Why does the priest fail? in Bengali Spiritual Stories by DR RAJESH CHOUDHURI books and stories PDF | যাজন ব্যার্থ হয় কেন?

Featured Books
Categories
Share

যাজন ব্যার্থ হয় কেন?

আমরা মানুষকে ঠাকুরের দীক্ষা গ্রহনের কথা বলি,- ঘরে ঘরে যাজন করি। কিন্তু লক্ষ করি,- অধিকাংশ মানুষই দীক্ষা নিতে চায়না। বারবার বলা সত্ত্বেও নানা অজুহাতে পিছিয়ে যায়,- বিরক্ত হয়। কেউ কেউ পালিয়ে বেড়ায়।

 তার কারন কি? কারন উভয়ত:। যিনি যাজন কারছেন তার মধ্যে খাঁকতি থাকতে পারে,- যাকে যাজন করা হচ্ছে তার মধ্যেও কারন নিহিত থাকতে পারে।

 আমাদের,- অর্থাৎ যাজনকারীর ত্রুটিগুলিই প্রথমে পর্যালোচনা করি। 

★ আমি যখন কাউকে ঠাকুরের কথা বলছি, সদগুরুর দীক্ষাগ্রহনের উপকারীতা বলছি,- সেই ব্যাক্তিটি আমার কথার সাথে আমার আচরন, চলন চরিত্রের সঙ্গতি খুঁজে। আমার ব্যাক্তিত্ব, জীবনচলনা, ব্যাবহার, অভ্যাস, চাহনী, চরিত্র যদি ঠাকুরকে প্রকাশ না করে,- শুধু মুখে যদি ঠাকুরের কথা বলতে থাকি,- তবে সেই যাজন কারো হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনা। পন্ডশ্রম হয়।

★ কথা বলার চেয়েও Demo দেখিয়ে মানুষকে বেশী প্রভাবিত করা যায়। আমি বলছি,-" সদগুরুর দীক্ষা গ্রহন করলে এই লাভ, এই উন্নতি হয়।"  তখন সামনের ব্যাক্তিটি Demo খোঁজে। যদি সে আমার মধ্যে Demo দেখতে না পায়,- তবে আমার কথা বিশ্বাস করেনা। আমি যে এতদিন ঠাকুরের দীক্ষা নিয়ে চলছি,- আমার কি লাভ হল, আমার কি উন্নতি হল,- তা স্পষ্ট হলে তবে সহজেই মানুষ বুঝে যায়।★ লেভেল না বুঝে জ্ঞান ঝাড়া!!  যে ব্যাক্তিটির সাথে কথা বলছি,- তার জ্ঞানবুদ্ধির লেভেল কতটুকু, সে কতটুকু কথার ওজন নিতে পারবে, তার প্রকৃতি ও মানসিক স্থিতি না অনুধাবন করে মূখস্ত করা ঠাকুরের বানী, তত্ত্বকথা, শ্লোক ঝেড়ে চলেছি,- কোন লাভ হবেনা।

★নাম ধ্যানের অভাব। নিজে নামধ্যান না করলে, - যাজনমূলক কথাগুলোও  নিরস হয়ে উঠে। কথার খেই থাকেনা। সেই যাজনে কাউকে প্রভাবিত করা যায় কমই।

 ★ঠাকুরের বই না পড়লে, ঠাকুর আসলে কি বলতে চেয়েছেন তা না জানলে, তাঁর আদর্শের বেসিক ব্যাপারটা না বুঝলে,- শুধু অন্য কারো আলোচনা শুনে মূখস্ত বুলি আউরে কোন লাভ হয় না। আলোচনা প্রসঙ্গে, ইষ্টপ্রসঙ্গে, অমিয় বানী, নানা প্রসঙ্গে, ঠাকুরের জীবনী গ্রন্থ,- অন্তত এই কয়েকটি বই পড়া না থাকলে ঠাকুরের আদর্শ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা সম্ভব নয়। আর আপসা আপসা ধারনা নিয়ে তাঁর কথা বলতে গেলে হোঁচট খেতে হবে নানান জায়গায়।

 যে ব্যাক্তিটিকে যাজন করছি,- তার মধ্যেও যাজন ব্যার্থতার অনেক কারন নিহিত থাকে। যথা,-

