Is initiation of girls before marriage really necessary? in Bengali Spiritual Stories by DR RAJESH CHOUDHURI books and stories PDF | বিবাহের পূর্বে মেয়েদের দীক্ষা,- আদৌ প্রয়োজন আছে কি?

Featured Books
Categories
Share

বিবাহের পূর্বে মেয়েদের দীক্ষা,- আদৌ প্রয়োজন আছে কি?

 " না দাদা, মেয়েকে দীক্ষা নেওয়াব না এখন। বিয়ের পর স্বামী কোন গুরুর দীক্ষিত হবে কে জানে!! শেষে কত ঝামেলা!"

 যাজনকার্যে গিয়ে প্রায় সৎসঙ্গী বাড়ীতেই এই মন্তব্যের সম্মুখিন হই।ছেলেকে খুব উৎসাহের সহিত দীক্ষা নেওয়াচ্ছে,- কিন্তু মেয়ের বেলায় অরাজী। 

দীক্ষা কেন নিতে হয়, নিলে কি হয়,- সে সম্পর্কে ধারনা না থাকার কারনেই অনেক পরিবারেই এই আচরন। অথবা নিজের করা ও অনুভূতি এখনো পেঁকে উঠেনি বলে এই অনীহা।. 

 এত এত দম্পতী দেখি,- তাদের মধ্যে কত কত ঝামেলা আর অশান্তি লক্ষ করি। কিন্তু স্বামী আর স্ত্রী দুই গুরুর দীক্ষিত,- শুধু এই কারনে কোন দম্পতী অশান্তি ও ঝামেলায় দিন কাটাচ্ছে - এমনটা কোথাও লক্ষ করিনি।  বরং বেশীরভাগ ঝামেলার কারনই পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব, নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের সাথে মিলিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার অভাব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা- বিশ্বাস- ভরসা ও প্রকৃত ভালবাসার অভাব। স্বামীরা জানিনা কিভাবে স্ত্রীর সাথে শ্রদ্ধামিশ্রিত দূরত্ব বজায় রেখে নিজের ব্যাক্তিত্বকে তার শ্রদ্ধার যোগ্য করে তুলতে হয়, কিভাবে স্ত্রীকে প্রকৃত খুশী করতে হয়। স্ত্রীকে খুশী করতে গিয়ে সারাক্ষন তার আঁচলের তলায় নিজেকে ব্যাস্ত রাখতে চাই, নিজের ব্যাক্তিত্বকে তার কাছে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেকে হেয় করে তুলি। আর নতুন সংসারে আসা স্ত্রী বেচারীও বুঝতে পারেনা স্বামী প্রকৃত খুশী হয় কিসে। কি ভাবে স্বামীকে উন্নতির দিকে ঠেলে দিতে হয়। 

শ্বশুর - শাশুড়ি জানেনা তাদের পরিবারে আসা নতুন মানুষটিকে কি করে আপন করে নিতে হয়, কি করে তাকে পরিবারের দায়িত্ব তুলে দিতে হয়। শুরু থেকেই শাসন আর তর্জন-গর্জনে বউকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে চায়। শাশুড়ি সারাক্ষণ আতংকে থাকে,- এই বুঝি নতুন সুন্দরী বউটি আদরের ছেলেকে মায়ের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে, মায়ের অধিকার কমে যাচ্ছে। বউটি ও পারে না নতুন সংসারে এসে স্বামীর মা- বাবাকে আপন করে নিতে। সারাক্ষণ ভাবছে,- এই বুঝি শাশুড়ি তার স্বামীর কাছে তার বিরুদ্ধে কান ভরাচ্ছে। শুরু হয় অবিশ্বাস আর অশান্তি। শেষে স্বামীকে নিয়ে পৃথক কবুতরের কোটরে  বাস। 

সব মা- বাবাই কামনা করে, - আমার মেয়েটা পরের ঘরে গিয়ে রাজরানী হয়ে থাকবে, দেবতূল্য স্বামী পাবে, সুখে সংসার করবে। কিন্তু প্রায়শই দেখা যায়,- মেয়েটি নিজে থেকে এমন একটি ছেলেকে পছন্দ করে বিয়ে করে বসল,- যার সাথে কিছুদিন ঘর করার পরই তার জীবনটা নরক হয়ে উঠেছে। কত কত মেয়ে অল্প বয়সে আবেগের বশবর্তী হয়ে প্রেমের বিয়ে করার পর আগুনে জ্বলে পুড়ে মড়ছে। ভুল পাত্র পছন্দ করার জন্য কপাল চাপড়াচ্ছে। এমন ভুল করে বসছে,- যা শুধারানোর কোন উপায় নেই। সারা জীবন শুধু হা-হুতাশ!!

