Jharapata 50 in Bengali Love Stories by Srabanti Ghosh books and stories PDF | ঝরাপাতা - 50

Featured Books
  • અસવાર - ભાગ 3

    ભાગ ૩: પીંજરામાં પૂરો સિંહસમય: મે, ૨૦૦૦ (અકસ્માતના એક વર્ષ પ...

  • NICE TO MEET YOU - 6

    NICE TO MEET YOU                                 પ્રકરણ - 6 ...

  • ગદરો

    અંતરની ઓથથી...​ગામડું એટલે માત્ર ધૂળિયા રસ્તા, લીલાં ખેતર કે...

  • અલખની ડાયરીનું રહસ્ય - ભાગ 16

    અલખની ડાયરીનું રહસ્ય-રાકેશ ઠક્કરપ્રકરણ ૧૬          માયાવતીના...

  • લાગણીનો સેતુ - 5

    રાત્રે ઘરે આવીને, તે ફરી તેના મૌન ફ્લેટમાં એકલો હતો. જૂની યા...

Categories
Share

ঝরাপাতা - 50

ঝরাপাতা

পর্ব - ৫০

❤💕❤💕❤💕❤

যুগলের ফোন পেয়েই রনির যেমন মনে লাড্ডু ফুটতে থাকে, তেমনি দুষ্টুবুদ্ধিও উদয় হয়, অনেক জ্বালিয়েছে মিলি। এবার ওর পালা। 

মিলি চটপট তৈরি হচ্ছিল। ইস, রনিদাকে এত ভুল বুঝে, দিদিকে ভুল বুঝে শুধু শুধু এতগুলো দিন ! এখন কি করে বলবে, বিয়ের কথা সব মনে আছে? তার মধ্যেই রনির ফোন। ভীষণ রকম লজ্জা করতে থাকে, কি বলবে এখন? কালও তেজ দেখিয়ে চলে এসেছে। অথচ ফোন না ধরলেও নয়। 

মিলির সাড়া পেয়েই রনি যতটা সম্ভব গম্ভীর গলায় বলে, "যুগলরা নেমন্তন্ন করেছে। তুমি কি আমার সঙ্গে যাবে নাকি আলাদা যাবে?"

রনির ঐ গলা শুনেই তো মিলির হয়ে গেছে, এখন রাগ ভাঙাব কি করে ! কোনোমতে সাহস যোগাড় করে বলে, "তোম্... তোমার সঙ্গেই যাব।"

- "তাহলে সময়মতো তৈরি হয়ে নিচে এসো। কাকিমাকে বলে আসবে, আমি সঙ্গে করে এক জায়গায় নিয়ে যাব বলেছি। তুমি কলেজে যাচ্ছ না।"

- "মাকে বলব?"

- "হ্যাঁ বলবে। কোথায় যাবে জিজ্ঞেস করলে বলবে আমি জানি। কিন্তু কলেজে যাওয়ার নাম করে তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাব না আমি।"

- "মা যদি যেতে না দেয়?"

- "তখন আমাকে বলবে। আমি কথা বলব।" খট করে ফোন কেটে দেয় রনি। মনে মনে হাসে, "তুমি কত ঝামেলাই করলে আমাকে ভুল বুঝে। সেটা যখন মেটাতে পেরেছি, দেখি কে আটকায় তোমাকে নিয়ে যেতে।"

অবশ্য কেউ আটকায় না মিলিকে। বাবা মা দুজনেই খুশি খুশি যাওয়ার পারমিশন দিয়ে দেয়। গোপা কেবল বলেছিল, কখন ফিরবে। মিলি আমতা আমতা করে, "রনিদা জানে। আচ্ছা দেরি হলে তোমাকে ফোন করে দেব।"

কলেজ যখন যাচ্ছিই না, বরং দিদির বাড়ি প্রথমবার নেমন্তন্ন খেতে যাচ্ছে, মিলি খুব সেজেগুজে ফেলে। সুন্দর একটা শাড়ি, হালকা মেকআপ, অল্প জাঙ্ক জুয়েলারী, একটা পছন্দের পারফিউম আর হস্তশিল্প মেলায় কেনা বাহারী ব্যাগ। 

নিয়মিত কলেজে বেরোনোর চেয়েও দশ মিনিট পার হয়ে গেছে এসব সাজসজ্জায়। রনি অধৈর্য্য হয়ে ওঠে, "কোনো হুঁশ নেই, কতদিন ভালো করে দেখিনি, ফালতু ফালতু রাগ করে কথা বলে না, আজ যখন জানতেই পেরেছে, আমার দোষ নেই, একটু আগে আগে বেরোতে পারত না?"

