Jharapata 35 in Bengali Love Stories by Srabanti Ghosh books and stories PDF | ঝরাপাতা - 35

Featured Books
Categories
Share

ঝরাপাতা - 35

ঝরাপাতা

পর্ব - ৩৫

❤💕❤💕❤💕❤

মিলি বাড়িতে ঢুকে ফ্রেশ হওয়ার আগেই রনি ফোন করে। আসলে প্রথমে খেয়াল না পড়লেও পরে রনি ভালোই বুঝেছে ওর ধমকে মিলির মুড অফ হয়ে গেছে। অথচ আশা ছিল, সিনেমা দেখে, লিলির বাড়ি ঘুরে খুশি খুশি মিলি ফিরবে। দুজন আজকের দিনটা মনে করে বেশ কিছুদিন চালিয়ে দেবে। মিলির পরীক্ষাটা ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলেই ও ডঃ গিরির সঙ্গে কথা বলবে, মিলিকে সত্যিটা কিভাবে জানানো যায়। কখন কোথা থেকে মিলি কি শুনবে, তার চেয়ে মোটামুটি সুস্থ থাকলে, লিলির সঙ্গে ভাব করিয়ে দিলে, সবাই মিলে যদি মিলিকে বলা হয়, সেটা কি বেশি ভালো হবে না? 

দাদাবৌদি আরও রাতে ফিরবে। মাকে পরে খাব বলে ঘরে ঢুকে রনি ভাবছিল, "হয়তো মিলি আমার উপর রাগ করবে। যেভাবে হোক হাতে পায়ে ধরে মানিয়ে নেব। মেয়েটা বড্ড ছোট, সরল, মিষ্টি একটা মেয়ে। আমাকে সত্যিই ভালোবাসে। আমি একবার বকলেই তাই মনখারাপ করে। দুবারই দেখলাম যে। বিয়ের পর আমার সব কাণ্ড মনে পড়লে ও যদি রাগ করেই, সেই রাগ সহ্য করতে রাজি আছি। কিন্তু আর এভাবে না, এবার ওকে বাড়ি নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। ওকে যতক্ষণ নিজের কাছে নিয়ে আসতে পারছি না, ওকে বোঝাতে পারছি না, কতটা ভালোবাসি। এমন অসুখ তো আমার অবহেলায়। আমার জন্য তখন বেচারি এত কষ্ট পেয়েছে, এত অপমানিত হয়েছে, যতবার ভেবেছি, নিজের চোখে নিজে তত ছোট হয়ে গেছি। আর কোনোদিন এরকম হতে দেব না। পারলে একটা গোটা দিনের চব্বিশ ঘন্টা সময়টাই মিলিকে আগলে রাখব। যতক্ষণ আমার সঙ্গে বাইকে বসে থাকে, আমার কাঁধে হাতটা রাখে, ঐটুকুই তো ভরসা পেয়েছে আমার কাছ থেকে। তাই কলেজে হোক, বাড়িতে হোক, ও যখন আমার সামনে থেকে চলে যায়, আবার ফিরে আসবে কিনা ভেবে বুক ঢিপঢিপ করে। নিজের একটা ভুল সিদ্ধান্তের জন্য কতটা অসহায় হয়ে পড়েছি, প্রতিবার মনে পড়ে।"

 
সি *গা *রে *ট ধরিয়ে ঘরে পায়চারি করতে করতে রনি ভাবছিল, "ওর ভালোমন্দের দায়িত্ব আজও ওর বাবা মায়ের উপর চাপিয়ে বসে আছি। মিলিকে ভালোবাসি বলতে পেরে শান্তি পেয়েছিলাম এক মুহূর্তের জন্য। তারপর থেকে উলটো মনে হয়, মিলিকে ঠকাচ্ছি, আগের চেয়ে আরও বেশি করে ঠকাচ্ছি। বেচারি আমাকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছে, আমি ওকে ভালোবাসি, ওর পড়াশোনা শেষ হলে বিয়ে করব ভেবে আশা করছে। যত দেরি হবে তত বেশি বেশি স্বপ্ন সাজিয়ে ফেলবে বিয়ে, সংসার এসব নিয়ে। অথচ সেই স্বপ্ন তো আর কোনোদিন পূরণ করতে পারব না মেয়েটার। সুন্দর করে মন থেকে বিয়ে করছি, এই দিনটা আর ওকে দিতে পারব না। বিয়ের পর আমার যেভাবে ওর পাশে থাকা উচিত ছিল নতুন জীবনে, সেই দিনগুলো আর দিতে পারব না। তাই মিলিকে স্বপ্ন দেখা থেকে আটকাতে হবে, আর সেটা আমাকেই করতে হবে।

