Story of Mahabharat Part 84 in Bengali Spiritual Stories by Ashoke Ghosh books and stories PDF | মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 84

Featured Books
Categories
Share

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 84

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-৮৪

মদ্ররাজ শল্যের সঙ্গে দুর্যোধন ও যুধিষ্ঠিরের সাক্ষাৎকার এবং নহুষের কাহিনি

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

মদ্ররাজ শল্যের সঙ্গে দুর্যোধন ও যুধিষ্ঠিরের সাক্ষাৎকার এবং নহুষের কাহিনি

কৌরবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সমর্থন ও সসৈন্য যোগদানের জন্য যুধিষ্ঠির আমন্ত্রণ করায় মদ্ররাজ শল্য তার বৃহৎ সৈন্যদল ও মহাবীর পুত্রদেরকে নিয়ে পাণ্ডবদের কাছে যাচ্ছিলেন। এই সংবাদ শুনে দুর্যোধন পথের মাঝে শল্যের সংবর্ধনার আয়োজন করলেন। তার আদেশে নানা স্থানে বিচিত্র সভামণ্ডপ, নানা রকম খেলাধূলা এবং খাদ্যপানীয়ের আয়োজন করা হোলো। শল্য উপস্থিত হলে দুর্যোধনের মন্ত্রীগণ তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানালেন। শল্য বললেন, যুধিষ্ঠিরের কোন শিল্পীরা এই সমস্ত সভা নির্মাণ করেছে? তাদের ডেকে আন, যুধিষ্ঠিরের সম্মতি নিয়ে আমি তাদের পুরস্কার দিতে চাই। দুর্যোধন আড়াল থেকে শল্যের কাছে এলেন। দুর্যোধনই সমস্ত আয়োজন করেছেন জেনে শল্য খুশি হয়ে তাকে আলিঙ্গন করে বললেন, তোমার কি চাই বলো, আমি পূর্ণ করবো।

দুর্যোধন বললেন, আপনি আমার সমস্ত সেনার নেতৃত্ব করুন। শল্য বললেন, তাই হবে। আর কি চাও? দুর্যোধন বললেন, আমি কৃতার্থ হয়েছি, আর কিছু চাই না। শল্য বললেন, দুর্যোধন, তুমি এখন নিজ দেশে ফিরে যাও, আমি যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। দুর্যোধন বললেন, মহারাজ, আপনি দেখা করে শীঘ্র আমাদের কাছে আসবেন, আমরা আপনারই অধীন, যে কথা দিয়েছেন তা মনে রাখবেন। দুর্যোধনকে আশ্বাস দিয়ে শল্য যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে দেখা করার জন্য যাত্রা করলেন।

পাণ্ডবদের শিবিরে এসে শল্য যুধিষ্ঠিরাদিকে আলিঙ্গন ও কুশল প্রশ্ন করলেন। কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর শল্য দুর্যোধনকে যে কথা দিয়েছেন তা জানালেন। যুধিষ্ঠির বললেন, আপনি দুর্যোধনের প্রতি তুষ্ট হয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা ভালই। এখন আমার একটি উপকার করুন, যদি অনুচিত মনে করেন তবুও আমাদের মঙ্গলের জন্য তা আপনাকে করতে হবে। আপনি যুদ্ধে কৃষ্ণের সমান, কর্ণ আর অর্জুনের যখন দ্বৈরথ যুদ্ধ হবে তখন আপনি নিশ্চয় কর্ণের সারথি হবেন। আপনি অর্জুনকে রক্ষা করবেন এবং যদি আমাদের উপকার করতে চান তবে কর্ণের তেজ নষ্ট করবেন। আপনি আমাদের মামা, তাই অনুচিত হলেও এই কাজ আপনি করবেন।

