Why is Netaji still so feared? - 9 in Bengali Biography by Yogi Krishnadev Nath books and stories PDF | এখনও নেতাজীকে কেন এত ভয় ? - 9

Featured Books
Categories
Share

এখনও নেতাজীকে কেন এত ভয় ? - 9

এখনও নেতাজীকে কেন এত ভয় ?

( পূর্ব প্রকাশিতের পর )

১৯৮৫ সালে গুমনামী বাবার মৃত্যু হলে রাম ভবন থেকে উদ্ধার হলো অগণিত চমকপ্রদ সব জিনিসপত্র।  


- নেতাজীর হস্তাক্ষরের সঙ্গে অবিকল মিল রয়েছে এমন ডজন ডজন চিঠি।  
- বইয়ের পাতায় পাতায় তাঁর নিজের হাতের লেখা নোট।  
- ব্যক্তিগত সামগ্রী, চশমা থেকে শুরু করে অনেক রকমের সরকারি নথি পর্যন্ত।  

প্রশ্ন জাগল —  
একজন অজ্ঞাত পরিচয় সাধুর ঘরে এত ধরনের নেতাজী-সম্পর্কিত জিনিস এল কীভাবে ?  
তিনি কি কেবল নেতাজীর ভক্ত ছিলেন,  
না কি তিনিই ছিলেন নেতাজী, ছদ্মবেশে অদৃশ্যভাবে ?  


সরকারি নথি এই ব্যাপারে সবসময়ই নীরব থেকেছে।  
কিন্তু মানুষের স্মৃতি, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আর উদ্ধার হওয়া দলিলপত্র —  
সব একসাথে বলছে অন্য গল্প।  

গুমনামী বাবা শুধুই নিছক একজন সাধু ছিলেন না।  
তিনি ছিলেন এক অদৃশ্য শক্তি,  
যিনি আড়ালে থেকেও দেশের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করতেন, নেতাজী ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন,
চিঠি লিখতেন, পরিকল্পনা করতেন।  

আজও রাম ভবনের দেয়ালের প্রতিটি ইঁট যেন ফিসফিস করে বলে—  
**“তিনিই ছিলেন নেতাজী।”**


তাঁর হাতে লেখা চিঠির আড়ালে সর্বদাই প্রতিধ্বনিত হতো রাজনৈতিক ধ্বনি।

ফৈজাবাদের রাম ভবনের নিঃশব্দ ঘর।  
সেখানে সবসময় টাঙানো থাকত একটি মোটা পর্দা।  
পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষটি খুব কমই মুখ দেখাতেন।  
কিন্তু তাঁর হাত থেমে থাকত না।  
কলমের নিব থেকে বেরিয়ে আসত অসংখ্য চিঠি।  

কিন্তু এই চিঠিগুলোর মধ্যে কোনও সাধুর বাণী ছিল না।  
এগুলো ছিল অগ্নিমুখর রাজনৈতিক বার্তা,  
কৌশলগত বিশ্লেষণ,  
দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীষণ উদ্বেগ,  
আর মাঝে মাঝে বজ্রনিনাদের মতো সতর্কবার্তা। 

একজন সাধু সাধারণত লিখবেন ভক্তি, উপাসনা, বা মোক্ষের কথা।  
কিন্তু এই চিঠির মধ্যে লেখা ছিল—  
**“সামরিক শক্তি ছাড়া স্বাধীনতা কাগজে লেখা শব্দমাত্র।”**  

প্রশ্ন উঠল—  
একজন সাধুর মুখে কি এমন ভাষা মানায় ?  
মোটেও না।  
এটা সেই মানুষটির ভাষা, যিনি সারা জীবন সামরিক শক্তিকে স্বাধীনতার মূলে প্রধান শক্তি হিসেবে বসিয়েছিলেন।  
এটা সেই বজ্রকণ্ঠ, যিনি একদিন বলেছিলেন—  
**“তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।”**  

