Story of Mahabharat Part 151 Fight by Karna with Yudhithir and Bhim on 17th day in Bengali Spiritual Stories by Ashoke Ghosh books and stories PDF | মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 151

Featured Books
Categories
Share

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 151

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১৫১

সপ্তদশ দিনে কর্ণের সাথে যুধিষ্ঠির ও ভীমের যুদ্ধ

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

সপ্তদশ দিনে কর্ণের সাথে যুধিষ্ঠির ও ভীমের যুদ্ধ

সপ্তদশ দিনের যুদ্ধে ব্যূহ রচনা কোরে কর্ণ পাণ্ডবাহিনীর দিকে অগ্রসর হলেন। কৃপ ও কৃতবর্মা ব্যূহের দক্ষিণে রইলেন। দুর্জয় অশ্বারোহী গান্ধার সৈন্য ও পাহাড়ি সৈন্যসহ শকুনি ও উলূক তাদের পাশে রক্ষক হয়ে চলতে লাগলেন। কয়েক হাজার সংশপ্তকের সঙ্গে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রগণ ব্যূহের বাম পাশে রইলেন এবং তাঁদের পাশে কাম্বোজ, শক ও যবন যোদ্ধারা রইলেন। ব্যূহের মাঝখানে কর্ণ এবং পিছনে দুঃশাসন রইলেন।

পুরাকালে বেদমন্ত্রে দীপ্ত অগ্নিদেব যে রথের ঘোড়া হয়েছিলেন, যে রথ ব্রহ্মা, মহাদেব, ইন্দ্র ও বরুণকে বহন করেছিল, সেই আশ্চর্য রথে কৃষ্ণ ও অর্জুন আসছেন দেথে শল্য বললেন, কর্ণ, সাদা ঘোড়া যার বাহন এবং কৃষ্ণ যার সারথি সেই রথ আসছে। তুমি যাঁর অনুসন্ধান করছিলে, দুর্নিবার সেই অর্জুন কৌরবসেনা বধ করতে করতে এগিয়ে আসছেন। দেখো, নানাপ্রকার দুর্লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, একটা ভয়ঙ্কর দর্শন কবন্ধ সূর্যকে ঢেকে রয়েছে, বহু হাজার কাক ও শকুন একত্র হয়ে ভয়ঙ্কর আওয়াজ করছে। অর্জুনের গাণ্ডীব থেকে নিক্ষিপ্ত তীক্ষ্ম শরজাল শত্রু বিনাশ করছে। নিহত রাজাদের শবদেহে রণভূমি ঢেকে গেছে, আরোহীর সহিত ঘোড়া সকল মুমূর্য হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ছে, নিহত হাতিরা পর্বতের মতো পড়ে যাচ্ছে। কৰ্ণ, কৃষ্ণ যাঁর সারথি এবং গাণ্ডীব যাঁর ধনু, সেই অর্জুনকে যদি বধ করতে পারো, তবে তুমিই আমাদের রাজা হবে।

এই সময়ে সংশপ্তকগণের ডাকে অর্জুন তাদের সঙ্গে যুদ্ধ আরম্ভ করলেন। কর্ণ শল্যকে বললেন, দেখুন, মেঘ যেমন সূর্যকে ঢেকে দেয়, সংশপ্তকগণ তেমন অর্জুনকে ঘিরে ফেলেছে। অর্জুন যোদ্ধাদের সাগরে ডুবে গেছে, এই তার শেষ। শল্য বললেন, জল দিয়ে কে বরুণকে বধ করতে পারে? কাঠ দিয়ে কে আগুন নেভাএ পারে? কোন লোক বাতাসকে ধরে রাখতে বা মহাসমুদ্রকে পান করতে পারে? যুদ্ধে অর্জুনের বধ আমি সেই রকম অসম্ভব মনে করি। তবে কথা বলে যদি তোমার আনন্দ হয় তবে বলো।

