জঙ্গলের প্রহরী
পর্ব - ২৩
❤♣❤♣❤♣❤
বন্ধুদের সব ঝামেলার মূর্তিমান কারণ হয়ে রাজীব বেচারা চুপচাপ বারান্দায় বসে ছিল। এমনিতেই রাজীবের ভিতরে একটা রাগী স্যার আছে, তার উপর মণীষাকে যতই ভালবাসুক, সেও তো আদতে রাজীবের ছাত্রী। তাই মণীষা আর তার বন্ধুদের শাসনের দায়িত্বটাই বেশি করে কাঁধে তুলে নিয়েছিল।
বলতে নেই, প্রথম দেখায় সিদ্ধার্থকে ওর চালবাজই মনে হয়েছিল। এত বড় একটা কান্ড নাহলে কি করে ঘটল ওর নাকের ডগায়? তাই বাজিয়ে দেখতে গেছিল। কে জানত ওর নিজেরই ব্যান্ড বেজে যাবে? এখন মণীষাকে ম্যানেজ করবে কি করে?
ওর কপাল ভাল, একটু পর নাক টানতে টানতে মণীষাই বেরিয়ে আসে। ভেবেছিল বাংলোর আশেপাশে ঘুরবে। রাজীবকে দেখেই ও বাংলোটা ঘুরে পিছনের জমির দিকে রওনা দেয়। রাজীবও অবশ্য চুপচাপ পিছনে হাঁটা দেয়।
এদের চলে যেতে দেখে শমীক আর দিয়া সামনে রাস্তার ধারের একটা পাথরে এসে বসে। এত সুন্দর একটা জায়গায় বেড়াতে এসেও নিজেদের মতো বেড়ানো, ঘোরা, গল্প, কিছুই হচ্ছে না ওদের।
❤♣❤♣❤♣❤
মুখ শুকিয়ে বসে থাকা শুক্লার পাশে গিয়ে বসে শ্রীতমা, "শুক্লা, একটা কথা বলি, তোর কাছে সিদ্ধার্থদার নম্বর থাকলে একবার ফোন করে খবর নে। উনি তোর চোট লাগায় খবর নিয়েছেন, দেখতে এসেছেন। ভদ্রতা করেও তো খবর নেওয়া উচিত।"
শুক্লার মুখটা আরও শুকিয়ে গেল, "নম্বর তো নেই। দাদা আসুক, খবর নেব।"
- "শাক্যদা কখন আসবে ঠিক আছে? আজ তোর দাদার উপর কতটা চাপ আছে বলতো? ততক্ষণ এভাবে থাকবি তুই? দাদাকে একটা ফোন কর নাহয়।"
- "দাদা ব্যস্ত থাকবে, তার মধ্যে ফোন করব? তাছাড়া দাদা কি আর বাড়তি কোনো খবর জানে? ও তো স্পটে থেকে গেল।" শুক্লা বুঝে উঠতে পারে না কি করবে।
- "হুঁ, সেটা ঠিক বলেছিস। শাক্যদা অন্য জায়গায় আছে।" শ্রীতমা ভাবছিল, হঠাৎ লাফিয়ে ওঠে, "শাক্যদার কাছে সিদ্ধার্থদার নম্বর আছে না? চাইলে হয় না?"
- "নম্বর চাইব? দাদা ব্যস্ত থাকে যদি? একটা কাজ করব, আমরা একবার গিয়ে দেখে আসব? তুই যাবি আমার সঙ্গে?"
- "দি আইডিয়া ! চল আমরা দুজন ওকে দেখে আসি। অসুস্থ মানুষকে দেখতে তো যাওয়াই যায়।"
মাকে বলে চুপচাপ বেরিয়ে পড়ে দুই বান্ধবী। বাকিরা টেরই পায় না। জঙ্গলের দিক পাহারা দিচ্ছে ফরেস্ট গার্ড, পুলিশ আর সাধারণ লোকজন। তাই হাতি বা কোনো বন্যজন্তুরই এখন এই রাস্তায় নেমে আসার ভয় নেই। সেজন্যই মা ছেড়েছেন।
প্রায় ছুটতে ছুটতে দুজন সিদ্ধার্থর বাংলোয় পৌঁছয়। গেট বন্ধ, শুনশান, লোকজনের কোনো সাড়াশব্দ নেই। ডাকাডাকি করতে হবে ভেবেই শুক্লার কেমন যেন লাগে। শ্রীতমা অবশ্য বুঝতে পারছে ওর অবস্থাটা। সেই গেট খুলে আগে ঢোকে, সামনের বারান্দায় উঠে বন্ধ দরজার সামনে ডাকাডাকি শুরু করে, "সিদ্ধার্থদা, ও সিদ্ধার্থদা, ও ঋষিদা, বাড়িতে আছেন আপনারা? শুনতে পাচ্ছেন?"
