Story of Mahabharat Part 124 in Bengali Spiritual Stories by Ashoke Ghosh books and stories PDF | মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 124

Featured Books
Categories
Share

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 124

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১২৪

একাদশ দিনের যুদ্ধে অর্জুনের জয়ের কাহিনি

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

একাদশ দিনের যুদ্ধে অর্জুনের জয়ের কাহিনি

দ্রোণ কর্তৃক দুর্যোধনকে দেওয়া বরদানের কথা বিশ্বস্ত চরের নিকট জানতে পেরে যুধিষ্ঠির অর্জুনকে বললেন, তুমি দ্রোণের অভিপ্রায় শুনলে, যাতে তা সফল না হয় তার জন্য চেষ্টা করো। দ্রোণের প্রতিজ্ঞায় সঙ্কেত আছে, আর সেই সঙ্কেত তিনি তোমার জন্য রেখেছেন। অতএব আজ তুমি আমার কাছে থেকেই যুদ্ধ করো, যাতে দুর্যোধনের অভিপ্রায় ব্যর্থ হয়।

অর্জুন বললেন, দ্রোণকে বধ করা যেমন আমার কর্তব্য নয়, তেমন আপনাকে পরিত্যাগ করাও আমার কর্তব্য নয়। প্রাণ গেলেও আমি দ্রোণের আততায়ী হবো না আর আপনাকেও ত্যাগ করবো না। আমি জীবিত থাকতে দ্রোণ আপনাকে নিগৃহীত করতে পারবেন না।

পাণ্ডব ও কৌরবগণের শিবিরে বিভিন্ন রণবাদ্য বেজে উঠল, দুই পক্ষের সৈন্যদল ধীরে ধীরে এগিয়ে পরস্পরের সামনে এলো। তারপর দ্রোণ ও ধৃষ্টদ্যুম্নের মধ্যে তুমুল সংগ্রাম আরম্ভ হোলো। স্বর্ণময় উজ্জ্বল রথে চড়ে দ্রোণ তার সৈন্যদলের সামনে থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করতে লাগলেন, তার বাণবর্ষণে পাণ্ডববাহিনী ভীত হোলো। যুধিষ্ঠির প্রমুখ যোদ্ধারা সকল দিক থেকে দ্রোণের প্রতি ধাবিত হলেন। সহদেব ও শকুনি, দ্রোণাচার্য ও দ্রুপদ, ভীম ও বিবিংশতি, নকুল ও শল্য, ধৃষ্টকেতু ও কৃপ, সাত্যকি ও কৃতবর্মা, ধৃষ্টদ্যুম্ন ও সুশর্মা, বিরাট ও কর্ণ, শিখণ্ডী ও ভূরিশ্রবা, ঘটোৎকচ ও অলম্বুষ, অভিমন্যু ও বৃহদ্বল — এঁদের মধ্যে ঘোর যুদ্ধ হতে লাগল। অভিমন্যু বৃহদ্বলকে রথ থেকে নিপাতিত করে খড়্গ ও ঢাল নিয়ে জয়দ্রথের প্রতি ধাবিত হলেন। জয়দ্রথ পরাস্ত হলে শল্য অভিমন্যুকে আক্রমণ করলেন। শল্যের সারথি নিহত হলে তিনি গদা হাতে নিয়ে রথ থেকে নামলেন, অভিমন্যুও প্রকাণ্ড গদা নিয়ে শল্যকে আহ্বান জানালেন। সেই সময়ে ভীম এসে অভিমন্যুকে নিরস্ত কোরে শল্যের সঙ্গে গদাযুদ্ধ করতে লাগলেন। দুই গদার সংঘর্ষে আগুনের ফুলকি উঠতে থাকল, বহুক্ষণ যুদ্ধের পর দুজনেই আহত হয়ে ভূপতিত হলেন। শল্য বিধ্বস্ত হয়ে দ্রুত নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলে কৃতবর্মা তাঁকে নিজের রথে তুলে নিয়ে রণভূমি থেকে চলে গেলেন। ভীম নিমেষের মধ্যে গদা হাতে উঠে দাঁড়ালেন।

কৌরবসৈন্য পরাজিত হচ্ছে দেখে কর্ণপুত্র বৃষসেন রণস্থলে এসে নকুলের পুত্র শতানীকের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। দ্রৌপদীর অন্য পুত্রগণ ভাই শতানীককে রক্ষা করতে এলেন। পাণ্ডবগণের সঙ্গে পাঞ্চাল, কেকয়, মৎস্য ও সৃঞ্জয় যোদ্ধাগণ সশস্ত্র হয়ে উপস্থিত হলেন। কৌরবসৈন্য আহত হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে দেখে দ্রোণ বললেন, বীরগণ, তোমরা পালিও না। এই বলে তিনি যুধিষ্ঠিরের প্রতি ধাবিত হলেন। যুধিষ্ঠিরের রক্ষক পাঞ্চালবীর কুমার দ্রোণের বুকে তীরের আঘাত করলেন, দ্রোণও পাণ্ডবপক্ষীয় বীরগণের প্রতি তীর নিক্ষেপ করতে লাগলেন। পাঞ্চালবীর ব্যাঘ্রদত্ত ও সিংহসেন দ্রোণের হাতে নিহত হলেন। দ্রোণকে যুধিষ্ঠিরের কাছাকাছি দেখে কৌরবসৈন্যগণ বলতে লাগল আজ রাজা দুর্যোধন খুশি হবেন, যুধিষ্ঠির ধরা পড়বেন। এই সময়ে অর্জুন দ্রুতবেগে দ্রোণের সৈন্যের প্রতি ধাবিত হয়ে অসংখ্য তীর নিক্ষেপ কোরে সব দিক ঢেকে ফেললেন। এমন সময় সূর্যাস্ত আসন্ন হোলে দ্রোণ, দুর্যোধন প্রভৃতি যুদ্ধ থেকে বিরত হলেন, শত্রুপক্ষকে ভীত ও যুদ্ধে অনিচ্ছুক দেখে অর্জুনও পাণ্ডব সৈন্যগণকে নিরস্ত করলেন।

______________

(ক্রমশ)