 তার কারন কি? কারন,- আমি আমার বিবাহযোগ্যা মেয়েকে শিখাচ্ছি না,- কেমন ছেলে তার স্বামী হউয়ার যোগ্য। পেশী ফুলিয়ে স্কিন টাইট গেঞ্জি  আর  চোখে  সানগ্লাস লাগিয়ে লেজ উঁচু দামী বাইকে বসলেই যে স্বামী হউয়া যায় না,- এই শিক্ষা আমার মেয়ে আমার কাছ থেকে পায়নি। রোমান্টিক প্রেম করা আর সুখে সংসার করা, - দুটো যে সম্পূর্ন আলাদা ব্যাপার - তা অল্প বয়সী আবেগী মেয়েরা বুঝতে পারেনা।   বিয়ে কি জিনিস, বিয়ের উদ্দেশ্য কি, কিভাবে স্বামী নির্বাচন করতে হয়, কিভাবে সংসার করতে হয়, কিভাবে শ্বশুর শাশুড়ির সাথে মানিয়ে চলতে হয়,- তার কোন শিক্ষাই যে আমাদের মেয়েরা পায় না।  কোন বয়সের, কেমন ব্যাক্তিত্বের,  কেমন যোগ্যতা সম্পন্ন পুরুষ তাকে সারাজীবন বহন করতে পারবে,- তা সে জানেনা। হিন্দি সিনেমার রোমান্টিক কাহিনি আর নিজের ও পারিপার্শ্বিক জগতকে দেখে দেখেই সে জীবন ও সংসার সম্পর্কে একটা ভ্রান্ত ধারনা নিয়ে বড় হয়। তাই ইউনিভার্সিটির  উচ্চ ডিগ্রী নিয়েও সংসার জীবনে ডাহা ফেল। স্কুলে- কলেজে- ইউনিভার্সিটিতে কোথাও যে জীবনের এই গুরত্বপূর্ণ শিক্ষা পাওয়া যায় না!! 

শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর সারা জীবন ধরে পই পই করে বলে গেছেন,- আমাদের ঘরের মেয়েরা শৈশবে, বয়ঃসন্ধিতে, যৌবনে, সংসারজীবনে কেমন করে চললে সুখী হবে, কেমন করে স্বামী নির্বাচন করতে হয়, কেমন করে দুষ্ট পুরুষদের কামলুলুপ দৃষ্টিকে দমন করতে হয়, কেমন করে সংসার জীবনে চললে সুখ ও শান্তির অধিকারী হউয়া যায়, কেমন করে সফল মা হউয়া যায়, কেমন করে সংসারজীবনে সৌভাগ্যশালী হউয়া যায়। শুধু যে তিনি বলে গেছেন, - তা নয়। তাঁর লীলাসঙ্গীনি শ্রীশ্রীবড়মা তাঁর সেইসব বলাগুলি নিজের জীবনে আচরনের মধ্যে দেখিয়ে গেছেন। এখনও দেওঘরে ঠাকুর বাড়ীতে গিয়ে আমরা দেখি সেখানে ঠাকুর পরিবারের মায়েরা কেমন করে সংসার করছেন,  আচার্য্যদেব শ্রীশ্রীদাদা ও পরমপূজনীয়া মা তাদের পূত্রবধূদের কেমন করে আদর- সোহাগ ও প্রশ্রয় দিয়ে আপন করে নিচ্ছেন।

 আমাদের ঘরের মেয়েরা যদি অল্প বয়স হতেই শ্রীশ্রীঠাকুরের চরনাশ্রিত হয়ে তাঁকে ভালবেসে তাঁর নীতিবিধানগুলি জানতে চেষ্টা করে ও ধীরে ধীরে নিজের চলনে-কথায়-চিন্তায় চরিতার্থ করতে চেষ্টা করে তবে জীবনে ভুল করার সম্ভাবনা কমবে। ভাল-মন্দ বুঝার ক্ষমতা তৈরি হবে। স্বামী কি জিনিস আর কেমন পাত্রকে স্বামী হিসাবে গ্রহন করা যায়,- তা জানতে পারবে। বিয়ের পর নতুন সংসারে কোন পরিস্থিতিতে কেমন করে চলতে হয়,- তা জানতে পারবে। জীবনে হোঁচট খাবে কম। সুখী হবে-তৃপ্ত হবে -আনন্দে থাকবে।

  শুধু তাই নয়। বিয়ের পর নতুন সংসার ও নতুন পরিবেশে যদি সে প্রচন্ড প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হয়,- তবে সে নিজেকে একা ভেবে হতাশ হতে পারে৷ পরিস্থিতির সাথে যুদ্ধ করতে না পেরে নানাভাবে ভেঙ্গে পড়তে পারে। কিন্তু যদি অল্প বয়স থেকেই ঠাকুরকে ধরে,- তাঁর প্রতি সেই মেয়ের বিশ্বাস, নির্ভরতা জাগিয়ে দেওয়া যায় তবে সেই প্রতিকূল ও বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতেও সে নিজেকে একা ভাববে না৷ তার অন্তরে ঠাকুরের শক্তি অনুভব করবে। সেই শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সে বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে আনন্দে ও শান্তিতে সংসার করতে পারবে। 