কর্ণ ও শল্য যখন এইরূপ আলাপ করছিলেন তখন দুই পক্ষের সেনা পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলো। অর্জুন তার চতুর্দিকের অসংখ্য শত্রু বধ করতে লাগলেন। কর্ণের বাণের আঘাতে বহু পাঞ্চালবীর নিহত হলেন, তাদের সৈন্যদের মধ্যে হাহাকার উঠল। পাণ্ডববাহিনী ভেদ করে কর্ণ বহু রথ হাতি ঘোড়া ও পদাতিক সেনা নিয়ে যুধিষ্ঠিরের নিকটে এলেন। শিখণ্ডী ও সাত্যকির সাথে পাণ্ডবগণ যুধিষ্ঠিরকে ঘিরে রইলেন। সাত্যকির নির্দেশে দ্রাবিড়, অন্ধ্র ও নিষাধ দেশীয় পদাতিক সৈন্যরা কর্ণকে মারবার জন্য সবেগে এলো, কিন্তু কর্ণের বাণে আহত হয়ে ভূপতিত হোলো। পাণ্ডব, পাঞ্চাল ও কেকয়গণ দ্বারা রক্ষিত হয়ে যুধিষ্ঠির কর্ণকে বললেন, তুমি সর্বদাই অর্জুনের সাথে বিরোধিতা করো, দুর্যোধনের মতে চলে সর্বদাই আমাদের শত্রুতা করো। তোমার পাণ্ডবদের উপর যত বিদ্বেষ আছে আজ সে সমস্তই দেখাও। আজ মহাযুদ্ধে তোমার যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা দূর করবো। এই বলে যুধিষ্ঠির কর্ণকে আক্রমণ করলেন। তার বজ্রতুল্য বাণের আঘাতে কর্ণের শরীরের বাম দিক জখম হলে কর্ণ মূৰ্ছিত হয়ে রথের মধ্যে পড়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে চেতনা লাভ কোরে কর্ণ যুধিষ্ঠিরের রক্ষক পাঞ্চালবীর চন্দ্রদেব ও দণ্ডধারকে বধ করলেন এবং যুধিষ্ঠিরের বর্ম ভেঙ্গে ফেললেন। রক্তাক্তদেহে যুধিষ্ঠির এক শক্তি ও চার তোমর নিক্ষেপ করলেন। কর্ণ ভল্লের আঘাতে যুধিষ্ঠিরের রথ নষ্ট করলেন। তারপর এসে যুধিষ্ঠিরের কাঁধ স্পর্শ করে বললেন, ক্ষত্রিয়বীর প্রাণরক্ষার জন্য কি কোরে রণস্থল ত্যাগ করতে পারেন? আপনি ক্ষত্রধর্মে পটু নন, বেদ পাঠ আর যজ্ঞ কোরে ব্রাহ্মণের শক্তিই লাভ করেছেন। আর যুদ্ধ করবেন না, বীরগণের কাছে যাবেন না, তাদের অপ্রিয় বাক্যও বলবেন না।

যুধিষ্ঠির লজ্জিত হয়ে সরে গেলেন এবং কর্ণের বিক্রম দেখে নিজ পক্ষের যোদ্ধাদের বললেন, তোমরা নিশ্চেষ্ট হয়ে আছ কেন, শত্রুদের বধ করো। তখন ভীম প্রভৃতি কৌরবসৈন্যের প্রতি ধাবিত হলেন। তুমুল যুদ্ধে হাজার হাজার হাতি ঘোড়া রথ ও পদাতিক বিনষ্ট হতে লাগল। দেবদূতরা যুদ্ধে নিহত বীরগণকে বিমানে তুলে স্বর্গে নিয়ে চলল। এই আশ্চর্য ব্যাপার দেখে বীরগণ স্বর্গলাভের ইচ্ছায় দ্রুত পরস্পরকে বধ করতে লাগলেন। ভীম, সাত্যকি প্রভৃতি যোদ্ধাদের বাণের আঘাতে আকুল হয়ে কৌরবসৈন্য পালাতে লাগল। তখন কর্ণের আদেশে শল্য ভীমের কাছে রথ নিয়ে গেলেন। শল্য বললেন, দেখো, মহাবীর ভীম কিরূপ ক্রুদ্ধ হয়ে আসছেন, ইনি দীর্ঘকালের ক্রোধ নিশ্চয় তোমার উপর মুক্ত করবেন। কর্ণ বললেন, মদ্ররাজ, আপনার কথা সত্য, কিন্তু দণ্ডধারী যমের সঙ্গে ভীম কি কোরে যুদ্ধ করবেন? আমি অর্জুনকে চাই, ভীম পরাস্ত হলে অর্জুন নিশ্চয় আমার কাছে আসবেন।

কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর ভীমের বাণের আঘাতে কর্ণ অচেতন হয়ে রথের মধ্যে বসে পড়লে শল্য তাঁকে রণস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে গেলেন। তারপর পুরাকালে ইন্দ্র যেমন দানবগণকে বিনাশ করেছিলেন ভীম তেমন বিশাল কৌরববাহিনী বিনাশ করতে লাগলেন।

______________

(ক্রমশ)