Story of Mahabharat Part 50 in Bengali Spiritual Stories by Ashoke Ghosh books and stories PDF | মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 50

Featured Books
Categories
Share

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 50

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-৫০

মহর্ষি লোমশ বর্ণিত রাজা উশীনর, কবুতর ও বাজপাখির কাহিনি

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

মহর্ষি লোমশ বর্ণিত রাজা উশীনর, কবুতর ও বাজপাখির কাহিনি

লোমশ মুনির কাছে মান্ধাতা, সোমক ও জন্তুর কাহিনি শোনার পর যুধিষ্ঠিরাদি পাণ্ডবগণ প্ৰসৰ্পণ তীর্থ, সরস্বতী নদী, সিন্ধু নদ, কাশ্মীরমণ্ডল, পরশুরামকৃত মানস সরোবরের দ্বার, ভৃগুতুঙ্গ, বিতস্তা নদী প্রভৃতি দেখে যমুনার পার্শ্ববর্তী জলা ও উপজলা নদীর তীরে উপস্থিত হলেন।

সেখানে পৌঁছে মহর্ষি লোমশ বললেন, রাজা উশীনর এখানে যজ্ঞ করেছিলেন। তাঁকে পরীক্ষা করবার জন্য দেবরাজ ইন্দ্র বাজপাখি রূপে এবং অগ্নিদেব কবুতর রূপে রাজার কাছে আসেন। বাজপাখির ভয়ে কবুতর রাজার শরণাপন্ন হয়ে তার উরুর উপর আশ্রয় নিলো। বাজপাখি বললো, আমি ক্ষুধার্ত, এই কবুতর আমার খাদ্য, ধর্মের লোভে ওকে রক্ষা করবেন না, তাতে আপনি ধর্মচ্যুত হবেন। উশীনর বললেন, এই কবুতর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আমার কাছে এসেছে, শরণাগতকে আমি ত্যাগ করতে পারি না। বাজপাখি বললো, যদি আমাকে আমার আহার থেকে আপনি বঞ্চিত করেন তবে আমার প্রাণবিয়োগ হবে, আর আমি মারা গেলে আমার স্ত্রীপুত্রাদিও মরবে। আপনি একটা কবুতরকে রক্ষা করতে গিয়ে বহু প্রাণ নষ্ট করবেন। যে ধর্ম অপর ধর্মের বিরোধী তা অধর্ম। রাজা, গুরুত্ব ও লঘুত্ব বিচার করে ধর্ম ও অধর্ম নিরূপণ করা উচিত। উশীনর বললেন, তোমার কথা কল্যাণকর, কিন্তু শরণাগতকে পরিত্যাগ করতে বলছ কেন? ভোজন করাই তোমার উদ্দেশ্য, তোমাকে আমি গরু, শূকর, হরিণ, মহিষ বা অন্য যে মাংস চাও তাই দেবো। বাজপাখি বললো, মহারাজ, বিধাতা এই কবুতরকে আমার খাদ্যরূপে নির্দিষ্ট করেছেন, অন্য কিছুই আমি খাবো না। উশীনর বললেন, শিবিবংশের এই রাজ্য অথবা যা চাও তাই তোমাকে দেবো। বাজপাখি বললো, কবুতরের উপরে যদি আপনার এতই স্নেহ তবে তার সমপরিমাণ মাংস নিজের দেহ থেকে কেটে আমাকে দিন। উশীনর বললেন, তোমার এই প্রার্থনাকে আমি অনুগ্রহ মনে করি। এই বলে তিনি দাঁড়িপাল্লার এক দিকে কবুতরকে রেখে অপর দিকে নিজের শরীর থেকে মাংস কেটে রাখলেন, কিন্তু বার বার মাংস কেটে দিলেও কবুতরের সমান হোলো না। অবশেষে উশীনর নিজেই দাঁড়িপাল্লায় উঠলেন।

তখন বাজপাখি বললো, রাজা, আমি দেবরাজ ইন্দ্র আর এই কবুতর অগ্নিদেব। তোমার ধর্মজ্ঞান পরীক্ষার জন্য এখানে এসেছিলাম। জগতে তোমার এই কীর্তি চিরস্থায়ী হবে। এই বলে তাঁরা চলে গেলেন। ধর্মাত্মা উশীনর নিজের যশে অক্ষয় কীর্তি স্থাপন কোরে মৃত্যুর পর স্বর্গারোহণ করলেন।

______________

(ক্রমশ)