মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-৭৮
দ্রৌপদীর বিলাপ ও ভীম দ্বারা কীচক ও উপকীচদের বধের কাহিনি
প্রাককথন
কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।
সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।
মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।
সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।
অশোক ঘোষ
দ্রৌপদীর বিলাপ ও ভীম দ্বারা কীচক ও উপকীচদের বধের কাহিনি
ভীম ছাড়া আর কেউ কীচককে শাস্তি দিতে পারবেন না, এই আশা নিয়ে দ্রৌপদী রাতে ভীমের কক্ষে গেলে, ভীম দ্রৌপদীকে ঘরে ফিরে যেতে বললেন। তখন দ্রৌপদী ভীমকে বললেন, যুধিষ্ঠির যার স্বামী সে শোক পাবেই। পাশা খেলার সভায় দুঃশাসন সকলের সামনে আমাকে দাসী বলেছিল, বনবাসের সময় জয়দ্রথ আমার চুল ধরে টেনেছিল, আর আজ বিরাট রাজার সামনেই কীচক আমাকে লাথি মেরেছে, এই সমস্ত অপমানের পর আমার মতো কোন নারী জীবিত থাকতে পারে? বিরাট রাজার সেনাপতি ও শ্যালক দুর্মতি কীচক সর্বদা আমাকে বলে — তুমি আমার স্ত্রী হও। ভীম, পাশা খেলায় আসক্ত তোমার বড় ভাইয়ের জন্যই আমি অনন্ত দুঃখ ভোগ করছি। তিনি যদি সহস্র স্বর্ণমুদ্রা বা স্বর্ণ, রৌপ্য, বস্ত্র, যান, ঘোড়া ও অন্যান্য পশু পণ রাখতেন তবে বহু বছর দিনরাত পাশা খেললেও নিঃস্ব হতেন না। তিনি খেলায় উন্মত্ত হয়ে সমস্ত ঐশ্বর্য হারিয়েছেন, এখন দুর্বল ও বোকার মতো নীরব হয়ে বিরাট রাজার দাস হয়ে নরকভোগ করছেন। তুমি পাচক হয়ে বিরাটের সেবা করো দেখলে আমার মনে কষ্ট হয়। সুদেষ্ণার সামনে তুমি সিংহ, বাঘ, মহিষের সঙ্গে যুদ্ধ করো, তা দেখলে আমি কষ্ট পাই। আমার সেই অবস্থা দেখে সুদেষ্ণা তাঁর সঙ্গিনীদের বলেন, এক স্থানে বাস করার ফলে এই সৈরিন্ধ্রী পাচক বল্লবের প্রতি আসক্ত হয়েছে, সেজন্য তাকে হিংস্র পশুর সঙ্গে যুদ্ধ করতে দেখলে শোকার্ত হয়। স্ত্রীলোকের মনের কথা জানা যায় না, তবে এরা দুজনেই সুন্দর এবং পরস্পরের যোগ্য। দেব, দানব ও নাগগণের বিজেতা অর্জুন এখন নপুংসক সেজে শাঁখা আর কুণ্ডল পরে বেণী ঝুলিয়ে কন্যাদের নাচ-গান শেখাচ্ছেন। সৎস্বভাব লজ্জাশীল মিষ্টভাষী সহদেব গোপালকদের প্রধান হয়ে বিরাটকে অভিবাদন করছেন এবং রাতে গবাদি পশুর চামড়ার উপর শুয়ে নিদ্রা যাচ্ছেন। রূপবান বুদ্ধিমান অস্ত্রকুশল নকুল এখন রাজার ঘোড়ার রক্ষক হয়েছেন। পাশা খেলায় আসক্ত যুধিষ্ঠিরের জন্যই আমি সৈরিন্ধ্রী হয়ে সুদেষ্ণার পরিচারিকা হয়েছি। পাণ্ডবগণের স্ত্রী এবং দ্রুপদের কন্যা হয়েও আমি এই দুর্দশায় পড়েছি। কুন্তী ভিন্ন আর কারও জন্য আমি চন্দন পেষণ করিনি, নিজের জন্যও নয়, এখন আমার দুই হাতে কত কড়া পড়েছে। কুন্তী বা তোমাদের কাউকে আমি ভয় করিনি, এখন দাসী হয়ে আমাকে বিরাটের সম্মুখে সভয়ে দাঁড়াতে হয়। ভীম, আমি দেবতাদের অপ্রিয় কোনও কাজ করিনি, আমার মরা উচিত, অভাগিনী বলেই বেঁচে আছি।
