রামায়নের একটা গল্প,-ভীষণ অর্থবহ,-
দুষ্ট রাবন সীতাকে হরন করে লংকার অশোক বাটীকায় এনে রাখল। তারপর থেকে প্রতিদিন রাবন সেজেগুজে সুন্দর বেশে সীতা মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সীতা মা ফিরেও তাকান না রাবনের পানে। রাবনের মনে একান্ত আকাংখা,-সীতা তার রূপে-গুনে মুগ্ধ হয়ে তাকে স্বেচ্ছায় বরন করুক। কিন্তু সীতা যে তার পানে চোখ তুলে তাকানই না!!
তাতে রাবন খুব অপমানিত বোধ করে, ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে তার পৌরুষ ৷ রাতে সে বিছানায় শুয়ে ক্ষোভে দুঃখে কান্নাকাটি করে,- সীতাকে না পাওয়ার যন্ত্রনায় দগ্ধ হয় । সে এত বলশালী, এত ক্ষমতাবান, স্বর্গ মর্ত পাতাল,- তিনলোকে তার প্রভাব,- অথচ সামান্য এক মানবী নারীর মনে জায়গা নিতে পারছে না। এই দুঃখ সে কোথায় রাখে!! এ যে তার ভীষণ পরাজয়!
রাবনের সতী স্ত্রী মন্ধোধরী স্বামীর এই দুঃখ দেখে খুব কষ্ট পায় । স্বামীর ব্যাথায় ব্যাথিত তিনি। সতী মন্ধোধরী রাবনকে পরামর্শ দিলেন,-" দেখ স্বামী, সীতা যে তোমায় ঘৃনা করে,- তা তো জানই। তুমি যতই সেজেগুজে যাও,- তোমার প্রতি তার ঘৃনা দূর হবেনা। তুমি বরং রামের বেশ ধারন করে সীতার সামনে যাও। তখন সীতা নিজেকে তোমার কাছে সমর্পন করে দেবে। তোমার কামনা পূরন হবে।"
প্রত্যুত্তরে রাবন বলল,-" মন্ধোধরী, তোমার এই বুদ্ধি আমি ইতিমধ্যে কয়েকবার প্রয়োগ করেছি । কিন্তু যেইমাত্র আমি রামের বেশ ধারন করি অমনি,- তুমি ছাড়া আর অন্য কোন নারীর প্রতি আমার কাম ভাব আসেই না। তুমি ছাড়া বাকী সকল নারীকেই নিজের মাতা বা ভগিনী বোধ হয়। তাই রামের বেশ ধারন করে আমার উদ্দেশ্য পূরন সম্ভব নয়। "
গল্পটা ছোট্ট হলেও তার মধ্যেকার অন্তর্নিহিত অর্থ খুব গুরত্বপূর্ণ । মানুষের পোশাক- পরিচ্ছদ ও সাজগোছের উপর তার মনের ভাব অনেক খানিই নির্ভর করে। পোষাকের রঙের প্রভাবও ভীষণ কার্যকরী মনের উপর।
শ্রীশ্রীঠাকুর সৎসঙ্গের কর্মীদের জন্য যে সাদা ধূতি- পাঞ্জাবি পোষাক পরিধানের বিধান দিলেন,-তা এক অদ্ভুত সুন্দর উপায়। এই পোষাক পরিধান করে সৎসঙ্গে গেলে, বা যেকোন ইষ্টকাজে বের হলে মনের মধ্যে যতটুকু ভাব-ভক্তি, ইচ্ছাশক্তির জোর কাজ করে,- শার্ট পেন্ট বা অন্য কোন দামী ব্রেন্ডেড পোষাকে তা কখনো হয় না। মনের মধ্যে এক অদ্ভুত পবিত্রতা ও আত্মবিশ্বাস বিদ্যমান থাকে এই পোশাক পরিধানরত অবস্থায়। মনকে ঠাকুরমূখী করে রাখতে এই পোষাকের কোন বিকল্প নেই।
সৎসঙ্গ আন্দোলনের প্রাথমিক অবস্থায় শ্রীশ্রীঠাকুর যখন কর্মীদের জন্য এই সাদা ধূতি- পাঞ্জাবি পরিধানের বিধান দিলেন তখন কয়েকজন কর্মী শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে এসে নিবেদন করলেন,-" ঠাকুর, এই ধুতি পাঞ্জাবি পড়ে কাজ করতে খুব অসুবিধা। পাহাড়ে-জংগলে যেতে হয়, ট্রেনে-বাসে চাপতে হয়। খুব সমস্যা হয় ঠাকুর। কখনো ধূতির কাছা খুলে যায়, তো কখনো সাদা পাঞ্জাবিতে দাগ লেগে যায়৷ যদি শার্ট পেন্ট পড়ে ইষ্টকাজে কাজ করা যেত তবে খুব ভাল হত ঠাকুর।"
প্রত্যুত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,-" এই যে সাদা ধূতি- পাঞ্জাবি পড়ে তোমাদের সারাক্ষন সতর্ক থাকতে হয়,- কখন দাগ লেগে যাবে, কখন কাঁছা খুলে যাবে, কখন পায়ে প্যাঁচ লেগে যাবে- সারাক্ষন এই সতর্ক থাকার অভ্যাসটি তোমাদের চলার পথের অন্যান্য সব ক্ষেত্রে ও সতর্ক হয়ে চলার অভ্যাস গড়ে তুলবে। চলার পথে ভুল হবে কম। সতর্ক থাকাটাই তোমাদের চরিত্রগত হয়ে উঠবে।"
অদ্ভুত তাঁর ফলিত মনোবিজ্ঞান!!আমরা যারা শ্রীশ্রীঠাকুরকে ধরে তাঁর কাজে রত আছি, - তাদের জন্য এই পোশাক অপরিহার্য। তাতেই শ্রীশ্রীঠাকুর ঠাকুর খুশী হন। সৎসঙ্গ অনুষ্ঠানে যোগদান করার সময় আমরা সকলেই যখন এই পবিত্র পোষাক পরিধান করি, -তখন সেই সৎসঙ্গের ভাব ও পরিবেশ স্বতঃই খুব পবিত্র সুন্দর হয়ে উঠে। শুধু পাঞ্জাধারী কর্মীরাই নন,- অন্যান্য গুরুভাইরাও যদি অন্ততঃ সাদা পোশাক পরিধান করে সৎসঙ্গে যোগদান করেন তবে তার ব্যাক্তিগত মনের ভাব-ভক্তি যেমন সহজেই ঠাকুরমূখী হয়ে উঠে,- তেমনি সামগ্রিক সৎসঙ্গের পরিবেশটাও খুব পবিত্র- সুন্দর হয়ে উঠে। তেমনি মায়েরাও শ্রীশ্রীঠাকুরের মনোমত পোশাক পরিধান করলে অমন ভাবের সৃষ্টি হয়।
এই অনুভূতি শুধু আমার ব্যাক্তিগত নয়। তাঁর মনোমত পোশাক পরিচ্ছদ ও সাজ সজ্জায় যারা অভ্যস্ত,- তারা সকলেই এই অভিমত প্রকাশ করেন।