Story of Mahabharat - Part-111 in Bengali Spiritual Stories by Ashoke Ghosh books and stories PDF | মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 111

Featured Books
Categories
Share

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 111

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১১১

যুদ্ধের প্রথম দিনে বিরাটপুত্র উত্তর ও শ্বেতের মৃত্যুর কাহিনি

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

যুদ্ধের প্রথম দিনে বিরাটপুত্র উত্তর ও শ্বেতের মৃত্যুর কাহিনি

ভীষ্মকে সামনে রেখে কৌরবসেনা এবং ভীমকে সামনে রেখে পাণ্ডবসেনা পরস্পরের প্রতি ধাবিত হোলো। সৈন্যদের সিংহনাদ, কোলাহল, ভেরী মৃদঙ্গ প্রভৃতির আওয়াজ এবং ঘোড়া ও হাতির ডাকে রণস্থল মুখরিত হোলো। মহাবল ভীম ক্ষিপ্ত ষাঁড়ের মতো গর্জন করতে লাগলেন, তাতে অন্য সমস্ত আওয়াজ ক্ষীণ হয়ে গেল।

দুর্যোধন দুঃশাসন প্রভৃতি বারোজন ভাই ও ভূরিশ্রবা ভীষ্মকে ঘিরে রইলেন। দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্র, অভিমন্যু, নকুল, সহদেব ও ধৃষ্টদ্যুম্ন বাণ বর্ষণ করতে করতে দুর্যোধনাদির দিকে এগিয়ে গেলেন। তখন দুই পক্ষের রাজারা পরস্পরকে আক্রমণ করলেন। স্বয়ং ভীষ্ম যমদণ্ডতুল্য কার্মুক নিয়ে গাণ্ডীবধারী অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। সাত্যকি ও কৃতবর্মা, অভিমন্যু ও কোশলরাজ বৃহদ্বল, ভীম ও দুর্যোধন, নকুল ও দুঃশাসন, সহদেব ও দুর্যোধনের ভাই দুর্মুখ, যুধিষ্ঠির ও মদ্ররাজ শল্য, ধৃষ্টদ্যুম্ন ও দ্রোণ, বিরাটপুত্র শঙ্খ ও ভূরিশ্ৰবা, ধৃষ্টকেতু ও বাহ্লীক, ঘটোৎকচ ও অলম্বুষ রাক্ষস, শিখণ্ডী ও অশ্বত্থামা, বিরাট ও ভগদত্ত, কেকয়রাজ বৃহৎক্ষত্র ও কৃপাচার্য, দ্রুপদ ও সিন্ধুরাজ জয়দ্ৰথ, ভীমের পুত্র সুতসোম ও দুর্যোধনের ভাই বিকর্ণ, চেকিতান ও সুশৰ্মা, যুধিষ্ঠিরের পুত্র প্রতিবিন্ধ্য ও শকুনি, অর্জুন-সহদেবের পুত্র শ্রুতকর্মা-শ্রুতসেন ও কাম্বোজরাজ সুদক্ষিণ, অর্জুনপুত্র ইরাবান ও কলিঙ্গরাজ শ্রুতায়ু, কুন্তিভোজ ও বিন্দ-অনুবিন্দ, বিরাটপুত্র উত্তর ও দুর্যোধনের ভাই বীরবাহু, চেদিরাজ ধৃষ্টকেতু ও শকুনিপুত্ৰ উলূক — এঁদের পরস্পরের মধ্যে তুমুল দ্বন্দ্বযুদ্ধ হতে লাগল। কিছেক্ষণের মধ্যেই শৃঙ্খলা নষ্ট হোলো, সকলে উন্মত্তের মতো যুদ্ধ করতে লাগল। পিতা পুত্র ভাই মামা ভাগ্নে বন্ধু ইত্যাদি সম্পর্কের কথা ভুলে গিয়ে পাণ্ডবগণ কৌরবগণের সঙ্গে যুদ্ধে রত হোলো।

অভিমন্যুর তীরের আঘাতে ভীষ্মের স্বর্ণভূষিত রথের পতাকা ভূপতিত হোলে ভীষ্ম অভিমন্যুকে বাণবর্ষণ কোরে ঢেকে ফেললেন। তখন বিরাট ভীম সাত্যকি প্রভৃতি অভিমন্যুকে রক্ষা করতে এলেন, বিরাটপুত্র উত্তর একটি বিশাল হাতিতে চড়ে শল্যকে আক্রমণ করলে সেই হাতির পদাঘাতে শল্যের রথের চার ঘোড়া বিনষ্ট হোলো। তখন শল্য ভয়ানক শক্তি অস্ত্র নিক্ষেপ করলে তার আঘাতে উত্তর নিহত হয়ে পড়ে গেলো। উত্তরকে নিহত দেখে বিরাটের আর এক পুত্র শ্বেত শল্যকে আক্রমণ করলো। তখন শল্য কৃতবর্মার রথে উঠলেন এবং শল্যের পুত্র রুক্সরথ এবং বৃহদ্বল প্রভৃতি অপর ছ জন বীর শল্যকে ঘিরে রইলেন। শ্বেতের বাণের আঘাতে শত শত যোদ্ধা নিহত হচ্ছে দেখে ভীষ্ম সত্বর এলেন এবং ভল্লের আঘাতে শ্বেতের ঘোড়া ও সারথিকে বধ করলেন। রথ থেকে লাফিয়ে নেমে শ্বেত ভীষ্মের প্রতি শক্তি অস্ত্র নিক্ষেপ করলেন। ভীষ্মের বাণের আঘাতে শক্তি অস্ত্র নষ্ট হলে শ্বেত গদার প্রহারে ভীষ্মের রথ ঘোড়া ও সারথি বিনষ্ট করলেন। তখন ভীষ্ম শ্বেতের প্রতি এক মন্ত্রসিদ্ধ বাণ নিক্ষেপ করলেন। জ্বলন্ত বজ্রের মতো সেই বাণ শ্বেতের বর্ম ও হৃদয় ভেদ করে ভূমিতে প্রবেশ করলো। শ্বেতের মৃত্যুতে পাণ্ডবপক্ষীয় ক্ষত্রিয়গণ শোকমগ্ন হলেন, তাই দেখে দুঃশাসন নাচতে লাগলেন। তার পর সূর্যাস্ত হোলে দুই পক্ষের যুদ্ধবিরাম ঘোষিত হোলো।

______________

(ক্রমশ)