Jharapata 49 in Bengali Love Stories by Srabanti Ghosh books and stories PDF | ঝরাপাতা - 49

Featured Books
  • અસવાર - ભાગ 3

    ભાગ ૩: પીંજરામાં પૂરો સિંહસમય: મે, ૨૦૦૦ (અકસ્માતના એક વર્ષ પ...

  • NICE TO MEET YOU - 6

    NICE TO MEET YOU                                 પ્રકરણ - 6 ...

  • ગદરો

    અંતરની ઓથથી...​ગામડું એટલે માત્ર ધૂળિયા રસ્તા, લીલાં ખેતર કે...

  • અલખની ડાયરીનું રહસ્ય - ભાગ 16

    અલખની ડાયરીનું રહસ્ય-રાકેશ ઠક્કરપ્રકરણ ૧૬          માયાવતીના...

  • લાગણીનો સેતુ - 5

    રાત્રે ઘરે આવીને, તે ફરી તેના મૌન ફ્લેટમાં એકલો હતો. જૂની યા...

Categories
Share

ঝরাপাতা - 49

ঝরাপাতা

পর্ব - ৪৯

❤💕❤💕❤💕❤

[অনেক দেরি হল এই পর্বটা আসতে। কিছু পারিবারিক ও ব্যক্তিগত অসুবিধা ছিল। এই সময়ে আশা করি পর্বগুলো অনিয়মিত হলে আপনারা একটু মানিয়ে নেবেন।]

❤💕❤💕❤💕❤

যুগলের জামাটা বুকের কাছে ভিজে যাচ্ছে। লিলির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ও দুহাতে লিলির মুখ তুলে ধরে। কান্নাভেজা চোখে চুমু খেয়ে বলে, "তুমি এত কাঁদবে জানলে আমি এখন এই কথা বলতাম না। কদিন ধরে ভালো করে খাও না, ঘুমোও না। কোথায় আমি আজ খেতে দেব ভাবলাম, ভালো করে খাবে ভাবলাম। আমিই কাঁদিয়ে দিলাম।" যুগলের গলা জড়িয়ে ধরেছে লিলি। ধীরে ধীরে লিলির মাথায়, পিঠে হাত বুলিয়ে, ওর কানেকানে নানা কথা বলে শান্ত করে। একটু একটু করে খাইয়ে দেয় অপটু হাতে। 

খানিকক্ষণ পরে লিলির খেয়াল হয়, যুগল একভাবে মেঝেতে বসে আছে। ওকে হাত ধরে তুলে আনে। উঠে লিলিকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে ওর চেয়ারটাতেই বসে, ওর থালা থেকে যুগল খেতে থাকে। লিলিও হেসে ফেলে এবার। 

খাওয়ার পর লিলি যুগলকে কিছুতেই টেবিল পরিষ্কার করতে দেয় না। ওকে বিশ্বাস নেই, কিছুই পারবে না। টেবিল মুছে লিলি নিজের বই নিয়ে আধশোয়া হয়েছে সবে বিছানায়, কিচ্ছু পড়া হয়নি কদিন, যুগল এসে বই কেড়ে নেয়। লিলি সবে হাঁ হাঁ করে উঠেছে, যুগল একহাতে ওর মুখ চেপে ধরে "আজ কোনো লিখাপড়া হবে না। ব্যস।" 

বইটা তাকে রাখতে ও উঠে যেতেই লিলি চোখ পাকায়, "তাহলে কি করে হবে? কাল অফিস।"

লিলির কোলে মাথা দিয়ে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে যুগল, "কাল ছুট্টি করি চলো।" ঘুরে শুয়ে লিলির কোমর জড়িয়ে ধরেছে ও। 

- "এমনি এমনি ছুটি করব?"

- "এমনি কেন, কোথাও বেড়াতে যাব। সেই যখন তুমি বাড়ি থেকে চলে এলে, চারদিন ছুট্টি করেছি। মন্দারমণি গেছি। আর না বেড়াতে গেছি, না ছুট্টি। তোমার বুখার হল, একদিন ছুট্টি করলে, আমাকে বললে থাকতে হবে না। আমি অফিস করলাম। বহুত হুয়া। কাল ছুট্টি।" সুপ্রিম কোর্টের রায় শুনিয়ে যুগল আরও পরিপাটি শুয়ে পড়ে। 

লিলি ওকে এক ধাক্কায় কোল থেকে নামিয়ে দেয়, "হ্যাঁঃ, আমরা ছুটি করে ঘুরব আর ওদিকে আমার বোনটা..."

