Migrated Labour in Bengali Poems by Ashoke Ghosh books and stories PDF | পরিযায়ী শ্রমিক

Featured Books
Categories
Share

পরিযায়ী শ্রমিক

               পরিযায়ী শ্রমিক

                 অশোক ঘোষ

 

শহর থেকে বহু দূর গ্রামে ভগ্ন পর্ণ কুটিরে,

ছোট শিশুসহ দুখিনী  থাকিত সেই ঘরে।

স্বামী তাকে ছেড়ে বহুদিন আগে চলে গেছে নিরুদ্দেশে,

হতদরিদ্র না জোটে অন্ন দিন কাটে মহা ক্লেশে।

কখনো অভুক্ত কভু অর্ধভুক্ত শিশুটির ক্ষীণদেহ,

অসহায়া নারীকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি কেহ।

বাঁচিবার আশে অসহায়া নারী বাহির হইল পথে,

বহুদূরে কোন অজানা শহরে শিশুটিকে লʼয়ে সাথে।

কখনো রেলে চড়ি, কখনো বাসে কখনো পদব্রজে,

নগর প্রান্তে পৌঁছিল যেথা যোগ দিতে হবে কাজে।

আকাশচুম্বি বহু ইমারতে নগর গড়িছে সেথা,

বিত্তশালী ধনীক বনিক বসতি করিবে তথা।  

মজুরের কাজে যোগ দিয়ে নারী ঝরিয়ে মাথার ঘাম,

দিনের শেষে সামান্য মজুরী, পায় না শ্রমের ন্যয্য দাম।

মজুরীর অর্থে মাতা ও শিশু মিটায় জঠরানল,

তৃপ্ত মায়ের মুখে ফোটে হাসি দুটি চোখ ভরা জল।

এইটুকু সুখ দুখিনী নারীর কপালে সহিল না,

বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো মারণ ভাইরাস করোনা।

বন্ধ করিয়া সকল কাজ মালিক করিল ঘোষণা,

সরকারি ফরমান হয়েছে জারি কোনো কাজ করা চলবে না।

ছুটি নিয়ে যত কর্মী সবাই চলে যাও নিজ ঘরে,

পুনরায় কাজ শুরু যদি হয় জানাইব সবাকারে।

আপন কুটিরে ফিরিবার তরে শিশুটিকে নিয়ে কোলে,

শ্রমজীবী সেই দুখিনী জননী চড়িয়া বসিল রেলে।

না আছে অর্থ না আছে সামর্থ আগুন জ্বলিছে জঠরে,

রেলের কামরায় জননী আক্রান্ত হইল নিদারূণ জ্বরে।

জ্বরে ক্রান্ত জননীকে দেখে রেলের কামরা থেকে,

সহযাত্রী সব নামিয়ে দিলো শিশুসহ রুগ্ন মাকে।

শ্রান্ত ক্লান্ত অসুস্থ জননী চলিবার শক্তি নেই,

অসহায়া জননী পড়লো শুয়ে রেলের প্লাটফর্মেই।

ধীরে ধীরে তার চক্ষু দুটি চিরনিদ্রায় গেলো বুঁজে,

পাড়ি দিলো বুঝি কোন অজানায় অন্ন জলের খোঁজে।

ছোট্ট শিশুর ছোট্ট পেটে অসীম ক্ষুধার জ্বালা,

জোটেনি তার এক ফোঁটা জল শুকায়ে গিয়েছে গলা।

জননী তার ঘুমিয়ে আছে বন্ধ চক্ষু দুটি,

আঁচল ধরে তার টানে বার বার ছোট্ট অবুঝ শিশুটি।

টলোমলো পায়ে একটু এগিয়ে আবার ফিরে এসে,

টানছে ধরে মায়ের আঁচল জাগিয়ে তোলার আশে।

বড্ড খিদে পেয়েছে তার, তৃষায় ছাতি ফাটে,

একটুখানি দুধ খেতে চায় জ্বলছে আগুন পেটে।

ছোট্ট শিশু বোঝে না মা তার গিয়েছে অচিনপুরে,

যেথায় গেলে কেউ কখনো আসে না আর ফিরে।

যাদের কঠিন শ্রমের ফলে বিত্তবানের ধনের পাহাড়,

তাদের ভাগ্যে জোটে না হায় দুটি বেলার আহার।

আর কতদিন সইবে শোষণ শ্রমিক মজুর কিষাণ,

শস্তাতে আর কত কাল করবে কঠোর শ্রম দান।

কঠিন শ্রমে তোমরা নিত্য যারা ঝরাইতেছো ঘাম,

তোমরা কেহ পেয়েছো কি কভু কঠোর শ্রমের দাম?

যত ধন আর সম্পদ আছে এই ধরণীর তলে,

সিংহভাগ রয়েছে তার কতিপয় ধনীর কবলে।

তোমাদর শ্রমে ধনীকেরা আছে ঐশ্বর্য্যের শিখরে,

অভাব অনটনে তোমাদের মতো গরীব নিত্য মরে ।

সইতে হয় তোমাদের মতো গরীবকে যত দুর্ভোগ,

বিত্তবান করিতেছে ধরায় যত সুখ উপভোগ ।

বিত্তবানের অঢেল ধনে তোমাদেরই অধিকার,

ছিনিয়ে নিতে তোমার সে ধন করো সবে অঙ্গীকার।

তোমরা পারো ঘুচিয়ে দিতে সকল অসাম্যতা,

জ্বালিয়ে মশাল মুছতে পারো আঁধার মলিনতা।

তোমরা পারো বাঁচাতে এমন অসহায়া জননীকে,

তোমরাই পারো শিশুটাকে দিতে ফিরিয়ে মায়ের বুকে।

এমনতরো অগণিত জননী মরিতেছে দেশে নিত্য,

এতিম করিয়া স্নেহের শিশুকে নির্মম কঠোর সত্য।

এদের দ্বারা গঠিত সরকার এদেরই তরে উদাসীন,

ধনীর যাতে আরো বাড়ে ধন তেমনই করেছে আইন।

রবীন্দ্র রচিত দুই বিঘা জমি কবিতা শাশ্বত সত্য,

গরীবের ধন নানা ছলনায় ধনিক হরিছে নিত্য।

“এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি,

রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি।“

 

                 ******