Bitter disease with a sweet name - 6 in Bengali Health by KRISHNA DEBNATH books and stories PDF | মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ - 6

Featured Books
Categories
Share

মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ - 6


তৃতীয় অধ্যায় 




দৈনন্দিন জীবন শৈলী 

ডায়াবেটিস কী, এটি কেন হয়, ডায়াবেটিসের ফলে শরীরের মধ্যে কী কী ক্ষতি হয় এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে এতক্ষণ ধরে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। অনেকগুলো সমস্যার কথা বলতে গিয়ে তার সমাধান কী হতে পারে তারও কিছুটা আভাস দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এবার আমরা এগিয়ে যাব ডায়াবেটিসের অভিশাপ থেকে মুক্তির দিকে। 

ডায়াবেটিস বা সুগারকে শুরুতে আমরা ছোট্ট একটা সমস্যা ভাবি।
কিন্তু একটু একটু করে সেটাই আমাদের শরীর, মন, পরিবার—সবকিছুকেই গ্রাস করে নিতে থাকে।
এতক্ষণের আলোচনাগুলো পড়ে নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পেরেছেন, এই মিষ্টি নামের তিক্ত রোগটি কতটা নীরব অথচ ভয়ঙ্কর এক ঘাতক ব্যাধি।

একজন মানুষ, যিনি একসময় সংসারের প্রতিটি দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন,
আজ তিনি হয়তো নিজের পায়ের জুতোর ফিতা বাঁধতেও পারছেন না।
কারো চোখের আলো নিভে গেছে, কারো পা কেটে বাদ দিয়ে দিতে হয়েছে,
আবার কেউ ভুলে যাচ্ছেন আপনজনের নামও।

ভাবুন তো—
এটা কি আমাদের প্রাপ্য জীবন ?
এটাই কি সেই জীবন, যার জন্য আমরা প্রতিদিন এত সংগ্রাম করেছি ?

না, একেবারেই না।

ডায়াবেটিস নিঃসন্দেহে ভয়ঙ্কর, কিন্তু এর থেকেও বড় সত্য হলো—
আমরা চাইলেই এই অভিশাপের শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারি।
হাজারো মানুষ আজ নিজেদের জীবনে সেটা করে দেখিয়েছেন এবং দেখিয়ে চলেছেন।

যেভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়লে মানুষ bucket brigade বানিয়ে আগুন নেভায়,
তেমনি আমাদেরও একসাথে লড়াই করতে হবে। সুগার যতটা ভয়ঙ্কর তার থেকেও অধিক ভয়ঙ্করভাবে নিজের লাইফস্টাইলকে ঠিক করে নিতে হবে।
প্রতিদিনের খাবারে, প্রতিদিনের অভ্যাসে, প্রতিদিনের শ্বাস প্রশ্বাসে সুগারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে হবে।

ডাক্তারের ওষুধ আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে ঠিকই,
কিন্তু মুক্তি দিতে পারবে না। আপনার মুক্তির পথ কেবল আপনার হাতেই।

আজ যদি আমরা দৈনন্দিন জীবনে শৃঙ্খলায় ফিরতে পারি, জীবনযাত্রায় ছোট ছোট পরিবর্তন আনতে পারি, তাহলে আগামীকাল আমরা সেই সাহস নিয়ে দাঁড়াতে পারব এবং উচ্চ কন্ঠে বলতে পারব—
“হ্যাঁ, আমি ডায়াবেটিসের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছি।”

এখন থেকে বইয়ের পরবর্তী অংশ হবে এই মুক্তির রোডম্যাপ।
ধাপে ধাপে জানব কীভাবে—

ওষুধ ছাড়াই সুগারকে নামানো যায়,

কীভাবে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ভাঙা যায়,

কীভাবে গাট, ঘুম, স্ট্রেস, ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাস একসাথে কাজ করে আমাদের সুস্থ করে তুলতে পারে। কী ধরণের জীবন যাপন করলে পরে জীবনে কখনোই এই সুগার নামক তেতো রোগটি আপনাকে ছুঁতেও পারবে না।

