জঙ্গলের প্রহরী
পর্ব - ৩০
❤♣❤♣❤♣❤
- "ঘুম পাক না স্যার। ঘুমোক না। অসুবিধা কি? বরং ভাল করে ঘুমোলে এই যে হাইপার হয়ে আছে সেটা কাটবে।" তাপস পুলিশ না ডাক্তার, বোঝা যায় না।
- "যা ভাল বোঝো করো। আমার তো হাতটাই অকেজো হয়ে রয়েছে, ঋষিরও এরকম অবস্থা। এখন সব তোমাকেই দেখভাল করতে হবে।" ঋষির পাশে বসে পড়ে সিদ্ধার্থ।
তাপস বেরিয়ে আসে, নিজেদের গাড়ি খুলে দরকারী জিনিস নেয়, ফিরে যায়। সব মিলিয়ে ছ থেকে সাত মিনিট। শাক্য কোনোমতে সিটের তলায় গুঁজে থাকে। একবার উঁকি দিলেই ও ধরা পড়ে যেত। অবশ্য বিপদ কিছুই কাটেনি। বারান্দার আলোছায়ার মধ্যে একটা লোক আছে একপাশে, সিল্যুলেট ছায়ার মতো তাকে দেখেছে শাক্য। তাই গাড়ি থেকে নামার রিস্ক নেয়নি।
তাপস ঘরে ঢুকে চ্যাপটা বোতলটা টেবিলে নামিয়ে রাখে, পাশের রান্নাঘরের বড় টেবিলের উপর থেকে দুটো কাঁচের গ্লাস নিয়ে আসে, টিপকা মেজেধুয়ে রেখে গেছে।
তবুও তাপস গ্লাসদুটো একটা কাপড়ের টুকরো ঘুরিয়ে ভাল করে মুছে নেয়। দু আঙ্গুল পানীয়টি ঢেলে ফ্লাস্ক থেকে গরমজল ঢালে। এও টিপকা বানিয়ে রেখে গেছে। প্রথম গ্লাসটা ঋষির হাতে তুলে দেয় তাপস, "এই নিন স্যার।" আরেকটা গ্লাস তুলে সিদ্ধার্থর হাতে দেয়, "আপনিও খেলে ভালই হবে। সারাগায়ে যন্ত্রণা রয়েছে আপনার।"
সিদ্ধার্থ গ্লাসটা হাতে নিয়েছে সবে, ঋষির বোধহয় হাত কাঁপছিল, গ্লাসটা পড়ে যায়। কার্পেটে পড়ে গড়িয়ে গেছে সমস্ত তরল, গ্লাসটা কিছু হয়নি। এদিকে ঋষির জন্য উদ্বেগে সিদ্ধার্থ লাফিয়ে উঠতে যায়। ঋষির সঙ্গেই ধাক্কা লেগে ওর গ্লাসটা পড়ে যায়।
সেদিকে ফিরেও না তাকিয়ে ঋষির কাঁধ খামচে ধরে ও, "ঋষি, ঠিক আছিস? কি হয়েছে তোর?"
ঋষির দিকে সম্পূর্ণ ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে গ্লাসদুটো পড়েছিল ওর পায়ের নিচে। ভাগ্যিস তাপস আসার পর পল্টনকে খোঁজার জন্য বেরোতে হলে লাগবে বলে বুটটা পরে নিয়েছিল। তাই গ্লাসদুটো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলেও ওর পায়ে কাঁচ ফোটে না।
- "ঋষিস্যারের সম্ভবত নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়েছে স্যার।" তাপস এগিয়ে এসে বলে।
সিদ্ধার্থ অসহায়ের মতো তাকায়, ঋষি বিড়বিড় করে কিসব বলে, "হাতিগুলো আরও সামনে এসে গেছে। দাদা তুমি আমার হাত ধরো। আমরা ছুটে পার হয়ে যাব।"
সিদ্ধার্থ ঋষির হাত ধরে পাশে বসে পড়ে, "আমি তোর হাত ধরেই আছি রে। তুই বিশ্রাম নে, আমার কিচ্ছু হয়নি, ঋষি, ঋষি শুনতে পাচ্ছিস? তাপস কি হবে? এখানে মেডিকেল হেল্পও তো পাব না এত রাতে !"
