Jongoler Prohori - 21 in Bengali Thriller by Srabanti Ghosh books and stories PDF | জঙ্গলের প্রহরী - 21

Featured Books
Categories
Share

জঙ্গলের প্রহরী - 21

জঙ্গলের প্রহরী

পর্ব - ২১

❤♣❤♣❤♣❤

- "হাতিরা ডিরেক্টলি না হলেও ইনডিরেক্টলি হেল্প করেছে। একজন অন্ততঃ একটা ভুল করেছে।" ঋষির মুখে চাপা হাসি। 

- "হুম, সন্দেহ আমি প্রথম থেকেই করছিলাম। আজ শিওর হলাম।" সিদ্ধার্থ আয়েস করে ধোঁয়া ছাড়ে, যদিও কনুইয়ের কাছে জ্বালা করছে, হাত ভাঁজ করতে লাগছে। 

- "তুমি প্রথম থেকে কাকে সন্দেহ করনি বলোতো? আমি সেই রাতে তোমার সঙ্গে না থাকলে আমাকেও সন্দেহ করতে।" ঋষি অনুযোগ করে। 

- "করতাম, তেমনি সেক্ষেত্রে তুইও আমাকে সন্দেহ করতি। সেটাই উচিত। ঐ ফাইভ হান্ড্রেড পারসেন্ট বাজিয়ে না দেখে কাউকে ছাড়া আমার ডিকশনারিতে নেই।"

- "তবে শাক্য বা শুক্লাকে সন্দেহ করার কিছু নেই, এটা তো এখন বুঝেছ?" ঋষি যেন দম ছেড়ে বেঁচেছে এই মিটমাট দেখে। 

- "শাক্যকে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ ছিল। এমনকি ও এখনও অনেক কথা লুকিয়ে রেখেছে। কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করছি, দেখি ও কতটা মুখ খোলে। আর শুক্লাকে আমি বিশ্বাস করি না, এখনও না।"

- "মানে?????" ঋষি আর তাপস একযোগে চেঁচিয়ে উঠেছে। দিনের সেরা আশ্চর্য কথা শুনেছে ওরা। সঞ্জয়ের হাতও কেঁপে উঠেছে, একবার সিদ্ধার্থর দিকে তাকালেও সামলে নিল এই রেঞ্জের সেরা ড্রাইভার। 

- "অবাক হওয়ার কিছু নেই। শুক্লা কতটা কি জানে আর সেগুলো যে লুকোচ্ছে এটা প্রথম থেকেই আমি জানি। যাইহোক, হেলথ সেন্টার যখন এসেই গেছে, এখন কথাগুলো তোলা থাক।" সিদ্ধার্থ সিগারেটের শেষটা হাতে গাড়ি থেকে নামে, জুতোয় পিষে সিগারেটটা নিভিয়ে এগিয়ে যায় মাথা উঁচু করে। ঋষি অন্যমনস্ক ভবে তাকিয়ে থাকে কাউন্টারটার দিকে। ওর মাথায় ঘুরছে, সিদ্ধার্থর স্মোকিং ছাড়ার কারণটাই বা কি, আবার ধরার কারণটাই বা কি? ঋষি যা ভাবছে, সিদ্ধার্থর ব্যাপারে সেটা বিশ্বাস করতে পারছে না যে !! 

❤♣❤♣❤♣❤

সিদ্ধার্থকে একফোঁটাও পাত্তা দেন না হেলথ সেন্টারের ডাক্তারবাবু। বলেই দেন, "এটা আমার এলাকা আর আপনি এখন জাস্ট একজন পেশেন্ট।"

ওকে জামা খুলিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন ডাক্তার, হাত পা নাড়তে পারছে, সমস্যা নেই নিজেই জানায়। ডাক্তার পুরো গল্প শুনে ফেলেছেন আগেরবার ঋষি আর তাপসের কাছে। হেসে বলেন, "আপনার যা উৎসাহ আর প্রাণশক্তি, হেয়ার লাইন ক্র্যাক হলে আপনি ওসব ব্যথা হজম করে ফেলবেন। এক্স রে মেশিন আছে, আমি ফুল বডি এক্স রে না করে ছাড়ব না। বিশেষ করে রঙ্গিলা আমাকে বলেছে লাস্ট মোমেন্টে আপনি ওকে জাপটে ধরে নিজে রোল করেছিলেন, চোট যা লাগার আপনার লেগেছে।" 