এটি কেবল একটি বই নয়—
এটি হলো একটি প্রতিজ্ঞা।
আপনার, আমার, আমাদের সবার প্রতিজ্ঞা—

আমরা ডায়াবেটিসের কাছে হার মানব না।
আমরা মুক্ত হব।
আমরা আবার নতুন জীবন ফিরে পাব।
আমাদের পরিবারকে
আমাদের সমাজকে
সর্বোপরি আমাদের দেশকে
সুগারের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে ছাড়বোই !!





ডিম ছোঁড়া মানুষ আর রক্ষাকারী ডাক্তার

একটি কল্পচিত্র ভেবে দেখুন—
ছাদের উপর দাঁড়ানো একদল মানুষ একটার পর একটা কাঁচা ডিম ছুঁড়ে ফেলছে নিচের দিকে।
নীচে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন ডাক্তার।
তারা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন প্রতিটি ডিম লুফে নিতে, যাতে ডিমগুলো ভেঙে না যায়।

কিন্তু তবুও কি সবগুলো ডিম বাঁচানো সম্ভব ?
না।
কিছু ডিম তাদের হাতের ফাঁক গলে মাটিতে পড়েই ভেঙে যাচ্ছে।
অর্থাৎ কিছু জীবন অকালে শেষ হয়ে যাচ্ছে।

এবার ভাবুন তো—
যদি ছাদের উপর থেকে মানুষগুলো ডিম ছুঁড়ে ফেলা বন্ধ করে দিত !
তাহলে আর নিচে দাঁড়িয়ে ডাক্তারদের ঘাম ঝরিয়ে ডিম বাঁচানোর লড়াই করতে হতো না।
ডিমও নষ্ট হতো না, ডাক্তারদেরও এত কষ্ট করতে হতো না।

এই রূপক কাহিনীর ভেতরেই লুকিয়ে আছে ডায়াবেটিস সমস্যার মূল রহস্য।

ছাদের উপর যারা দাঁড়িয়ে ডিম ছুঁড়ছে, তারা হলাম আমরা, সাধারণ মানুষ।
আমাদের ভুল লাইফস্টাইল, জাঙ্ক ফুড, রাত জাগা, শুয়ে বসে থাকা, স্ট্রেস—
এসবই আমাদের শরীরের ভেতর নতুন নতুন “ডিম ছোঁড়া” তৈরি করছে, মানে রোগের সম্ভাবনা তৈরি করছে।

নীচে দাঁড়ানো সেই ডাক্তাররা চেষ্টা করছেন আমাদের সুগার, ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরলকে সামাল দিতে।
তারা প্রতিটি মুহূর্তে ওষুধ, ইনসুলিন, অপারেশনের মাধ্যমে আমাদের জীবনকে রক্ষা করতে চাইছেন।

কিন্তু সত্যিটা হলো—
যতই ডাক্তার চেষ্টা করুন, যতই ওষুধ খান,
যদি আমরা নিজেরাই সেই ডিম ছোঁড়া বন্ধ না করি,
তাহলে একদিন না একদিন আমাদের এই শরীর ভেঙ্গে তো যাবেই।

ডায়াবেটিস নামের এই মিষ্টি রোগটি যদি আমরা নিজের হাতে তৈরি না করি,
তাহলে ডাক্তারদেরও দিনরাত পরিশ্রম করতে হবে না।
আমাদের জীবনও এতটা ঝুঁকির মধ্যে পড়বু না।

তাই সমাধান একটাই—
নিজের লাইফস্টাইলকে সঠিক করা।
সঠিক খাওয়া, সঠিক ঘুম, সঠিক অভ্যাস—
এসবই আমাদের ডিম ছোঁড়া বন্ধ করতে সাহায্য করবে।