শল্য বললেন, আমি নিশ্চয়ই দুরাত্মা কর্ণের সারথি হবো। সে আমাকে কৃষ্ণতুল্য মনে করে, যুদ্ধকালে আমি তাকে এমন প্রতিকূল ও অহিতকর বাক্য বলব যে তার অহংকার ও তেজ নষ্ট হবে এবং অর্জুন তাকে অনায়াসে বধ করতে পারবেন। বৎস, তুমি যা বলেছ তা আমি করবো এবং তোমার কল্যাণের জন্য আরও যা পারবো তা করবো। যুধিষ্ঠির, তুমি ও দ্রৌপদী পাশা খেলার সভায় যে দুঃখ পেয়েছ,  কর্ণের কাছে যে কটু কথা শুনেছ, জয়দ্রথ, জটাসুর ও কীচকের কাছে দ্রৌপদী যে লাঞ্ছনা পেয়েছে, সে সমস্তের ফল ওদেরকে পেতে হবে। মহাত্মা ও দেবতারাও দুঃখভোগ করেন, কারণ বিধাতার বিধান প্রবল। দেবরাজ ইন্দ্রও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দুঃখভোগ করেছিলেন।

ইন্দ্র ও তার স্ত্রী কি প্রকারে দুঃখভোগ করেছিলেন যুধিষ্ঠির জানতে চাইলে, শল্য এই কাহিনি বললেন - ত্বষ্টা নামে এক প্রজাপতি ছিলেন, তিনি ইন্দ্রের প্রতি বিদ্বেষের কারণে ত্রিশিরা নামক এক পুত্রের জন্ম দিলেন। ত্রিশিরার তিন মুখ সূর্য, চন্দ্র ও অগ্নির ন্যায়। তিনি এক মুখে বেদ পাঠ, আর এক মুখে সুরাপান এবং তৃতীয় মুখে সমস্ত দিক নিরীক্ষণ করতেন। ইন্দ্ৰত্বলাভের জন্য ত্রিশিরা কঠোর তপস্যায় রত হলেন। তাঁর তপস্যা ভঙ্গের জন্য ইন্দ্র বহু অপ্সরা পাঠালেন, কিন্তু ত্রিশিরা বিচলিত হলেন না, তখন তাঁকে মারবার জন্য ইন্দ্র ভয়ঙ্কর অস্ত্র নিক্ষেপ করলেন। ত্রিশিরা নিহত হলেন, কিন্তু তার মাথা জীবিত রইল। ইন্দ্র ভয় পেয়ে একজন ছুতোরকে বললেন, তুমি কুঠার দিয়ে এর মাথা টুকরো করো। ছুতোর বললো, এর কাঁধ অতি বিশাল, আমার কুঠারে কাটা যাবে না, এমন অন্যায় কাজও আমি করতে পারবো না। আপনি কে? এই ঋষিপুত্রকে হত্যা কোরে আপনার ব্রহ্মহত্যার ভয় হচ্ছে না? ইন্দ্র বললেন, আমি দেবরাজ, এই মহাবল পুরুষ আমার শত্রু সেজন্য একে বধ করেছি, পরে আমি প্রায়শ্চিত্ত করবো। ছুতোর, তুমি শীঘ্র এর শিরচ্ছেদ করো, আমি তোমার প্রতি অনুগ্রহ করবো। লোকে যখন যজ্ঞ করবে তখন নিহত পশুর মুণ্ড তোমাকে দেবো। ছুতোর সম্মত হয়ে ত্রিশিরার তিনটি মাথা কেটে ফেললো। প্রথম মাথার থেকে চাতক পাখীর দল, দ্বিতীয় মুখ থেকে চড়ুই ও বাজ পাখী, এবং তৃতীয় মুখ থেকে তিতির পাখীর দল বেরিয়ে এলো। ইন্দ্র খুশি হয়ে চলে গেলেন।

