– মৌমিতাদি, একটু তাড়াতাড়ি হাঁট না প্লিজ। এরপর লাস্ট মেট্রো কিন্তু পাবেনা এস্প্ল্যানেড থেকে।
কর্পোরেশনের সামনে অটো থেকে নেমে তাড়াহুড়ো করে হাঁটছিলাম । একটা কাজে দেরি হয়ে গেল অনেকটা। ছিপছিপে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। গন্তব্য হাওড়া, চাইলে বাসেও যাওয়া যায়। কিন্তু মৌমিতাদি ভীড় বাসে উঠতে চাইছেনা, আমিও না, বিশেষত মেট্রো পেয়ে গেলে মাত্র পাঁচ-ছয় মিনিটে হাওড়া নামিয়ে দেবে।
মৌমিতাদি আমার গতিতে হাঁটতে পারবেনা। একে শাড়ি পরেছে, তার ওপর রাস্তা ভিজে ভিজে আছে। দোকানের আলো পিচরাস্তা আর ফুটপাথের ওপর দিয়ে পিছলে যাচ্ছে। আমরা হাঁকপাঁক করে হাঁটছিলাম, মৌমিতাদি ছাতা বন্ধ করে দিল গতি বাড়ানোর জন্য। দেখাদেখি আমিও।
– দ্যাখো ঋক, এই যে আমাকে দৌড় করাচ্ছ, তাতে কি তোমার কোনও লাভ হচ্ছে? আমার বয়স হচ্ছে, দুম করে পড়ে গেলে আমাকে তুলে বাড়িতে দিয়ে আসতে হবে কিন্তু তোমাকেই।
মৌমিতাদি যাই বলুক, আমি ভুলছিনা। সাড়ে ন'টার মেট্রো চলে গেলে হাওড়াগামী শেষ মেট্রো পৌনে দশটায়। কে দাঁড়িয়ে থাকবে স্টেশনে পনের মিনিট! যদিও, মৌমিতাদির সঙ্গে পনের মিনিট কাটাতে আমার ভালোই লাগবে।
বয়সে বেশ খানিকটা বড় হলেও মিষ্টি মুখ আর ছোটখাটো চেহারায় বাঁধুনি থাকায় মৌমিতাদির আসল বয়সটা বোঝা যায় না। অফিসে মৌমিতাদির সঙ্গ অনেকেই চায়। ও নিজে থেকে যে কয়েকজনের কাছে আসে বা পাশে বসে, সেই কয়েকজন সৌভাগ্যবানের মধ্যে আমিও আছি।
মৌমিতাদি দেখতে ভাল, তবে অসাধারণ নয়। আবেদন আছে শরীরে, তবে তার সব আবেদনটাই শরীরে নয়। মেয়েদের তাকানো , হাঁটাচলা, আচরণ, গলার স্বর, এমনকী নাম ধরে ডাকাতেও মন টেনে নেয়। এইরকমই হল মৌমিতাদি।
তার সঙ্গে বৃষ্টিভেজা সন্ধে পেরোনো রাস্তায় কিছু বেশি সময় কাটালে ভালোই হয়, কিন্তু হাওড়া থেকে ট্রেনে চেপে আমার বাড়ির স্টেশনে নামতে নামতে রাত এগারোটা হয়ে গেলে আমাদের ওখানে আবার টোটো পেতে সমস্যা হয়। তাই একটু তাড়াহুড়ো করছিলাম। মৌমিতাদির অবশ্য এসব ভাবনা নেই। থাকে কোন্নগর, যখনই নামুক, গাড়ি নিয়ে বর এসে যাবে স্টেশনে।
– তুমি একদম বেরসিক টাইপের ছেলে ঋক, মৌমিতাদি মাঝেমাঝেই পিছিয়ে পড়ছিল, তার মধ্যেই বলছিল, – বিয়েটিয়ে করোনি, এখনও ঝাড়া হাতপা, কোথায় বাইরে এই ওয়েদারটা এনজয় করবে তা নয়, নিজে নিজে গটগট করে এগিয়ে যাচ্ছ। একটা মহিলা যে পিছিয়ে পড়ছে, তার জন্য একটু অপেক্ষা করি, ওসবের বালাই নেই।
আমি একটু গতি কমিয়ে দিলাম।
বর্ষার আবহাওয়া, এই অবস্থায় একজন মহিলার ডাক প্রায় নিশির ডাকের মত। মৌমিতাদির কথাবার্তাই এইরকম। তবে এই নিশির ডাক ঠিক কতটুকু পর্যন্ত সেটা বুঝিনা আমি। একটু হাঁটা, দুটো গল্পের বই শেয়ার করা বা টিফিন ভাগ করে খাওয়া তো ঠিক আছে, ও কখনও আমাকে আচমকা ছুঁয়ে দিলেও ঠিকই আছে, কিন্তু আমি কতটা কাছে এসে ওকে ছুঁয়ে যেতে পারি, সেটা আমি পরখ করে দেখিনি।
অফিসে চালু কথা হল, মৌমিতা বড্ড ঢলানি।
হবে হয়তো। তবে আমার বিশ্বাস আমরা সবাই আসলে হিপোক্রিট। চাইছি কোনও রঙ্গবতীর সঙ্গে সময়সুযোগমত রংতামাশা করতে, কিন্তু তাকে হতে হবে সতী। ছেনালি করবে, তবে তা শুধু আমার সঙ্গেই। ভার্জিন বৌদি পেলে যেন আরও ভাল হয়।
অথবা সোনার পাথরবাটি!