মনে রাখবেন,
ডাক্তাররা আপনার জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করবেন ঠিকই,
কিন্তু আপনার জীবনের দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত আপনার হাতেই।
নিজের হাতে নিজের জীবন ধ্বংস না করে বরং বাঁচানোর দায়িত্ব নিন।


সুতরাং এখন আমাদের ডিম ছোঁড়ে ফেলার মতো বাজে লাইফস্টাইল ত্যাগ করতে হবে। এমন জীবন শৈলী অনুসরণ করতে হবে, যাতে সুগার বা অন্য কোনো রোগ আমাদের কাছে ঘেঁষতেই না পারে।





ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ বনাম ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি – একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ

আমাদের সমাজে একবার ডায়াবেটিস ধরা পড়লেই যেন মানুষ মনে মনে হাল ছেড়ে দেয়।
ভাবতে থাকে—
“এবার থেকে বুঝি সারাজীবন ওষুধ খেতে হবে, ইনসুলিন নিতে হবে, মিষ্টি আর মুখে তোলা যাবে না।”

ডাক্তারের কাছে গেলে তিনিও বলেন—
“চিনি বাদ দিন, ভাত কম খান, নিয়মিত ওষুধ খাবেন আর চেকআপ করবেন।”

রোগী তাই-ই করে। ফলে ব্লাড সুগারের রিপোর্ট কিছুটা ভালো আসে।
কিন্তু ভেতরে ভেতরে মনে প্রশ্ন জাগে—
“আমি কি সত্যিই এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারব, নাকি শুধু কাগজে কলমে রিপোর্ট ভালো রাখতেই হবে সারাজীবন ?”

১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ মানে কী ?

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ মানে হলো—
ওষুধ বা ইনসুলিনের সাহায্যে রক্তের শর্করাকে সাময়িকভাবে সীমার ভেতরে রাখা।

মানে রোগকে আসল জায়গায় আঘাত না করে কেবল ম্যানেজ করা।
যেন একটা গাড়ি চলছে, আর আমরা ব্রেক চেপে তার গতি কমাচ্ছি।
কিন্তু ইঞ্জিন তো তখনও চলছে—অর্থাৎ রোগ তখনও ভেতরে ভেতরে কাজ করছে।

ফলাফল ?
ওষুধ–ইনসুলিনের উপর সারাজীবন নির্ভরশীলতা, ক্রমাগত খরচ, আর ধীরে ধীরে শরীরে জটিলতা বাড়তেই থাকে—
নিউরোপ্যাথি, নেফ্রোপ্যাথি, রেটিনোপ্যাথি, হার্ট অ্যাটাক…

২. ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি মানে কী ?

মুক্তি মানে হলো—
কোনো ওষুধ বা ইনসুলিন ছাড়াই শরীর নিজের মতো করে রক্তের শর্করাকে স্বাভাবিক রাখতে পারছে।

এটা সম্ভব তখনই, যখন আমরা রোগের মূল শিকড়ে আঘাত করি।

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ভাঙা

গাট হেলথ ঠিক করা

মেটাবলিজম সচল করা

স্ট্রেস কমানো

পর্যাপ্ত ঘুম ফেরানো

সঠিক খাবার ও শরীরচর্চা


অর্থাৎ এখানে শুধু ব্রেক নয়, ইঞ্জিনটাই বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তখন গাড়ি নিজে থেকেই থেমে যায়।

৩. ডাক্তার বনাম লাইফস্টাইল কোচ

ডাক্তাররা অবশ্যই জীবন বাঁচান। জরুরি মুহূর্তে ওষুধ বা ইনসুলিনই ভরসা।
কিন্তু ডাক্তারদের কাজ হলো রোগ কন্ট্রোল করা।

অন্যদিকে, লাইফস্টাইল কোচ মানুষকে শেখান কিভাবে নিজের জীবনযাপন পাল্টে এই রোগকে রিভার্স করা যায়।

আজ পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের খাবার, ঘুম, ফাস্টিং, ব্যায়াম, ধ্যান—এই জীবনযাত্রার পথ ধরে সুগারের শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসছে।
অনেকে ইনসুলিন বন্ধ করেছেন, অনেকে ওষুধ ছেড়েছেন, আর প্রায় সবাই আজ স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন।

৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:

ওষুধ–ইনসুলিনের সাহায্যে

রক্তে শর্করা সাময়িকভাবে কমানো

রোগ চলমান থাকে

সারাজীবন ওষুধের উপর নির্ভরশীলতা

খরচ বাড়তে থাকে

মানসিকতা: “এটাই আজীবন চলবে” !


ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি:

খাদ্য, ব্যায়াম, ঘুম ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টে

শরীরের ভেতরের বিপাকক্রিয়া পুনরুদ্ধার

রোগ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়

ওষুধের প্রয়োজন থাকে না বা খুব কম

খরচ কমে আসে

মানসিকতা: “আমিও মুক্ত হতে পারি”।


৫. আসল শিক্ষা: ডায়াবেটিস কোনো ভাগ্যের দণ্ড নয়। এটা আমাদের ভুল লাইফস্টাইলের ফল, তাই সমাধানও লুকিয়ে আছে জীবনযাত্রার মধ্যেই।

ওষুধ আপনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে, কিন্তু মুক্তি দেবে না।
মুক্তি আসবে তখনই, যখন আপনি নিজের জীবনের চালচিত্র পাল্টাবেন।

আজ পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ প্রমাণ করে দিয়েছেন—
“ডায়াবেটিস ইনকিউরেবল নয়, ডায়াবেটিস রিভার্সেবল।”

এই অধ্যায় শেষে পাঠকের মনে আমি চাই একটা শক্তিশালী বিশ্বাস জন্ম নিক—
সে কেবল রিপোর্ট ভালো রাখার জন্য নয়,
বরং ডায়াবেটিস নামের শিকল ভেঙে সম্পূর্ণ মুক্তির জন্যও লড়াই করতে পারে।





ডায়াবেটিসের ওষুধ – 
ওষুধ তো নয়, যেন কোনো প্রতিশোধ !

ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর ডাক্তার সাধারণত প্রথমেই ওষুধ দেন।
রোগীও ভাবে—
“চল, এবার বাঁচা গেল। এই ট্যাবলেট খেলেই তো সুগার কন্ট্রোলে চলে আসবে।”

সত্যি বলতে কী, ওষুধ খাবার পর রিপোর্টেও তখন সুগার অনেকটাই কমে আসে। রোগী খুশি হন। মনে মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ডাক্তারবাবুর উদ্দেশ্যে।

কিন্তু ভেতরে ভেতরে শরীরে কী ঘটছে, সেটা কি কেউ ভেবে দেখেন ?

আমরা আগেই বলেছি, আপনার শরীরে ইনসুলিন কম নেই। সমস্যা হলো, কোষ তার দরজা বন্ধ করে রেখেছে।
ইনসুলিন বারবার টোকা দিচ্ছে, কিন্তু কোষ দরজা খুলছে না। তাই রক্তের গ্লুকোজকে সে কোষের ভেতরে ঢোকাতে পারছে না।

এখন এই অবস্থায় ওষুধ কী করে জানেন ?

জোর করে দরজা ভাঙা:


ভাবুন তো—
একটা ঘরের ভেতরে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।
বাইরে কেউ কড়া নাড়ছে, কিন্তু ভিতরের লোক খুলছে না।
তখন কী হয় ?
চোর-বদমাইশরা অনেকে মিলে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে এবং দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়।

ওষুধও ঠিক এই কাজটাই করে।
প্যানক্রিয়াসকে চাপ দিয়ে বলে— “আরো বেশি ইনসুলিন তৈরি করো, আরো বানাও।”
ফলে শরীরে বাড়তি ইনসুলিনের ঝড় ওঠে।
এই বাড়তি ইনসুলিন গিয়ে কোষের দরজা জোর করে ভেঙে গ্লুকোজ ঢুকিয়ে দেয়।

ভেতরের মারাত্মক ক্ষতি:


বাইরে থেকে দেখতে ভালো—
“বাহ, রিপোর্টে তো সুগার নেমে এলো !”

