Jharapata 34 in Bengali Love Stories by Srabanti Ghosh books and stories PDF | ঝরাপাতা - 34

Featured Books
Categories
Share

ঝরাপাতা - 34

#ঝরাপাতা

পর্ব - ৩৪

❤💕❤💕❤💕❤

সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে দেখা হয় পিউদের সঙ্গে। পিউ একবার মিলিকে গাল টিপে আদর করেই এগিয়ে যায়। এবার ওদের সিনেমা দেখার পালা। মিলিকে নিয়ে রনি যায় শপিং মলের ফুডকোর্টে। পিজ্জা অর্ডার করে মিলিকে বসিয়ে রনি একেবারে পিজ্জা নিয়ে টেবিলে এল। মিলিও খেয়াল করে, একটু যেন গম্ভীর, অন্যমনস্ক। একটুকরো পিজ্জায় কামড় দিয়ে বলে, "তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। তোমাকে একজায়গায় নিয়ে যাব।"

সিনেমার পর নতুন প্ল্যান !! মিলি আকাশ থেকে পড়ে, "এখন আবার কোথায় যাবে? রাত হয়ে যাবে তো? বাড়িতে কি বলব?"

রনির মনের গোপনে একটা নিঃশ্বাস আটকে থাকে, "মিলিকে কবে বলতে পারব, ওকে কোথায় নিয়ে গেছিলাম রাত হয়ে গেলেও কাউকে কৈফিয়ত দেওয়ার দায় আমার নেই।" ফ্যাকাশে একটা হাসির সঙ্গে বলে, "বাড়িতে কিছু বলবে না তোমাকে। দাদাবৌদির সঙ্গে এসেছ। আর বেশি দেরিও করব না। তাই তো বলছি, তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।"

মিলিও চুপচাপ বাইকে উঠে বসে। কোথায় যেতে পারে রনিদা? পনেরো মিনিটের মধ্যেই উত্তর পেয়ে যায়। একটা বড় এ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে তিনতলায় একটা ফ্ল্যাটের বেল বাজায় রনি। কোনো নেমপ্লেট নেই। মিলির হঠাৎ মাথায় আসে সন্ধ্যা সাতটার সময় রনিদার সঙ্গে অচেনা কারও ফ্ল্যাটে আসা কি উচিত? দেখা যাক, কার ফ্ল্যাট। কোনো ছেলে দরজা খুললে ও ঢুকবে না। কোথাও থামা উচিত। 

সত্যিই একটি অপরিচিত রনির বয়সী ছেলে দরজা খোলে। মিলি সিঁটিয়ে দাঁড়ায় পাশের ফ্ল্যাটের বন্ধ দরজার দিকে, "রনিদাকে কতদূর বিশ্বাস করা যায়? পিউবৌদিরা থাকবে না ও কি আগে থেকেই জানত? কোথায় নিয়ে এল আমাকে?"

মিলির ভয় মুখের রেখায় ফুটে ওঠার আগেই ছেলেটি অবাক হয়ে তাকায়, "আরে আপনে বাতায়া নেহি, মিলি আনেবালি হ্যায়। হামনে সোচা বাস আপহি আওগে। আইয়ে, আন্দার আইয়ে।" 

এসো বলে মিলিকে ডেকে রনি হাঁটা দিয়েছে। ছেলেটি পাশে সরে অপেক্ষা করছে, মিলি ভিতরে যাবে। মিলি ঘেমে উঠেছে। এখন কি করবে? এই মুহূর্তে যদি বলে ও ভিতরে যাবে না, রনিদার সঙ্গে একটা তিক্ততা অবশ্যম্ভাবী। অথচ সম্পর্ক ভালো রাখতে ভিতরে গেলে কি ঘটতে পারে, কোনো ধারণাই নেই। 

উদ্বেগের জায়গাটা নিয়ে নেয় বিস্ময়, কারণ ভিতরে রনির গলা শোনা গেল, "ম্যাডাম, বাইরে যান। আপনার বোন দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে এসো লিলি, সত্যিই মিলি এসেছে।"

মিলি এত ভাবনার ঢেউয়ের সঙ্গে তাল রাখতে পারছে না। লিলি? মানে দিদি? এটা দিদির ফ্ল্যাট? তার মানে এই ছেলেটা যুগল? আর এদের ফ্ল্যাটে রনিদার যাতায়াত আছে? দিদির সঙ্গে রনিদার যোগাযোগ? রনিদাকে ঠকিয়েছে বলেই, ওর প্রাণ ছিল যে দিদি, তাকে মন থেকে উপড়ে ফেলেছে মিলি ! আর রনিদার সঙ্গেই ওদের ভাব? 

