Story of Mahabharat Part 149 Story of Crow and Swan in Bengali Spiritual Stories by Ashoke Ghosh books and stories PDF | মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 149

Featured Books
Categories
Share

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 149

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১৪৯

কাক ও হাসের কাহিনি

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

কাক ও হাসের কাহিনি

কর্ণের তীব্র কটুকথা শুনে শল্য বললেন, কর্ণ, তোমাকে মাতালের মতো অস্বাভাবিক দেখছি, শুভাকাঙ্খী হিসাবে আমি তোমার চিকিৎসা করবো। তোমার জন্য যা কল্যাণকর বা অকল্যাণকর বলে আমি জানি তা অবশ্যই আমার বলা উচিত। একটি কাহিন৯ই বলছি শোন – সমুদ্রতীরে কোনও দেশে এক ধনবান বনিক ছিলেন, তার বহু পুত্র ছিলো। সেই পুত্রেরা তাদের খাওয়ার শেষে অবশিষ্ট খাদ্য একটা কাককে খেতে দিত। উচ্ছিষ্টভোজী সেই কাক গর্বিত হয়ে অন্য পাখিদের অবজ্ঞা করত। একদিন গরুড়ের মতো দ্রুতগামী এবং চক্ৰবাকের মতো বিচিত্ৰদেহ কতকগুলি হাস দ্রুতবেগে উড়ে এসে সমুদ্রের তীরে নামল। বনিকের পুত্রেরা কাককে বললো, তুমি ওই হাসগুলির চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তখন সেই উচ্ছিষ্টভোজী কাক সগর্বে হাসগুলির কাছে গিয়ে বললো, চলো, আমরা উড়ব। হাসেরা বললো, আমরা মানস সরোবরে থাকি, ইচ্ছা অনুসারে উড়তে উড়তে সব জায়গায় ভ্রমণ করি, বহুদূর যেতে পারি, সেজন্য পাখিদের মধ্যে আমরা বিখ্যাত। তুমি কাক হয়ে কি কোরে আমাদের সঙ্গে উড়বে?

কাক বললে, আমি শতাধিক প্রকার উড়বার পদ্ধতি জানি এবং প্রত্যেক পদ্ধতিতে বিচিত্র গতিতে শত যোজন যেতে পারি। আজ আমি উড্ডীন, অবডীন, প্রডীন, ডীন, নিডীন, সংডীন, তির্যডীন, পরিডীন প্রভৃতি বহুপ্রকার গতিতে উড়ব, তোমরা আমার শক্তি দেখতে পাবে। বলো, এখন কোন গতিতে আমি উড়ব, তোমরাও আমার সঙ্গে উড়ে চলো। একটি হাস বললো, সকল পাখি যে গতিতে ওড়ে আমি সেই গতিতেই উড়ব, অন্য গতি জানি না। তবে তোমার যেমন ইচ্ছা সেই গতিতে উড়ে চলো।

হাস ও কাক পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উড়তে লাগল, হাস একই গতি এবং কাক বহুপ্রকার গতিতে উড়ে চলল। হাসেরা নীরব রইল, দর্শকদের অবাক করবার জন্য কাক নিজের গতির বর্ণনা করতে লাগল। অন্যান্য কাকেরা হাসগুলোর নিন্দা করতে করতে একবার গাছের উপর উড়ে বসল আবার নীচে নেমে এলো। হাসেরা ধীর গতিতে উড়ে কিছুকাল কাকের পিছনে রইল, তারপর দর্শক কাকদের উপহাস শুনে দ্রুতবেগে সমুদ্রের উপর দিয়ে পশ্চিম দিকে উড়ে চলল। কাক ক্লান্ত ও ভীত হয়ে ভাবতে লাগল, কোথাও দ্বীপ বা গাছ নেই, আমি কোথায় নামব? হাসেরা পিছনে ফিরে দেখল, কাক জলে পড়ে যাচ্ছে। তখন তারা বললো, কাক, তুমি বহুপ্রকার গতির বর্ণনা করেছিলে, কিন্তু এই গোপন গতির কথা তো বল নি! তুমি পাখাআ ও ঠোঁট দিয়ে বার বার জল স্পর্শ করছ, এই গতির নাম কি?

পরিশ্রান্ত কাক জলে পড়তে পড়তে বললো, আমরা কাক রূপে জন্ম নিয়েছি, কা কা রব কোরে বিচরণ করি। প্রাণরক্ষার জন্য আমি তোমাদের শরণ নিলাম, আমাকে সমুদ্রের তীরে নিয়ে চলো। আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করো, যদি ভালয় ভালয় নিজের দেশে ফিরতে পারি তবে আর কাউকে অবজ্ঞা করবো না। কাকের এই বিলাপ শুনে হাসেরা কিছু না বলে তাকে পা দিয়ে উঠিয়ে পিঠে তুলে নিয়ে দ্রুতবেগে উড়ে তাকে সমুদ্রতীরে রেখে নিজেদের দেশে চলে গেল।

কাহিনি শেষ কোরে শল্য বললেন, কর্ণ, তুমি সেই উচ্ছিষ্টভোজী কাকের মতো; দুর্যোধনের উচ্ছিষ্টে পালিত হয়ে তোমার সমান এবং তোমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ সকল লোককে তুমি অবজ্ঞা কোরে থাকো। কাক যেমন শেষকালে বুদ্ধি করে হাসের শরণ নিয়েছিল তুমিও তেমন কৃষ্ণ ও অর্জুনের শরণ নাও।

______________

(ক্রমশ)