হয়তো মিলি এখনও মনখারাপ করে আছে, ঠিক আছে, মাপই চাইব। মিলির কাছে যত বড় অপরাধ জমা আছে, হাজার হাজার বার ক্ষমা চাইলেও কম হবে। সেকথা মনে করেই নাহয় আজও ক্ষমা চাইব।"

সি *গা *রে *টা ফেলে ব্যালকনির দরজাটা ঠেলে দিয়ে রনি ঘরে এসে বসে ফোনটা তুলে নেয়। ব্যালকনি থেকে কথা বলা যাবে না, কেউ যদি শুনতে পায়?

মিলি তখন বাবাকে সিনেমার গল্প বলে সবে ঘরে ঢুকেছে, জামাকাপড়ও বদলায়নি। মনটা ভারী ছিলই সব ঘটনায়। স্ক্রিনে রনির নাম দেখে আবার অভিমানে বুক ভরে যায়। কি বলতে ফোন করেছে, আসল কথা তো একটাও বলে না, সব লুকিয়ে রাখে। তাও কল রিসিভ করে, ফোন কানে দেয়। রনির ব্যালকনিটার দিকে তাকিয়ে দেখে, অন্ধকার। ওদিকে রনির গলা পায়, "কি করছ?"

- "কিছু করছি না, এই তো এলাম।" রনি স্পষ্ট বোঝে, মিলি বিরক্ত। এতক্ষণের ভাবনাগুলো আবার ঘিরে ধরে ওকে। কয়েক হাত দূরে মিলি আছে, কিন্তু ওর হাতটাও ধরে কথা বলার উপায় নেই। অন্য উপায় না পেয়ে সরাসরি সারেন্ডার করে, "সরি, রাগ হয়েছিল হঠাৎ হাতে টান পড়ে। আর কখনো বকব না। তুমি রাগ কোরো না।"

মিলির অন্য ঘটনাটায় এত মনে লেগেছে, ঐ বকুনি খুব একটা আলাদা করে আর দাগ কাটেনি। বরং সেই এক কথায় আরও বিরক্ত হয়। যে কথা বলবে না ঠিক করে, সেগুলো যখন বলবেই না, এই ছোট ঘটনাটা নিয়ে বারবার বলে রনিদা সাধু সাজতে চাইছে কেন? এবার যখন কথা বলে বিরক্তির ঝাঁঝটা আর লুকোনো থাকে না, "আমি ভুল করেছি। তখনই বললাম, তোমার কথাই ঠিক। তাও এটা তুলছ কেন? ঠিক আছে, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি, সরি, আর কখনো করব না।"

রনি বোঝে ওর রাগটা, কিন্তু সবচেয়ে বড় ভুল করে বসে রাগটাকে গুরুত্ব দিয়ে। রনি আবার ধমকে বলে, "খালি খালি রাগ দেখাচ্ছ কেন? নিজেই জানো, অন্যায় কথা বলিনি। হ্যাঁ, আমার দোষ, আমি ধমকে বলেছি। তুমি ভুলে যাও, আমি কতটা বড়। আমার স্টুডেন্টরাও সবাই তোমার চেয়ে বড়। তাও সরি বলছি, আর তুমি ঝগড়া করছ !"

মিলি ঠান্ডা ভাবেই বলে, "তুমি সরি বললে, সেটা সরি বলা, আমি বললে ঝগড়া? ঠিক আছে। তাহলে তো আর কিছু বলার নেই আমার।"

মিলি যত ওর কথাটা মানছে না, রনির রাগ ফিরে আসছিল, "কিছু বলার নেই আমাকে?"

- "কি বলব বলো? তাছাড়া পলাশ ফোন করছে আমাকে। ক্লাসনোটস নিয়ে কিছু বলবে হয়তো। রাখছি এখন।"

মিলি ফোন কেটে দেয় ওর কথা না শুনেই। রনি ফোনটা আছড়ে ফেলে খাটের উপর। একটুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে নিজেও বালিশের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে। মিলি সামনে থাকলে ও বোধহয় সত্যিই মিলির পায়ে ধরতেও রাজি ছিল। সেখানে একটু কথাও বলতে পারল না মিলির সঙ্গে। আর মিলি ফোন করবে না বুঝতে পেরেছে। সেই আগামীকাল, তার আগে আর কথা বলা যাবে না? 