শোকাতুরা দ্রৌপদীর হাত ধরে ভীম সজলনয়নে বললেন, ধিক আমার বাহুবল, ধিক অর্জুনের গাণ্ডীব, তোমার কোমল হাতে কড়া পড়েছে তাও দেখতে হোলো! আমি সভার মধ্যেই বিরাটকে শাস্তি দিতাম, পদাঘাতে কীচকের মাথা চূর্ণ করতাম, বিরাট রাজার লোকদেরকেও শাস্তি দিতাম, কিন্তু ধর্মরাজ ইশারায় আমাকে বারণ করলেন। কল্যাণী, তুমি আর পনেরো দিন কষ্ট সহ্য কোরে থাকো, তার পর তেরো বছর পূর্ণ হলে তুমি আবার রাজাদের রানী হবে।
দ্রৌপদী বললেন, আমি দুঃখ সইতে না পেরেই কাঁদছি, রাজা যুধিষ্ঠিরকে তিরস্কার করা আমার উদ্দেশ্য নয়। পাছে বিরাট আমার প্রতি আকৃষ্ট হন এই আশঙ্কায় সুদেষ্ণা উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন, এই কথা জেনে এবং দুরাত্মা কীচক আমাকে কামনা করছে। তোমরা যদি কেবল অজ্ঞাতবাসের প্রতিজ্ঞা পালনেই ব্যস্ত থাকো, তবে আমি আর তোমাদের স্ত্রী থাকবো না। মহাবল ভীম, তুমি জটাসুরের হাত থেকে আমাকে উদ্ধার করেছিলে, জয়দ্রথকে জয় করেছিলে, এখন আমার অপমানকারী পাপিষ্ঠ কীচকের মাথা চূর্ণ কোরে তাকে বধ করো। সে জীবিত থাকতে যদি সূর্যোদয় হয়, তবে আমি বিষ পান করবো কিন্তু তার কামনার শিকার হবো না। এই বলে দ্রৌপদী ভীমের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলেন।
ভীম দ্রৌপদীকে বললেন, তুমি যা চাও তাই হবে, আমি কীচককে সবান্ধবে হত্যা করবো। তুমি তাকে বলো সে যেন সন্ধ্যার সময় নৃত্যশালায় তোমার প্রতীক্ষা করে। সেখানে একটি উত্তম পালঙ্ক আছে, তার উপরেই আমি কীচককে পরলোকে পাঠাবো।
পরদিন সকালে কীচক রাজভবনে গিয়ে দ্রৌপদীকে বললেন, আমি রাজসভায় বিরাটের সামনে তোমাকে পদাঘাত করেছিলাম, কেউ তোমাকে রক্ষা করেনি, কারণ আমি পরাক্রমশালী। বিরাট কেবল নামেই মৎস্যদেশের রাজা, আসলে সেনাপতি হলেও আমিই রাজা। সুকুমারী, তুমি আমার কামনা পূর্ণ করো, তোমাকে শত স্বর্ণমুদ্রা দিচ্ছি, শত দাসী, শত দাস এবং সুসজ্জিত একটি রথ তোমাকে দেবো। দ্রৌপদী বললেন, কীচক, তুমি এই প্রতিজ্ঞা করো যে তোমার বন্ধু বা ভাই কেউ আমাদের মিলনের কথা জানতে পারবে না, কারণ, আমি আমার গন্ধর্ব পতিদের ভয় করি। কীচক বললেন, আমি একাকীই তোমার কক্ষে যাবো, গন্ধর্বরা জানতে পারবে না। দ্রৌপদী বললেন, রাতে নৃত্যশালায় কেউ থাকে না, তুমি অন্ধকারে সেখানে যেয়ো।
কীচকের সঙ্গে এইরূপ কথাবার্তার পর দ্রৌপদী পাকশালায় ভীমের কাছে গিয়ে সব জানিয়ে দিলেন। ভীম আনন্দিত হয়ে বললেন, আমি সত্য, ধর্ম, ও ভাইদের নামে শপথ করে বলছি, আমি গুপ্ত স্থানে বা প্রকাশ্যে কীচককে চূর্ণ করবো, মৎস্যদেশের সেনারা যদি যুদ্ধ করতে আসে, তবে তাদেরও সংহার করবো, তার পর দুর্যোধনকে বধ করে রাজ্যলাভ করবো। যুধিষ্ঠির বিরাটের সেবা করতে থাকুন। দ্রৌপদী বললেন, বীর, তুমি আমার জন্য সত্যভ্রষ্ট হয়ো না, কীচককে গোপনে বধ করো।
