Why is Netaji still so feared? - 5 in Bengali Biography by KRISHNA DEBNATH books and stories PDF | এখনও নেতাজীকে কেন এত ভয় ? - 5

Featured Books
Categories
Share

এখনও নেতাজীকে কেন এত ভয় ? - 5

এখনও নেতাজীকে কেন এত ভয় ?

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

# নেতাজীর রাশিয়া থেকে ফিরে আসা: রহস্য ও উদ্দেশ্য !

১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনার গল্প প্রচারিত হওয়ার পর,  
আসলে নেতাজী মাঞ্চুরিয়ার পথে সোভিয়েত রাশিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন— এমন দাবি বহু গবেষকরাই করেছেন।  
বিশেষ করে অনুজ ধর ও চন্দ্রচূড় ঘোষ তাদের বই *Conundrum*–এ স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন যে নেতাজীর মৃত্যু নয়, বরং তাঁর রাজনৈতিক গোপন অভিযানই ছিল তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনার গল্পের নেপথ্য কারণ।

# ১. রাশিয়ায় পৌঁছানো:  

 জাপান তখন আত্মসমর্পণ করেছে, জার্মানিও পরাজিত। এই অবস্থায় নেতাজীর জন্য জাপানের মিত্রদেশগুলিতে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠছিল। তাই তিনি সোভিয়েত ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন। মাঞ্চুরিয়ার সীমান্ত হয়ে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের কাছে আশ্রয় গ্রহণ— এই পথই ছিল সবচেয়ে যৌক্তিক এবং নিরাপদ।

কিছু সোভিয়েত আর্কাইভ-নথিতে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, “একজন গুরুত্বপূর্ণ এশীয় রাজনৈতিক নেতার আগমন” সম্পর্কে তখন মস্কো জানত।  
তবে কারো নাম প্রকাশ করা হয়নি।  

# ২. স্ট্যালিন কেন নেতাজীকে বন্দি করবেন না:  

 * স্ট্যালিন ছিলেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির ধুরন্ধর খেলোয়াড়।  

* একদিকে আমেরিকা ও ব্রিটেনের সঙ্গে মিত্রতা, অন্যদিকে এশিয়ায় প্রভাব বাড়ানোর খেলা— এই দুই ভারসাম্য তাঁর সব নীতি চালাত।  

* নেতাজী দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র নেতা, যিনি সশস্ত্র বাহিনী তৈরি করে উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন।  

* সুতরাং স্ট্যালিন তাঁকে শত্রু নয়, বরং এক সম্ভাব্য সহযোগী বা ভরসাযোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে বিবেচনা করতেই পারেন।  

# ৩. দেশে ফেরার প্রেরণা:  

নেতাজীর জীবনের লক্ষ্য কখনোই "ক্ষমতা দখল করা" ছিল না। তিনি নিজের জন্য কোনো পদ, ক্ষমতা বা ঐতিহাসিক স্বীকৃতিটুকু পর্যন্ত কামনা করেননি। তাঁর কাছে একমাত্র ধ্যানজ্ঞান ছিল ভারতমাতার স্বার্থরক্ষা।  
গবেষকদের মতে, নেতাজী সবসময়ই চেয়েছিলেন —তাঁর জীবনের শেষ নিঃশ্বাস যেন এই দেশের মাটিতেই পড়ে।  

১৯৪৭ সালে দেশভাগের রক্তাক্ত ইতিহাসের মধ্য দিয়ে যখন তথাকথিত স্বাধীনতা এলো,  
নেহেরু শাসনক্ষমতা গ্রহণ করলেন, আর ব্রিটিশরা ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে গেল।  
নেতাজীর কাছে তখন পরিষ্কার হয়ে গেল—  
এখন প্রকাশ্যে এসে নেতৃত্ব নেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য "অদৃশ্যভাবে কাজ" চালিয়ে যাওয়াটা জরুরি।  
তাই তিনি গোপনে ভারত ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন।  