পুত্রের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ত্বষ্টা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন এবং ইন্দ্রের বিনাশের জন্য আগুনে আহুতি দিয়ে বৃত্র নামক অসুরকে সৃষ্টি করলেন। ত্বষ্টার আদেশে বৃত্র স্বর্গে গিয়ে ইন্দ্রকে গিলে ফেললেন। দেবতারা উদ্বিগ্ন হয়ে বৃত্র অসুরকে হাই তুলতে বাধ্য করলে তার প্রভাবে বৃত্ৰ মুখ খুললে ইন্দ্র তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলেন। তারপর ইন্দ্র বৃত্রের সঙ্গে বহুকাল যুদ্ধ করলেন, কিন্তু তাকে দমন করতে না পেরে বিষ্ণুর শরণাপন্ন হলেন। বিষ্ণু বললেন, বৃত্রকে বধ করার জন্য নতুন এবং অব্যর্থ কোনো শক্তিশালী অস্ত্র তৈরী করতে হবে। আর, বিশ্বকর্মা সেই অস্ত্র তৈরী করবে মহামুনি দধিচীর অস্থি দিয়ে। এখন, দধিচী মুনি যদি তাঁর অস্থি দান করতে রাজি হন তবেই এই অস্ত্র তৈরী করা সম্ভব হবে।

বিষ্ণুর কথায় সমস্ত ঋষিরা এবং দেবরাজ ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবতারা দধিচীর কাছে গিয়ে তাঁর অস্থি দান করার অনুরোধ করলে, দধিচী সানন্দে রাজি হয়ে প্রাণত্যাগ করলে, তাঁর শরীর থেকে বিশ্বকর্মা অস্থি সংগ্রহ কোরে বজ্র নামক এক ভয়ঙ্কর অস্ত্র তৈরী করলেন। দেবরাজ ইন্দ্র সেই ভয়ঙ্কর বজ্র বৃত্রের উপরে নিক্ষেপ করলে বৃত্রের তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হোলো। আগে ত্রিশিরাকে বধ করে ইন্দ্র ব্রহ্মহত্যার পাপ করেছিলেন, সেই দুস্কর্মের কারণে ইন্দ্র প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য জলের মধ্যে লুকিয়ে বাস করতে লাগলেন। ইন্দ্রের অনুপস্থিতিতে পৃথিবীতে বিভিন্ন দুর্যোগ, অনাবৃষ্টি ও অরাজকতার ফলে সকল প্রাণী বিপর্যস্ত হোলো। দেবতা ও মহর্ষিরা চিন্তিত হয়ে ভাবতে লাগলেন, কে স্বর্গের রাজা হবেন। কিন্তু কোনও দেবতা দেবরাজের পদ নিতে চাইলেন না।

অবশেষে দেবগণ ও মহর্ষিগণ তেজস্বী, যশস্বী, ধার্মিক রাজা নহুষকে বললেন, তুমিই দেবরাজ হও। নহুষ বললেন, আমি দুর্বল, ইন্দ্রের মতো নই। দেবতা ও ঋষিরা বললেন, তুমি আমাদের আশীর্বাদে বলশালী হয়ে স্বর্গরাজ্য পালন করো। নহুষ ইন্দ্রের পদে অভিষিক্ত হয়ে ধর্ম অনুসারে ত্রিভুবনে আধিপত্য করতে লাগলেন। তিনি প্রথমে ধার্মিক ছিলেন কিন্তু পরে কামপরায়ণ ও বিলাসী হয়ে পড়লেন। একদিন তিনি শচীকে দেখে সভাসদগণকে বললেন, ইন্দ্রের স্ত্রী শচী আমার সেবা করেন না কেন? উনি সত্বর আমার ভবনে আসুন। শচী উদ্বিগ্ন হয়ে বৃহস্পতির কাছে গিয়ে বললেন, আমাকে রক্ষা করুন। বৃহস্পতি তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, ভয় পেয়ো না, শীঘ্রই তুমি ইন্দ্রের সঙ্গে মিলিত হবে।

