Diabetes - 14 in Bengali Health by Yogi Krishnadev Nath books and stories PDF | মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ - 14

Featured Books
  • सफलता का शॉर्टकट

    एक छोटे से गाँव का लड़का था। घर की हालत बहुत साधारण थी। पिता...

  • मेहनत की रोशनी

      गीत शीर्षक: "मेहनत की रोशनी – (लेखिका – पूनम कुमारी) प्रस्...

  • Family of Shadows - Part 4

    थाने के रिकॉर्ड रूम में सिर्फ़ दीमक की खटखटाहट थी और अर्जुन...

  • अंधेरी गुफा - 1

    (एक रहस्यमयी भयावह कथा)बिहार के एक छोटे से गाँव कुरहारी के प...

  • तेरा मेरा सफ़र - 18

    सुबह होटल की लाइट्स धीरे-धीरे बुझ रही थीं, लेकिन कियारा के भ...

Categories
Share

মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ - 14

সুগার থেকে মুক্তির উপায় 


পঞ্চম অধ্যায় 

ডায়াবেটিসের খাওয়া-দাওয়া




আমরা যা খাই, সেটাই আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে রক্ত-মাংস হয়ে জমা হয়।
আমাদের আনন্দ, দুঃখ, শক্তি, দুর্বলতা—সবকিছুর পেছনেই আছে প্রতিদিনের সেই থালা-বাটি।

একটা ছোট্ট উদাহরণ ভেবে দেখুন—
একজন কৃষক যদি জমিতে আগাছার বীজ ছিটিয়ে দেয়, সেখানে সোনার ফসল ফলবে কি ?
হবে না।
তেমনি আমরা যদি প্রতিদিন প্লেটে ভরে আনি প্রসেসড ফুড, সাদা চিনি, বাজে তেল, প্যাকেটজাত খাবার—
তাহলে শরীরে কেবল রোগই জন্মাবে, সুস্থতা নয়।

ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির আসল চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে খাওয়া-দাওয়ার শৃঙ্খলায়।
আপনি কী খাচ্ছেন, কখন খাচ্ছেন, কতবার খাচ্ছেন—
এই তিনটিই নির্ধারণ করে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে নাকি অসুস্থ হবে।

আমরা এতদিন ভেবেছি—
“ডায়াবেটিস মানেই আজীবনের ওষুধ।”
কিন্তু সত্য হলো—
সঠিক খাবারই সবচেয়ে বড় ওষুধ।

ওষুধ সাময়িকভাবে ব্লাড সুগার কমাতে পারে,
কিন্তু আপনার শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ করতে পারবে না।
এটা করতে পারে কেবলমাত্র সেই খাবার, যা গিয়ে আপনার গাট মাইক্রোবায়োমকে খুশি করবে, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ভাঙবে, শরীরের প্রদাহ কমাবে, আর কোষে শক্তি পৌঁছে দেবে।

তাই এখন থেকে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ হবে সচেতন।
থালায় ভাত-রুটি কতটা থাকবে, কোন তেলে রান্না হবে, ফল খাওয়ার সঠিক সময় কখন—
সব কিছুই ঠিক করে নিতে হবে নতুন করে।

এই অধ্যায়ে আমরা ধাপে ধাপে আলোচনা করব—

কী কী খাবার যত খুশি খাওয়া যাবে,

কী কী খাবার অল্প করে খেতে হবে,

সুগার পুরোপুরি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত কী একেবারেই খাওয়া যাবে না,

আর কোন খাবারকে জীবনে আর স্পর্শও করা উচিত নয়।


কারণ মনে রাখবেন—
আপনার মুক্তির পথ হাসপাতালের প্রেসক্রিপশনে নয়, আপনার নিজের রান্নাঘরেই লুকিয়ে আছে।



ডায়াবেটিসের জন্য উপযুক্ত খাওয়া দাওয়া সম্পর্কে অনেক ধরণের বিভ্রান্তি প্রচলিত রয়েছে। এই ব্যাপারে নানা মুনির নানা মত। এই পর্বে আমরা ডায়াবেটিসের জন্য উপযোগী খাবার দাবারের টুকিটাকি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।







কোন চালের ভাত খাওয়া উচিত ?