শেষে মান খুইয়ে নিজেই ফোন করে বসে, "হয়েছে তোমার? রেডি নাকি আরও টাইম লাগবে?"

- "হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। এক্ষুণি আসছি। শোনো না......."

- "বেরিয়ে এসো, রাস্তায় শুনব।" এককথায় থামিয়ে দেয় রনি। 

লিপস্টিকটা মানানসই হয়েছে কিনা, আরেকবার ভাবনাচিন্তা শুরু করতে যাচ্ছিল মিলি, সেসব ছড়িয়ে রেখে দুদ্দাড়িয়ে দৌড়ল। রনিদা রেগে আছে, বুঝে গেছে প্রথমেই। আরও না চটে যায়। যদি যাবে না বলে দেয়, রাগ ভাঙাবেও বা কি করে? 

রনির একটু একটু রাগ হচ্ছিল দেরির জন্য, কিন্তু মিলি যখন বেরিয়ে এলো সব রাগ ভুলে হাঁ করে তাকিয়ে থাকল। বিয়ের দিন, বিয়ের পর যে দুদিন মিলিকে খুব কাছ থেকে দেখেছিল, সেই স্মৃতি তাজা হয়ে আছে ওর মনে, বিয়ের ছবিগুলো দিনে বহুবার করে দেখে বলে। দশমীর বিকেলের মিলির সিঁদুরে সিঁদুরে রাঙা মুখটা ভোলার ক্ষমতা ওর নেই। যে একবার মিলিকে নিয়ে সিনেমা দেখতে গেছিল, বাড়ির সবার সঙ্গে যাচ্ছে বলেই মিলি রোজকার মতো সালোয়ার কুর্তা পরেই এসেছিল। মিলিকে সেভাবেই একটা বাচ্চা মেয়ের মতোই লাগে ওর সবসময় সামনে থেকে। 

আজ এতদিন পর, পার্পল জর্জেট, হালকা মুক্তোর চোকার আর মাথায় একটা উঁচু খোঁপায় মিলির পূর্ণ যুবতীর রূপ দেখে থ হয়ে গেছে ও। 

মিলি সামনে এসে একটু হেসে বলতে যায়, "সরি রনিদা, একটু দেরি হয়ে গেল।"

রনি মনে মনে বলে, "এই নতুন রূপটা দেখার জন্য আমি গোটা একটা জন্ম অপেক্ষা করতে রাজি।" মিলিকে হেলমেটটা দেওয়ার কথাও মনে নেই। মিলিই হাত বাড়াতে ওর চমক ভাঙে। 

- "বলছিলাম কি, আমরা ওদের জন্য কিছু রিটার্ন গিফট নিয়ে যাওয়া উচিত না? আমার কাছে দু হাজার টাকা আছে। জন্মদিনের টাকা। কোনো দোকানে দাঁড়াবে? কিছু কিনতাম।" মিলি ভয়ে ভয়ে বলে। 

রনির গায়ের সঙ্গে লেগে মিলি বসে আছে বাইকে, নতুন রকম একটা পারফিউমের গন্ধ থেকে থেকে ঝাপটা মারছে রনির নাকে। ও চেষ্টা করছে সব ভুলে বাইকটা মন দিয়ে চালাতে। তাই মিলির সঙ্গে কথা না বাড়িয়ে একটা ডিপার্টমেন্টমেন্টাল স্টোরের সামনে বাইক থামিয়ে বলে, "তুমি ভেতরে যাও, আমি বাইক পার্ক করে আসছি।"

