Bitter disease with a sweet name - 5 in Bengali Health by KRISHNA DEBNATH books and stories PDF | মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ - 5

Featured Books
Categories
Share

মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ - 5





ডায়াবেটিক কগনিটিভ ডিসঅর্ডার – ভুলে যাওয়া বা টাইপ–৩ ডায়াবেটিস

ভাবুন তো, এক সময় যিনি নিজের হাতে সংসারের সব হিসাব সামলাতেন, যিনি কারো কাছে কিছু জানতে চাইতেন না—
একদিন দেখা গেল তিনি ঘরের জিনিসপত্র কোথায় রেখেছেন সেটাই মনে করতে পারছেন না।
কখনো চাবি হারাচ্ছেন, কখনো ফোন।
অথচ নিজের শরীরে মশা কামড় দিলেও টের পাচ্ছেন না।
আরও দুঃখজনক হলো— তিনি, যিনি সন্তান–সন্ততির মুখস্থ নাম এক নিঃশ্বাসে বলে দিতেন, এখন তাদের নাম উচ্চারণ করতেও দ্বিধা হচ্ছে।

এই দৃশ্যটি কতটা প্যাথেটিক— শুধু আক্রান্ত মানুষটির জন্য নয়, তাঁর পরিবারের জন্যও।
এটাই হলো ডায়াবেটিক কগনিটিভ ডিসঅর্ডার।
সহজ কথায়— ডায়াবেটিস শুধু হাত–পা বা কিডনি নয়, মস্তিষ্ককেও নীরবে আঘাত করে।

কেন হয় এই সমস্যা ?

১. ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স মস্তিষ্কেও হয়
কোষ গ্লুকোজ নিতে পারে না → নিউরন শক্তি হারায় → স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়।


২. বিষাক্ত প্রোটিন জমা হয়
উচ্চ রক্তশর্করায় মস্তিষ্কে বিটা–অ্যামিলয়েড জমে → আলঝেইমারের প্রধান কারণ।


৩. রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়
ডায়াবেটিসে ছোট ছোট রক্তনালী নষ্ট হয় → মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে যায় → ভাসকুলার ডিমেনশিয়া।


৪. দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ
ডায়াবেটিসে প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস → নিউরন ধ্বংস করে।



লক্ষণ:

কথা বলতে গিয়ে বারবার ভুলে যাওয়া

কোথায় কী রেখেছি মনে না থাকা

মনোযোগে ঘাটতি

সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগা

ডিপ্রেশন বা মুড–সুইং

বৃদ্ধ বয়সে ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমারের ঝুঁকি


কারা বেশি ঝুঁকিতে ?

বহু বছর ধরে নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস রোগী

উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল বেশি

ধূমপান, অ্যালকোহল অভ্যাস

স্থূলতা ও অলস জীবনযাপনকারীরা

অনিয়মিত ঘুমে ভোগা মানুষ


প্রতিরোধ

১. সুগার নিয়ন্ত্রণ → HbA1c ৬.৫–৭%


২. ব্রেইনের খাবার → ওমেগা–৩, আখরোট, ফ্ল্যাক্সসিড, সবুজ শাকসবজি


৩. শরীরচর্চা → হাঁটা, যোগ, মেডিটেশন


৪. মানসিক ব্যায়াম → বই পড়া, লেখালেখি, ধাঁধা সমাধান


৫. ঘুম ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট → পর্যাপ্ত গভীর ঘুম ও মেডিটেশন


৬. চিকিৎসা ও চেকআপ → প্রয়োজনে নিউরোলজিস্ট/সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ



ডায়াবেটিস শুধু শরীরকে নয়, মনের জানালাকেও অন্ধকার করে দেয়।
স্মৃতিশক্তি ক্ষয়, মনোযোগ নষ্ট, ভুলে যাওয়া— এগুলো কোনো সাধারণ বিষয় নয়, এগুলো এক নীরব সতর্কবার্তা।

কিন্তু আমরা যদি আজ থেকেই সতর্ক হই,
সুগার নিয়ন্ত্রণ করি, ব্রেইনের যত্ন নিই,
তাহলে এই টাইপ–৩ ডায়াবেটিসের ফাঁদ থেকেও মুক্ত থাকা সম্ভব।

কারণ মস্তিষ্কই আমাদের আসল সম্পদ।
শরীর বাঁচানোর পাশাপাশি সেটিকে সুস্থ রাখাটাই হলো ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় জয়।







ডায়াবেটিস ফুট – শুরু থেকে অঙ্গচ্ছেদ পর্যন্ত ভয়াবহ যাত্রা

ডায়াবেটিস শরীরকে ধীরে ধীরে ভেতর থেকে ক্ষয় করে। কিন্তু এর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ দেখা দেয় পায়ে। কারণ, আমাদের পা-ই শরীরের সবচেয়ে দূরের অংশ, যেখানে রক্তসঞ্চালন পৌঁছাতে সময় লাগে, আর সেখানেই সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দেয়।

কীভাবে ডায়াবেটিক ফুট শুরু হয় ?