মৌমিতাদির সঙ্গে গতি মিলিয়েই হেঁটে যাই। এইটুকু তো পথ। মেট্রো স্টেশন এসেই গেল প্রায়। ইলিয়ট রোড থেকে সোজা এসে বড় রাস্তাটায় পড়ে ডানদিকে মুড়ে একটুখানি গেলেই এস্প্ল্যানেড মেট্রো। ওখানে পৌঁছে দাঁড়িয়ে পড়ল মৌমিতাদি।
– বয়স তো হচ্ছে আমার। তোমার মত দৌড়বো নাকি আমি! দাঁড়াও বাপু।
আমি মোবাইলটা বার করে দেখলাম। এখনো জোরে হাঁটলে সাড়ে ন'টার মেট্রোটা হয়ে যাবে।
বললাম, ট্রেনটা চলে যাবে যে।
মৌমিতাদি বলল, তুমি গেলে যাও। আমি শাড়ি পরে দৌড়তে পারব না এতটা।
কথাটা ভুল না। অনেকটা হাঁটা। তারপর পরপর দু'টো এসকালেটর। লিফট সবসময় সামনে পাওয়া যায় না। মৌমিতাদি ছুটে পারবেনা এখন।
আমরা হাঁটতে লাগলাম মেট্রো স্টেশনের ভিতর দিয়ে গ্রীন লাইনের দিকে। ওটাই গঙ্গার নীচ দিয়ে আসা হাওড়া লাইনের নাম।
উল্টোদিক থেকে গাদা লোকজন বেরিয়ে আসছে। বাসে ট্রেনে ওঠানামার আগে পরে কিছুক্ষণ লোকজন খুব চেগে থাকে। সবার আগে উঠবে, সবার আগে নামবে, এসকালেটরে সবার আগে উঠবে।
মৌমিতাদির মনে হয় আমার প্রতি দয়া হল ।
হঠাৎ বলল, দু'মিনিট আছে মনে হয়। ট্রাই নেব?
আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি।
দৌড় দিলাম। মৌমিতাদিও দেখি বুকের সামনে ব্যাগটা জড়িয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করছে। অনেকটা এসে বড় এসকালেটরের সামনে থেকে পিছন ফিরে দেখি ও বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়ছে, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে হাঁফাচ্ছে।
আমি হাল ছেড়ে দিলাম।
এভাবে একটা মহিলাকে ছোটানো ঠিক নয়। সত্যিই হাঁফিয়ে যাবে ও। আমি মৌমিতাদির দিকে এগিয়ে গেলাম একটু।
দম টেনে নিয়ে বলল, কী জোরে হাঁট তুমি। তোমার সঙ্গে পারলাম না।
আমি বললাম, থাক। তুমি এস আস্তে আস্তে। পরেরটায় যাব।
মৌমিতাদি বলল, একটুর জন্য তোমার দেরি করিয়ে ফেললাম ঋক।
আমি বললাম, পনের মিনিটেরই তো ব্যাপার। তুমি আমার সঙ্গে এস।
মৌমিতাদির বয়স পঞ্চাশ ছুঁয়েছে। দেখলে বোঝা যায়না। চল্লিশ-বিয়াল্লিশ মনে হয়। তবে দৌড়ে ট্রেন-বাস ধরা অভ্যেস না থাকলে ক্লান্ত হয়ে পড়া স্বভাবিক।
এসকালেটরে দাঁড়িয়ে বলল, থ্যাংকস ঋক, দিদির কথা ভেবে দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্যে।
বললাম, আমি তো তোমার সঙ্গেই ছিলাম। তুমিই তো শেষমুহূর্তে নড়েচড়ে উঠলে।
– হ্যাঁ। তো কী করব? তোমাকে দেখে মায়া হল, বাচ্চা ছেলের মত বাড়ি যাব, বাড়ি যাব করছিলে যে একটু আগে।
– আচ্ছা বাবা, ঘাট হয়েছে। এখন আমি তোমার সঙ্গেই আছি মৌমিতাদি।
আমি আর মৌমিতাদি এসকালেটরে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইলাম। যান্ত্রিক সিঁড়ি নেমে চলল নিজের মত।
– এবার কোন সিঁড়িটা দিয়ে নামব আমরা?