বাইক রেখে ফিরে এসে দেখে, মিলি একটু অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে, দুটি ছেলে সম্ভবত কিছু বলছে ওকে। রনি চটপট স্টোরের সামনের রাস্তাটা লম্বা পায়ে পেরিয়ে এসে মিলির পিঠের কাছে হাতটা এনে ইচ্ছাকৃত অন্তরঙ্গতা দেখিয়ে বলে, "ভিতরে চলো, কি পছন্দ দেখো।"

ছেলে দুটি এগিয়ে যেতে যেতে বলে, "ওহ, আবার বয়ফ্রেন্ড আছে।" রনির রাগে তখন ব্রহ্মতালু জ্বলছে। কিন্তু মিলিকে আবার একলা রেখে যেতেও পারছে না। মিলি ভেতরে ঢুকে এটা সেটা দেখছে, দু তিনজন মহিলা কর্মী রয়েছেন স্টোরে। তাদের একজন মিলিকে সব দেখাচ্ছেন। এইটা দেখে নিয়েই ও চলে আসে ক্যাশ কাউন্টারে। ভদ্রলোককে ঘটনাটা বলে। স্টোরের মহিলা কর্মীদের এবং ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিয়ে ওনারা কি ভাবছেন, জানতে চায়। 

ভদ্রলোক বলেন, মহিলা কর্মীরাও যাতায়াতের পথে এই ছেলেদের কাছে নানান মন্তব্য শোনে, কিন্তু কেউ এগিয়ে এসে নিজে প্রশাসনে অভিযোগ করেনি। তেমনি ক্রেতারাও। স্টোরের বদনামের ভয়ে উনিও অভিযোগ করেন না। তবে ক্রেতারা অভিযোগ করলে ঢোকার দরজার সামনের সি সি টিভি ক্যামেরায় সম্পূর্ণ ঘটনা ধরা পড়ে, তার সাহায্য পাবে। পুলিশই তো ফুটেজ দেখতে চাইবে। 

রনি মুহূর্তে ভেবে নেয়, মিলিকে ডেকে বলে, ও দশ মিনিটের মধ্যে আসছে আর মালিক ভদ্রলোককে বলে যায়, স্টোরের ভিতরে খেয়াল রাখতে। 

ছেলে দুটি ফুটপাথের ধারে নিজেদের নির্দিষ্ট চায়ের দোকানে জাঁকিয়ে বসেছে। রনি সামনে এসে একগাল হাসে, থতমত ছেলে দুটিকে বলে, "ভাই মাথার উপর কোনো না কোনো দাদার হাত আছে বুঝতে পারছি। তবে সমস্যাটা হল, আমি পুলিশে যাচ্ছি। আর এই স্টোরের গেটের সামনের ক্যামেরায় সবটা রয়েছে, আমার স্ত্রীকে বিরক্ত করার ঘটনাটা।"

রনি আবার সামনে এসে দাঁড়ানোয় ছেলে দুটি যথেষ্ট ঘাবড়ে গেছিল, তাও গলায় রোয়াব ফুটিয়ে বলে, "আরে ছাড়ুন তো, অনেক পুলিশ দেখেছি।"

- "ভাই, সমস্ত কথাবার্তাই বুঝে বলুন, আমার মোবাইলে রেকর্ড হচ্ছে। উঁহু, বোকার মতো কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না, এটা সরাসরি গুগল এ স্টোর হচ্ছে। আর যে দাদার সাপোর্ট পাবেন বলে এগুলো করছেন, এত পেটি কেসে ফাঁসলে সে কি নিজের নাম জড়াবে তাতে? তার আশা করি আপনাদের মতো আরও অনেককে দেখতে হয়?"

ছেলে দুটি স্পষ্টই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। লেখাপড়া বেশি শেখেনি, নেতার ছায়ায় থাকতে পেরে ধরাকে সরাজ্ঞান করছিল। হঠাৎ উলটো চাপ। এবং এটাও ঠিক, ওদের সেই নেতাও বলে দিয়েছেন, সাধারণ মানুষের কাছে যেন ইমেজ বজায় থাকে। সুতরাং সবদিক ভেবে সারেন্ডার করে ফেলে, "ইয়ে হয়েছে স্যার। আপনার বৌ বুঝতে পারিনি। আর হবে না।"