১. মূল কারণ স্নায়বিক ক্ষতি (Neuropathy):
দীর্ঘদিন রক্তে শর্করা বেশি থাকলে স্নায়ু অসাড় হতে শুরু করে।

প্রথমে ঝিনঝিনি, জ্বালা, অসাড় ভাব।

ধীরে ধীরে ব্যথার অনুভূতি কমে যায়।

এক সময় ছোট্ট কাটা, ফোস্কা বা ফাটল টেরই পাওয়া যায় না।



২. ক্ষত শুকোতে না চাওয়া:
ডায়াবেটিসে রক্তনালী শক্ত ও সরু হয়ে যায়, ফলে রক্তসঞ্চালন কমে যায়। তাই ছোট ক্ষতও শুকোতে দেরি হয়।


৩. ইনফেকশন ছড়ানো:
ক্ষত যতদিন খোলা থাকবে, জীবাণু তত সহজে ঢুকে পড়বে। সুগারের কারণে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকে, তাই ইনফেকশন দ্রুত ছড়াতে থাকে।



কেন পা কাটতে হয় (অঙ্গচ্ছেদ) ?

ডায়াবেটিক ফুট শুরু হয় ছোট্ট একটা ফোস্কা বা কাটা দিয়ে। ব্যথা না থাকায় রোগী খেয়ালই করেন না।
কয়েক দিনের মধ্যে সেই ক্ষত ফুলে যায়, পুঁজ হয়, দুর্গন্ধ শুরু হয়।
ইনফেকশন ধীরে ধীরে হাড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
তখন আর শুধু ক্ষত শুকিয়ে তোলা যায় না— সার্জারি ছাড়া উপায় থাকে না।

যদি দেরি হয়, তখন একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায় অ্যামপুটেশন (পা কেটে ফেলা)। প্রথমে আঙুল, পরে পায়ের পাতা, এমনকি হাঁটুর নিচ থেকে পুরো পা পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়।


অনেক হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে গেলে দেখা যায়— ডায়াবেটিক ফুটের জন্য প্রতিদিন বহু মানুষের আঙুল, পা বা পায়ের পাতা কেটে ফেলা হচ্ছে।
একজন মানুষ, যিনি সারাজীবন নিজের পায়ে ভর দিয়ে সংসার চালিয়েছেন, একদিন হুইলচেয়ারে বসতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু অবহেলা আর অজ্ঞানতার জন্য।


কীভাবে বাঁচা সম্ভব ?

প্রতিদিন নিজের পা পরীক্ষা করুন। ছোট্ট কাটা–ঘাও গুরুত্ব দিন।
নখ ছোট রাখুন, সঠিক জুতো ব্যবহার করুন।
পায়ের তলা শুকনো ও পরিষ্কার রাখুন।
ধূমপান ও বাজে তেল ছেড়ে দিন— এগুলো রক্তসঞ্চালন আরও কমিয়ে দেয়।
সবচেয়ে বড় কথা: সুগারকে লাইফস্টাইল বদলে নিয়ন্ত্রণে আনুন।


ডায়াবেটিস ফুট কখনো হঠাৎ করে হয় না। এটি শুরু হয় ছোট্ট অসচেতনতা থেকে। আর সেই অসচেতনতা ধীরে ধীরে মানুষকে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দেয়।

পা মানেই চলার শক্তি। আজ যদি আপনার শরীর আপনাকে সতর্কবার্তা দিয়ে থাকে, তবে দেরি করবেন না। এখনই যত্ন নিন— যাতে আগামীকাল আপনাকে পা হারানোর মতো মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত নিতে না হয়।






ডায়াবেটিস ও হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া

আমরা সাধারণত ভাবি, ডায়াবেটিস মানেই মোটা হওয়া বা ওজন বেড়ে যাওয়া। সত্যিই, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মূল কারণই হলো অতিরিক্ত ওজন ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো— অনেক সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের শরীরে হঠাৎ করেই দ্রুত ওজন কমে যেতে দেখা যায়।

এটা কেন হয় ?