স্পিরিট দিয়ে সিদ্ধার্থর ক্ষতগুলো পরিষ্কার করা হয়, দুই ভুরু আরও কুঁচকে থার্ড ব্র্যাকেট হয়ে যাওয়া ছাড়া মুখের ভাবে বোঝা যায় না কতটা জ্বলছে। তারপর এক্স রে। প্লেট দেখে সন্তুষ্ট হন ডাক্তার, ভাঙচুর কিছু হয়নি। এবার অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে, পেইনকিলার দিয়ে ছেড়ে দেন ওকে। 

গাড়ির দরজা বন্ধ করে সিদ্ধার্থ বলে, "রায়চৌধুরী বাড়ি, কুইক। কারও সঙ্গে রাস্তায় দেখা হলে কেউ বলবে না আমরা কোথায় যাচ্ছি।"

- "মানে? তোমার এখন রেস্ট নেওয়ার কথা। সঞ্জয় বাংলোয় চলো।" ঋষি এবার বড়ভাই হয়ে উঠেছে। 

- "নাটক করবি না, আমি মরে যাইনি। কিন্তু আর দেরি করলে যদি একটা প্রাণও যায় আমরা কেউ পূরণ করতে পারব না।" সিদ্ধার্থ ঝাঁঝিয়ে ওঠে। 

- "দাদা, ব্যাপারটা বোঝো, আমরা ধরে ফেলেছি ও বোঝেনি।" ঋষি নরম সুরে বোঝায়। 

- "বুঝতে কতক্ষণ? একটামাত্র ভুল করেছে। নাহলে যথেষ্ট চালাক। যেকোনো সময় ও ধরে ফেলবে নিজের ভুলটা। তখন বাচ্চাটার কি হবে? সঞ্জয় চলো।" সিদ্ধার্থ মনস্থির করে ফেলেছে। 

- "স্যার আপনারা কি সন্দেহ করছেন যে...... " তাপস কথা শেষ করতে পারে না, সিদ্ধার্থ খেঁকিয়ে ওঠে, "আগামী চব্বিশ ঘন্টা, আচ্ছা অন্ততঃ আঠারো ঘন্টা কেউ প্রশ্ন করবে না।" সবাই চুপ করে যায়। 

সিগারেট ধরাতে গিয়ে আরও মাথা গরম করে সেটা দলাপাকিয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে ও, কনুইটা আর ভাঁজ করতে পারছে না, প্রচন্ড যন্ত্রণা। ঋষি আরেকটা সিগারেট দিয়ে ধরিয়ে দেয়। একটুক্ষণ সিগারেট টেনে ওর বোধহয় মাথা ঠান্ডা হয়, সঞ্জয়ের কাঁধে হাত রেখে শান্তভাবে বলে, "চলো, ও বাড়িতে গিয়ে আমাদের প্ল্যানটা করে নিই। আজ রাতে মনে হচ্ছে জাগতে হবে। তাপস, তুমি থানায় চলে যাও।"

পল্টন আর প্রসাদকে নিয়ে বসে ওরা। গাড়িতে সিদ্ধার্থর গতকাল কেনা চকলেট বক্স ছিল, ডিওডোরেন্ট ছিল। সেগুলো প্রথমেই পল্টনকে দিয়েছে ও। সিদ্ধার্থ আর ঋষি যত্ন করে কথা বলে পল্টনের সঙ্গে, আস্তে আস্তে ভাব হয়। পল্টন কিছু কথা বলে, সিদ্ধার্থ কিছু কথা বলে। 

প্রসাদ মাঝখানে বলে, "আজ এ বাড়িতে খেয়ে যেতেই হবে আপনাকে। আমি চালে ডালে খিচুড়ি বসাচ্ছি। এ বাড়ি থেকে না খেয়ে যাওয়া চলবে না।"

সিদ্ধার্থ হতাশভাবে বলে, "তোমরা দেখছি পাঁচকান না করে ছাড়বে না। আরও একদিন অন্ততঃ মুখ বন্ধ রাখ।" 

অবশ্য সবাই গোল হয়ে বসে শালপাতায় খিচুড়ি খাওয়াও হয়। তারপর একটা হাফপ্যান্ট আর গেঞ্জি নিয়ে পল্টন গিয়ে ওঠে ওদের গাড়িতে। 

[ ❤ কার প্রাণের আশঙ্কা করছে সিদ্ধার্থ? পল্টনকেই বা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? 

❤ জানা যাবে পরের পর্বে। অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য। আপনার মতামতের অপেক্ষা করছি। দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন। ]

চলবে