– এই তো এদিকে, আগে আসোনি এই লাইনে?
– একদিন এসেছিলাম, লিফটে নেমেছিলাম তো প্ল্যাটফর্মে।
পাশাপাশি দু'টো এসকালেটর, একটা উঠছে, একটা নামছে। মৌমিতাদি খেয়াল করেনি। ওঠার এসকালেটরটা ফাঁকা দেখে কথা বলতে বলতে সেইদিকেই নিশ্চিন্তে পা বাড়িয়ে দিয়েছিল প্রায়।
আমি ওর হাতটা ধরে টেনে নিলাম , নাহলে অসাবধানতায় উল্টোদিকে পড়ে যেত মৌমিতাদি।
ওকে সরিয়ে এনে পাশের চলমান সিঁড়িতে উঠলাম।
– কী যে করো তুমি মৌমিতাদি!
– আরে একদম খেয়াল করিনি। এক্ষুনি পড়ে যেতাম , এত বড় মেয়ে পড়ে গেলে লোকে হাসত তো। থ্যাঙ্ক ইউ গো।
আমরা নামতে নামতে দেখলাম সাড়ে ন'টার ট্রেনটার শেষ কামরাটা বেরিয়ে গেল চোখের সামনে দিয়ে। অর্থাৎ আর একটু পা চালালে ট্রেনটা হত।
– ইস ঋক। চলে গেল।
– ও যাক। আবার আসবে।
– হাতটা ছাড়বে না?
ওর হাতের কনুইয়ের ওপরটা ধরে তখন সরিয়ে এনেছিলাম। মনে হয় বেশ চেপেই ধরা হয়েছিল
তারপর কয়েক সেকেন্ডই হয়েছে হয়তো। আমার খেয়াল হয়নি। মৌমিতাদির কথায় চমকে গিয়ে ছেড়ে দিলাম হাতটা।
আমরা প্ল্যাটফর্মে এসে একটু এগিয়ে গেলাম। সবে আগের ট্রেন গেল। এখন কিছুক্ষণ স্টেশন ফাঁকা থাকবে মোটামুটি।
মৌমিতাদি বলল, কোন দিকটা দাঁড়ালে একটু ফাঁকা হবে বলোতো।
বললাম, চলো পিছনের দিকে চলে যাই। লোকজন সব জায়গাতেই থাকবে তবে একটু হালকা এদিকেই হতে পারে।
আমরা আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলাম।
মৌমিতাদি বলল, হাত ছাড়ার কথা বলতে তুমি ওরকম চমকে গেলে কেন?
– না না। চমকাইনি। আসলে হাতটা যে ধরে আছি খেয়াল ছিলনা। তুমি কী ভাবলে কী জানি।
– ভাবব কেন? তুমি তো একটা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আমার হাতটা ধরেছিলে মাত্র। তাইনা?
– হ্যাঁ।
– দরকারে ধরবে। লজ্জার কিছু নেই। তবে একটা ফাইন তোমায় দিতে হবে।
– কেন?
– খুব জোরসে আমার হাতটা চেপে ধরেছিলে কিন্তু।
– কখন?
