মানুষের রাজত্ব আর কতদিন ?
এক সময় পৃথিবী ছিল ডাইনোসরদের। কোটি কোটি বছর তারাই ছিল এই গ্রহের একচ্ছত্র অধিপতি, রাজা। আমরা আজকের মানুষ — আমাদের অস্তিত্ব তো সেই হিসেবের তুলনায় এক মুহূর্ত মাত্র। তবুও আমরা এতটা আত্মবিশ্বাসী, এতটা অহংকারী — যেন পৃথিবীটা চিরকাল থেকে আমাদেরই ছিল এবং আমাদেরই থাকবে !
কিন্তু প্রকৃতি তো কখনোই কারো নামে স্থায়ী মালিকানা স্বত্ব লিখে দেয় না। ভেবে দেখো না, এক সময় এই পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তেই রাজাদের শাসন ছিল। আজকে এঁরা কোথায় ? পরিবর্তনই তো এই সংসারের চিরন্তন সত্য।
এই মানুষ পৃথিবীকে যতটা উন্নত করেছে, ঠিক ততটাই ক্ষতিও করেছে, বরং কিছুটা বেশিই। প্রযুক্তি, যুদ্ধ, অতিরিক্ত ভোগ বিলাস, পরিবেশ ধ্বংস, মাটিকে পুড়িয়ে ফেলার মতো অর্থনৈতিক লোভ....! শুধু কি তাই ? নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার মূলে রয়েছে যে খাদ্য, এরা সেই খাদ্যের জেনেটিক কোড পর্যন্ত বদলে দিয়েছে। প্রাকৃতিক শস্যের বীজকে ল্যাবরেটরির মধ্যে জেনেটিক মডিফিকেশন করে তৈরি করেছে হাইব্রিড — যাকে শরীরের ইমিউন সিস্টেম ঠিকমতো চিনতেই পারে না। এই সবকিছু মিলিয়ে মানুষের আত্মবিনাশ এখন শুধু “সম্ভাবনা” নয়, একটা কার্যকর চলমান প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছে।
যদি ভবিষ্যতে একদিন মানুষ হারিয়ে যায়, তখন কী হবে?
এই পৃথিবী মোটেও থেমে থাকবে না। কারণ এই Self-evolving planet তার নতুন অধিপতি তৈরি করতে খুব বেশি সময় নেবে না।
সম্ভবত ভবিষ্যতের বুদ্ধিমান প্রাণী ডাঙায় জন্মাবে না — জন্মাবে সাগরের অভ্যন্তরে। সমুদ্রের প্রাণীরা এখনো মানুষের মতো বেমানানভাবে পৃথিবীকে ক্ষতি করার চেষ্টা করে না। তাদের অভিযোজন ক্ষমতা land species এর তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। extreme pressure, light-less zone, chemical imbalance — সবকিছু সহ্য করে বেঁচে থাকার মতো ক্ষমতা তাদের মধ্যে রয়েছে।
হয়তো পরবর্তী dominant species জলেই তৈরি হবে। হয়তো তাদের কাছে আমাদের সভ্যতা হবে ইতিহাসের এক অদ্ভুত ভুল। হয়তো তারা আমাদের নিয়ে গবেষণা করবে — যেমন আমরা আজ ডাইনোসরকে নিয়ে করি।
মানুষ ভাবতে ভালোবাসে সে চূড়ান্ত। কিন্তু প্রকৃত সত্যি হলো — আমরা এক ক্ষণস্থায়ী অধ্যায় মাত্র। প্রকৃতি কারো উপর চিরকাল রাজত্ব চাপিয়ে রাখে না।
যে অভিযোজিত হয় — প্রকৃতি তাকে এগিয়ে দেয়।
যে ধ্বংস করে — প্রকৃতি তাকে ইতিহাসে পরিণত করে।
মানুষের রাজত্বও একদিন শেষ হবে।
তারপর শুরু হবে নতুন অধ্যায়।
নতুন সভ্যতা।
নতুন ভাষা।
নতুন জগত।
সম্ভবত সাগরের নীচে — যেখানে আমাদের অহংকার পৌঁছাতে পারে না।