চিঠিগুলোর একটিতে লেখা হলো—  
**“যুবকরা যদি চরিত্র ও শৃঙ্খলা হারায়, তবে স্বাধীনতা টিকবে না। দেশকে বাঁচাতে হলে যুবকদের রক্তে দেশপ্রেম ঢালতে হবে।”**  

শোনার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিধ্বনিত হয় আজাদ হিন্দ ফৌজের ডাক।  
এটা কোনও তপস্বীর সাধুবাণী নয়,  
এটা যেন তাঁর সৈনিকদের উদ্দেশ্য করে বলা কোনো সেনাপতির উপদেশ।

আরেকটি চিঠিতে তিনি লিখলেন—  
**“দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দুর্নীতি সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। নেতারা ক্ষমতা ভোগ করছেন, সাধারণ মানুষ রক্ত দিয়ে যে স্বাধীনতা কিনেছে, সেই স্বাধীনতার ফল পাচ্ছে না।”**  

একজন সাধু কি এমন রাজনৈতিক অভিযোগ করতে পারেন ?  
কেউ বিশ্বাস করবে না।  
এটা সেই রাষ্ট্রনায়কের আক্ষেপ,  
যিনি দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন,  
কিন্তু স্বাধীন ভারতের নেতৃত্বকে দেখলেন পথভ্রষ্ট হতে।  

বিদেশ নীতি নিয়েও তাঁর চিঠিগুলো ছিল ভীষণ স্পষ্ট।  

**চিন প্রসঙ্গ**  
**“চিনকে বিশ্বাস করো না। ওরা আজ বন্ধু সাজলেও, কাল ভারতকে আঘাত করবে।”**  
(আনুমানিক ১৯৫৭-৫৮ সালের চিঠি)  

কয়েক বছরের মধ্যেই ১৯৬২ সালের চিন-ভারত যুদ্ধের সময় এই সতর্কবার্তার সত্যতা প্রমাণ করে।  

**পাকিস্তান প্রসঙ্গ**  
**“পাকিস্তান ভারতের অস্তিত্ব মেনে নেবে না। কাশ্মীর নিয়ে সংঘর্ষ একদিন ভয়ঙ্কর রূপ নেবে।”**  

আজকের ইতিহাস থেকে বোঝা যায় —  
তাঁর এই পূর্বাভাস অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়েছে।  

প্রশ্ন জাগে—  
একজন সাধু, যিনি না চান শিষ্য, না চান প্রচার,  না চান কোনো কিছু,
তিনি কেন এমন সব চিঠি লিখবেন,  
যেখানে রাজনীতি, সামরিক কৌশল, আন্তর্জাতিক নীতির কথা ভেসে আসছে ?  

এমন একাকী জীবনযাপনকারী সাধু সন্ত টাইপের মানুষের ভাষা কি এতটা রাজনৈতিক হতে পারে ?  
এর উত্তর একটাই—  
তিনি সাধু ছিলেন না।  
তিনি ছিলেন পর্দার আড়ালে থাকা সেই মানুষ,  
যিনি একবার মৃত্যুর নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন,  
কিন্তু দেশের ভবিষ্যতের জন্য তাঁর কলম থামাতে পারেননি।  

আজও সেই চিঠিগুলো পড়লে মনে হয়—  
এগুলো নিছক শুধু কাগজে লেখা শব্দ নয়।  
এগুলো ইতিহাসের আড়াল থেকে উচ্চারিত হওয়া একেকটা বজ্রধ্বনি। যে ধ্বনি উদ্বেলিত করে তোলে প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের অন্তরকে।

প্রমাণ নেই, অথচ প্রতিটি অক্ষরই প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়—  
গুমনামী বাবাই ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু।  

তিনি আড়ালে থেকেও জানিয়ে দিচ্ছিলেন—  
**“আমি আছি। আমার দৃষ্টি এখনও এই দেশের ওপর নিবদ্ধ।”**

( ক্রমশঃ )