– নিজে তো খুব তাড়ায় ছিলে। আমি নাহয় একটা আধবুড়ি , নাহয় ভুল দিকে চলেই যাচ্ছিলাম, তাই বলে ওরকম চাপ দেয় কেউ একজন মহিলাকে?
– তুমি বলতেই যে ছেড়ে দিলাম!
– তাতে আর কী হবে? আমি না হয়ে যদি একটা তোমার বয়সী মেয়ে হত, তুমি মোটেই এরকম জোরে ধরতে পারতে না ।
– আরে দূর। তুমি আধবুড়ি হবে কেন? তুমি তো..
আমি মুখ ফস্কে যাওয়ার আগেই লাগাম টেনে নিলাম।
মৌমিতাদির মুখে দুষ্টু হাসি খেলে গেল।
– আমি কী?
– না মানে বুড়ি তো একেবারেই নও।
– তাহলে ?
– কী তাহলে?
– থাক থাক ঋক। রাত হয়ে গেছে। একা আছি বলে ভাবলাম তুমি একটু সঙ্গে থাকবে। যা তাড়া দেখাচ্ছিলে! আমাকে দেখে পালাতে ইচ্ছে করে বুঝি? মিটিমিটি হাসছিল মৌমিতাদি।
আমরা অনেকটা হেঁটে একটা প্রান্তে চলে এসেছিলাম।
আমি বলতে চাইছিলাম যে , পালানোর প্রশ্নই নেই। তোমার সঙ্গ আমার ভাল লাগে মৌমিতাদি। তোমার গায়ের ঘামের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি মিশে একটা অদ্ভুত ভেজা ভেজা ভাপ জমে আছে তোমার পিঠে। তোমার ক্লাচারে আটকানো চুলের গোছার নীচে ঘাড়ের যেটুকু দেখা যায় আর ফর্সা মখমলের মত পিঠের যতটা ব্লাউজের ওপরে জেগে থাকে সেখানে বারবার চোখ যায় আর ইচ্ছে করে সেই ঘাম-বৃষ্টিতে ভেজা পিঠের আর্দ্রতা মুছিয়ে দিতে নিজের হাতে।
মৌমিতাদির দিকে তাকালাম একবার। আমার দিকে চেয়ে আছে একদৃষ্টে।
বললাম, তোমাকে দেখে পালাতে ইচ্ছে করতে পারে কখনও? তুমি গর্জাস।
মৌমিতাদি চোখ বড় বড় করে বলল, বাবাঃ একেবারে এত বড় কমপ্লিমেন্ট?
– সত্যি বললাম কিন্তু। সারা অফিসের কতজনের ক্রাশ তুমি!
– ক্রাশ না হাতি! একটু মহিলা দেখলেই সবার.. মৌমিতাদি আর কিছু বলল না, ইশারায় বুঝিয়ে দিল।
আমি বললাম, তাতে ওদের কাউকেই দোষ দেওয়া যায়না। আজকে তোমাকে যা লাগছে...
আজ কেমন যেন কথার পিঠে কথায় বাজে বকতে ইচ্ছে করছিল। আর কিছুক্ষণ সময় পাব । বলে নিই কথা।
মৌমিতাদিও কথার মুডেই আছে।
– আমাকে ভাল লাগছে?
– হুম।
– তোমার গার্লফ্রেন্ড নেই, তাই না ?
– নেই ।
– ঐজন্যে বলছ। নাহলে তার ভয়ে বলতে পারতে না।
– তা জানি না। মেয়েরা কী পছন্দ করে তা তো তুমি জানবে মৌমিতাদি।
– তা ঠিক। তুমি তো কিছুই জান না।
– কিছুই জানিনা না, মানে?
মৌমিতাদি আদুরে গলায় বলল, সত্যি কিছু জানলে অটো থেকে নেমে অতটা হেঁটে আসছিলাম , ভিজে রাস্তায় একটু আমার হাতটা ধরতে, ছাতাটা ধরতে আমার জন্যে। এই শেষবেলায় সাঁড়াশির মত ধরতে না।
একটু থেমে বলল, তারপরেও একবার ধরে ছেড়ে দিলে। তুমি গার্লফ্রেন্ড পাবে কী'করে!