★Comfort zone নষ্ট হবার ভয়। খারাপ হোক, মন্দ হোক, ভাল হোক,- মানুষ যে চলনায় অভ্যস্ত হয়ে আছে, যে পরিস্থিতিতে আছে,- সেই অবস্থায় একটা comfort zone তৈরি হয়। ঠাকুরের দীক্ষা নিয়ে বিধিনিষেধ পালন করতে গিয়ে যদি এই comfort zone টা নষ্ট হয়ে যায়,- এই ভয়ে অনেকেই দীক্ষা নিতে চায়না।আমি পাহাড়ি জনজাতি এলাকায় চাকরি করার সুবাধে সেখানে অনেকের বাড়িতেই লক্ষ করেছি,- তারা বাডিতে শূকর পালে। বাড়ীর উঠানের কাছেই একটা গর্তে শূকরটি শুয়ে থাকে। সেই গর্তে কাঁদা ভর্তি,-পচা ভাত,নোংরা থাকে। শূকরটি সেই নোংড়া আবর্জনাময় গর্তে শুইয়ে থাকে।পরমানন্দে। মাঝে মাঝে মালিক সেই শূকরটিকে টেনে পাশের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু শূকরটি সেই গর্ত থেকে উঠতে চায়না,- অনেক জোরাজোরি টানাটানি করতে হয়। কারন ঐ,-  কমফোর্ট জোন!! মানুষের ক্ষেত্রেও তদ্রুপ হয়।

★ প্রবৃত্তির মোহ!! অনেকেই মদ খায়, ব্যাভিচারীতায় লিপ্ত থাকে , ঘুষ খায়, মিথ্যা বলে, নানা অনাচারে লিপ্ত থাকে। তারাও দীক্ষা নিতে ভয় পায়,- দীক্ষা নেওয়ার পর যদি ঐসব ছাড়তে হয়। অথবা ঐসবে লিপ্ত থাকা অবস্থায় দীক্ষা নিলে যদি পাপ হয়,- এই ভয়ে।

 ★বিশ্বাসের অভাব। অনেকেই নানান সমস্যায় জর্জরিত,- তা থেকে মুক্তিও চায়। কিন্তু ঠাকুরের বিধান মেনে চললে সেই সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব,- তা ঠিক বিশ্বাস করতে চায়না।কারন- তারা নগদ ফল চায়। পেট ব্যাথা হচ্ছে - ঔষধ খেয়ে সাথে সাথে ব্যাথা কমতে হবে। তবেই বিশ্বাস করবে। সুগার বেড়ে গেছে,- ঔষধ খেয়ে রাতারাতি সুগার কমতে হবে। সঠিক জীবনযাত্রা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রম, - এইসবের মাধ্যমেও যে সুগারের সমস্যা চিরতরে নির্মূল সম্ভব,- তা অনেকেরই বিশ্বাস হয়না। অনেকেই আবার এত নিয়ম মানতেও চায়না,- বিনা পরিশ্রমে কষ্ট না করে শুধু টেবলেট খেয়ে সুগার কমাতে বেশী আগ্রহ। দীক্ষার ক্ষেত্রেও তদ্রুপ!! 

★ অভাবের অভাব। অনেকেই পরম সুখে আছে, ধনে-জনে-বিলাসীতায় বেশ আনন্দে মত্ত আছে। সে ভাবে সারাজীবন এইভাবেই কাটবে। ভবিষ্যত নিয়ে ভাবিত নয়। এইসব পরম সুখী মানুষেরাও সহজে দীক্ষা নিতে চায়না। যতদিন অভাবে না পড়ছে, সুখের ভান্ড শেষ না হচ্ছে,- ততদিন ঈশ্বরের কথা তাদের কাছে অপ্রয়োজনীয় ফালতু মনে হয়।

 ★অনেকেই দুই পাতা বিজ্ঞান পড়ে বিজ্ঞানী হয়ে যায়। দুই পাতা দর্শন পড়ে দার্শনিক হয়ে যায়। কয়েকটা ডিগ্রী বাগাতে পারলেই পরম জ্ঞানী হয়ে যায়। তারা তখন কুয়োর ব্যাঙ হয়ে যায়। এই কুয়োর ব্যাঙরাও ঈশ্বরের কথা শুনতে চায়না। নিজে যা জানে, যা বুঝে,- এর বাইরেও যে অনেক জানার, অনেক বুঝার আছে,- সেটা তারা বিশ্বাস করতেই চায়না। নিজে যতটুকু বুঝল সেটাই আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়। 

★ আবার অনেকেই আছে,- চরম নির্বোধ!! নিজে কিছু জানেনা, বুঝেনা, বোধবুদ্ধি নেই,- কিন্তু তাদেরকে ভাল বুদ্ধি দিলে, ভাল পথ দেখালে,- সেটা গ্রহন করার মত বুদ্ধিও থাকেনা। কিন্তু,- এর মধ্যেও বহু মানুষ যাজনে প্রভাবিত হয়,- ঠাকুরকে গ্রহন করে। তারা পরম সৌভাগ্যবান।