An Unfinished Love Story in Bengali Love Stories by MD sorkar books and stories PDF | ভাঙা ছায়া

Featured Books
Categories
Share

ভাঙা ছায়া

গল্পের নাম: ভাঙা ছায়া — এক অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্পচরিত্র পরিচিতি:

রুদ্র: মধ্যবিত্ত ঘরের মেধাবী ছাত্র। স্বপ্ন ছিল লেখক হবেন।

নৈঋতা: উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে, ছেলেবেলার বন্ধু, জীবনের প্রথম ভালোবাসা।

তন্ময়: নৈঋতার বরের আত্মীয়, একজন সফল ব্যবসায়ী।🖋️ পর্ব ১: সেই সন্ধ্যায় দেখা

রুদ্র ও নৈঋতার দেখা হয়েছিল ছোটবেলায় — একই পাড়ায়, একই স্কুলে। কচি কচি মনের মধ্যে জন্ম নেয় এক নিষ্পাপ সম্পর্ক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা পরিণত হয় গভীর বন্ধুত্বে। কিন্তু রুদ্রের হৃদয়ে সেই বন্ধুত্ব একসময় ভালোবাসায় রূপ নেয়।

নৈঋতা তখন জানতো না, রুদ্র তার জন্য প্রতিদিন কবিতা লেখে, তার প্রতিটি হাসি মনে গেঁথে রাখে।🖋️ পর্ব ২: কলেজ জীবন আর গোপন অনুভূতি

দুজনেই একই কলেজে ভর্তি হয়। রুদ্র চুপচাপ নৈঋতার পাশে থাকত। একদিন ক্যাম্পাসের পেছনের ঘাসভরা মাঠে হঠাৎ রুদ্র জিজ্ঞেস করল,“নৈঋতা, কখনো কি তুমি কাউকে খুব বেশি ভালোবেসেছো?”নৈঋতা হেসে বলল, “তুই না! সবসময় এমন সিরিয়াস কথা বলিস কেন?”

রুদ্র কিছু বলল না, শুধু মনে মনে বলল — “তোর মুখে যদি একবার শুনতে পাই ‘তোকেই ভালোবাসি’, তাহলে জীবনটা ধন্য হয়ে যাবে।”🖋️ পর্ব ৩: ভিন্ন শ্রেণীর বাস্তবতা

নৈঋতার পরিবার ছিল শহরের প্রভাবশালী, ধনী পরিবার। রুদ্রের বাবা ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না।

একদিন নৈঋতার মা তাদের বাসায় রুদ্রকে দেখে বলেছিলেন,“তোমার মতো ছেলেরা স্বপ্ন দেখতে জানে না রুদ্র। আমাদের মেয়ের পাশে দাঁড়াবার সাহস রাখো না।”

সেদিন থেকেই রুদ্র দূরে সরে যেতে শুরু করে, কষ্টের পাহাড় চাপা দিতে দিতে।🖋️ পর্ব ৪: বিয়ের খবর

কলেজ শেষ হওয়ার পর হঠাৎ একদিন নৈঋতা ফোন করে জানায় —“আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে রুদ্র। বরের নাম তন্ময়, কানাডায় থাকেন। বিয়েটা পরিবার ঠিক করেছে।”

রুদ্র ফোনের ওপারে স্তব্ধ হয়ে যায়। একটিমাত্র কথা বলে,“তুমি সুখে থেকো, এটাই আমার প্রার্থনা।”

তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা কেটে দেয়।🖋️ পর্ব ৫: চলে যাওয়া, কাগজে লেখা অশ্রু

নৈঋতার বিয়ের আগের রাতে রুদ্র তার দরজার নিচে একটি খাম রেখে যায়।খামের ভিতরে একটা চিঠি —

“প্রিয় নৈঋতা,তুই হয়তো জানিস না, তোর প্রতিটি হাওয়া আমার কাছে প্রেমের মতো।আমি তোকে ভালোবেসেছি, কিন্তু কখনো দাবি করিনি।তোর মুখে হাসি থাকুক, আমি সেই হাসির গল্প লিখেই জীবন কাটাবো...– রুদ্র”🖋️ পর্ব ৬: পাঁচ বছর পর…

রুদ্র এখন একজন নামকরা লেখক। একের পর এক বই হিট হচ্ছে।একদিন এক বইমেলায়, সে দেখল — এক নারী একটি বই কিনে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

সে নৈঋতা!