আমি যেন অনেক দূর থেকে বুকে গুমগুম করে মেঘ ডাকার শব্দ পেলাম।
– তুমি যে ছাড়তে বললে।
মৌমিতাদি অধৈর্য্য গলায় বলল, ছাড়তে বলিনি হাঁদারাম। হাতটা ছাড়ানোর হলে তোমায় জিগ্যেস করতাম না। নিজেই সরিয়ে নিতাম। কিছু বোঝো না।
আমি ওর ডান হাতটা টেনে নিলাম। ফর্সা , একটু নরম নরম ফোলা ফোলা আঙুলগুলো। সোনার আংটি বেশ টাইট হয়ে বসে আছে অনামিকায়। গোলাপি নেলপালিশ ফর্সা হাতের জেল্লা বাড়িয়েছে আরও। আমি ওর হাতে সত্যিই কি চাপ দিয়ে ধরেছিলাম?
যাহ হতে পারে নাকি? সুন্দরী মহিলার হাত যে!
মৌমিতাদি হাত টেনে নিল।
– থাক, এখন লোকজন এসে যাবে। এতটা বলার পর বাবুর এখন ইচ্ছে হয়েছে।
লোকজন একটু একটু করে এসেই যাচ্ছে।
তবু আমি ছাড়িয়ে নেওয়া হাতটা আবার টেনে নিলাম।
– কী নরম হাত তোমার মৌমিতাদি।
মৌমিতাদি আমার গায়ের কাছে ঘেঁষে এল।
– নরম তোমাদের ভাল লাগে ঋক। আমাদের জ্বালা আমাদের নরম শরীর নিয়েই।
– কীরকম?
– আমার চেহারা তো দেখছ। কিছু খাইনা, তাও ফোলার দিকে। আমার স্কিন এত নরম যে একটু চাপ পরলেই লাল হয়ে যায়।
এই যে হাতে এত চাপ দিয়ে ধরে রেখেছ, আমার লাগেনা?
– ছাড়তে চাই না আসলে। আর তো একটুখানি সময় পাব বলো। ওই দেখো ট্রেনের আলো।
কথা বলতে বলতেই কাঁচ দিয়ে সুরক্ষিত লাইনে হলুদ আলো ছড়িয়ে মেট্রো এসে গেল।
লোকজন কোথায় ছিল এত, কে জানে। এই শেষ প্রান্তেও চারদিক থেকে এসে দাঁড়িয়ে গেল।
আমরা ঠেলাঠেলির মধ্যে গেলাম না। ধীরেসুস্থে উঠলাম।
দরজার একধারে সেঁটে যেতে পারল মৌমিতাদি। ওর সামনে মুখোমুখি দাঁড়ালাম, ওকে ঘিরে বলা যায়। আমার সুন্দরী মৌমিতাদির নরম গায়ে আজ অন্তত কেউ যেন ধাক্কা দিতে না পারে।
আমার থেকে ওর উচ্চতা কিছুটা কম।
নারী যখন তার বাঙময় চোখদু'টো নিয়ে পুরুষের মুখের দিকে চেয়ে থাকে একটু ঘাড় উঁচু করে, তখন পুরুষের মধ্যে একটা আশ্চর্য্য পরিতৃপ্তি আসে, নারীর মুখশ্রীটি সম্পূর্ণভাবে দেখার, তার চোখের ভাষা বোঝার।
আমার মনে হয় উচ্চতায় একটু বেশি হওয়ায় নারীকে নিজের সীমার মধ্যে দেখতে পাওয়াটাও পুরুষের ভিতরের কোনও সুপ্ত আকাঙ্ক্ষার সাময়িক উপশম ঘটায়।
আমি মৌমিতাদির দিকে চেয়ে রইলাম।
ও মেট্রোর বন্ধ দরজার ধারে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগল। একটামাত্র মিনিট, মহাকরণ স্টেশন এসে গেল।
এখানে আমাদের দিকেই প্লাটফর্ম পড়েছে।
মহাকরণ থেকে ভালোই লোকজন উঠছে আজ। আমার ওপর চাপ এসে পড়ল। আমি স্বভাবতই আচমকা খানিকটা চেপে এলাম মৌমিতাদির ওপর। এইজন্যই ওকে ঘিরে দাঁড়িয়েছিলাম, ওই যে, আজ অন্তত ওকে কেউ ধাক্কা দিতে পারবে না।
ভীড়ের চাপে আমি ওর দিকে ঝুঁকে পড়ায় ও সামান্য একটু নড়েচড়ে দাঁড়াল, আমার শরীরে ওর শরীর স্পর্শ হয়ে গেল পোশাকের ওপর দিয়ে। নরম একটা অনুভুতি মুহূর্তের জন্য। ভিতরে ভিতরে কেঁপে উঠলাম আমি।
মেট্রোর কোনও একটা দরজা ঠিকমত বন্ধ হচ্ছেনা, বারবার শব্দ করে খুলে যাচ্ছে।
মৌমিতাদি বলল, কী ভীড় দ্যাখো।
আমি জিগ্যেস করলাম, অসুবিধে হচ্ছে ?