শচী বৃহস্পতির শরণ নিয়েছেন জেনে নহুষ ক্রুদ্ধ হলেন। দেবগণ ও ঋষিগণ তাকে বললেন, তুমি ক্রোধ সংবরণ করো, পরস্ত্রীর সাথে মিলনের পাপ থেকে নিরস্ত হও। তুমি দেবরাজ, ধর্মানুসারে প্রজাপালন করো। নহুষ বললেন, ইন্দ্র যখন গৌতম-পত্নী অহল্যাকে ধর্ষণ করেছিলেন এবং আরও অনেক ধর্মবরুদ্ধ নৃশংস ও শঠতাময় কাজ করেছিলেন তখন আপনারা বারণ করেন নি কেন? শচী আমার সেবা করুন, তাতে তার ও আপনাদের মঙ্গল হবে। দেবতারা বৃহস্পতির কাছে গিয়ে বললেন, আপনি শচীকে নহুষের কাছে পাঠান, তিনি ইন্দ্র অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, শচী তাকেই এখন পতিত্বে বরণ করুন। শচী কাতর হয়ে কাঁদতে লাগলেন। বৃহস্পতি বললেন, শচী, আমি শরণাগতকে ত্যাগ করি না, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।

দেবতারা তখন বললেন, আপনি বলুন কি করলে সকলের পক্ষে ভালো হয়। বৃহস্পতি বললেন, শচী নহুষের কাছে কিছুদিন সময় প্রার্থনা করুন, তাতে সকলের শুভ হবে। কালের প্রভাবে বহু বিঘ্ন ঘটে, নহুষ বলশালী ও অহঙ্কারী হলেও কাল তাকে যমালয়ে পাঠাবে। শচী নহুষের কাছে গিয়ে বিনম্র হয়ে বললেন, আমাকে কিছুদিন সময় দিলে, ইন্দ্র কোথায় কি অবস্থায় আছেন আমি অনুসন্ধান করেও যদি তাঁর সংবাদ না পাই তবে নিশ্চয় আপনার সেবা করবো। নহুষ সম্মত হলেন এবং শচী বৃহস্পতির কাছে ফিরে গেলেন।

তার পর দেবতারা বিষ্ণুর কাছে গিয়ে বললেন ইন্দ্র ব্রহ্মহত্যার পাপ থেকে মুক্তির জন্য আত্মগোপন কোরে আছেন। আপনি তার মুক্তির উপায় বলুন। বিষ্ণু বললেন, ইন্দ্র অশ্বমেধ যজ্ঞে আমার পূজা করলে তিনি পাপমুক্ত হয়ে দেবরাজত্ব ফিরে পাবেন, দুর্মতি নহুষও বিনষ্ট হবে। দেবগণ ও বৃহস্পতি প্রভৃতি ঋষিগণ ইন্দ্রের কাছে গিয়ে অশ্বমেধ যজ্ঞ করলেন এবং তার ফলে ইন্দ্র ব্রহ্মহত্যার পাপ থেকে মুক্ত হলেন।

দেবরাজের পদে নহুষকে অধিষ্ঠিত দেখে ইন্দ্র আবার আত্মগোপন কোরে কালের প্রতীক্ষা করতে লাগলেন। শচী তখন উপশ্রুতি নামে রাত্রিদেবীর উপাসনা করলেন। উপশ্রুতি এসে শচীকে সঙ্গে নিয়ে সমুদ্রের মধ্যে এক বিশাল দ্বীপে উপস্থিত হলেন। সেই দ্বীপের মধ্যে এক সরোবরে একটি সাদা রং-এর পদ্মফুল ফুটে ছিল। উপশ্রুতির সঙ্গে শচী সেই পদ্মের মৃণালের ভিতরে গিয়ে দেখলেন ইন্দ্র অতি সূক্ষ্মরূপে সেখানে রয়েছেন। শচী তাঁকে বললেন, তুমি যদি আমাকে রক্ষা না করো, তবে নহুষ আমার সতীত্ব নাশ করবে। তুমি আত্মপ্রকাশ কোরে পাপিষ্ঠ নহুষকে বধ করে দেবরাজ্য শাসন করো।

