The Curse of Matangi - 3 in Bengali Spiritual Stories by MOU DUTTA books and stories PDF | মাতঙ্গীর অভিশাপ - 3

Featured Books
Categories
Share

মাতঙ্গীর অভিশাপ - 3



🌸 তৃতীয় পর্ব: “রহস্যময় অতিথি”

গিরিরামপুরে সেদিন সন্ধ্যা নেমেছিল অদ্ভুত রঙে। গঙ্গার জলে সোনালি আভা পড়ছিল, পাহাড়ের গা থেকে হালকা কুয়াশা নেমে আসছিল। এমন সময় গ্রামে প্রবেশ করল এক অচেনা মেয়ে। তার গায়ে সাদামাটা শাড়ি, কপালে লাল টিপ, চোখে এক অদ্ভুত শান্তি। সে গ্রামের মন্দিরের দিকে এগিয়ে গেল, যেন পথ চেনে।

গ্রামবাসী অবাক হয়ে দেখল—সে মন্দিরে ঢুকে একদম মাতঙ্গী মূর্তির সামনে বসে পড়ল। তারপর চোখ বুজে মন্ত্রপাঠ করতে লাগল। যারা মন্দিরে ছিল তারা বলল—
“এ মেয়েটি কে? এর তো মুখ থেকে দেবীর মন্ত্র বেরোচ্ছে!”

মেয়েটি মন্ত্রপাঠ শেষ করে জল ঢালল মাতঙ্গীর পায়ে, তারপর আস্তে করে বলল—
“মা, আমি তোমার ডাকে এসেছি। যাকে তুমি বাঁচাতে বলেছ, আমি তার পাশে দাঁড়াব।”


---

সেই সময় রাজা মন্দিরে এলেন। তিনি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। মনে হল, যেন বহুদিন ধরে এই মুখটা তিনি দেখছেন—কিন্তু কোথায় দেখেছেন তা মনে করতে পারলেন না।

“তুমি কে মা?” রাজা প্রশ্ন করলেন।

মেয়েটি মাথা নিচু করে বলল,
“আমি শুধু একজন সাধিকা। আমার নাম ‘আরাধ্যা’। দেবীর নির্দেশে আমি এসেছি। যদি অনুমতি দেন, আমি মন্দিরেই থাকব।”

রাজা সম্মতি দিলেন, কিন্তু মনে মনে ভাবলেন—এই মেয়ের আগমন কাকতালীয় নয়।


---

প্রাসাদে খবর পৌঁছাল। রাজপুত্র এই নতুন আগমনের কথা শুনে বিদ্রূপ করে বলল—
“আরেকজন সাধিকা এল? এবার কি মন্দিরটাই আশ্রমে পরিণত হবে?”

রাজা রুষ্ট গলায় বললেন,
“বাবা, তুমি আবারও ভুল করছো। এই মেয়ের মধ্যে দেবীর শক্তি আছে। সাবধানে কথা বল।”

রাজপুত্র হেসে উড়িয়ে দিল।


---

পরের দিন গ্রামের এক উৎসবে আরাধ্যা সবাইকে অবাক করে দিল। যখন ঢাক বাজছিল আর গ্রামবাসীরা মাতঙ্গী স্তুতি গাইছিল, সে হঠাৎ এক ট্রান্সে চলে গেল। তার কণ্ঠে এমন মন্ত্রধ্বনি বেরোল যে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল। মনে হল দেবী মাতঙ্গী নিজেই তার মধ্যে অবতীর্ণ হয়েছেন।

রাজপুত্র দূর থেকে দেখছিল। তার মনে অদ্ভুত এক অস্থিরতা জন্ম নিল। সে প্রথমবারের মতো এই মেয়েটিকে অবহেলা করতে পারল না।


---

কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা এই সুযোগ হাতছাড়া করল না। তারা রাজপুত্রের কানে কানে বলতে লাগল—
“এই মেয়েটি বিপজ্জনক। ও তোমার ক্ষমতা কেড়ে নেবে। আগে থেকে সাবধান হও।”

রাজপুত্র দ্বন্দ্বে পড়ে গেল। একদিকে তার অহংকার, অন্যদিকে সেই অদ্ভুত আকর্ষণ যা তাকে আরাধ্যার দিকে টানছিল।


---

এক রাতে রাজপুত্র স্বপ্নে আবার মাতঙ্গীকে দেখল। এবার দেবী কড়া কণ্ঠে বললেন—
“তুমি যে পথ বেছে নিচ্ছো তা তোমাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু যদি তুমি আরাধ্যার হাত ধরো, তাহলে মুক্তি পাবে।”

রাজপুত্র ঘুম থেকে উঠে বিহ্বল হয়ে গেল।


---

এরপর একদিন গ্রামের কাছে হঠাৎ বন্যা এল। গঙ্গার জল ফুলে ফেঁপে উঠল, গ্রাম ডুবে যাওয়ার উপক্রম। সেই সময় আরাধ্যা সবাইকে মন্দিরে ডেকে নিল এবং মন্ত্রপাঠ শুরু করল। আশ্চর্যের বিষয়, গঙ্গার জল ধীরে ধীরে থেমে গেল, ঢেউ শান্ত হয়ে এল।

গ্রামবাসী হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল—
“দেবী নিজে আমাদের রক্ষা করলেন!”

রাজা চোখ ভিজিয়ে বললেন—
“আজ আমি বুঝলাম, তুমি গিরিরামপুরের রক্ষাকর্ত্রী।”


---

কিন্তু রাজপুত্রের মন তখনও দ্বিধায়। একদিকে সে দেখল মেয়েটির শক্তি, অন্যদিকে ষড়যন্ত্রকারীদের ফিসফিসানি।

শেষ দৃশ্যে দেখা গেল, রাজপুত্র একা নদীর ধারে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ পিছন থেকে আরাধ্যা এসে দাঁড়াল।

“তুমি এখানে?” রাজপুত্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।

আরাধ্যা শান্ত স্বরে বলল—
“তুমি ভয় পাচ্ছো, কিন্তু তুমি জানো না—তোমার সামনে যে পথ খুলছে সেটা তোমার মুক্তির পথ।”

রাজপুত্রের চোখে যেন প্রথমবার জল এসে গেল। কিন্তু দূর থেকে ষড়যন্ত্রকারীরা এই দৃশ্য দেখে ক্রুদ্ধ মুখে চলে গেল। তারা প্রতিজ্ঞা করল—
“আমরা এই সম্পর্ক হতে দেব না। যে করেই হোক, আরাধ্যাকে সরাতে হবে।”


---

গল্পের শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। 💌 লিখতে গিয়ে কোথাও ভুল হলে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনাদের প্রতিটি মন্তব্য আমার কাছে অত্যন্ত মূল্যবান, কারণ পাঠকের প্রতিক্রিয়াই লেখকের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আপনারা কীভাবে গল্পটা অনুভব করলেন, কোন অংশ ভালো লেগেছে বা কোথায় আরও ভালো করা যেত—সবটাই জানালে আমার পরবর্তী লেখাগুলোতে নতুন রঙ যোগ হবে। আপনাদের ভালোবাসা আর মতামতই আমার কলমের জ্বালানি। তাই দয়া করে মন্তব্য করতে ভুলবেন না। 🌸


---