বলল না কিছু। চোখে দুষ্টু একটা ইশারা করে নড়ে উঠল একটু।
ট্রেনটা কোনও কারণে ছাড়ছেনা। লোকজন একটু বিরক্ত।
তার মধ্যেই এবার মৌমিতাদি ছুঁয়ে গেল আমাকে। একটা আভাসমাত্র, স্পর্শ বলা যায়না। তাও আমি অস্থির হয়ে পড়ছি।
আমি সামান্য একজন অনভিজ্ঞ পুরুষ জেনেই ও আমাকে লোভ দেখাচ্ছে বুঝি।
আমি অল্প করে আমার শরীরের ভার ছাড়লাম মৌমিতাদির ওপর। মৌমিতাদি নিজেকে সামান্য সামনে এগিয়ে আনল। আমি মৌমিতাদির শাড়ির মধ্য দিয়ে ফুলের কোমলতা অনুভব করছিলাম, যা স্পষ্ট নয়, কিন্তু বড় আকাঙ্ক্ষার। একটা গন্ধ পাচ্ছিলাম ওর গা থেকে, আমাকে কাছে টানছিল সেই গন্ধ; না, গন্ধ না , মৌমিতাদির গায়ের ও জিনিসকে বলে সুরভি।
ট্রেনটা ছেড়ে দিল। পরের স্টেশন হাওড়া।
মৌমিতাদি আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে। মেট্রোতে আর কেউ বুঝতে পারল কিনা কোনও হুঁশ নেই তার, দাঁতে করে নিজের ঠোঁটটা কামড়ে ধরল একবার। আমার ইচ্ছে করছিল ওকে আরও আরও পিষ্ট করি আমার বুক, পেট, কোমর দিয়ে। কিন্তু এটা মেট্রো। কেবল আমার প্যান্টের ভিতরে আমার উদগ্র বাসনা বিদ্রোহ ঘোষণা করতে চাইছে।
ট্রেনের কামরায় যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে ভেসে উঠল সব্যসাচী চক্রবর্তীর অতিপরিচিত কন্ঠ। ট্রেন প্রবেশ করতে চলেছে গঙ্গার তলদেশে।
আমার আর মৌমিতাদির শরীর এখন একদম মিশে গেছে, ফাঁকা জায়গা নেই কোনও। তার শাড়ি, ব্লাউজ আর আমার জামা প্যান্ট সম্ভবত তাদের আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে কিনা সেই নিয়ে গোপন আলাপচারিতায় ব্যস্ত।
মৌমিতাদি এক হাতে আমার জামা খামচে ধরে আছে, যেন ছেড়ে দিলে পড়ে যাবে। ওর আর একটা হাত বুলিয়ে চলেছে আমার কোমরের থেকে আরো নীচের দিকে । আশ্চর্য্য হাত এই পঞ্চাশ বসন্ত কাটিয়ে ফেলতে চলা মহিলার, আমাকে সবার অলক্ষ্যে অসহ্য উত্তেজনায় দ্রবীভূত করছে।
এ কী অবস্থায় ফেলল আমায় মৌমিতাদি, এইটুকুমাত্র ম্যাজিক দিয়ে যাবে, আমি অসহায় হয়ে ওর উষ্ণতার আভাসে জারিত হব, কিন্তু সেতো মাত্র কিছুক্ষণ ! ট্রেন হাওড়া ঢুকে গেছে।
মৌমিতাদিকে সামনে রেখে আমি ওর পিছুপিছু নেমে গেলাম।
সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেয় এসকালেটরে ওঠার জন্য। এ আমার রোজকার চেনা দৃশ্য। তবে আজ দিনটা একটু আলাদা । দেরি যখন হয়েছেই, ভালভাবেই হোক।
আমি মৌমিতাদির ঠিক পাশে এসে ওর আঙুল টেনে নিলাম নিজের আঙুল দিয়ে।
ও আড়চোখে তাকিয়ে বলল, আমরা উঠবনা ওপরে?