ইন্দ্র বললেন, বিক্রম প্রকাশের সময় এখনও আসেনি, নহুষ এখন আমার চেয়ে বলবান, ঋষিরাও আশীর্বাদে কোরে তার শক্তি বাড়িয়েছেন। তুমি নির্জনে নহুষকে বলো — আপনি ঋষিদের দ্বারা বাহিত পালকিতে চড়ে আমার নিকট আসুন, তা হলে আমি সানন্দে আপনার সঙ্গে মিলিত হবো। শচী নহুষের কাছে গিয়ে বললেন আপনি যদি আমার একটি ইচ্ছা পূর্ণ করেন তবে আপনার সঙ্গে মিলিত হবো। আমার ইচ্ছা, মহাত্মা ঋষিগণ মিলিত হয়ে আপনার পালকি বহন কোরে আমার কাছে আনুন। নহুষ বললেন, আমি তোমার কথা রাখবো।

শচীর কথায় নহুষ মহর্ষিগণকে তার পালকি বহনে নিযুক্ত করলেন। তখন বৃহস্পতি অগ্নিদেবকে বললেন, তুমি ইন্দ্রের খোঁজ করো। অগ্নিদেব সব জায়গায় খোঁজ করে বললেন, ইন্দ্রকে কোথাও দেখলাম না, কেবল জলের মধ্যে খোঁজ করতে পারিনি, কারণ জলে প্রবেশ করলে আমি নিভে যাবো। তখন অগ্নিদেবকে বৃহস্পতি বললেন, তুমি নির্ভয়ে জলে প্রবেশ করো, তুমি যাতে নিভে না যাও সেই জন্য আমি ব্রাহ্ম মন্ত্র জপ করছি। অগ্নিদেব জলের মধ্যে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে পদ্মের মৃণালের মধ্যে ইন্দ্রকে দেখতে পেলেন এবং ফিরে এসে বৃহস্পতিকে জানালেন। তখন দেবতা ঋষি ও গন্ধর্বদের সঙ্গে বৃহস্পতি ইন্দ্রের কাছে গিয়ে বললেন, তুমি শক্তি লাভ কোরে দেবতা ও মানুষকে রক্ষা করো। তাদের কথায় ইন্দ্রের শক্তি বৃদ্ধি হোলো।

দেবতারা যখন নহুষকে বধ করার উপায় চিন্তা করছিলেন তখন অগস্ত্য ঋষি সেখানে এলেন। তিনি বললেন, ইন্দ্র, ভাগ্যক্রমে তুমি শত্রুহীন হয়েছ, নহুষ দেবরাজ্য থেকে ভ্রষ্ট হয়েছেন। দেবর্ষি ও মহর্ষিগণ যখন নহুষকে পালকিতে বহন করছিলেন, তখন এক সময়ে নহুষ তার পা দিয়ে আমার মাথা স্পর্শ করলেন। তখন আমি তাকে এই শাপ দিলাম — তুমি পা দিয়ে আমার মাথা স্পর্শ করেছ, ব্রহ্মার তুল্য ঋষিগণকে বাহন করেছ, তুমি পুণ্যহীন হয়ে পৃথিবীতে পতিত হও। সেখানে তুমি সাপ হয়ে দশ হাজার বছর বিচরণ করবে, তার পর তোমার বংশজাত যুধিষ্ঠিরের দেখা পেলে আবার স্বর্গে আসতে পারবে। ইন্দ্র, দুরাত্মা নহুষ আমার অভিশাপে স্বর্গচ্যুত হয়েছে, এখন তুমি স্বর্গে গিয়ে ত্রিলোক পালন কর। তারপর ইন্দ্র শচীর সঙ্গে মিলিত হয়ে স্বর্গরাজ্য পালন করতে লাগলেন। এই কাহিনি শেষ করে শল্য বললেন, যুধিষ্ঠির, ইন্দ্রের মতো তুমিও শত্রু বধ কোরে রাজ্যলাভ করবে।

তারপর শল্য বিদায় নেওয়ার সময় যুধিষ্ঠির তাঁকে বললেন, আপনি অবশ্যই কর্ণের সারথি হবেন এবং অর্জুনের প্রশংসা করে কর্ণের তেজ নষ্ট করবেন। শল্য বললেন, তুমি যা বললে তাই করবো।

______________

(ক্রমশ)