সিংহ যেমন হরিণের জন্য অপেক্ষায় থাকে তেমন ভীম রাতে নৃত্যশালায় গিয়ে কীচকের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। সৈরিন্ধীর সঙ্গে মিলনের আশায় কীচক সুসজ্জিত হয়ে সেই অন্ধকারময় নৃত্যশালায় এলেন এবং পালঙ্কে শায়িত ভীমকে স্পর্শ করে আনন্দে অস্থির হয়ে বললেন, তোমার কক্ষে আমি বহু ধন, রত্ন, পোশাক ও দাসী পাঠিয়ে দিয়েছি। আর দেখ, আমার সকল স্ত্রীরাই বলে যে আমার তুল্য সুবেশ ও সুদর্শন পুরুষ আর নেই।
ভীম বললেন, আমার সৌভাগ্য যে তুমি সুদর্শন এবং নিজেই নিজের প্রশংসা করছ, তোমার তুল্য স্পর্শ আমি পূর্বে কখনও পাইনি। তার পর ভীম সহসা শয্যা থেকে উঠে সহাস্যে বললেন, পাপিষ্ঠ, আমি তোমাকে মাটিতে ফেলে তোমার মাথা চূর্ণ কোরে মেরে ফেলব। তুমি নিহত হলে সৈরিন্ধ্রী নিরাপদে থাকতে পারবেন, তার স্বামীরাও সুখী হবেন। এই বলে ভীম কীচকের কেশ ধরলেন, কীচকও ভীমের দুই বাহু ধরলেন। বালী ও সুগ্রীবের মতো তাঁরা বাহুযুদ্ধে করতে থাকলেন।
প্রচণ্ড বাতাস গাছকে যেমন ভয়ঙ্কর ভাবে নাড়াতে থাকে ভীম তেমন কোরে কীচককে ঘরের মধ্যে নাড়াতে লাগলেন। ভীমের হাত থেকে ঈষৎ মুক্ত হয়ে কীচক পায়ের আঘাতে ভীমকে মাটিতে ফেললেন। ভীম তখনই উঠে কীচককে আবার আক্রমণ করলেন। তাঁর প্রচণ্ড প্রহারে কীচক আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়লে ভীম তখন দুই হাত দিয়ে কীচককে ধরে তাঁর গলা চেপে ধরলেন। ভীমের প্রহারে কীচকের শরীরের মধ্যে হাড়গুলি ভেঙ্গে গেলো। তারপর ভীম কীচককে দুই হাত দিয়ে তুলে ঘোরাতে ঘোরাতে বললেন, আমাদের স্ত্রীকে যে পদাঘাত করেছিল সেই শত্রুকে বধ কোরে আজ আমি ভাইদের কাছে ঋণমুক্ত হবো, সৈরিন্ধ্রীর দুঃখ দূর করবো।
ভীমের হাতে কীচকের মৃত্যু হোলো। ক্রুদ্ধ ভীম কীচকের হাত পা মাথা গলা সমস্তই তার দেহের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে গোলাকার কোরে দিলেন। তার পর তিনি দ্রৌপদীকে ডেকে সেই মাংসপিণ্ড দেখিয়ে বললেন, পাঞ্চালী দেখ কীচককে বধ কোরে তোমার অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছি। ভীমের ক্রোধ শান্ত হোলে তিনি পাকশালায় চলে গেলেন। দ্রৌপদী নৃত্যশালার রক্ষকদের কাছে গিয়ে বললেন, পরস্ত্রীলোভী কীচক আমার গন্ধর্ব পতিদের হাতে নিহত হয়ে পড়ে আছে, তোমরা এসে দেখ। রক্ষকরা মশাল নিয়ে সেখানে এল এবং কীচকের রক্তাক্ত গোলাকার দেহ দেখে তার হাত পা মুণ্ড গলা কোথায় গেল খোঁজ করতে লাগল।
কীচকের বান্ধব উপকীচকগণ কীচকের মৃতদেহ ঘিরে কাঁদতে লাগল। যখন অন্ত্যেষ্টির জন্য কীচকের মৃতদেহ বাইরে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তারা দেখল একটা খুঁটি ধরে দ্রৌপদী কাছেই দাঁড়িয়ে আছেন। উপকীচকরা বললো, ওই অসতীটাকে কীচকের সঙ্গে পুড়িয়ে মারো, ওর জন্যই কীচক নিহত হয়েছেন। তারা বিরাটের কাছে গিয়ে অনুমতি চাইলে তিনি সম্মত হলেন, কারণ কীচকের বান্ধবরাও পরাক্রান্ত।
