I am very well. in Bengali Motivational Stories by DR RAJESH CHOUDHURI books and stories PDF | খুব ভাল আছি

Featured Books
Categories
Share

খুব ভাল আছি

রাস্তায় পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে একটিবার  জিজ্ঞেস করুন,-" কেমন আছেন দাদা ?" 

অধিকাংশ মানুষই মুখটা নিরস করে উত্তর দেবে,-" এই তো দাদা, কোনমতে চলে যাচ্ছে।" অথবা,-" আছি দাদা মোটামুটি!! ",  " ভালনা দাদা।" , " ভাল-মন্দ মিলিয়ে কেটে যাচ্ছে দাদা।", " দিনকালের যা অবস্থা,- কেমন আর থাকব বলুন!!".. এই ধরনের উত্তরই আসবে। 

অর্থাৎ পরিচিত বেশীরভাগ মানুষই বুকে হাত দিয়ে দৃঢ়তার সাথে হাসিমুখে বলতে পারেনা,-" খুব ভাল আছি দাদা।"  সত্যি সত্যি অধিকাংশ মানুষই ভাল নেই অন্তর থেকে। 

অথচ, তার বাড়ীতে একটিবার গিয়ে দেখুন,- দেখবেন,- বাড়ীতে আরাম-আয়েস-বৈভবের কমতি নেই, সুন্দর বাড়ী রয়েছে, প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশী অর্থ তার কাছে রয়েছে, বড় বড় মোটা অংকের  লাইফ ইন্সুইরেন্স করা আছে,  বেশ লম্বা লম্বা ডিগ্রী ও রয়েছে, সপ্তাহে দুই-তিনদিন বাড়ীতে মাংস আসছে, ব্রেন্ডেড পোশাক পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে,  ছেলে-মেয়ে দামী স্কুলে পড়ছে, ঘরে সুন্দরী বউ আছে, বিয়ের সময় শ্বশুরবাড়ী থেকে পাওয়া অঢেল জিনিসপত্রও রয়েছে,- তবু তারা ভাল নেই। 

কেন ভাল নেই? কিসের অভাব? ভাল থাকার, সুখে থাকার এত আয়োজন বর্তমান থাকা সত্ত্বেও আমাদের মনের মধ্যে কিসের এত শূন্যতা? কেন জোর গলায় দৃঢ়তার সাথে বলতে পারিনা,-" আমি খুব ভাল আছি"? মুখটা এত নিরস কেন? 

এত কিছু থাকা সত্ত্বেও মনে প্রকৃত আনন্দ নেই, সন্তুষ্টি নেই, তৃপ্তি নেই, ভালবাসা নেই। সারাক্ষন ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা ও দুঃচিন্তা, প্রতিযোগিতায় হেরে যাবার ভয়, সুন্দরী বউ থাকা সত্ত্বেও দাম্পত্য কলহ ও অশান্তি, পারিবারিক সম্প্রীতি ও ভালবাসার অভাব, পারিপার্শ্বিক নিয়ে একটা সারাক্ষনের ভয়,.. সর্বদা  একটা ভাল না থাকার অনুভূতি!!  

অথচ এমন অনেক মানুষকেই আমরা আশে পাশে দেখতে পাই,- যাদের জীবনে অনেক কঠিন কঠিন সমস্যা নিয়েও তারা হাসিমুখে বলছে, -" খুব ভাল আছি।" আজকেই ২০/২২ বছর বয়সী ব্যাঙ্গালোরের একটি মেয়েকে দেখলাম ভিডিওতে,- যার দুটো হাতই নেই।  একটা দুর্ঘটনায় পর কেটে বাদ দিতে হয়েছে। তারপরও সে ভাল আছে,- দুই পা দিয়ে খুশী মনে গাড়ী চালাচ্ছে, চোখেমুখে তৃপ্তির ছাপ রয়েছে। মন খারাপের লেশমাত্র নেই।

 আমি একজনকে চিনি,- যার কন্যা শ্বশুরবাড়িতে আত্মহত্যা করেছে,-  এবং উল্টো উনার উপর মিথ্যা দোষ চাপিয়ে মামলা করা হয়েছে। এই ঘটনার দুয়েকদিন পর উনাকে দেখলাম ঠাকুরের কাজে বেরিয়ে গেছেন। জিজ্ঞেস করলাম,-" কেমন আছেন?" একগাল হেসে উত্তর দিলেন,- " ভাল আছি৷ তুমি ভাল তো?" 

আমি অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলাম,-" আপনার একটা দুঃসংবাদ শুনলাম। আপনি এই অবস্থার মধ্যেই ঠাকুরের কাজে বেরিয়ে পড়লেন?"

 উনি হাসিমুখেই উত্তর দিলেন,-" জীবনে সমস্যা তো থাকবেই ভাই। তাই বলে কি আমার ঠাকুরের কাজ বন্ধ রাখতে পারি? আমায় মেয়ের প্রতি যা যা দায়ীত্ব ছিল,- যথাসম্ভব পালন করেছি। সে চলে গেল,- অসময়ে। তার আয়ু হয়ত এতটুকুই ছিল। তার এই চলে যাওয়ার পেছনেও ঠাকুরের কোন মঙ্গল ইচ্ছা আছে নিশ্চই। জন্ম-মৃত্যু সবতো তাঁর ইচ্ছাধীন।

" আমার বড় অদ্ভুত লাগল!!  মানুষ এই অবস্থায় ও ভাল থাকতে পারে!! মুখে নির্মল হাসি রেখে কথা বলতে পারে?!

