কে তুমি?
মরুভূমির উষ্ণ বালুতে দাড়িয়ে দূরে
বহুদূরে যে চকচকে সবুজ সমারোহ দেখি
সেই কি তুমি?
না না সে তো মরীচিকা।
তুসারাচ্ছন্য হিমালয়ের বুকে লুকিয়ে থাকা
সেই ভোরের প্রথম আলো
সেই কি তুমি?
না না সে তো পাহাড়ের বুকে সূর্যোদয়।
ব্যার্থ প্রেমের হাহাকার যন্ত্রণা কান্নায়
মিশে থাকা আর্তি আর দীর্ঘশ্বাস
সেই কি তুমি?
না না সে তো আহত আত্মার শোক।
নদীর ওপর বয়ে যাওয়া ছোট্ট ডিঙিটা
বা সমুদ্রের বুকে ভেসে থাকা পালতোলা জাহাজের মাস্তুল
সেই কি তুমি?
না না তাই বা কেমন করে হবে।
তাহলে কে তুমি কে কে? উত্তর দাও।
কোনোদিন কি ধরা দেবে না।
আমি? তুমি জানোনা কে আমি?
সহস্র বছর আগে যাকে দেখে পথিক
হারিয়েছিল তার পথ সেই তো আমি।
যার চুল হাওয়াতে উড়ে বানাতো অনেক
শ্রাবস্তীর কারুকার্য সেই তো আমি।
যে রাজ নর্তকী রাজকুমারকে ভালোবাসার
অপরাধে জীবন্ত দাফন হয়েছিল
সেই ছিলাম আমি।
শত সহস্র সেনার বিরুদ্ধে তলোয়ার নিয়ে
নিশ্চিত পরাজয় জেনেও দেশের সন্মান
বাঁচাতে যুদ্ধে নেমেছিল যে সেই তো আমি।
ইংরেজ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অকুতোভয়
লড়াই করেছিল যে, বিপ্লবীদের অস্ত্র সরবরাহ
করতে প্রাণ লড়িয়ে দিয়েছিল যে সেও আমি।
আমি নই কোনো প্রেমিকের কল্পনা, নই কোনো প্রাসাদের রাজরানী। নই কোনো দেওয়ালের খোদাই মূর্তি বা পটের কারুকার্য।
আমি নই কোনো শিখণ্ডী, নই দশভূজা, নই সীতা, নই পার্বতী, নই আমি মা গঙ্গা, আমি ভোরের আলোও নই, রাতের অন্ধকার ও নই। নই প্রদীপ শিখা, নই দাবানল।
তবে কে আমি? নিজেকে প্রশ্ন করো।
তোমার মধ্যে লুকিয়ে থাকা আমি সেই আগুন, আমি সেই বরফ গলা জল, ভূমিকম্পের ফেটে যাওয়া মাটি, আমি সেই আগ্নেয়গিরি, সেই উল্কাপাত, আমি সেই অভুক্ত শিশুর কান্না, আমি সেই ঝরাপাতা, আমি সেই মা, আমি সেই বোন, আমি সেই অর্ধাঙ্গিনী।
চোখ বুজে যখনই হাত বাড়াবে আমায় ছুঁতে পারবে। কালের চক্রে বয়ে চলা আমি সেই সময়। আমি সেই অধরা, অমলিন, নিষ্পাপ, নিরুদ্বেগ, নিঃস্ব, নিরুপায় কিন্তু বহমান সময়।।
কলমে: মন্দিরা