Jongoler Prohori - 3 in Bengali Thriller by Srabanti Ghosh books and stories PDF | জঙ্গলের প্রহরী - 3

Featured Books
Categories
Share

জঙ্গলের প্রহরী - 3

জঙ্গলের প্রহরী / ৩

পর্ব - ৩

🍁🍂🍁🍂🍁🍂🍁

জঙ্গলের হাতার বাইরে কাঁটাতারের বেড়ায় ঘেরা ছোট একটা বাংলোবাড়ি। হলুদ দেওয়াল, সবুজ দরজা জানালা, লাল টিনের চাল। জঙ্গলের কোর এরিয়া না হলেও গাছপালায় ঘেরা বুনো ভাবটা রয়েছে এখানেও। তার মাঝখানে রোদে ধোওয়া বাংলোটি যেন উজ্জ্বল একটুকরো ফুলবাগান। বাংলোর নিজস্ব ফুলবাগানও রয়েছে। 

সিদ্ধার্থ যতদূর শুনেছে, এটা শাক্য গোস্বামীর পৈত্রিক বাড়ি। রেঞ্জারের বাংলোয় ও থাকে না এখানে বাড়ি আছে বলে। শুধু অফিসটা ব্যবহার করে। আগেরবার সেখানেই দেখা হয়েছিল।

বাংলোর বারান্দায় একটি মেয়ে গার্ডেন চেয়ারে বসে বই পড়ছিল। সিদ্ধার্থ সামনে যেতে মুখ তুলে তাকায়। 

সিদ্ধার্থ কার্ড বের করে, "আমি......."

- "দাদা বলেছে, আপনি আসবেন। আপনিই নিশ্চয়ই সিদ্ধার্থ...... " মনে করতে চেষ্টা করে মেয়েটি। 

চোখের এভিয়েটর সান প্রোটেকশন গ্লাস খুলে ও বলে "রায়, সিদ্ধার্থ রায়। মিঃ গোস্বামী আছেন?"

- "হ্যাঁ, ডাকছি। আপনি বসুন।" বইটা উপুড় করে রেখে গেছে মেয়েটি। মলাটে লেখা, "উত্তরবঙ্গের রাজবাড়ি ও জমিদারবাড়ির ইতিহাস।" নিজের রোদচশমাটা টেবিলে রেখে বইটা তুলে নেয় সিদ্ধার্থ। 

সিদ্ধার্থ খেয়াল করেছে, বেশ রূপসী মেয়েটি। স্বাভাবিক, শাক্য গোস্বামীও অত্যন্ত সুপুরুষ। এখানে এসেই শাক্যর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে সিদ্ধার্থর। অস্ত্র এবং পোচিং নিয়েও কথা হয়েছে। ওর সমবয়সী, আগে কানহায় ছিল। এখানে মাসছয়েক। শাক্য নাকি এখনও কোনো প্রমাণ পায়নি জঙ্গলে বাইরের লোক ঢোকার। 

সিদ্ধার্থর বিশ্বাস হয় না। এত বড় জঙ্গল থাকতে অপরাধীরা নিজেরা লুকোতে এবং ওদের চালানী অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখতে এই জঙ্গল ব্যবহার করে না, এটা হতেই পারে না। আর সেক্ষেত্রে রেঞ্জার সব জানে। সুতরাং যতই প্রথমদিন থেকে শাক্য ওকে সাহায্য করবে বলে থাক, সিদ্ধার্থর নজর সরেনি শাক্য আর ঠিকাদারদের উপর থেকে। 

- "আরে কি কান্ড, আপনাকে এখানে বসিয়ে রেখেছে কেন? আসুন আসুন ভিতরে আসুন।" একটু বেশি অন্তরঙ্গতা কি শাক্যর গলায়?