ধড়ফড় করে উঠে বসে যুগল, "কেয়া হুয়া উসকো?"

- "আর কেয়া হুয়া ! তোমার জন্য তো ! বেচারা মিলিটা কি কষ্ট পাচ্ছে ! রনিদাও তো তোমার জন্য...."

- "আচ্ছা আচ্ছা, আমি রনিকে সরি বলব। ওকে, ডান?" যুগল চেষ্টা করে লিলিকে কাছে টানার। 

- "আরে রনিদাকে সরি বলে কি হবে? খেপে তো আছে মিলি ! আমার বোনটা প্রত্যেকবার তোমার জন্য কষ্ট পায়।"

- "ইয়ে ক্যায়সি বাত হুয়ি? ম্যায়নে উসে ক্যায়সে দুখ দিয়া? মুঝে কেয়া, তুমহে ভি নেহি পতা থা কি তুমহারে ঘরওয়ালোনে উসে শাদী কে মন্ডপ মে বৈঠা দেগা।" যুগল নিজের সাফাই গাইতে থাকে। 

- "আরে ধ্যাত, সে তো কোনকালের কথা। তারপর কতকিছু হয়ে গেল। এখন ওরা দুজন দুজনকে কত ভালোবাসে। এই তোমার উৎপাতের জন্য রনিদাকে এতকিছু করতে হল। আর ওদের তো এ ওকে সব কথা বলার সময় হয় না, একসঙ্গে থাকেও না, মিলিটা ভুল বুঝে বসে আছে।"

- "মতলব?" চোখ গোল হয়ে গেছে যুগলের।

- "মতলব আবার কি? মিলিটাও গাধা আছে। রনিদাকেও বোঝে না ! ওর জন্য মরে যাচ্ছে ছেলেটা ! আর মিলি ভাবছে, রনিদা অন্য কাউকে ভালোবাসে। রাগারাগি করছে, রনিদার সঙ্গে একটাও কথা বলছে না। আজ তো ওর সঙ্গে কথা বলতেই আমি গেছিলাম। একটা কথাও শুনল না।" সেই সময়ের কথা মনে করে লিলির মুখ কালো হয়ে যায়। 

যুগল চোখ সরু করে দেখছে লিলিকে। চোখাচোখি হতেই লিলি তাড়াতাড়ি অন্যদিকে তাকায়। কথাটা যখন বলতে শুরু করেছিল, খেয়াল ছিল না, যুগলকে ঠিক বলা যায় না, মিলি কি ভুল ভাবছে। 

যুগল এদিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে। ওর আর লিলির ভুল বোঝাবুঝিতে মিলি ওর উপর রাগ করতে পারে নিজের দিদির কষ্টে। রনির উপর রাগ করবে কেন? তাও রনি ওর দিদিকে হেল্প করছে ! সেটাই জিজ্ঞেস করে, মিলির রাগের কারণ কি? 

- "বললাম না, ও ভাবছে রনিদা ওকে ভালোবাসে না।" লিলি তাড়াতাড়ি বালিশ টেনে শুয়ে পড়তে চায়। 

- "এই কথাটা হঠাৎ কোথা থেকে এলো? ভালোবাসে না? কাউকে নিয়ে শক হচ্ছে ওর? কে, রনির কোনো ফ্রেন্ড?"