পলাশের কলটা রিসিভ করে মিলি কিছু বলার আগেই পলাশ ঝাঁপিয়ে পড়ে, "তুই আজ সিনেমা দেখতে গেছিলি? আর আমার সঙ্গে যেতে বললে পড়ার বাহানা দেখাস?"

মাথা গরম ছিলই, মিলির মাথায় এবার বিস্ফোরণ ঘটে যায়, "তোকে কৈফিয়ত দিতে হবে? কেন? তোদের ব্যাচের ক্লাসনোটস দিস বলে? আমি চেয়েছি? তুই বারবার সেধে সেধে দিস। কাল থেকে দিবি না। আগের গুলো ফেরত দিয়ে দেব।"

মিলি শুধুই বন্ধু ভাবলেও পলাশের মনে অন্যরকম অনুভূতি আছে। তাই মিলির ধমকে পলাশ কুঁকড়ে যায়, "কৈফিয়তের কথা বলছিস কেন? জিজ্ঞেস করছি। আমার খারাপ লাগে না, আমার সঙ্গে কোথাও যাস না বলে? আর ক্লাসনোটস দিই তুই বন্ধু বলে। আজ বুঝলাম তুই আমাকে বন্ধু ভাবিস না।" শেষের দিকে পলাশের গলায় অভিমানের বাষ্প যে কেউ বুঝতে পারবে। 

মিলিও একটু থতিয়ে যায়। বোঝে, রনির ঝাড়টা পলাশের উপর দিয়ে গেল। তবে পলাশইবা এত পিছনে পড়ে থাকবে কেন? তুই বন্ধু, বন্ধুর মতো থাকবি। এত জেরা করবি কেন, কার সঙ্গে সিনেমায় যাব না যাব? আর একথা ভাবতেই, মিলি বুঝল, কেন রনির সব কথা শোনে, কেন রনির সঙ্গে সিনেমায় গেছিল, সেই উত্তর বন্ধুদের কাছে লুকোতে হচ্ছে বলেই বন্ধুদের কৌতূহলটা বেশি বেশি মনে হচ্ছে। 

তাই এবার সুর নরম করে বলে, "বন্ধু বলেই ভাবি। তুই এসব ছাড়। আমাকে কি বলতে এসেছিলি?"

পলাশ মিলির গলা একটু নরম হতেই গলে যায়, "শোন না, তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছি। কাল কলেজে এলেই পাবি। কাল কিন্তু আসবিই আসবি।"

মিলির খারাপ লাগে, পলাশ কত ভাবে ওর জন্য। সেখানে এত ধমক দিয়ে ফেলেছে। মিলি ওকে পটাতে থাকে, "এ্যাই বল না কি সারপ্রাইজ?"

- "আচ্ছা মেয়ে তো তুই ! সারপ্রাইজ কেউ আগে থেকে বলে?"

- "তাহলে এটাই বা বললি কেন?"

- "সে তো বললাম যাতে তুই কাল কামাই না করিস। আসবি তো অদ্রিজা?"

- "আসব। এমনিই যেতাম, এখন তো আরও যাব। শোন না, বলবি না কি হবে?"

- "ধৈর্য্য ধর, ভালো কিছুই হবে। তখন বলবি পলাশ সাহা তোর কতটা বন্ধু।"

- "তুই সত্যিই আমার ভালো বন্ধু, আমি জানি। খালি যখন তর্ক করিস, ভালো লাগে না। বাড়িতে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরিতে একটু বারণ তো করবেই। তখন তুই চাপাচাপি করলে আমি কোনদিকে যাব?"

- "ঠিক আছে, আর চাপাচাপি করব না।" পলাশ মনে মনে বলে, "যা করছি আমি, তারপর আর কিছু করতে হবে না। ঐ রনি সোজা পিকচার থেকে আউট। আমার এন্ট্রি। আমি তোকে নিয়ে সিনেমায় যাব। তাও শুধু আমরা দুজন, রনির মতো একবাড়ি লোককে নিয়ে না।" বেচারা পলাশ তাও জানে না রনি একলাই সারাদিন নিজের বৌকে দখল করে রেখেছিল। 

পলাশের ফোন মিলির মন ভালো করে দেয়। রনিকে ফোন করার কথাও মাথায় থাকে না আর। রাতটা শান্তিতে ঘুমোয়। সকালে একবার ঘর থেকেই রনির ব্যালকনিতে উঁকি দিয়ে দেখে রনি দাঁড়িয়ে আছে। ও জানে না রনি সারারাত খায়নি, ঘুমোয়নি। আলো ফুটতেই ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে। টেনশনে একের পর এক সি *গা *রে *ট খেয়েছে সারা রাত। 

চলবে