তেমনি আমাদের আগরতলা সৎসঙ্গ মন্দিরের উল্টোদিকে বারান্দায় দেখবেন একজন লোক রোজ বিকেলে ঠাকুরের ছবি, ঔষধপত্র বিক্রি করেন। কয়েক বছর পূর্বে একটা ভয়ংকর দুর্ঘটনায় উনার একটা পা সম্পূর্ণ কাটা যায়। এখন উনি হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন। এই অবস্থায়ও উনি পূর্বের ন্যায় একইভাবে ব্যাবসা বানিজ্য করছেন,- হাসিমুখে কথা বলছেন। উনার কাছে গেলেই আমি জিজ্ঞেস করি,-" কেমন আছেন দাদা?" উনি এক গাল হেসে উত্তর দেন,-" ঠাকুরের দয়ায় ভাল আছি দাদা।"  উনার এই " ভাল আছি" কথাটা আমার খুব প্রিয়৷ তার এই ভাল থাকা দেখে আমার মন ভাল হয়ে যায়। তিনি বলেন,- হয়ত সেদিন এক্সিডেন্টে আমি মারাই যেতাম। ঠাকুরের দয়ায় শুধু একটা পায়ের উপর দিয়ে বিপদটা কেটে গেল।

 তেমনি আপনার আমার আশেপাশে প্রচুর উদাহরণ রয়েছে,- যাদের জীবনে অনেক ভয়ংকর ভয়ংকর সমস্যা রয়েছে, অনেক অভাব রয়েছে, - কিন্তু সে সেসবের মধ্যেও তারা   বেশ আনন্দে আছে, ভাল আছে। 

অর্থাৎ এই যে ভাল থাকা বা খারাপ থাকা, সুখে থাকা বা দুঃখে থাকা, আনন্দে থাকা বা কষ্টে থাকা,- সম্পূর্নই আমার মনের ভাবের ব্যাপার। তা কখনোই আমার পারিপার্শ্বিক,  অর্থ, নারী, খ্যাতি, আরাম, আয়েস, বৈভব, ডিগ্রী, পদমর্যাদা এইসবের উপর নির্ভর করেনা কখনো। 

তাই পরমপুরুষ শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন,-" দুঃখ কারো প্রকৃতগত নয়কো, তা'কে ইচ্ছে করলেই তাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। " 

আবার বললেন,-" দুঃখও একরকম ভাব, সুখও একরকম ভাব। অভাবের বা চাওয়ার ভাবটাই দুঃখ।" 

একদমই তাই। দারুন প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও আমি " খুব ভাল আছি" -এই কথাটুকু বলতে পারিনা,- কারন,- আমার মনের চেতন ও অবচেতন স্তরে নেগেটিভ ভাবের প্রাধান্য৷ পজিটিভ এনার্জির খুব অভাব আমাদের মধ্যে। 

ঘুম থেকে উঠেই পত্র-পত্রিকায় নেগেটিভ সংবাদের ছড়াছড়ি। খুন-ধর্ষন- রাহাজানির হেডলাইন। বড় বড় নেতা-মন্ত্রী-অফিসার ঘুষ খাচ্ছে, চুরি করছে। এক নেতা আরেক নেতা সম্পর্কে শুধু নেগেটিভ কথা বলছে। একে অপরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। একজনের বউ আরেকজনের সাথে পালিয়ে যাচ্ছে।  দিনের শুরুতেই এই ধরনের নেগেটিভ খবর  একটা মন খারাপের ভাব সৃষ্টি করে দিচ্ছে আমার মধ্যে। সেই ভাব নিয়েই সারাদিন আমি চলছি৷ বাজারে-অফিসে-আদালতে সারাক্ষণ পরনিন্দা-পরচর্চা চলছে। কোন পজিটিভ কথাবার্তার চর্চা নেই। অফিসের বস শুধু আমার ত্রুটি গুলি ধরে ধরে অপদস্ত করছে। পাশের টেবিলের কলিগ সারাক্ষন শুধু তার সংসারের ঝামেলা নিয়ে বকবক করছে। বাড়ীতে বউ কথায় কথায় আমার ত্রুটি ধরছে। আমিও তাকে তাই করছি। বাচ্ছার রেজাল্ট সামান্য একটু খারাপ হলেই ভাবছি তার ভবিষ্যত অন্ধকার৷ বাবার প্রেসারটা একটু বাড়লেই ঘাবড়ে গিয়ে চোখেমুখে অন্ধকার দেখছি। কখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাই- এই ভয়ে ঘুম আসছে না। 

চারদিকে শুধু নেগেটিভ এনার্জির মধ্যে আমি ডুবে আছি। তাতে আমার মনের পজিটিভ এনার্জি ফুরিয়ে গিয়ে শুধু নেগেটিভিটিতে ভরপুর৷ ভাল থাকব কিভাবে? মনের পজিটিভ এনার্জি ধরে রাখার কোন উপায় যে আমি অবলম্বন করছি না। আনন্দে থাকার জন্য, মনের সুস্থতার জন্য কি করছি আমি?

মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ যাতে শেষ না হয়ে যায়,- তার জন্য প্রতিদিন রাতে চার্জে বসাই। কারন,- যে মোবাইল দিয়ে আমি কথা বলি, ইন্টারনেট ঘাঁটি , গান শুনি, ছবি তুলি, চ্যাট করি,- সেই মোবাইলই চার্জ না থাকলে একটা অকেজো বস্তুতে পরিনত হয়। কিন্তু, প্রতিদিন চারিপার্শ্বের নেগেটিভিটি যে আমার মনের, আমার চেতনার পজিটিভ এনার্জিকে চুষে নিয়ে আমাকে নিথর, হতাশ, ক্লান্ত, দিশেহারা করে দিচ্ছে,- সেই মন বা চেতনাকে চার্জ দেওয়ার কি ব্যাবস্থা আমি করছি? আমার সত্তার খোরাক কই?

 সেই পজিটিভিটিকে ধরে রাখার জন্যই প্রয়োজন মনকে নিয়মিত চার্জ দেওয়া। মনের পজিটিভিটি অক্ষুন্ন থাকলে শত সমস্যা ও অভাবের মধ্যেও আমার মধ্যে হতাশা আসেনা, ভয় আসেনা, নিরানন্দ আসেনা।

 বাল্যাবস্থায় সকলেই খুব আনন্দে কাটায়। এই বয়সে আমাদের কোন হতাশা গ্রাস করতে পারেনা৷ কারন,- তখন আমার মাথার উপর মা-বাবা থাকেন। সেই বয়সে  তাদের উপর আমার প্রশ্নহীন নির্ভরতা, বিশ্বাস আমার জীবনকে খুব নিশ্চিত, ভয়হীন, দুঃচিন্তাহীন ও আনন্দময় করে রাখে।

 জীবনের বাকী সময়টাতেও যদি আমার জীবনে একজন জীবন্ত উচ্চ আদর্শ  আমার মাথার উপর থাকেন,- যাকে আমি আমার মা-বাবার মতই বিশ্বাস করতে পারি, নির্ভর করতে পারি,- তবে তখনও আমার জীবন আনন্দময় হয়ে থাকে।

সেই জীবন্ত আদর্শটি যদি হন পজিটিভিটির মূর্ত প্রতীক, আনন্দঘন পুরুষ তবে তাঁর সঙ্গ, তাঁর স্মরন-মনন, তাঁর ধ্যান প্রতিনিয়ত আমায় পজিটিভ এনার্জিতে ভরপুর করে রাখে। জীবনের বিশাল বিশাল সমস্যায়ও আমি আতংকিত হই না, হতাশ হই না,- নেগেটিভ চিন্তায় ডুবে যাই না। 

নিয়মিত ব্রাম্মমুহুর্তে তাঁর ধ্যান ও মন্ত্রসাধন আমাদের মনে পজিটিভ এনার্জির সঞ্চার করে,- যেমনটা মোবাইলের ব্যাটারি চার্জ দিলে চার্জিং লেভেল ঠিক থাকে। নিষ্ঠাসহ ইষ্টভৃতি নিবেদন সেই আনন্দঘন পুরুষের সাথে আমার  চেতনার সংযোগ ঘটিয়ে আমায় শক্তিশালী করে তুলে। অফুরন্ত শক্তির সঞ্চার হয় আমার মধ্যে। স্বতঃঅনুজ্ঞা পাঠ আমাকে সেই পজিটিভিটির দিকে আরো ঠেলে দেয়। তাঁর চর্চা, তাঁর কাজ, তাঁর কথা, তাঁর দর্শন, তাঁর সঙ্গ প্রতিনিয়ত আমার মনের সব কালিমা, সব হতাশা  দূর করে এক নিরবিচ্ছিন্ন আনন্দের অধিকারী করে তুলে।

 তখন কোন সমস্যা, কোন অভাব আমার মনে হতাশার সৃষ্টি করতে পারেনা। সকল নেগেটিভিটির মধ্যেও আমি চির পজিটিভ ভাব নিয়ে থাকতে পারি। আমার সব অবস্থার মধ্যে আমি তাঁর মঙ্গল ইচ্ছা বুঝতে চেষ্টা করি। আমি প্রতদিন তাঁর কাছে প্রার্থনা করি,-" প্রভু, আমি জানিনা আমার মঙ্গল কিসে হবে। আমার ভিতরে তোমার ইচ্ছাই পূর্ন হোক। তোমার ইচ্ছাই মঙ্গল।" আর, - তার জন্য আমি সর্বান্তকরনে রাজী থাকি। 

তাই তখন আমি সকল সমস্যার মধ্যে দাড়িয়েও বুকে হাত দিয়ে দৃঢ়ভাবে বলতে পারি,-" খুব ভাল আছি দাদা।"