- "তাই তো চাইছিলাম, উনি ঘুমিয়ে পড়ুন, বিশ্রাম নিন। শুনুন, ও এ ঘরে ঘুমোক। আসুন দুজন ওর জামা জুতো খুলে দিই। আপনি না পারলে, জাস্ট একহাতে সাপোর্ট দিন। ঠিক আছে?"
- "জামা পরে খুলো। আপাততঃ ওকে শুইয়ে দিই। এখানেই বালিশটা এগিয়ে দাও তো। ও শুয়ে থাক।" তাই করা হয়।
ঋষির দিকে চোখ রেখেই সিদ্ধার্থ উঠে দাঁড়ায়, "তাপস, আমার শরীরটাও ভাল লাগছে না। যে চোটগুলো লেগেছে, সেখানে তো ব্যথা আছেই, প্লাস মাথাটাও ঘুরে উঠল।"
- "স্বাভাবিক স্যার। আপনারও নার্ভের উপর দিয়ে কি না গেল আজ। এত চোট রয়েছে, তার উপর স্ট্রং পেইন কিলার খেয়েও ঘুমোননি, তাতেই হচ্ছে মনে হয়। আপনি এক কাজ করুন, এখনও খানিকটা আছে বোতলে, রামটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি পল্টনকে খুঁজে দেখছি।"
- "হ্যাঁ, হ্যাঁ, সেটাই ভাল। পল্টন কোথায় গেল চিন্তাতেই আমার....... কাল সকালেই তো সবাইকে আমার উত্তর দিতে হবে। আমি নিজে ওকে নিয়ে এসেছি।" সিদ্ধার্থ আবার বসে পড়ে।
- "আচ্ছা স্যার, আপনার কি মনে হয়, পল্টন কিছু জানে?"
- "অফকোর্স তাপস। ও আশীষের সঙ্গে সঙ্গে থাকত। ও নিশ্চয়ই কিছু জানে, এটা আমার মনে হচ্ছিলই। আর এখন তো কোনো সন্দেহ নেই। ও উধাও হতেই এটা পরিষ্কার।"
- "ও তো বাড়ি চলে যেতে পারে। এখানে আপনাদের সঙ্গে থাকতে ভাল লাগছে না, বাড়ি চলে গেছে।"
- "তাপস, তুমি আমাদের জন্য এত করছ, তোমাকে বলছি আমি, পল্টন কিছু জানে। ওকে ধরার চেষ্টা করো। আমার কিছু একটা হচ্ছে। ঋষির পক্ষেও এখন সুস্থ হওয়া সোনার পাথরবাটির মতো। এই কেসের সব তুমি জানো। তুমি এটা সলভ করতে পারবে।"
- "আপনি নিজেই কাল বেরোবেন, আবার ইনভেস্টিগেশন শুরু করবেন।"
- "না তাপস, আমি বুঝতে পারছি, আমি আর ঠিক হবো না। হঠাৎ ঋষি এত অসুস্থ হয়ে গেল। যখন ফিরেছিল তখনও এমন ছিল না। আমারও ভাল লাগছে না। কিছু একটা কমন জিনিস আমরা দুজন খেয়েছি, শুঁকেছি বা হাতে ধরে সেই হাত মুখে দিয়েছি।"
- "বিষাক্ত কিছু ভাবছেন? তাহলে মনে করুন, দুজনেই কি করেছিলেন।"
- "আমি পারছি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে। তাপস, তুমি পালাও এখান থেকে। একটা অকাট্য প্রমাণ পাওয়ার কথা ছিল আমার। সে আর সময় পেলাম না। তুমি পালিয়ে যাও, তুমি এখনও বাঁচতে পারবে।" ক্রমশঃ গলার আওয়াজ কমে যায়। ঋষির পাশেই শুয়ে পড়ে সিদ্ধার্থ ।
তাপসের ভয়ই করে ওঠে, কিভাবে অসুস্থ হল এরা? এই ঘরটা কি ওর জন্য নিরাপদ?
[ ❤ সিদ্ধার্থ আর ঋষির কি হবে? তাপস কি বাঁচতে পারবে? বারান্দায় লুকিয়ে থাকা লোকটাই বা কে?
❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]
চলবে