পাশে একটি ছোট মেয়ে — যার চোখ রুদ্রের মতোই।

নৈঋতা শুধু বলল,“তোর লেখা সব বই আমার মেয়ে পড়ে, প্রতিদিন ঘুমানোর আগে। আর হ্যাঁ… সেই চিঠিটা এখনো আমার কাছে আছে।”🖋️ পর্ব ৭: ভাঙা ছায়া

সেদিন মেলার শেষে, রুদ্র পায় এক খাম।ভিতরে লেখা ছিল—

“তুই হয়তো আর কিছু চাইবি না…কিন্তু আমি তোকে ছাড়া কোনোদিন ভালোবাসতে পারিনি।তুই যদি একদিন বলতি, ‘চলে এসো’, আমি সব ছেড়ে চলে আসতাম।

আমার আজকের ছায়া ভাঙা হয়ে গেছে, কিন্তু তোর সেই চিঠি এখনো আমার আলো…

– নৈঋতা”

রুদ্র চিঠিটা বুকের কাছে চেপে ধরে, আর মনে মনে বলে —“ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না, সেটা শুধু ভাঙা ছায়ায় রূপ নেয়।”

শেষ

✍️ এই গল্পটি প্রেম, বিচ্ছেদ, সমাজের বাধা আর এক অনন্ত অপেক্ষার কথা বলে। যারা সত্যিকারের ভালোবাসে, তারা কখনোই ভুলে না — শুধু সহ্য করে, ভালোবাসার ভাঙা ছায়ার নিচে। রূপ নেয়।

রুদ্র চিঠিটা বুকের কাছে চেপে ধরেছিল ঠিক যেমন করে কোনো ধর্মগ্রন্থকে কাছে টেনে রাখে একজন বিশ্বাসী। তার চোখ ভিজে উঠছিল, কিন্তু সে কাঁদছিল না— কারণ চোখের জল আর অনুভূতির মাঝখানে একটা বড় ব্যবধান তৈরি হয়েছিল এত বছরে।

সন্ধ্যার আলো মেলায় ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছিল। লোকজন কমে আসছিল, স্টলগুলো একে একে বন্ধ হচ্ছিল। কিন্তু রুদ্র এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল নির্বাক হয়ে — যেন সময় থেমে গেছে তার জন্য।

হঠাৎ পেছন থেকে একটি কণ্ঠস্বর —“রুদ্র…”

সে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায়। নৈঋতা।

সাধারণ সাদা শাড়ি, চোখে কাজল, হাতে মেয়ের ছোট আঙুল ধরা।তার চোখে ক্লান্তি, কিন্তু গভীর ভরসা। মুখে একটা নরম হাসি, কিন্তু মনের ভেতর হাজারটা ভাঙা স্বপ্ন।

রুদ্র কিছু বলল না। নৈঋতা এগিয়ে এসে বলল,“তুই কি জানিস, তোকে ছাড়া ভালোবাসা শব্দটার মানেই বুঝিনি? আমি তোকে ভালোবাসতাম, শুধু সাহস পাইনি বলার।”

রুদ্র নিচু গলায় বলল,“আমিও তোকে পেয়েও হারিয়েছি নৈঋতা। কিন্তু এখন আর কিছু চাই না... তোর মুখে এই সত্যটা শুনতে পারাটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার।”

নৈঋতা একটু থেমে বলল,“আমার জীবন হয়তো তোর পাশে কাটবে না, কিন্তু মনের প্রতিটি কোণে তুই ছিলি, আছিস, থাকবি।”

হঠাৎ পাশের ছোট্ট মেয়েটা রুদ্রের হাত ধরে বলল,“তুমি কি আমার জন্য আরেকটা বই লিখবে? যেটাতে তুমি আর মা একসাথে থাকবে?”

রুদ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। চোখে জল। বুকের ভিতর থেকে শব্দ বের হল না।

শুধু মাথা নাড়ল — হ্যাঁ।

সেই রাতে রুদ্র তার লেখার ডেস্কে বসে নতুন এক উপন্যাসের প্রথম লাইন লিখল—“যে ভালোবাসা ভেঙে যায়, সে আবার গড়ে ওঠে নতুন রূপে — কখনো সন্তানের হাতে, কখনো নিঃশব্দ চিঠির রেখায়।”