আমাদের বাঙালিদের প্রধান খাদ্য ভাত। ভাত ছাড়া যেন খাওয়াই জমে না। সকালের প্রাতরাশে মুড়ি, দুপুরে থালা ভর্তি ভাত, রাতে আবার ভাত—এইভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেঁচে এসেছে।
ভাত আমাদের আবেগ, ভাত আমাদের অভ্যাস, ভাত আমাদের সংস্কৃতি।

কিন্তু সেই ভাতই আজ হয়ে উঠছে আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় শত্রু।
কারণ, ভাতের অতিরিক্ত আসক্তিই ধীরে ধীরে তৈরি করছে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স—টাইপ–২ ডায়াবেটিসের মূল কারণ।



যারা পরিশ্রম করেন না, তাদের জন্য ভাত কতটা ক্ষতিকর ?

একজন কৃষক সারাদিন মাঠে ঘাম ঝরান, মজুর বা দিনমজুর সারাদিন খাটেন। তাদের শরীরে যে ভাত ঢোকে, তা ঘামের সঙ্গে সঙ্গেই পুড়ে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
কিন্তু আজকের দিনের শহুরে মানুষ—অফিসে বসে কাজ, বাড়ি ফিরেই সোফায় বসা, যাতায়াত বাইক বা গাড়িতে। এরা থালা ভর্তি ভাত খায়, কিন্তু ভাত পোড়ানোর মতো পরিশ্রম তাদের জীবনে নেই।

ফলে—

১. অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা হয়
ভাত মানেই কার্বোহাইড্রেট। এই বাড়তি কার্বোহাইড্রেট শরীর ব্যবহার করতে না পারলে ফ্যাটে রূপান্তরিত হয়, জমে পেট–কোমরে।


২. রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যায়
সাদা ভাতের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স (GI) ৭০–এর ওপরে। মানে খাওয়ার পর খুব দ্রুত রক্তে গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয়। অগ্ন্যাশয় বারবার ইনসুলিন তৈরি করতে বাধ্য হয়, আর এভাবেই তৈরি হয় ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স।


৩. প্রেশার ও হার্টের ঝুঁকি
ভাতের সঙ্গে লবণ, তেলে ভাজা, মশলাদার পদ—সব মিলিয়ে শুধু সুগার নয়, প্রেশার ও হার্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


৪. স্থূলতা ও জটিলতা
ভাত বেশি + পরিশ্রম কম = পেটের চর্বি, ওজন বৃদ্ধি, জয়েন্টে ব্যথা, ঘুমের সমস্যা, এমনকি হৃদরোগ পর্যন্ত।



প্রচলিত সাদা ভাতের আসল চেহারা:


আজকের দিনে বাজারে যে চাল পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগই হাইব্রিড।
এই চালের উদ্দেশ্য—অধিক ফলন, দ্রুত রান্না, চকচকে দানা।
কিন্তু সমস্যাটা হলো—

আঁশ প্রায় নেই

খনিজ প্রায় নেই

শর্করা খুব দ্রুত হজম হয়


ফলাফল ? গ্লুকোজ হঠাৎ রক্তে ছুটে আসে আর শরীরের ভেতরে তৈরি হয় সাইলেন্ট পয়জন।


শুধু ভাত নয়, চাল থেকে তৈরি খাবারও বিপজ্জনক।

অনেকেই মনে করেন—ভাত না খেয়ে চিঁড়া, মুড়ি, খই খেলে বা পিঠাপুলি খেলে নাকি ক্ষতি কম হয়।
সত্য হলো—এসবের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ভাতের চেয়েও বেশি।
এগুলো প্রায় সরাসরি গ্লুকোজে পরিণত হয়।

তাই অন্তত এক বছর এসব খাবার পুরোপুরি বর্জন করা উচিত।
যারা চান সুগার রিভার্স করতে, তাদের জন্য এটাই প্রথম শর্ত।


তাহলে কী করবেন ?

চাল বেছে নিতে হবে সচেতনভাবে।
সুগার রোগী হোন বা সুগার এড়াতে চান, সব সময় লো গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স (GI < ৫৫) এর চাল খাবেন।

১. Low GI Rice (সুগার ফ্রি চাল হিসেবে পরিচিত)
২. কালা নমক রাইস (গোরক্ষপুর)
২. লাল চাল (Brown Rice)
৩. কালো চাল (Black Rice)
৪. দেশি ধান থেকে তৈরি চাল (পলিশবিহীন)
৫. বাসমতি চাল (GI তুলনামূলক কম)


তবে সতর্কতা:

সুগার রোগীরা লো GI চাল হলেও এক বাটির বেশি খাবেন না।

ভাত সবসময় খেতে হবে শাকসবজি ও প্রোটিনের সঙ্গে।

খাওয়ার পর অন্তত ১৫ মিনিট হাঁটবেন।


পরিশেষে বলতে হয়—

ভাত আমাদের আবেগ, কিন্তু সেই আবেগই যদি শরীর ভাঙে, তাহলে তা আর খাবার নয়—বিষ।
আমরা ভাত খাবো, তবে সচেতনভাবে।
ভাত খাওয়া যাবে, কিন্তু সেটাকে হতে হবে সুস্থ ভাত।