কিন্তু কোষের ভেতরে তখন অশান্তি।
অতিরিক্ত গ্লুকোজ জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়ায় কোষের ভেতরে প্রদাহ (inflammation) বাড়তেই থাকে।
শরীরের প্রতিটি অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে ধীরে ধীরে।

ভবিষ্যতের বড় বিপদ:


প্যানক্রিয়াস দিন থেকে রাত সারাক্ষণ চাপের মধ্যে থাকে। বছরের পর বছর ধরে বেশি ইনসুলিন তৈরি করতে করতে একসময় সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বাধ্য হয় স্যারেন্ডার করতে।
তখন প্যানক্রিয়াস বলে বসে—
“আর পারছি না বস।”

ফলে শরীরে স্বাভাবিক ইনসুলিন তৈরি বন্ধ হয়ে যায়।
তখন ডাক্তার বলেন—
“এবার বাইরে থেকে ইনসুলিন নিতে হবে।”

একজন টাইপ–২ ডায়াবেটিক লোক ধীরে ধীরে টাইপ–১ ডায়াবেটিকে পরিণত হয়ে যায়।
অর্থাৎ আজীবনের জন্য ইনসুলিন ইনজেকশনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

আসল শিক্ষা কী ?


ওষুধ হয়তো ব্লাড রিপোর্টকে সাময়িকভাবে সুন্দর করে দেখাবে। কিন্তু এর ভেতরে তৈরি হবে আরও অনেক বড় বিপদ।

সুগার থেকে মুক্তির আসল রাস্তা ওষুধের চাপে তৈরি করা বাড়তি ইনসুলিন নয়। বরং কোষের দরজা খুলে দেয়া। আর এই বন্ধ দরজার তালা খোলার আসল চাবি হলো— উপবাস, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, ব্যায়াম, গাটের যত্ন, ঘুম আর শৃঙ্খলা।

তাই পাঠককে বুঝতে হবে—
ওষুধ হলো এক কৃত্রিম ভরসা, যা রোগকে আরও গভীরে ঠেলে দেয়। কিন্তু জীবনযাত্রার পরিবর্তনই হলো আসল পথ, যা রোগকে ভেতর থেকে উপড়ে ফেলতে পারে।





হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি !

আজকেই জানলেন আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে। এবার কী করবেন ? পড়তে থাকুন, দিশা খুঁজে পাবেন।

কোন একজন মানুষ তার রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে জানতে পারল--

ফাস্টিং: 150 mg/dl
PPBS: 240 mg/dl
HbA1c: 7.2%

ডাক্তার দেখানোর আগেই বুকের ভেতর একটা জোর সে ধাক্কা।
“আমি কি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে গেলাম ? এখন কি সারাজীবন ওষুধ খেতে হবে হবে, নাকি ইনসুলিন নিতে ?”

প্রথমেই একটা কথা স্পষ্ট করে বলি— ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।
ডায়াবেটিস মানে মৃত্যু নয়, ডায়াবেটিস হচ্ছে জীবনযাত্রা ধরণ পরিবর্তনের একটি সতর্কবার্তা মাত্র।
আজ থেকে সঠিক পথে হাঁটলে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আপনার সুগার স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসতে পারে।

আপনার রক্তে যে সুগার বেড়েছে, সেটার পেছনের কারণটাকে আগে জানুন।

আপনার শরীরে তো পর্যাপ্ত ইনসুলিন আছে। সেই ইনসুলিনকে আপনার কোষ পছন্দ করছে না বলে তার ডাকে দেহের কোষ নিজের দরজাই খুলছে না। এজন্য আপনার রক্তের গ্লুকোজকে ইনসুলিন কোষের মধ্যে পৌঁছে দিতে পারছে না। ফলে এই বাড়তি গ্লুকোজ রক্তের মধ্যেই ঘোরাঘুরি করছে আর রিপোর্টে দেখাচ্ছে ডায়াবেটিস !