বিরাটের অনুমতি পেয়ে উপকীচকগণ দ্রৌপদীকে বেঁধে শ্মশানে নিয়ে চললো। দ্রৌপদী চীৎকার কোরে বললেন, জয়, জয়ন্ত, বিজয়, জয়সেন, জয়দ্বল শোন, মহাবীর গন্ধর্বগণ শোনো উপকীচকেরা আমাকে দাহ করতে নিয়ে যাচ্ছে। ভীম সেই চীৎকার শুনে তখনই শয্যা থেকে উঠে বললেন, সৈরিন্ধ্রী, ভয় নেই। তিনি বেশ পরিবর্তন করে লাফ দিয়ে প্রাচীর পার হয়ে উপকীচকদের সামনে উপস্থিত হলেন। শ্মশানের কাছে একটি বিশাল শুকনো গাছ দেখে তিনি সেটা উপড়ে কাঁধের উপর নিয়ে যমরাজের মতো উপকীচকদের তাড়া করলেন। তাঁকে দেখে উপকীচকরা ভয় পেয়ে বলল, ক্রুদ্ধ গন্ধর্ব আমাদের মারতে আসছে, সৈরিন্ধ্রীকে শীঘ্র মুক্তি দাও। তারা দ্রৌপদীকে ছেড়ে দিয়ে রাজধানীর দিকে পালাতে গেলে ভীম সেই উপকীচকদেরকে বধ করলেন। তার পর তিনি দ্রৌপদীকে বললেন, আর ভয় নেই, তুমি রাজভবনে ফিরে যাও আমিও অন্য পথে পাকশালায় যাচ্ছি।
সকালে মৎস্যদেশের নরনারীগণ সেনাপতি কীচক ও তাঁর সমস্ত উপকীচক বন্ধুরা নিহত হয়েছে দেখে অত্যন্ত বিস্মিত হোলো। তারা রাজার কাছে গিয়ে সেই সংবাদ দিয়ে বললে, সৈরিন্ধ্রী আবার আপনার ভবনে এসেছে। সে রূপবতী সেজন্য পুরুষরা তাকে কামনা করবে, গন্ধর্বরাও মহাবল। মহারাজ, সৈরিন্ধ্রীর দোষে যাতে আপনার রাজধানী বিনষ্ট না হয় তার ব্যবস্থা করুন। কীচক ও উপকীচকগণের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য আদেশ দিয়ে বিরাট সুদেষ্ণাকে বললেন, তুমি সৈরিন্ধ্রীকে বলো – “তুমি এখান থেকে যেখানে ইচ্ছা হয় চলে যাও, রাজা গন্ধর্বদের ভয় করেন, তিনি নিজে এ কথা তোমাকে বলতে পারেন না, সেজন্য আমি বলছি”।
কীচক ও উপকীচকগণের মৃত্যুর পর দ্রৌপদী স্নান কোরে ও পোশাক ধূয়ে রাজধানীর দিকে চললেন, তাকে দেখে লোকে গন্ধর্বের ভয়ে পালাতে লাগল। পাকশালার নিকটে এসে ভীমকে দেখে দ্রৌপদী সহাস্যে বললেন, গন্ধর্বরাজকে নমস্কার, যিনি আমাকে মুক্ত করেছেন। ভীম উত্তর দিলেন, এই নগরে যে পুরুষরা আছেন তারা এখন তোমার দিকে তাকাতেও ভয় পাবেন।
তার পর দ্রৌপদী দেখলেন, নৃত্যশালায় অর্জুন কন্যাদের নৃত্য শেখাচ্ছেন? কন্যারা বললো, সৈরিন্ধ্রী, ভাগ্যক্রমে তুমি মুক্তিলাভ করেছ এবং তোমার অনিষ্টকারী কীচকগণ নিহত হয়েছে। অর্জুন বললেন, তুমি কি করে মুক্ত হোলে, সেই পাপীরাই বা কি করে নিহত হল তা শুনতে ইচ্ছা করি। দ্রৌপদী বললেন, বৃহন্নলা, সৈরিন্ধীর কথায় তোমার কি প্রয়োজন? তুমি তো কন্যাদের মধ্যে সুখে আছ, আমার মতো দুঃখভোগ করো না। অর্জুন বললেন, বৃহন্নলাও মহাদুঃখ ভোগ করছে, সে এখন পশুতুল্য হয়ে গেছে তা তুমি বুঝতে পারছো না। আমরা এক জায়গায় বাস করি, তুমি কষ্ট পেলে আমরাও দুঃখিত হই?
দ্রৌপদী কন্যাদের সঙ্গে সুদেষ্ণার কাছে গেলেন। রাজার আদেশ অনুসারে সুদেষ্ণা বললেন, সৈরিন্ধ্রী, তুমি শীঘ্র যেখানে ইচ্ছা হয় চলে যাও। তুমি যুবতী ও রূপে অতুলনীয়া, রাজাও গন্ধর্বদের ভয় করেন। দ্রৌপদী বললেন, আর তেরো দিনের জন্য আমাকে ক্ষমা করুন, তার পর আমার গন্ধর্ব পতিগণ তাদের কাজ শেষ কোরে আমাকে নিয়ে যাবেন, আপনাদেরও মঙ্গল করবেন।
______________
(ক্রমশ)