- "ঐ আরকি। মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে মিলির।" লিলি নিজের মাথাও ঢেকে ফেলেছে কম্বল দিয়ে, এখন লুকিয়ে পড়াই বেস্ট। 

- "আরে, পুরা কাহানি বাতাও না।" যুগল ঝপ করে কম্বলের ঢাকা সরিয়ে দিয়েছে। 

- "আবার কি পুরা কাহানি? মিলির যত্তসব......" লিলি কম্বলটা টানছে। 

যুগল কম্বলটাও শক্ত করে ধরে রাখে, লিলির বিব্রত মুখের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে মনে হয় কাণ্ডটাও বুঝেছে। মুখ টিপে হেসে বলে, "অব সমঝা ! ওহ ফ্রেন্ড অব মেরে সামনে হ্যায়।" লিলি অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পড়ে লজ্জায় লাল হয়ে, হো হো করে হাসতে থাকে যুগল। ওর মন থেকে এতক্ষণে নিজের সব অপরাধের ভার নেমে একটা টাটকা বাতাস ঢুকে পড়েছে। খুব মজা লাগছে লিলি আর রনি কেমন ঝামেলায় পড়েছে ভেবে। 

লিলি উঠে ওর পিঠে গুমগুম করে ঘা কতক বসিয়ে আবার শুয়ে পড়ছিল, যুগল ধরে ফেলে। এবার লিলিরও হেসে ফেলা ছাড়া উপায় থাকে না। তবুও গাল ফোলায়, "একদম হাসবে না। সব তোমার জন্য।"

- "আচ্ছা আচ্ছা, আমি সব ঠিক করে দেব। আমি যাব মিলির কাছে কথা বলতে।"

- "কি করে যাবে শুনি? তোমাকে কে বাড়িতে ঢুকতে দেবে? কলেজেও ভাইয়া থাকবে।"

- "অত দূরে থাকলে কি সব শোনা যায়? কাছে এসো, বলছি।"

- "একদম না। তোমার এসব চালাকি আমি জানি।" লিলি চটপট শুয়ে পড়ে কম্বল চাপা দেয়। 

- "বাহ, আমার তো সুবিধাই হয়ে গেল।" যুগল ঠেলেঠুলে লিলির কম্বলে ঢুকে ওকে একটা লম্বা চুমু খায়। ততক্ষণে লিলিও ওর গলা জড়িয়ে ধরেছে। 

💜🎀💜🎀💜🎀💜

পরদিন সকাল হতে না হতেই লিলির থেকে নম্বর নিয়ে মিলিকে ফোন করে যুগল। কাল রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে খানিকক্ষণ এলোমেলো ঘুরেছিল মিলি। এই যে ও চলে এলো, দিদি একবার মাত্র ডাকল ! আর রনিদা তাতেও বারণ করে দিল ! তবে যেহেতু আগে থেকেই মন শক্ত করা শুরু করেছিল ও, তাই এদিনের ঘটনাও সামলে নিল। বাড়িতে ফিরে এলো, কথাবার্তা কম বলল, তবে মোটামুটি স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে গেল। 

আজ সাতসকালে অচেনা নম্বরের ফোন দেখে একবার ইতস্ততঃ করল। তারপর ভাবল, বন্ধুবান্ধবদের কেউ হয়ত বাবা বা মায়ের মোবাইল থেকে ফোন করছে। তাই ফোন রিসিভ করে নিল। 

হ্যালো শুনেই যুগল বলল, "মিলি? গুড মর্নিং। আমি যুগল বলছি। কেমন আছো?"

যুগল? যুগলদা ফোন করেছে ওকে? এত কি ঝামেলা হল ওদের? মিলির ভীষণ ভয় করে উঠল, "যুগলদা, কিছু হয়েছে?"

- "বহোত কুছু হয়েছে।" যুগল লিলিকে চোখ টিপে হা হা করে হাসে। লিলি হাতের মুঠো আর চোখ দুটোই পাকাচ্ছে। ওদিকে যুগলের হাসি শুনে মিলির ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে। 

- "একটু সময় দেবে মিলি, কথা ছিল তোমার সঙ্গে।" যুগল হাসি থামিয়ে শান্ত হয়ে বলে। 

- "হ্যাঁ হ্যাঁ বলো না দাদা।"

- "তুমি রনির উপর রাগ করে আছ কেন আমাকে বলবে?"

- "তোমারও তো ওর উপর রাগ আছে।"

- "না, আমার রাগ না। আমার একটু লিলির সঙ্গে প্রবলেম হচ্ছিল।" ছোট করে ওদের সমস্যাটা মিলিকে বলে যুগল, "রনি লিলির জন্য আমাকে বোঝাচ্ছিল, তার পার্ট শুনে তুমি ভুল বুঝেছ, তাই না?"