আর ভাবতে পারে না, লিলি প্রায় ছুটে এসে বোনকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছে। কতদিন পর দিদিকে ছুঁতে পারল মিলি ! দুই বোনের কান্নায় তাদের বরেরা দুজনেই অপ্রতিভ হয়ে যায়। যুগল লিলির পিঠে হাত রেখে বলে, "আন্দার চলো। কোই দেখ লেগা তো কুছভি শোচেগা। মিলি, এসো বোন।"

ঘরে ঢুকে এক দুবার নাক টানে মিলি, তবে দিদিকে ছেড়ে হেঁটে আসার সময়ে সামলে নিয়েছে। রনি হাত তুলে দেখায়, "ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে এসো। আর কাঁদতে হবে না। লিলি, ভালো করে চা খাওয়াও, তোমার বোনকে এনে দিলাম।"

মিলি মুখ ধুয়ে এসে বসে, যুগল ওদের চাপাচাপি করে কি খাবে বলে। রনিই খুলে বলে, সবার সঙ্গে সিনেমা দেখতে এসেছে, খাওয়া দাওয়াও সেরে এসেছে। আজ আর বেশি সময় থাকতে পারবে না মিলি। হঠাৎ প্ল্যান করে এসেছে, কেউ জানে না। 

চা বিস্কুট দেয় লিলি, দুবোন গল্প করে, দুজনেরই এক প্রশ্ন, তুই ভালো আছিস তো? রনি আর যুগল ছোট্ট ব্যালকনিতে সি *গা *রে *ট খায়। মিলি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে, ছোট এক কামরার ফ্ল্যাট। একটা খাট, একটা আলমারি, দুটো প্লাস্টিকের চেয়ার টেবিল। ভালো থাকতে বাহুল্য প্রয়োজন নেই, কিন্তু দিদি কি ভালো আছে? মিলি আসার প্রাথমিক উচ্ছ্বাসের পরেই লিলির মুখে আর আলো নেই। রনিদা আর যুগলের গলাও শোনা যাচ্ছে, রনিদা যেন কিছু বোঝাতে চাইছে বারবার, দিদি কানখাড়া করে ঐ কথাগুলোই শুনতে চাইছে। দিদির কাছেই রয়েছে, কিন্তু ঠিক আগের মতো সহজ হতে পারে না আর। ঘড়ি দেখে মিলি বলে, "এবার ফিরতেই হবে। বাড়িতে ভাববে, আমি কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। রনিদাকে ডাক দিদি।"

লিলিও ঘড়ি দেখে আর না বলে না, রনিকে ডাকতে ব্যালকনির দরজায় এগিয়ে যায়। তারপর তিনজন কিছু নিয়ে তর্ক শুরু হয়। মিলি কান খাড়া করে শোনে, রনি বলছে, "আমি খুব ডিপ্রেসড যুগল। এভাবে ঝগড়া করার জন্য তুমি লিলিকে বিয়ে করেছ? ও সবাইকে ছেড়েছে একা তোমার জন্য। আমি ছাড়া কে আছে ওর পাশে?"

দিদির সঙ্গে যুগলদার ঝগড়া হচ্ছে? এত কাণ্ড করে বিয়ে করে ! মিলি এগিয়ে যেতেই রনি ওকে দেখতে পায়। সব কথা চাপা দেওয়ার মতো বলে, "চল, এবার ফিরি। তোমার দেরি হয়ে যাবে।"

দুই বোন আবার দেখা করবে বলে। যুগলও বারবার আসতে বলে, সামনের বার এখানে খেতেই হবে বলে দেয়। মিলির আর কিছুই ভালো লাগছে না। চারদিন ধরে যে হাওয়ায় উড়ছিল, রনিদা ওকেই ভালোবাসে বলার পর, সেই আনন্দের কোটা যেন ফুরিয়ে গেছে। 

লিলিও ওদের সঙ্গে নিচে এসেছিল, রনি বাইকে বসার পর বলে, "মিলি তো পরীক্ষার পর আসবে বলল, তুমি কিন্তু তা বললে হবে না। তুমি যেমন আসতে, সেভাবেই আসবে।"

মিলি একটুও অবাক হল না আর, যখন শুনল রনি বলছে, "যুগল যখন অপছন্দ করছে আপাততঃ থাক। বরং একদিন বাইরে দেখা করো। অনেক কথা আছে তোমার সঙ্গে।"

- "ঠিক আছে, ফোন করে নেব। মিলি সাবধানে যাস। ফোন করিস মাঝে মাঝে।" বোনকে জড়িয়ে ধরে বলে লিলি। মিলি দিদিকে ছাড়িয়ে দিয়ে দুজনকেই শুনিয়ে বলে, "আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।"

- "তুমিই তো দাঁড়িয়ে আছ। বাইকে ওঠো।" রনির গলাটা কি রাগ রাগ? মিলি আর বলে না, দিদি জড়িয়ে ধরেছিল, তাই বাইকে উঠতে পারেনি। চুপচাপ বাইকে বসে, রনির কাঁধে আলতো করে হাতটা রাখে। দিদির দিকে তাকায়, শুধুই ভদ্রতা করে। লিলি হাসিমুখে হাত নাড়ে, রনি বাইক চালিয়ে দিয়েছে, মিলি মুখ ঘুরিয়ে নেয়। 