সাদা হাইব্রিড চাল = ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারখানা
লো GI দেশি চাল = সুস্থ জীবনের সহযাত্রী






আটা ও ময়দা: সুগারের নীরব ঘাতক


আজকাল বাঙালিদের ঘরে ঘরে রুটির প্রচলন বেড়েছে। একসময় শুধু উত্তর ভারতেই রুটি ছিল প্রধান খাদ্য, এখন বাংলার মানুষও সকালের খাবার থেকে শুরু করে রাতের ডিনারে রুটি খেতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। অনেকে মনে করেন— ভাতের তুলনায় রুটি নাকি অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। কিন্তু সত্যিই কি তাই ?


বাজারে যে আটা ও ময়দা পাওয়া যায়—

দোকানে পাওয়া অধিকাংশ আটা তৈরি হয় হাইব্রিড গম থেকে। ফলন বাড়ানোর জন্য শস্যের জেনেটিক পরিবর্তন করা হয়েছে। গম বড় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু গুণমান আগের মতো নেই।

আর ময়দা ? এটাকে বলা যায় প্রসেসড চিনির যমজ ভাই। গমের বাইরের আঁশ পুরোপুরি তুলে ফেলা হয়, কেমিক্যাল দিয়ে সাদা করা হয়, এরপর বাজারে ময়দা হিসেবে বিক্রি হয়। এর ভেতরে পুষ্টি প্রায় শূন্য। শুধু ফাঁকা ক্যালোরি, যা রক্তে ঢুকেই দ্রুত গ্লুকোজে পরিণত হয়।

ময়দা খেলে হজম হয় খুব দ্রুত, ফলে হঠাৎ সুগার বেড়ে যায়।

একইসঙ্গে গাট হেলথ নষ্ট করে, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ইনফ্ল্যামেশন বাড়ায়।

ডায়াবেটিস, স্থূলতা, ফ্যাটি লিভার— এসবের অন্যতম কারণ হলো এই ময়দা।

সুতরাং— যেমন প্রসেসড চিনি চিরতরে বাদ দিতে হবে, তেমনি ময়দাও জীবন থেকে একেবারেই বাদ দিতে হবে।


গ্লুটেন – নীরব শত্রু


গমের মধ্যে থাকে গ্লুটেন নামক প্রোটিন। গ্লুটেন রুটিকে মোলায়েম করে, ফুলিয়ে তোলে। কিন্তু সমস্যাটা হলো— গ্লুটেন হজম করা কঠিন।

এটা গাট লাইনিং ক্ষতিগ্রস্ত করে, মাইক্রোবায়োম নষ্ট করে দেয়।

শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ (Inflammation) বাড়ায়।

ধীরে ধীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে, যা টাইপ–২ ডায়াবেটিসের মূল কারণ।


গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) – ভাতের মতোই বিপজ্জনক।


অনেকে ভাবেন ভাত বাদ দিয়ে রুটি খেলেই সুগার কমে যাবে। কিন্তু সত্যি কথা হলো— সাদা আটার রুটির GI (Glycemic Index) ভাতের কাছাকাছিই।
মানে, এটাও দ্রুত গ্লুকোজে ভেঙে রক্তে শর্করা বাড়িয়ে দেয়।



তাহলে সমাধান কী ?

১. এখন বিভিন্ন কোম্পানির সুগার ফ্রেন্ডলি আটা পাওয়া যায়।

২. মাল্টি গ্রেইন আটা – বার্লি, রাগি, ওটস, ছোলার আটা মেশানো আটা। এগুলো ধীরে হজম হয়, ইনসুলিন স্পাইক কমায়।

৩. অর্গানিক গমের আটা – বিশেষ করে মধ্যপ্রদেশের দেশি গম থেকে তৈরি আটা। হাইব্রিড নয়, তুলনায় গ্লুটেন কম।

৪. লো GI আটা – কিছু ভালো ব্র্যান্ড এখন লো গ্লাইসেমিক আটা তৈরি করছে, যা রক্তে শর্করা ধীরে ছাড়ে।




রুটি হোক বা ভাত, পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করাটাই আসল।
ময়দা পুরোপুরি বাদ দিন। ময়দা হলো প্রসেসড চিনির মতোই বিষ।
রুটি খেতে হলে বেছে নিন মাল্টি গ্রেইন, অর্গানিক বা লো GI আটা।

( খুব শীঘ্রই আসছে বই আকারে )