না না,- তবে একইভাবে ' আমার মন' বলতে না৷ অর্থাৎ এই মনের মালিকও ' আমি" নামে অন্য কেউ।

 শরীরটা ' আমি' নই, মনটাও ' আমি' নই। তবে ' আমি' কে? এই ' আমি' র অস্তিত্ব আছে বলেই তো আমি শরীর ও মন নিয়ে বেঁচে আছি।

 এই ' আমি' কে  অস্বীকার করতে পার না নিশ্চই?  তবে তুমি আস্তিক। নিজের অস্তিত্বকে যে স্বীকার করে সেই আস্তিক। নাস্তিক বলে কোন জীব হয়না। কুকুর বেড়ালও নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারেনা।  

" আমি নাস্তিক",- অমন বলাটাই নিজের স্থুল বুদ্ধির পরিচয়। অমন যারা বলে তারা কখনো গভীরভাবে কোনকিছু নিয়ে ভাবতে রাজী নয়, কোন সূক্ষ্ম চিন্তা করতে সক্ষমই নয়। তাই খুব সহজে " আমি নাস্তিক" বলে নিজেকে হাল্কা রাখতে চায়।

 ঈশ্বরকে জানার প্রয়োজন নেই। আগে নিজের ' আমি' টাকে খুঁজতে চেষ্টা কর, এই ' আমি' টাকে ভাল করে জানতে চেষ্টা কর। দেখবে সব উত্তর পেয়ে যাবে। তখন ঈশ্বরের অস্তিত্বও স্বীকার করতে বাধ্য হবে। ' আমি' যদি থাকি,- তবে ঈশ্বরও আছে। ' আমি' এই ঈশ্বরেরই খন্ড প্রকাশ। ' আমি' ঈশ্বরেরই অংশ।

 নিজের মধ্যেকার এই ঈশ্বরের একান্ত চাহিদা হল  সেই পূর্নব্রম্ম  ঈশ্বরের সাথে মিলিত হওয়া,- তাঁর সাথে মিলনের আকুতি চিরন্তন। ঈশ্বর তাঁর এই ক্ষুদ্র অংশগুলোর সাথে একাত্ম হতেই মানুষ হয়ে গুরুরূপে আসেন বারে বারে৷ তাই সেই সদগুরুকে ধরলে ঈশ্বরপ্রাপ্তি খুব সহজ হয়। 

এই ' আমি' র খোঁজ জানাতেই ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র এসেছেন, দ্বাপর যুগে এসেছেন শ্রীকৃষ্ণ। তারপর একে একে এসেছেন,- প্রভু যীশু, ভগবান বুদ্ধ, শ্রীচৈতন্য, শ্রীরামকৃষ্ণদেব। সর্বশেষ হেমায়েতপুরে এসেছেন পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। 

তারা প্রত্যেকেই এই পূর্ণব্রম্ম ঈশ্বরের প্রকাশ। সর্বশেষ যিনি এসেছেন,- তাঁর মধ্যে পূর্ব পূর্ব সকলেই বর্তমান৷ তাঁরা কেউ ভিন্ন ভিন্ন নন। যুগ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন রূপে প্রকাশ। তাই সর্বশেষ যিনি,- তাঁর শরন নিতে হয়, তাঁকে জানতে হয়, তাঁকে অনুসরন করতে হয়। তাহলেই নিজের সেই ' আমি' র খোঁজ পাওয়া যায়। জীবন সার্থক হয় তাতে।