বাংলোর সেরা জায়গা সম্ভবত এই বারান্দাটা। সামনে যতদূর চোখ যায়, পাহাড়ের সারি, সবুজ থেকে বাদামি হয়ে, ধূসর এবং শেষে মাথায় সাদা বরফের মুকুট পরে চলে গেছে ভূটানের মধ্যে। 

- "এখানেই বসি মিঃ গোস্বামী। ঘরে আপনার পরিবারের লোকেরা আছেন, তাদের উপর উপদ্রব করা হবে। তাছাড়া এখান থেকে দৃশ্যও খুব সুন্দর।" বারান্দায় ছোট সাদা রঙের গোল টেবিল ঘিরে পাতা চেয়ারে বসল সিদ্ধার্থ আর ঋষি। 

- "আচ্ছা বেশ, এবার বলুন, আপনি কিসের জন্য এই অধমকে স্মরণ করেছেন?" তৃতীয় চেয়ারটায় বসল শাক্য। 

- "আপনি অধম তো না ই, বরং সবচেয়ে ইমপর্টেন্ট পারসন বলেই আপনার কাছে আসা।" বইটা আবার টেবিলে উপুড় করে রাখে সিদ্ধার্থ, "নতুন ঘটনাটা তো আপনার জানা। কলকাতা থেকে আসা ট্যুরিস্টের মৃত্যু আর এক্সপ্লোসিভ ভর্তি ব্যাগ। মৃত্যুটা বন্যপ্রাণীর আক্রমণে হলেও সেই বন্যপ্রাণী অর্থাৎ চিতাবাঘ এখানে নেই। তার উপর বিস্ফোরক। তাই আমাকেই মাঠে থুড়ি জঙ্গলে নামতে হচ্ছে। আর জঙ্গলের ব্যাপারে আপনার সঙ্গে কথা বলতেই হবে।" মিছরির ছুরি সিদ্ধার্থর কথাতেও। 

- "হ্যাঁ, ঠিক, এই ঘটনা আপনার আন্ডারেই তো আসার কথা। বলুন, আমি কি হেল্প করতে পারি?"

- "আপনার গার্ডরাই জঙ্গলে এক্সপ্লোসিভ পেয়েছে?"

- "আমি নিজেও ছিলাম। আটজন গার্ড আছে আমার আন্ডারে। সবাই ভাগাভাগি করে জঙ্গলে সার্চ করছিলাম। তার মধ্যে বাবুয়া আর শিচাং ছিল আমার সঙ্গে, আমরাই ওটা খুঁজে পাই। প্রথমে আমরা ছুঁইনি। পুলিশকে ইনফর্ম করি। তারা বম্ব স্কোয়াড আনায়।"

- "ভেরি গুড, আপনি নিজেই প্রথম থেকে সব দেখেছেন। বেশ, এবার বলুন, জঙ্গলে ঐ ব্যাগ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি লোকটির?"

- "নাহ, আমরা আর কিছু পাইনি। কারণ আমরা বডি ছুঁইনি। ওর বডি প্রথম দেখেছে যে আদিবাসী মেয়েরা, তারা কনফার্ম করেছে ও রায়চৌধুরী বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। তবে পুলিশ......."

- "পুলিশ পেয়েছে। ওর ওয়ালেট পেয়েছে, মোবাইল আর পিস্তলটা পেয়েছে। আরেকটা ব্যাপারেও আপনার হেল্প চাই।"

সিদ্ধার্থ থেমে যায়। সেই মেয়েটি বেরিয়ে এসেছে, একটা ট্রেতে সিদ্ধার্থ আর ঋষির জন্য চা ইত্যাদি নিয়ে। টেবিল থেকে সিদ্ধার্থ নিজের এভিয়েটর সান প্রোটেকশন গ্লাস আর মেয়েটির বইটা তুলে নেয়। মেয়েটি ট্রেটা রাখতে শাক্য চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়, "প্লিজ মিঃ রায়, মিঃ বসু, নিন।"

- "এগুলোর কোনো দরকার ছিল না। অনর্থক বাড়িতে ডাকলেন, বাড়ির লোকেদের বিরক্ত করছি আমরা। থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাডাম।" সিদ্ধার্থ চা নিতে নিতে বলে। 

- "এতে বিরক্তির কি আছে? শুক্লা এখানে এসে রয়েছে ছুটিতে, না হলেও মা আপনাদের কিছু না খেয়ে যেতে দিতেন না। আমাদের বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের একটা ঐতিহ্য আছে।" শাক্য হাসিমুখে বলে। 

শুক্লা যাচ্ছে না, দাঁড়িয়ে আছে। সিদ্ধার্থ ওর সামনে এসব কথা বলতে চায় না, তাই চা আর সঙ্গের খাবারে মন দেয়। বাড়িতে বানানো নিমকি, পেঁড়া, "গোস্বামী বাড়ির ট্র্যাডিশন" মনে মনে বলে।

চল