# ৪. দেশে ফেরার পর ছদ্মবেশ ও গোপন জীবন:  

 দেশে ফেরার ক্ষেত্রে নেতাজীর পক্ষে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল তাঁকে ঘিরে"কংগ্রেস সরকারের ভয়।"  
যদি তিনি প্রকাশ্যে আসতেন, নেহেরু–প্যাটেল গোষ্ঠীর রাজনীতি মুহূর্তেই ভেঙে পড়ত। তাই তিনি ছদ্মবেশ বেছে নেন। প্রথমে নৈমিষারণ্য ও কিছু অজানা স্থানে অবস্থান করেন। পরে ধীরে ধীরে তাঁর ঠিকানা হয় ফৈজাবাদের অযোধ্যার রাম ভবন। এখান থেকেই শুরু হয় ভগবানজী বা গুমনামী বাবা পর্ব।  

নেতাজীর রাশিয়া থেকে দেশে ফেরার কাহিনী এখনো নিখুঁতভাবে প্রমাণিত নয়। কারণ সরকার এই বিষয়টিকে স্বীকার করে না।
কিন্তু অনেকগুলো পাকাপোক্ত ইঙ্গিত, সোভিয়েত নথির ফাঁকফোকর, অনুজ ধর ও চন্দ্রচূড় ঘোষের অনুসন্ধান এবং ভারতীয় গোয়েন্দা ফাইলের গোপনীয়তা— সব মিলিয়ে একটা শক্ত ধারণা তৈরি হয় যে নেতাজী তাঁর মৃত্যু নয়, বরং "গোপন প্রত্যাবর্তনের কৌশল" বেছে নিয়েছিলেন।  

আর সেই প্রত্যাবর্তনের পেছনে তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্যই ছিল—  
নিজের নাম বা ক্ষমতার স্বপ্ন নয়, বরং সদ্য স্বাধীন ভারতের ভবিষ্যৎ কল্যাণকে সুরক্ষিত করা।

# নেতাজী: এক অনন্ত প্রেরণা ! 

নেতাজী ছিলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব, যাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ভরা ছিল আত্মত্যাগ ও বীরত্বে।  
তিনি ছিলেন একাধারে কূটনীতিক, সেনানায়ক, সংগঠক এবং সর্বোপরি এক অদম্য দেশপ্রেমিক।  
তাঁর চিন্তা ছিল যুগের চেয়ে এগিয়ে— ভারতের জন্য আধুনিক সেনাবাহিনী, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ব্যবহার, নারী-পুরুষ সমতার প্রশ্ন— সবকিছুর মধ্যেই তিনি ভবিষ্যতের ভারতের ছবি এঁকেছিলেন।  
নেতাজী কখনো ব্যক্তিগত স্বীকৃতি চাননি; তিনি চেয়েছিলেন কেবল একটাই— ভারত যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় পৃথিবীর মানচিত্রে।  
তাঁর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ শুধু অস্ত্র তুলে নেয়নি, বরং কোটি কোটি ভারতীয়কে শিখিয়েছিল— স্বাধীনতা ভিক্ষা নয়, **অর্জন করতে হয় রক্ত দিয়ে**।  

যদি তিনি তখন প্রকাশ্যে দেশে ফিরতে পারতেন, তবে হয়তো ভারতের ইতিহাস অন্য পথে মোড় নিত।  
কিন্তু ইতিহাসের পৃষ্ঠায় থেকেও তিনি আজও অমর—  
কারণ নেতাজী কেবল একজন নেতা নন, তিনি এক **চিরন্তন বিপ্লবী শক্তি**।  
তিনি প্রমাণ করে গিয়েছেন— সত্যিকারের দেশপ্রেমিক কোনোদিন মরে না, তিনি কেবল রূপ বদলে বারবার ফিরে আসেন নতুন প্রেরণার উৎস হয়ে।

(ক্রমশ)