The Curse of Matangi - 2 in Bengali Spiritual Stories by MOU DUTTA books and stories PDF | মাতঙ্গীর অভিশাপ - 2

Featured Books
Categories
Share

মাতঙ্গীর অভিশাপ - 2

গিরিরামপুর তখনও ভোরের ঘুম কাটিয়ে ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। গঙ্গার জলে লাল আভা পড়ে চকচক করছে। কিন্তু সেই শান্ত প্রকৃতির মধ্যে হঠাৎ এক অদ্ভুত কাঁপুনি ছড়িয়ে পড়ল। চারদিকে কাকের ডাক, শেয়ালের হাঁক, আর ঝড়ের মতো বাতাস। গ্রামের বয়স্করা ভয় পেয়ে বলল—
“আজ নিশ্চয়ই কিছু অশুভ ঘটতে চলেছে।”

সেই সময় মন্দিরের সামনে যারা পূজো দিতে গিয়েছিল, তারা হঠাৎ এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখল। মন্দিরের কালো পাথরের দেওয়ালে যেন লাল রঙের হাতের ছাপ ফুটে উঠছে, তারপর মিলিয়ে যাচ্ছে। এক মুহূর্তে বাতাসে শোনা গেল অদ্ভুত ধ্বনি—
“যারা অন্যায় করবে, যারা অহংকারে অন্ধ হবে, তারা রক্ষা পাবে না।”

মানুষ বুঝতে পারল, দেবী মাতঙ্গী অদৃশ্যভাবে প্রকাশ পেয়েছেন। গ্রামজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে গেল।


---

রাজপ্রাসাদে খবর পৌঁছানো মাত্রই রাজা মন্দিরে দৌড়ে গেলেন। তিনি মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করতে লাগলেন—
“হে মাতঙ্গী মা, আমার পরিবারকে রক্ষা করো। যদি আমার সন্তানের ভুল হয়, তার শাস্তি আমাকে দাও।”

দেবীর অলৌকিক কণ্ঠ ভেসে এল, যেন গঙ্গার ঢেউ থেকে—
“তুমি ধার্মিক, তুমি সত্যবাদী। তোমার দোষ নেই, রাজা। কিন্তু তোমার রক্তের মধ্যে যে অহংকারের বিষ ঢুকেছে, তাকে আমি উপেক্ষা করব না। তোমার ছেলেই তোমার গৃহের অশান্তির কারণ হবে।”


---

রাজা এই কথা শুনে কাঁপতে কাঁপতে প্রাসাদে ফিরে এলেন। তিনি রাজপুত্রকে ডেকে বললেন—
“বাবা, মাতঙ্গী মা আমাদের সতর্ক করেছেন। অহংকার ত্যাগ করো। মানুষকে ছোট করো না।”

কিন্তু রাজপুত্র হেসে উড়িয়ে দিল।
“পিতা, আপনি দেবীর ভয় দেখিয়ে আমাকে দুর্বল করতে চাইছেন। আমি রাজা হবো, দেবতাদের নয়।”

রাজা স্তম্ভিত হয়ে গেলেন।


---

এদিকে, ষড়যন্ত্রকারীরা—রাজকীয় মন্ত্রী আর কিছু অভিজাত—গোপনে ছেলেটিকে উসকে দিতে লাগল।
“রাজপুত্র, আপনি সঠিক। দেবী-টেবী এসব গ্রাম্য লোকের কুসংস্কার। প্রকৃত শক্তি আপনার। আপনি চাইলে পাহাড়, গঙ্গা, গ্রাম সব আপনার পায়ের নিচে।”

ছেলেটির অহংকার আরও বাড়ল।


---

একদিন, মাতঙ্গীর মন্দিরের পাশে এক বৃদ্ধা সাধিকা বসেছিলেন। তিনি আসলে দেবীর এক নিবেদিতা। রাজপুত্র শিকারের নেশায় সেখানে গিয়ে সেই সাধিকাকে অপমান করল।
“তুমি বুড়ি, অকারণে ভিখিরির মতো বসে আছো কেন?”

সাধিকা শান্ত গলায় বললেন—
“রাজপুত্র, অহংকারে ডুবে যেও না। যাকে তুমি ভিখিরি বলছো, সে-ই হয়তো তোমার রক্ষাকর্ত্রী।”

কিন্তু রাজপুত্র হেসে উড়িয়ে দিলেন। এরপর তার সঙ্গীরা সাধিকার আসন ভেঙে দিল। সাধিকা কেঁদে উঠলেন আর প্রার্থনা করলেন—
“হে মা মাতঙ্গী, সময় হলে তুমি সত্য প্রকাশ করবে।”


---

এরপর থেকে অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করল—

রাজপুত্র ঘোড়ায় চড়তে গেলেই ঘোড়া নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলত।

শিকারে গেলে তীর উল্টে গিয়ে তার নিজের সঙ্গীদের আহত করত।

প্রাসাদের ভেতরে রাতে অদ্ভুত শব্দ শোনা যেত—নারী কণ্ঠ, যে বারবার বলত:
“সাবধান… সময় আসছে।”


রাজা বুঝতে পারলেন, দেবী ক্রমে ক্রুদ্ধ হচ্ছেন। তিনি আবার মন্দিরে গেলেন। এবার দেবীর মূর্তির চোখ থেকে জল পড়তে দেখা গেল।


---

কিন্তু রাজপুত্র এসবকেই কুসংস্কার ভেবে উল্টো আরও উদ্ধত হয়ে উঠল। এক রাতে গোপনে ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে বসে তিনি বললেন—
“আমি আর মন্দিরে কোনো পূজা দেব না। বরং গিরিরামপুর থেকে মাতঙ্গীর আরাধনা মুছে দেব।”

এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই প্রবল ঝড় উঠল। গঙ্গার জল হঠাৎ ফুলে ফেঁপে উঠল। প্রাসাদের চারপাশে বজ্রপাত হতে লাগল।

রাজপুত্র ভয় পেয়ে গেলেও মুখে হাসি ধরে রাখল।


---

কিন্তু সেই রাতেই, স্বপ্নে রাজপুত্র এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখল।
এক অগ্নিময় নারী, গলায় রুদ্রমালা, হাতে করোটি, মুখে আগুনের মতো হাসি—
তিনি বললেন:
“আমি মাতঙ্গী। আমি তোমার সমস্ত অহংকার ভেঙে দেব। তোমার বংশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তোমার কাজের ওপর। যদি তুমি থামো না, তাহলে তোমার পতন অনিবার্য।”

রাজপুত্র ঘেমে উঠে বসল। কিন্তু সকালে আবার সেই স্বপ্নকে অস্বীকার করল।


---
গল্পের শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। 💌 লিখতে গিয়ে কোথাও ভুল হলে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনাদের প্রতিটি মন্তব্য আমার কাছে অত্যন্ত মূল্যবান, কারণ পাঠকের প্রতিক্রিয়াই লেখকের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আপনারা কীভাবে গল্পটা অনুভব করলেন, কোন অংশ ভালো লেগেছে বা কোথায় আরও ভালো করা যেত—সবটাই জানালে আমার পরবর্তী লেখাগুলোতে নতুন রঙ যোগ হবে। আপনাদের ভালোবাসা আর মতামতই আমার কলমের জ্বালানি। তাই দয়া করে মন্তব্য করতে ভুলবেন না। 🌸