আসুন, ভেতরের বিজ্ঞানটা বোঝা যাক।

১. ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও গ্লুকোজের অভাব

শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হলেও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে কোষগুলো সেই ইনসুলিনকে চিনতে চায় না। ফলে রক্তের মধ্যে প্রচুর গ্লুকোজ থাকা সত্ত্বেও কোষের ভেতরে সেই গ্লুকোজ প্রবেশ করতে পারে না।

অর্থাৎ—
“খাবারের থালা সামনে রয়েছে, অথচ হাত-পা বাঁধা বলে আপনি খেতে পারছেন না।”
কোষও ঠিক সেই অবস্থায় থাকে।

২. শরীরের জরুরি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

কোষ যখন পর্যাপ্ত জ্বালানি (গ্লুকোজ) পায় না, তখন শরীর বেঁচে থাকার জন্য বিকল্প পথ খোঁজে।
সে নিজের পেশী (Muscle) এবং কখনো কখনো ফ্যাট ভেঙে গ্লুকোজ বানাতে শুরু করে। একে বলা হয় Gluconeogenesis।

অর্থাৎ শরীর নিজেকেই খেয়ে ফেলে— নিজের মাসল ভেঙে গ্লুকোজ তৈরি করে।

৩. দ্রুত ওজন হ্রাসের ফলাফল

এভাবে কয়েক মাস চলতে থাকলে—

শরীর খুব দ্রুত শুকিয়ে যায়।

পেশী দুর্বল হয়ে যায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়।

ক্লান্তি, অবসাদ, ওজন কমে যাওয়া— এগুলো ক্রমশ বাড়তে থাকে।


অনেক সময় দেখা যায়, রোগী দিনে ভালো মতো খাচ্ছেন, তবুও তার শরীর ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। কারণ খাওয়া খাবার রক্তে থাকছে ঠিকই, কিন্তু কোষের ভেতরে জ্বালানি হিসেবে প্রবেশ করছে না।

৪. বাস্তব উদাহরণ:

একজন ৪৫ বছরের মানুষ— অফিসে কাজ করেন। হঠাৎ লক্ষ্য করলেন কয়েক মাসের মধ্যে তার ৮ কেজি ওজন কমে গেছে। খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক, এমনকি আগে থেকে বেশি খান। তারপরও শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে। পরে দেখা গেল— তার ব্লাড সুগার ৩৫০ এর ওপরে, HbA1c ১১।
এটাই হলো ডায়াবেটিসের কারণে “অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস।”

৫. কেন এটা বিপজ্জনক ?

ওজন কমে যাওয়া মানে শরীরের মাংসপেশি গলতে শুরু করেছে।

একসময় শরীর এতটাই দুর্বল হয়ে যায় যে সহজ কাজও করতে কষ্ট হয়।

এর সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়, ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো— এটা ডায়াবেটিসের “আউট অব কন্ট্রোল” অবস্থা। মানে রোগ আর শুধু রক্তেই নয়, শরীরের প্রতিটি অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে।



ডায়াবেটিসে হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া মোটেও ভালো লক্ষণ নয়।
এটা প্রমাণ করে যে শরীর আর নিজের শক্তি ধরে রাখতে পারছে না, বরং বাঁচার জন্য নিজেকেই খেয়ে ফেলছে।

তাই যদি কখনো দেখেন কোনো ডায়াবেটিস রোগীর ওজন দ্রুত কমে যাচ্ছে— সাথে সাথে সচেতন হোন।
কারণ এটাই সেই সময় যখন শরীর আমাদের দিকে চিৎকার করে বলছে—
“আমাকে এখনই বাঁচাও।”





ডায়াবেটিস ও যৌন অক্ষমতা – এক নীরব সত্য 

আমরা সাধারণত ডায়াবেটিসের কথা বললেই চোখ, কিডনি বা স্নায়ুর ক্ষতির কথা বলি।
কিন্তু একটা দিক আছে, যা নিয়ে খুব কম আলোচনা হয়—
নারী ও পুরুষের যৌন ক্ষমতা (Sexual Ability) হ্রাস।


কেন যৌন সক্ষমতা কমে যায় ?