গলার কাছে কি একটা দলা পাকিয়ে আছে। রনিদা যখন ওর প্রতি নিজের ভালোবাসার কথা বলেনি, তখনই ও দিদির বিরুদ্ধে রনিদার পাশে দাঁড়িয়েছিল নিজের মনে। রনিদার প্রতি সেই মানসিক সমর্থন আর রনিদার সবসময় সঙ্গে থাকা, যত্ন, ভালো ব্যবহার, এবং এখন জানে রনিদারও ওর প্রতি একটা আকর্ষণ তৈরি হওয়ার জন্য সেটার প্রভাবেই মিলি রনিদা ছাড়া আর কিছু ভাবাই বন্ধ করে দিচ্ছিল। 

এই তো সেদিন ঝামেলা, তারপর দুজনের ভালোবাসার স্বীকারোক্তির পর রনিদা শুধুমাত্র ওর একার সম্পত্তি হয়ে গেছে। অথচ রনিদা দিদির সঙ্গেই বন্ধুত্ব রেখেছে ! আর মিলি নিজের দিদির ভালোবাসা হারিয়েছে ! দিদি একবার ওকে ফোন করতে পারেনি ! এদিকে রনিদার সঙ্গে এত এত ফোন, দেখা করা ! 

মিলি ছটফট করছিল, কতদিন ধরে, কিভাবে ওদের যোগাযোগ, যুগলদার কি নিয়ে রাগ, সব কথা জানার জন্য। কিন্তু ঠোঁট টিপে আছে, নিজের দিদির খবর অন্যের কাছে ও শুনবে না, জিজ্ঞেস করে তো আরও না। এই যে ও আলতো করে হাত রেখেছে রনিদার কাঁধে, প্রথমদিনিই রনিদা ওকে বলেছিল, শক্ত করে ধরে বসতে। যেদিন যেদিন ও মনের ভুলে সেভাবে বসে, বাইক স্টার্ট দেওয়ার আগেই রনিদা ঠিক করে বসতে বলে। আজ এতটা পথ চলে এল, খেয়ালই নেই ! 

রনি সত্যিই বিভ্রান্ত হয়ে গেছিল লিলি আর যুগলের সঙ্গে কথা বলে। সিনেমা দেখে বেরিয়ে ওর মাথায় এসেছিল, দুই বোনের দেখা করানোর কথা। লিলি ভালো আছে দেখলে, লিলির সঙ্গে বন্ধুত্ব হলে মিলির মন ভালো লাগবে। চাই কি ধীরে ধীরে সবটা মনেও পড়ে যাবে। 

রনির খারাপ লাগে মিলিকে অন্ধকারে রেখে নতুন করে ভালোবাসার নাটক করতে। পিজ্জার অর্ডার দিয়ে ও ফোন করেছিল লিলিকে। ফাঁকা থাকলে ওদের বাড়িতে যাবে বলেছিল। সবাইকে সারপ্রাইজ দেওয়ার প্ল্যান ছিল। সে জায়গায় নিজেই একটা বড় ধাক্কা খেয়েছে। 

ডানদিক থেকে একটা বাইক হঠাৎ সামনে চলে আসায় রনিকে বাঁদিকে চাপতে হয় ওর বাইক। টালমাটাল হতেই মিলি শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছে ওর কাঁধ। তাতে ডানহাতে টান পড়ে, রনি অবশ্য সামলে নেয়। পরের মোড় ঘুরতেই অনেক ফাঁকা রাস্তা, এটা বাসরুট নয়। রনি বাইকের স্পিড কমিয়ে মিলিকে চাপা গলায় ধমক দেয়, "ঠিক করে ধরে বসতে পার না? এতদিন ধরে বলছি, তাও তুমি ফিল্মি কায়দায় বসে থাকবে আর ব্রেক চাপলেই কাঁধ ধরে টানবে। কতবার বলতে হবে তাতে আমার হাতে টান পড়ে, গাড়ি চালাতে অসুবিধা হয়?"

অনেকক্ষণ বকেও মিলির তরফে কোনো উত্তর না পেয়ে রনির হুঁশ হয়, মিলি রেগে গেছে। এদিকে বাড়ির একদম কাছে এসে গেছে। রাতও হচ্ছে, বাইক নিয়ে অন্য কোনো দিকে চলে যাবে মিলির রাগ ভাঙাতে তারও সময় নেই। 

রাস্তার ধারে বাইক থামিয়ে হেলমেট খুলে মুখ ঘোরায় রনি, "অমনি রাগ হয়ে গেল? আচ্ছা, ঠিক করে না বসলে আমি গাড়িটা কি করে চালাব?"

- "সেজন্যই তো চুপ করে আছি। তোমার কথাই ঠিক, আমি রাগ করিনি।"

- "রাগ হয়নি? আচ্ছা, তাহলে শোনো......."

- "এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে কথা বলব? রাস্তার কেউ দেখলে মহাবিপদ হবে। পরে কথা বলব।"

- "ফোন করব তাহলে। তখন যদি কথা না বলেছ, কাল দেখবে কি করি।" রনি আবার হেলমেট পরে। 


চলবে