বললাম, এত ভীড়ে না । একটু হালকা হোক।
দুজনে একটু ফাঁকায় সরে এলাম।
– ট্রেনে তোমার দাঁড়াতে অসুবিধে হচ্ছিল, তাই না মৌমিতাদি?
– হুম তা একটু হচ্ছিল তো। তুমি যা বদমাইশ ছেলে! চান্স পে ডান্স খালি!
আমার মুখ দিয়ে বাক্য সরছিল না! পুরো চার-পাঁচ মিনিট নিজের থেকে উপভোগ করেছে আমাকে, আমাকে উত্তেজিত করেছে,তারপর এইসব বলছে!
আমি চুপচাপ ওর একদম পাশে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বাঁহাত চালিয়ে দিলাম ওর পিছনের দিক দিয়ে। প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা, আমরা সবার শেষেই যাব বলে দাঁড়িয়ে।
শাড়ি পরলে পিঠ-কোমরের অনেকটা অংশ উন্মুক্ত থাকে, আমার আঙুল চলে গেল সেখানে গোপনে আল্পনা আঁকতে।
– কী হচ্ছে ঋক!
– চলো আমরা এসকালেটরে উঠি এবার।
এসকালেটরে মৌমিতাদির ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে ওর মাংসল কোমরে ছোট্ট ছোট্ট চিমটি আর শিরদাঁড়ায় সুড়সুড়ি দিচ্ছিলাম।
মৌমিতাদি খিলখিল করে হেসে উঠল, – অ্যাই ঋক, ওপরে লোক আছে কিন্তু।
এরপর আরও দুই দফা এসকালেটরে পা রাখতে হয় একদম মাটির ওপরে আসতে হলে।
এখানে আর বদমাইশি চলেনা। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে মৌমিতাদির গায়ের গন্ধের সঙ্গে মিশে ফিকে হয়ে যাওয়া পারফিউমের গন্ধে মনটাকে ভিজিয়ে নিতে নিতে জিগ্যেস করলাম, তুমি এত সুন্দর কেন মৌমিতাদি?
মৌমিতাদি তার স্বভাবসিদ্ধ কৌতুকময় চোখদুটো নাচিয়ে বলল, আমি সুন্দর না হলে তোমরা দেখতে কাকে?
– আমি কখনো ভাবিনি তুমি আমাকে..
– কী ?
– তোমাকে ছুঁয়ে দেখতে পারব কখনো ভাবিনি।
– ইচ্ছে ছিল বুঝি?
– সেভাবে ভেবে দেখিনি। তবে তোমার কাছাকাছি আসতে ভাল লাগত।
– বেশ। আজ তোমার সঙ্গে একটু দুষ্টুমি করার ইচ্ছে হল। তবে তুমিও কম নও । সুযোগ ছাড়োনি এতটুকু।
– কী করব বলো। রোজ কোথায় পাই এরকম সুন্দরীকে অফিসের বাইরে আলাদা করে?
– ঠিক আছে। ঠিক আছে। সব পাখি মাছ খায়। দোষ শুধু হয় মৌমিতাদেরই।
হাসতে লাগল মৌমিতাদি।
আপ বর্ধমান লোকাল ধরে নিলাম আমরা।
মৌমিতাদির বর ফোন করেছিল । ওর জন্য স্টেশনে গাড়ি নিয়ে এসে অপেক্ষা করবে।
যথাসময়ে মৌমিতাদি নেমে গেল আমাকে টাটা করে।
আমার বাড়ি ঢুকতে ঢুকতে সাড়ে এগারোটা বেজে গিয়েছিল প্রায়।
ক্লান্ত ছিলাম। শুয়ে পড়েছিলাম। নেট অন করে ভাবলাম শেয়ার বাজারের খবর দেখব।
টুং করে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ঢুকল, – 'তোমার স্পর্শ কিন্তু ভীষণ অদ্ভুত ঋক। পুরুষালি, কিন্তু কঠিন নয়। কোমল, একটা মায়া আছে মনে হয়। তুমি কেমন জান? অনেকটা ভিভিএস লক্ষ্মণের মত। গুড নাইট।'