দু চারবার ডাকতেই ঋষি এসে দরজা খোলে। সবে ওরা ফিরেছে পল্টনকে নিয়ে। সঞ্জয় আর তাপস ফিরে গেছে। টিপকা জল গরম করে দিয়েছে, ঋষি সিদ্ধার্থকে জামা খুলে স্নান করতে পাঠিয়েছিল। এখন ওকে হেল্প করছিল জামা পরতে। বাঁ হাত প্রায় অকেজো হয়ে আছে ওর।
দরজা খুলে ঋষি প্রথমে অবাক হলেও তাড়াতাড়ি সামলে নিল। আসুন আসুন করে ডেকে নিল ওদের, সিদ্ধার্থকেও ডাকল।
তবে শুক্লাও ঋষিকে দেখে কথা খুঁজে পেয়েছে। শুক্লা আর শ্রীতমা দুজনেই সিদ্ধার্থকে বারণ করে উঠতে। ওরা সিদ্ধার্থকে দেখতে এসেছে, ওদের আপ্যায়নের কোনো প্রয়োজন নেই।
সিদ্ধার্থ নিজেও একটু ব্যোমকে গেছে। কথা খুঁজে না পেয়ে টিপকাকে বলে ওদের চা বিস্কুট দিতে। তাতেও মেয়েদের আপত্তি, ওরা এখন কিছু খাবে না।
শ্রীতমা বলে, "এসব ফর্মালিটি ছাড়ুন সিদ্ধার্থদা। আপনি কেমন আছেন আগে বলুন? ডাক্তার দেখে কি বলল ঋষিদা?"
- "এমনি তো ঠিক আছে। কিছু ভাঙেনি, এক্স রে হয়েছে। কাটাছেঁড়া গুলো ঠিক হয়ে যাবে। তবে বাঁ হাতটায় ভালই লেগেছে। ক্রমশঃ ফুলে উঠছে কনুইটা। এখন হাত ভাঁজই করতে পারছে না। দুদিন রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যেত। সে তো হওয়ার নয়। কারও কথাই শোনে না।" ঋষি গুছিয়ে নালিশ করে।
শুক্লা জোরে শ্বাস টানে, বোঝা যাচ্ছে, উত্তেজিত।
- "কেন দাদা? দুটো দিন রেস্ট নিলে কি হয়? পুরো সুস্থ হয়ে গেলে ঢিসুম ঢিসুমটা বেটার হতো না?" শ্রীতমার কথার ধরণে সবাই হেসে ফেলে, সবাই যে হঠাৎ জড়োসড়ো হয়ে গেছিল, সেটা কাটে।
শ্রীতমা জাঁকিয়ে বসে টুলের উপর, আরেকটা টুল টেনে নিয়ে শুক্লাও বসে।
শ্রীতমাই আবার বলে, "মজা নয়, সত্যিই বলছি, সাবধানে থাকুন। আমরা খুবই টেনশন করছিলাম, আপনি যা করেছেন, লোকেরা তো বলাবলি করছে শুনলাম ! তারপর একবার না এসে আর পারলাম না।"
- "সাবধানেই আছি। আর আপনারা আমার জন্য চিন্তা করেছেন, অনেক ধন্যবাদ। তবে কি জানেন তো, আমার কিছু হবে না। হলেও কারও কোনো অসুবিধা হবে না কখনো।"
[ ❤ কি হবে সিদ্ধার্থ আর শুক্লা মুখোমুখি হওয়ায়? শুক্লা কি লুকিয়েছে, সিদ্ধার্থ কি জানে, সব কি সামনে আসবে?
❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]
চলবে