- "মানে আমার বৌ না হলেই হবে?" রনির মুখের হাসির কোনো বদল হয়নি। 

আগেই শুনেছে, সব রেকর্ড হচ্ছে, অন্য ছেলেটি এবার বলে, "আর করব না স্যার, ভুল হয়ে গেছে। বৌদি, আপনি একটু দাদাকে বলুন না ফালতু পুলিশের ঝামেলার কি দরকার।" 

রনি এবার নিজেই চমকে ফিরে তাকায়, মিলি ও কোথায় যাচ্ছে দেখতে পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। ছেলেটি মিলিকে দেখেই রনিকে ছেড়ে ওর কাছে দরবার শুরু করেছে। যদি এ যাত্রা ওর দয়ায় বেঁচে যায়। 

রনি এবার বোঝানোর মতো করে বলে, "কি লাভ আছে এখানে এই অসভ্যতাগুলো করে? তোমাদের ধারণা, এতে এই মেয়েরা তোমাদের পছন্দ করবে? নাকি আরও বড় প্ল্যান আছে?"

- "না না দাদা, প্ল্যান কিছু না, সকালে আর সন্ধেয় এই চায়ের দোকানে চা খেতে আসি, তখন মনে হয় সবাইকে ভয় দেখাই। আসলে বাড়িতে তো যা তা বলে, রোজগার করে টাকা এনে না দিলে।"

চায়ের দোকানী এতক্ষণ হাঁ করে সব শুনছিল। এবার বলে, "খাতায় লিখে চা খাবে, আর এক পয়সাও ঠেকায় না জানেন। আপনি কেস করুন তো, আমিও বলব।"

- "তুমিও এইতালে এরকম করছ? তোমার টাকা দিয়ে দেব তো লটারি জিতলেই।"

- "লটারি জেতার আশায় বসে থাকলেই হবে? নিজেরা চেষ্টা করতে হবে তো। এরকম একটা চায়ের দোকান বানিয়ে দেখাও। দুই বন্ধুর যখন এত ভাব, দুজন মিলেও তো কিছু করতে পার।"

- "হ্যাঁ স্যার, এবার করব। একটা অনলাইন কোম্পানির জিনিসপত্র ডেলিভারি দেওয়ার কাজের খোঁজ পেয়েছিলাম। অনেকক্ষণ সময় দিতে হবে বলে করিনি। এবার সেটাই করব।"

- "খুব ভালো লাগলো। আজ এখন থেকেই শুরু করো। যাও, কোথায় গিয়ে কথা বলতে হবে, এখনই যাও। আমি সামনের মাসে এসে এখানে খোঁজ নেব।"

ছেলে দুটি মাথা নিচু করে চলে যেতে চায়ের দোকানী বলে, "এক কাপ চা খেয়ে যান স্যার। আমার দোকানের স্পেশাল আদা দেওয়া চা।"

রনি হাসিমুখে বলে, "এক কাপ কেন, দুজনেই খাব। তবে পয়সা নিলে তবেই।"

- "কেন স্যার, চায়ের দোকান চালাই বলে আমি কি আপনাদের দাদা হতে পারি না? চা বেচতে পারি, কিন্তু আমি কুড়ি বছরের উপর সৎভাবে দোকান করছি।"

- "নাহ, এরপর আর কথা বলার উপায় নেই। বসে পড়ো মিলি, দাদার কাছে চা খেয়েই যাই।"

মিলি ফিসফিস করে বলে, "ধন্যি বাবা তুমি।"

রনি খ্যাঁক করে ওঠে, "আমি তোমার বাবা?"

- "না, তুমি ঐ ছেলেগুলোর বাবা।" মিলি হেসে গড়িয়ে পড়ে। 

চায়ের দোকানী খুব চেষ্টা করে ওদের কেক, বিস্কুট, ডিমসিদ্ধ, মোটকথা দোকানে যা যা আছে, সব খাওয়ানোর। ওরা আজ নেমন্তন্ন খেতে যাচ্ছে, আরেকদিন এসে খাবে বলে কোনোমতে রেহাই পায়। 

কিন্তু লিলিদের বাড়িতে এসে দেখে, রান্নাবান্নার কোনো উদ্যোগই নেই, রান্নাঘরে সব জিনিস যেখানকার যেমন পরিপাটি করে সাজানো, গোছানো। 

চলবে