আর আমি যদি আমার মনগড়া অজুহাতের কারনে তাকে সাতাঁর না শিখিয়েই সংসার সমুদ্রে ছেড়ে দেই,- তবে সে যে হাবুডুবু খাবে তা অতি নিশ্চয়ই। কত কত বাপ-মায়ের মেয়ে এমনিভাবে প্রতিদিন সংসারের অশান্তিতে জ্বলেপুড়ে মরছে।

 আমরা যেন  আমাদের প্রানপ্রিয় কন্যাদের বার বছর বয়স হলেই প্রিয়পরমের পায়ে সঁপে দেই,- তাঁর শক্তিতে শক্তিময়ী করে তুলি। 

আবার অনেক গুরুজনদের বক্তব্য, - একজন নারীর জীবনে স্বামীই একমাত্র গুরু। তার জীবনে অন্য গুরুর প্রয়োজন নেই। 

না,- তা হয় না৷ স্বামী তার স্ত্রীর নিকট শ্রদ্ধার পাত্র হবে, স্ত্রীর অভিভাবক হতে পারে,- কিন্তু গুরু কিভাবে হবে? গুরু হওয়ার মত ব্যাক্তিত্ব, চরিত্র, প্রজ্ঞা, জ্ঞান কি সব পুরুষের থাকে? যে পুরুষ প্রবৃত্তিমুখী চলনে অভ্যস্ত, যে নিজেই অন্ধকারে নিমজ্জিত, জীবন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা নেই, যার চলন-চরিত্র আদর্শকেন্দ্রিক নয়,- তাকে যদি অন্য আরেকজন গুরু মেনে জীবন অতিবাহিত করতে যায় তবে তো দুইজনেই অধঃপাতে যাবে। 

গুরু তিনিই যার প্রতি আসক্তিতে আমার জীবন প্রবৃত্তির অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে সার্বিক উন্নতিতে অবাধ হয়ে উঠে, যিনি আমাকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যেতে সক্ষম, যিনি আমায় জীবনে চলার কায়দা শিখিয়ে দিতে সক্ষম। স্বামী স্ত্রী দুইজনেই অমন সদগুরুর দীক্ষিত হয়ে তাঁর অনুশাসন পালন করে জীবন অতিবাহিত করলে সংসার সুন্দর ও শান্তির হয়ে উঠে। স্বামী স্ত্রী দুইজনে যদি এমন ভিন্ন ভিন্ন গুরুর আশ্রিত হয়ে থাকে,- কোন অসুবিধা নেই৷ যার যার গুরুর প্রতি নিষ্ঠা নিয়ে চললে উভয়ে উভয়ের গুরুকে শ্রদ্ধা করবে,- উভয়েই একে অপরের পরিপূরক হয়ে শান্তি স্বস্তির অধিকারী হয়ে উঠবে।

 তাছাড়া,- আমরা বিশ্বাস করি, - আমাদের জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ ঈশ্বরের ইচ্ছাধীন। আমার কন্যার ইচ্ছা যদি সেই গুরুরূপী ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে একতানে মিলিত না হয়,- তবে ঈশ্বরের ইচ্ছা তার জীবনে কার্যকরী হবে কিভাবে? পৃথিবীর সকল মা বাবাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে,- তাদের কন্যা যেন সুপাত্রস্থ হয়, বিবাহের পর সুখে শান্তিতে সংসার করতে পারে। আমার কোন ক্ষমতা নেই আমার কন্যার সামগ্রিক জীবন নিয়ন্ত্রন করার, তার ভবিষ্যত নির্ধারণ করার। যার এই ক্ষমতা আছে সেই পরমেশ্বর যখন গুরুরূপে আবির্ভূত হন,- তখন তাঁর কাছে আমার কন্যাকে সমর্পন করলে, তাঁর বিধানে আমার কন্যাকে বার বৎসর বয়স থেকেই অভ্যস্ত করে তুললে,- নিশ্চিত আমার কন্যার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হয়ে উঠবে। গুরুর প্রতি এতটুকু ভরসা-বিশ্বাস ও নির্ভরতা থাকেনা বলেই অনেকে বিবাহের পূর্বে তাদের কন্যাকে সদগুরুর দীক্ষায় দীক্ষিত করতে চায়না৷ তারা কল্পনা করে,- কন্যার জীবন নিজ ক্ষমতা বলেই সুন্দর ও  সুরক্ষিত করে তুলবে। আর প্রায়শই, - একটা সময় নিজের ভুলের জন্য কপাল চাপড়াতে থাকে।