আমাদের শরীরের অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি প্রতিদিন ইনসুলিন তৈরি করে।
কিন্তু সমস্যাটা কোথায় জানেন ?
ইনসুলিন দরজায় দাঁড়িয়ে কড়া নাড়ছে, কিন্তু কোষের ভেতরের দরজা খোলাই হচ্ছে না। কোষের ইনসুলিন রিসেপ্টর ইনসুলিনের ডাক শুনেও নিজের কানের মধ্যে তুলো গুঁজে বসে আছে। শরীরের কোষ যখন ইনসুলিনকে প্রতিরোধ করে তখন এটাকে বলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স।

উদাহরণ দিয়ে বলি—
ধরুন আপনার ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল ডাল তেল মশলা নুন এসব মজুদ রয়েছে। তবুও কেউ একজন রোজ রোজ তিনবার, চারবার, পাঁচবার করে থলে ভর্তি চাল ডাল তেল মশলা নুন এনে আপনার ঘরে ঢুকিয়ে দিতে থাকে, তখন কী হবে ? আপনি তো আর চাইলেই সবগুলো জিনিস খেয়ে ফেলতে পারবেন না। অথচ মালপত্র আসছে তো আসছেই....! তখন বাধ্য হয়েই আপনি ঘরের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেবেন, যাতে সে মালের ব্যাগ নিয়ে আপনার ঘরে প্রবেশ করতে না পারে।

ঠিক এই জিনিসটাই হচ্ছে আপনার শরীরের মধ্যে। প্রয়োজন থাকুক বা না থাকুক সারাক্ষণ শুধু এটা সেটা খেয়েই যাচ্ছিলেন। আর যখনই আপনি শর্করা জাতীয় কোন খাবার খান তখনই ইনসুলিন এসে সেই খাবারের গ্লুকোজকে ব্যাগে ভরে নিয়ে কোষের ভেতরে পৌঁছে দিয়ে আসে। এভাবে দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর ধরে চলতে চলতে কোষ বাধ্য হয়ে এক সময় ইনসুলিনের প্রতি অসংবেদনশীল আচরণ করা শুরু করে। ইনসুলিন গ্লুকোজ নিয়ে দরজায় টোকা দিতে থাকলেও কোষ আর দরজা খুলে না।

তাহলে সমাধান কী ?
দরজার তালা খোলার চাবি খুঁজতে হবে। সেই চাবি হলো উপবাস, খাবারের পরিবর্তন, গাট হেলথের যত্ন নেয়া, সঠিক নিয়মে ঘুমাতে যাওয়া, ব্যায়াম ও শৃঙ্খলা। এক কথায় বলতে গেলে নিজের লাইফস্টাইলের আমূল পরিবর্তন করা।

একজন মানুষের ডায়াবেটিস হবার অন্তত ১০/১৫ বছর আগেই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স দেখা দেয়। এটাকে ঠিক করার জন্য শরীর অনেকদিন ধরে চিৎকার করে আর্তি জানিয়েছিল আপনাকে। কিন্তু আপনি শরীরের সেই ভাষাকে বুঝতে পারেননি, বা বুঝলেও পাত্তা দেননি। এরজন্যই আজকে আপনার ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে।

তবে চিন্তার কিছু নেই। পাশে আছি আপনার। এখানে আমরা ধীরে ধীরে এমন সবগুলো বিন্দু নিয়েই আলোচনা করব, যাতে আপনি সুগারের নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন।

আজকের রিপোর্ট আপনার দুর্ভাগ্য নয়, বরং জীবন পাল্টানোর এক নতুন সূচনা।


( সুগার নিয়ে আমার এই ধারাবাহিক লেখা কেমন লাগছে আপনাদের ? যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আমার পরিশ্রম সার্থক। যদি কোনো ধরনের পরামর্শ থাকে তাহলেও জানাতে পারেন। )