১. স্নায়ুর ক্ষতি (Neuropathy):
ডায়াবেটিসে স্নায়ুর কার্যক্ষমতা কমে যায়। ফলে পুরুষদের ক্ষেত্রে লিঙ্গে পর্যাপ্ত সিগন্যাল পৌঁছায় না, নারীদের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গে সংবেদনশীলতা কমে যায়।


২. রক্তসঞ্চালনের সমস্যা:
যৌন উত্তেজনা ও সক্ষমতার জন্য সুস্থ রক্তসঞ্চালন দরকার। ডায়াবেটিস রক্তনালী শক্ত ও সরু করে দেয়, ফলে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়।
পুরুষদের ক্ষেত্রে এর ফল → ইরেকটাইল ডিসফাংশন।
নারীদের ক্ষেত্রে এর ফল → যোনি শুষ্কতা, উত্তেজনার অভাব।


৩. হরমোনাল ইমব্যালান্স:
ডায়াবেটিস হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরনের মাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে যায়। ফলে লিবিডো (যৌন ইচ্ছা) কমতে থাকে।


৪. মানসিক প্রভাব:
দীর্ঘদিনের সুগার, ওষুধের নির্ভরতা, স্বাস্থ্য নিয়ে অস্থিরতা → মানসিক চাপ, উদ্বেগ, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি করে। এগুলো সরাসরি যৌন জীবনে প্রভাব ফেলে।




যৌনতা মানে শুধু চাহিদা নয়:

যৌন লিবিডো হলো মানুষের স্বাভাবিক জৈব প্রবৃত্তি।
এটা দম্পতির আবেগিক সম্পর্ককে গভীর করে।
শারীরিক-মানসিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
ভালো যৌনজীবন মানেই আত্মবিশ্বাস, আনন্দ, প্রশান্তি।

যখন ডায়াবেটিসের কারণে যৌন ক্ষমতা কমতে থাকে, তখন শুধু শরীর নয়, সম্পর্কও ভেঙে পড়ে। দাম্পত্য জীবনে ভয়ংকর সংকট দেখা দেয়।


সমাধান কী হতে পারে ?

সুগার নিয়ন্ত্রণ নয়, মুক্তি:
শুধু ওষুধে সুগার কন্ট্রোল করলে যৌন সক্ষমতা ফেরে না। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ভাঙতে হবে।

লাইফস্টাইল পরিবর্তন:
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং, সঠিক খাবার, ব্যায়াম, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট → এগুলো শরীরের হরমোনাল ব্যালান্স ফিরিয়ে আনে।

রক্তসঞ্চালন উন্নত করা:
হাঁটা, দৌড়ানো, যোগব্যায়াম → এগুলো রক্তনালী খুলে দেয়, সঞ্চালন বাড়ায়।

প্রকৃতির ভেষজ সাহায্য:
অশ্বগন্ধা, শিলাজিৎ, জাফরান, তুলসী – এগুলো সেক্সুয়াল হেলথে সহায়ক বলে প্রমাণিত।

খোলামেলা আলোচনা:
দম্পতির মধ্যে এ নিয়ে লজ্জা না করে খোলামেলা কথা বলা জরুরি। একসাথে সমাধান খুঁজলে সম্পর্ক আরও মজবুত হয়।


ডায়াবেটিস কেবল শরীরকে নয়, মানুষের সবচেয়ে স্বাভাবিক প্রবৃত্তি— যৌন জীবনকেও বিপর্যস্ত করে।
কিন্তু সুখবর হলো— যদি এখনই সঠিক লাইফস্টাইল মেনে চলা যায়, তবে যৌন সক্ষমতা আবার স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসতে পারে।

শুধু সুগার রিভার্স করলে নয়, আপনার সম্পর্ক, ভালোবাসা ও দাম্পত্য জীবনও নতুন আলোয় জেগে উঠবে।



১০


ডায়াবেটিসের কারণে নিউরোপ্যাথি, রেটিনোপ্যাথি, নেফ্রোপ্যাথি, কগনিটিভ ডিজঅর্ডার, হার্টের সমস্যা, ওজন কমে যাওয়া, ডায়াবেটিক ফুট, যৌন অক্ষমতার পাশাপাশি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে, যেগুলো প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়, অথচ এগুলোও রোগীর জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। আমি খুব সংক্ষেপে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করে এই অধ্যায়টি শেষ করবো।


১. ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়া:

ডায়াবেটিস রোগীর শরীর সহজেই ইনফেকশন ধরে।

প্রস্রাবের ইনফেকশন, ত্বকের ফোঁড়া, ফাংগাল ইনফেকশন (বিশেষ করে ক্যান্ডিডা), নিউমোনিয়া – এগুলো অনেক বেশি হয়।