- "হ্যাঁ যুগলদা, আমি পুরো উলটো ভাবছিলাম।"

- "আমিও কাল লিলির কাছে শুনলাম সব। একবার রনির সঙ্গে কথা বলো, দেখা করো। আমার রিকোয়েস্ট। তোমাদের ঝামেলা হয়েছে শুনে আমার মনে হচ্ছে, আমার দোষেই তোমদের দু বোনের যত ঝামেলা।"

- "যুগলদা, আমার খুব খারাপ লাগছিল তোমার আর দিদির জন্য। এত কাণ্ড করে বিয়ে করেও তোমরা আলাদা হয়ে গেলে ভালো লাগে বলো?"

- "আরে না না। আমরা একসাথেই আছি আর থাকব।" লিলিকে একহাতে জড়িয়ে ওর গালে গাল ঠেকাতে যায় যুগল। লিলি একটা লাজুক হাসি দিয়ে সরে যায়।

যুগল ফোনে বলতে থাকে, "তুমিও সব মিটিয়ে নাও। আজ কলেজ যাবে না। আমাদের বাড়িতে এসো দুজনে। আমরাও ছুট্টি করছি। আমি বাজার যাচ্ছি, দিদি রান্না করবে। জমিয়ে আড্ডা দেব চারজন। আসবে তো? আমি রনিকে বলে দিচ্ছি, তোমাকে নিয়ে আসতে।"

- "না মানে আমার ক্লাস, সামনে পরীক্ষা যুগলদা। পরে একদিন যাই? সেদিন অনেকক্ষণ থাকব, তোমাদের সঙ্গে খাব?"

- "আরে খাওয়ার জন্য কি ডাকছি? তোমাদের ভাব হয়েছে দেখতে ইচ্ছে করছে, তাই ডাকছিলাম আমরা। তুমি না কোরো না। ওকে? রনির সঙ্গে কথা বলো, বেচারা খুব কষ্ট পাচ্ছে। দুজনে একসঙ্গে আমাদের বাড়ি এসো।" 

মিলির ফোন রেখে রনিকে ফোন করে, "বস সব সেট হয়ে গেছে। এবার ভাইয়া বলি?"

- "যুগল, বলছিলাম কি...."

- "আরে ইয়ার, কি বলবে বলে ফেলো।"

- "একবার তোমাদের বাড়িতে যাব?"

- "আমার শা *লীকে নিয়ে তো? ডান গুরু। চলে এসো আজ।"

- "মিলি পরে আসবে। আমি যাই, তোমার সঙ্গে কথা বলি আজ।"

- "আজই মিলি আসবে। ওকে নিয়ে কলেজ বেরিয়ে ওর ভাইয়াকে বলে দাও, তোমরা ঘুরতে যাচ্ছ। তারপর সোজা এখানে, আমরাও ছুট্টি করেছি। রাখছি এখন, তোমাদের জন্য বাজার করব। চারজন জমিয়ে খাব।"

- "যুগল শোনো, মিলি....."

- "মিলি ম্যানেজ হয়ে গেছে ভাইয়া, তোমার জন্য রেডি হয়ে বাড়ির সামনে ওয়েট করছে দেখো গিয়ে।"

- "মানে?"

- "মানে ম্যাজিক। হোকাস ফোকাস ছু মন্তর। আমাকে সব বলেছে লিলি। ওর রাগ ভাঙিয়ে দিয়েছি আমি। ওর সঙ্গে কথা বলেই তোমাকে ফোন করছি।"

- "কি বলছ?" রনি লাফিয়ে ওঠে, "সত্যি? সত্যি বলছ? এ তো সত্যিই ম্যাজিক !"

- "আরে ভাইয়া সবসে বড়া ম্যাজিশিয়ান তো আপ হ্যায়। সবকুছ তো আপনেহি ঠিক কিয়া। এখন ফোন রাখছি।"

- "যুগল, কালকের কথাগুলো মনে রেখো না প্লিজ।"

- "তুমিও ভুলে যেও আমি কি ভুল করেছি। চলে এসো, চারজন আড্ডা দিই। সেদিন তো গল্পই হয়নি।"

চলবে