এজন্য ডায়াবেটিসকে বলা হয় "ইমিউনোসাপ্রেসিভ" রোগ।



২. ত্বক ও দাঁতের সমস্যা:

বারবার চুলকানি, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, ক্ষত শুকোতে না চাওয়া।

মাড়ির রোগ (Periodontitis) → দাঁত নড়বড়ে হয়ে যাওয়া, দাঁত পড়ে যাওয়া।



৩. লিভারের ক্ষতি (NAFLD / Fatty Liver):

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

অনেক ডায়াবেটিস রোগীর নীরবে ফ্যাটি লিভার বা সিরোসিস তৈরি হয়।



৪. ডিপ্রেশন ও মানসিক সমস্যা:

ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ডিপ্রেশনের ঝুঁকি দ্বিগুণ।

আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়, জীবনকে বোঝা মনে হয়, অনেকের আত্মহত্যার প্রবণতাও তৈরি হয়।



৫. হজমের সমস্যা (Gastroparesis):

নিউরোপ্যাথির কারণে পাকস্থলীর নার্ভ ঠিকমতো কাজ না করলে খাবার হজম হতে দেরি হয়।

ফলে বমি ভাব, পেট ফাঁপা, অস্বস্তি হয়।



৬. হরমোনাল ও প্রজনন সমস্যা (নারীদের ক্ষেত্রে):

PCOS, অনিয়মিত পিরিয়ড, বন্ধ্যাত্ব – ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেক মহিলার সমস্যা।

গর্ভাবস্থায় জটিলতা (Gestational Diabetes) তৈরি হয়।



৭. শ্বাসযন্ত্র ও ফুসফুসের সমস্যা:

গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস রোগীদের ফুসফুসের ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে।

Asthma বা COPD-এর ঝুঁকি বাড়ে।



অর্থাৎ, ডায়াবেটিস কেবল রক্তে শর্করা বাড়ায় না—
চোখ, কিডনি, স্নায়ু, হৃদয়, মস্তিষ্ক, যৌন ক্ষমতা, লিভার, দাঁত, ত্বক— প্রায় কোনো অঙ্গই বাদ যায় না।
এটা আসলে একটা পূর্ণাঙ্গ শরীর-ধ্বংসকারী ডিজঅর্ডার।



১১



এই অধ্যায়ে আমরা জানলাম—ডায়াবেটিস কোনো হঠাৎ করে আসা রোগ নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা ভুল খাদ্যাভ্যাস, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, স্ট্রেস, ঘুমের ব্যাঘাত, টক্সিন, হরমোনের গোলমাল ইত্যাদির সম্মিলিত ফল।
এর মূলে রয়েছে একটাই সমস্যা—ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স।

যখন শরীরের কোষ ইনসুলিনকে চিনতে অস্বীকার করে, তখন রক্তে গ্লুকোজ জমতে থাকে, আর সেখান থেকেই শুরু হয় নানা বিপর্যয়। নিউরোপ্যাথি, রেটিনোপ্যাথি, নেফ্রোপ্যাথি, হার্টের ক্ষতি, কগনিটিভ ডিজঅর্ডার, ওজন হঠাৎ কমে যাওয়া, যৌন অক্ষমতা—এমনকি অনেক সময় হাত–পা কেটে ফেলতে হয় ডায়াবেটিক ফুটের কারণে।
অর্থাৎ, ডায়াবেটিস শুধু একটি রোগ নয়; এটি হলো ধীরে ধীরে সারা শরীরকে ভেতর থেকে ভেঙে ফেলার এক নীরব ঘাতক।

এই অধ্যায় থেকে মূল শিক্ষা হলো—
ডায়াবেটিসকে হালকা করে নেওয়ার সুযোগ নেই।
এটি যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে আমাদের শরীর, মন, পরিবার—সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

তবে আশার কথা, এর সমাধান আছে।
কারণ আমরা বুঝতে পেরেছি—ডায়াবেটিস আসলে লাইফস্টাইল ডিজঅর্ডার। আর যখন মূল কারণ জীবনযাপন, তখন সঠিক জীবনযাপনই এর সবচেয়ে বড় ওষুধ।

এখন আমাদের লক্ষ্য শুধু ভয় পাওয়া নয়, বরং সচেতন হয়ে সঠিক পথে হাঁটার প্রস্তুতি নেওয়া।